আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

***নবী-রাসূলগণের মর্যাদা***

"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। উত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর বাণী, উত্তম পথ হচ্ছে রাসূল ﷺ এর পথ এবং নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে দ্বীন ইসলামের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়(বিদআহ), নিশ্চয়ই প্রত্যেক বিদআহ’ই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা আর পথভ্রষ্টতার গন্তব্যস্থল জাহান্নাম। নবী-রাসূলগণ হচ্ছেন আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত। মানব জাতিকে একত্ববাদের দিকে আহবান করার জন্যে, শিরকমুক্ত হয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাকে ইবাদত করার জন্যে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির নিকট নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছি, যাতে করে (তাদের সে বলতে পারে) তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং আল্লাহ তাআলার বিরোধী শক্তিসমূহকে বর্জন কর” (সূরা নাহলঃ ৩৬) “প্রত্যেক উম্মতের জন্যেই রসূল আছে” (সূরা ইউনুসঃ ৪৭) “কখনও কোন উম্মত ছিল না, যার জন্যে কোনো ( না কোন একজন) সতর্ককারী অতিবাহিত হয় নি” (সূরা ফাতেরঃ ২৪) নবী-রাসূল আসার এই ধারাবাহিকতা শেষ নবী রাসূল ﷺ এর মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে। এরপর কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী-রাসূল দুনিয়াতে আসবে না। “হে মানুষ (তোমরা জেনে রেখো), মুহাম্মাদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয়, বরং সে তো হচ্ছে আল্লাহ তাআলার রাসূল এবং নবীদের সিলমোহর (শেষনবী)” (সূরা আহযাবঃ ৩৩) আমি আগেই বলেছি, নবী-রাসূলগণ হচ্ছেন আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত, কোন মানুষ চেষ্টা-সাধনার দ্বারা নবী-রাসূল হতে পারবে না, বা নবী-রাসূলগণ যেভাবে আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) কর্তৃক ওহী নাযিল হতো সেভাবে কেউ ওহী পাবে না। নবী-রাসূলদের মতো অন্য কেউ আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে না। আমরা সঠিক দিক নির্দেশনা পাবো, আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলদের মাধ্যমে যে হক জানিয়ে দিয়েছেন তা থেকে।

আমরা শেষ নবী ﷺ এর উম্মৎ। সুতরাং ইসলামকে জানতে হবে যা কিছু রাসূল ﷺ এর উপর নাযিল করা হয়েছে তা থেকে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে নবী! আপনি বলে দিন, হক এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে” (সূরা কাহাফঃ ২৯)। কাজেই হক যে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং এর জন্যে দলীলের প্রয়োজন রয়েছে, আর এই দলীল হচ্ছে কোরআন এবং হাদীস। কারণ, এই দুইটিই হচ্ছে ওহী।

ওহী দুই প্রকার, ওহীয়ে মাতলু অর্থাৎ এমন ঐশী বাণী যা তিলাওয়াত করা হয়। যার তিলাওয়াত করাটাও হচ্ছে একটা ইবাদত। তিলাওয়াত করলে প্রতিটি অক্ষরের জন্যে নেকী রয়েছে। তিলাওয়াতকে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়ঃ ১। শুধু তিলাওয়াত (তিলওয়াতে লাভজি) ২।

অর্থের দিক থেকে তিলাওয়াত ও আমল। (তিলাওয়াতে মানভি) আরেক প্রকার ওহী রয়েছে তাকে বলে ওহী গাইরে মাতলু অর্থাৎ হাদীস। নবী ﷺ যা করেছেন, যা বলেছেন এবং যা অনুমোদন করেছেন তাই হাদীস। হাদীসের কোরআনের মতো তিলাওয়াত হয় না, হাদীস পড়ায় কোরআনের মতো প্রতিটি অক্ষরের মত নেকী নেই কিন্তু সামগ্রিকভাবে হাদীস পড়া, বুঝা ও তা আমলে পরিণত করার মাঝে নেকী রয়েছে। কাজেই হক বা সত্য জানতে হবে কোরআন এবং সহীহ হাদীস থেকে।

অন্যকোন মাধ্যম থেকে কেউ জেনে যদি বলে এটাও হক অথচ তা কোরআন এবং সহীহ হাদীসে নেই তা মানা যাবে না, তা বাতিল। কেউ যদি বলে আমি আল্লাহকে স্বপ্ন দেখি, আল্লাহ তাআলা আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে তিনি আমাকে দিক নির্দেশনা দেন তাহলে সে ব্যক্তির কথা কোনভাবেই মানা যাবে না, সে একজন মহামিথ্যুক, শয়তানের দোসর। কারণ, নবী-রাসূলগণ ব্যতীত আল্লাহ তাআলা অন্য কারো নিকট নবী-রাসূলদের মতো করে বা সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে কোন বার্তা পাঠান না। এই বিষয়ে তাওহীদে বিশ্বাসী সকল মুসলিম ভাই-বোনদের পরিস্কার ধারণা থাকা অত্যাবশ্যক। গ্রীক ফিলোসফিতে নবী-রাসূলদের ধারণাটাকে মিথ্যা প্রমাণিত করা হয়েছে, এরিস্টটলের ধ্যান ধারণা হলোঃ “নবুওয়াত ঐশী বাণী ভিত্তিক নয়।

উহা আল্লাহ তাআলা বা স্রষ্টার পক্ষ হতে অনুদান নয়, বরং মানুষের আয়ত্বাধীন বিষয়। সাধনা করলে যে কেউ নবীর দরজায় পৌছতে পারে, হাশর নাশর কিয়ামত এবং গায়েবী তথ্যের অধিকারী হতে পারে” (ইসলাম ও তাসাউফ, পৃষ্ঠাঃ ২৫) যার সার কথা হলো, চেষ্টা সাধনার মাধ্যমে মানুষ এমন স্থানে পৌছতে পারে যার মাধ্যমে সে গায়েব জানতে পারে(আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েব জানে না, কাজেই এটা কুফুরী বিশ্বাস)। আমাদের উপমহাদেশে একটা বই বহুল প্রচলিত, (লেখক ও বইয়ের নাম সংগত কারণে উল্লেখ করতে পারছি না) যে বইয়ে বলা হয়েছে, “তাযকিয়াতুন নাফস আত্মশুদ্ধির ভিত্তিতে সাধনা করলে মানুষ কামালিয়াতের দরজায় পৌছে যায়, গায়েবী তথ্য অবহিত হয়”। এরপর থেকেই সবজায়গায় এই কথা ছড়িয়ে পরে যে Saint’রা অদৃশ্য জগতের জ্ঞানের অধিকারী। অথচ রাসূল ﷺ স্বয়ং গায়েব জানতেন না, তিনি শুধু ততটুকুই বলতে পারতেন যতটুকু আল্লাহ তাআলা তাকে জানাতেন।

“তুমি বলো, আমার নিজের ভালো-মন্দের মালিকও তো আমি নই, তবে আল্লাহ তাআলা যা চান তাই হয়; যদি আমি অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতাম, তাহলে আমি (নিজের জন্যে সে জ্ঞানের জোরে) অনেক ফায়দাই হাসিল করে নিতে পারতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না, আমি তো শুধু সতর্ককারী ও সুসংবাদবাহী মাত্র, শুধু সে জাতির জন্যে যারা আমার উপর ঈমান আনে” (সূরা আরাফঃ ১৮৮) “(হে নবী) এগুলো হচ্ছে অদৃশ্য জগতের খবর, যা আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি, এর আগে না তুমি এগুলো জানতে, না তোমার জাতি এগুলো জানতো; তুমি ধৈর্য ধারণ করো, কারণ (ভালো) পরিণামের ফল সব সময় পরহেযগার লোকদের জন্যেই (নির্দিষ্ট থাকে)। ” (সূরা হুদঃ ৪৯) আরেকটা বিষয় জেনে রাখা ভাল, জ্বীনজাতিও গায়েব সম্পর্কিত কোন তথ্যই জানে না। “যখন আমি তার উপর মৃত্যুর আদেশ জারি করলাম, তখন তাদের (জ্বিন ও মানুষ কর্মীবাহিনীর) কেউই বাইরের লোকদের তার মৃত্যুর খবর দেখায়নি, (দেখিয়েছে) কেবল একটি (ক্ষুদ্র) মাটির পোকা, যা (তখনো) তার লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল, (সোলায়মান আঃ এর লাঠি পোকায়) খায়ায় যখন সে (মাটিতে) পড়ে গেল, তখন (মাত্র) জ্বিনেরা বুঝেতে পারলো (সোলায়মান আগেই মারা গেছে), তারা যদি গায়েবের বিষয় জানতো, তাহলে তাদের (এতোকাল) লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তিতে থাকতে হতো না” (সূরা সাবাঃ ১৪) কিছু মানুষ এমন যুক্তি প্রদর্শন করতে পারে, আরে আল্লাহ তাআলা তো যা খুশি তাই করতে পারেন, তিনি যদি কোন মানুষকে গায়েব জানান তাহলে কার কি করার আছে? কিন্তু ইসলাম তো পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন বিধান, যত প্রকার নিয়ামত দান কারা প্রয়োজন তাও আল্লাহ তাআলা সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা নিজেই এর পূর্ণাঙ্গতা ঘোষণা করেছেন রাসূল ﷺ মৃত্যুর প্রায় দুই মাস আগেই। কাজেই এমন কিছু দ্বীন ইসলাম পূর্ণাঙ্গতা ঘোষণা করার দিন ছিল না, তা পরবর্তীতেও থাকবে না।

“আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম আর ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম” (সূরা মায়িদাঃ৩) ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এমনকিছু যা ঐদিন দ্বীন ইসলামে ছিল না সুতরাং তা আজকেও দ্বীন ইসলামের অন্তর্ভূক্ত নয়। কাজেই কোন সূফী বা দরবেশ বা পীর যদি দাবী করে আমি গায়েবের জ্ঞান জানি, আমি এই ত্বরীকাটি, অমুক আমলটি, অমুক জিকিরটি, অমুক নামাজটি গায়েব দ্বারা বা স্বপ্ন মারফত প্রাপ্ত হয়েছি। অথবা কোন বিশাল জ্ঞানের অধিকারী কোন আলেম যদি দাবী করেন আমার সাথে আল্লাহ তাআলা সরাসরি যোগাযোগ করেন আর আমি তার ভিত্তিতে কাজ করি তাহলে এই দাবীগুলো যে মিথ্যা দাবী তাতে কোনই সন্দেহ নেই। শয়তান এদের ধোকা দিয়েছে, শয়তান এদের নিয়ে খেলা করেছে। যে কথাটি বলে লেখাটি শেষ করতে চাই তাহল, “হে নবী! আপনি বলে দিন, হক এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে” (সূরা কাহাফঃ ২৯)।

কাজেই হক যে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং এর জন্যে দলীলের প্রয়োজন রয়েছে, আর এই দলীল হচ্ছে কোরআন এবং সহীহ হাদীস। কাজেই হে মুসলিম ভাই-বোনেরা কোরআন এবং সহীহ হাদীসকে আকড়ে ধরুন। আমি নীচে কিছু বইয়ের তালিকা দিয়ে দিলাম, ইনশাল্লাহ এগুলো আপনাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে সহায়ক হবে। ১। তাফসির ইবনে কাসীর ২।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ৩। রিয়াদুল সালেহীন ৪। আদর্শ মুসলিম - লেখকঃ ড. মুহাম্মদ আলী আল হাশেমী ৫। ঈমান ও আকীদা - হাফেজ শাইখ আইনুল বারী আলিয়াবী ৬। আমাদের নবী ও তাঁর আদর্শ - আল্লামা ইমাম ইবনে কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ ইলম অর্জন করা তৌফিক দান করুন এবং সে অনুযায়ী তা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা তৌফিক দান করুন।

আমিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।