আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক খন্ড দেশ

এক অসাম্প্রদায়িক উজ্জল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি

কমলাপুর রেইলওয়ে স্টেশন। দুপুর ১২টা। এখনি পৌছবে একতা এক্সপ্রেস। সেই সকাল ৯টা৫০ এ আসার কথা। অথচ আসবে এখন।

অপেক্ষায় বিষন্ন প্রতিটি যাত্রী। সুগন্ধা ও। ৫ নং প্লাটফরমের একেবারে শেষ প্রান্তে তারা ঘাটি গেড়ে অপেক্ষারত সেই সকাল থেকে। যদিও প্লাটফরমে কয়েকবারই তাদের জায়গা বদলাতে হয়েছে এক বিশেষ ধরনের গন্ধের অত্যাচারে। ট্রেণের প্রথম দিগের বগীতে তাদের আসন নির্ধারিত।

৪টি আসন। সুগন্ধা,লিমা,টিনা আর নন্দীতা। বহুদিন পরে ৪ বোন একত্রিত হয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরছে। হইচই আর জম্পেশ আড্ডা চলছে। চলতেই হবে,কেননা সাথে আছেন সবার প্রিয়,লিমা টিনা আর নন্দীতার দুলাভাই সদা হাস্যোজ্জল প্রাণ চন্চল কল্লোল।

কিন্তু এর মাঝেও সুগন্ধা একটু যেন বিষন্ন। কারন খুব ভোরে উঠে রান্না করে,লাগেজ গুছিয়ে এবং পথের জন্য নাস্তাসহ অন্যান্য খাবার তৈরি করতে হয়েছে তাকেই। তারপর আবার স্টেশনে এসে ট্রেনের জন্য এই দীর্ঘ প্রতীক্ষা। এ যেন ক্লান্তিময় ভ্রমণের চেয়ে ও বেশি কষ্ট। তাই একটু ওপাশে সুগন্ধা বসে আছে।

তার দৃষ্টি যেন বহুদূর বিস্তৃত। একটা কিশোর ভিক্ষুক বসে আছে একটু দূরে। তার পিছনে ট্রেনগুলো ১টা যাচ্ছে ১টা আসছে,তার ও পিছনে দেখা যাচ্ছে গাছের সারি। কল্লোল কিছুখন পরপর শ্যালিকাদের জন্য এটা সেটা খুচরো খাবার কিনছে। সেইসাথে চলছে খুনসুটি।

সুগন্ধা শুধু মাঝেমাঝে মৃদু হেসে তার উত্তর দিচ্ছে। এরমাঝে লিমার মুঠোফোন বেজে উঠলো। সে কথা বলতে বলতে চলে গেল আরেক পাশে। সুগন্ধা কল্লোলকে বলল,"শোন,আমার জন্য একটু কফি আনো। মাথাটা ধরেছে।

" কল্লোল:''হমম। ঠিকাছে,আমি কফি নিয়ে আসছি। " নন্দীতা:"আমিও যাচ্ছি আপনার সাথে। এভাবে অনেকখন বসে আছি। একটু ঘুড়ি।

" কল্লোল:"আমরা গেলাম। এই স্বর্নালী সুজোগ হারাতে চাইনা। রথ দেখা হবে কলা বেচা ও হবে। হা হা..." সবাই আরেকচোট হাসল। ওরা স্টেশনারীতে গেল কফি কিনতে।

সুগন্ধা আর টিনা রইল বসে। লিমার ফোন ছাড়াড় লক্ষন নেই। এই সময় লেংচাতে লেংচাতে উদয় হল ভিকখুকটি। কিশোর ছেলে। বসেই বসেই সে লেংচায় মেঝেতে।

মনে হয় দুটো পা ই খোড়া। "আফা দুইডা ট্যাহা দ্যা...ন,আফা..." সুগন্ধা অন্যমনষ্ক। টিনা:"টাকা নাই"। ভিক্ষুক:"আফা..." টিনা:"বললাম না। যাও " এবার ভিক্ষুকটি সুগন্ধার দিকে হাত বাড়িয়ে,"আফা..." সুগন্ধা:"খুচরা নাই।

" ভিক্ষুক:"দ্যাননা আফা...। " সুগন্ধা:"খুচরা নেইতো বাবা। " এবার ভিক্ষুকটি থামল। মুখটা শক্ত হল। এদিক ওদিক তাকাল ধীরে ধীরে।

একবার সুগন্ধা আর টিনাকে শীতল চোখে দেখল। তারপর ধীরে ধীরে নিজের জায়গায় ফিরে গেল। গিয়ে হাতে পাথর নিল। হাত উচু করে পাথর দেখিয়ে উচু গলায় বলতে লাগল সুগন্ধা আর টিনাকে:"তুই ট্যাহা দিলি না। মাড়ুম...এইডা?দ্যাখচস্ এইডা কী?"মাথা নাড়ল সে,"খাড়া দ্যাহাইতাছি।

" তখনই ট্রেনের হর্ন শোনা গেল। প্লাটফরমের গোড়ার মুখে নন্দীতা আর কল্লোলকেও দেখা গেল কফি নিয়ে। লিমা কথা শেষ করে ফিরে জিজ্ঞেস করল," কী হয়েছে আপু?" সুগন্ধা:"টাকা না দেয়ায় ঐ ভিক্ষুকটা পাথর ছুড়ে মারবে বলেছে। সাবধান। " লিমা:"তাই?"ভাল করে সে তাকাল ভিক্ষুকটার দিকে।

ততক্ষনে নন্দীতা আর কল্লোল কফি নিয়ে সবার জন্য হাসি মুখে হাজির। সুগন্ধা ঘটনাটা কল্লোলকে বলল। কল্লোল শুনে একটু চুপ থাকল। ভিক্ষুকটাকে দেখল ভাল করে। সে এখন অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।

আধাঘন্টা পরে সবাই ট্রেনে উঠে যারযার আসনে বসল। ট্রেন ও ছাড়বো ছাড়বো করছে। কল্লোল একসাথে ৪টা পপকর্নের প্যাকেট কিনল ১ ফেরীওয়ালার কাছ থেকে। এমন সময় সুগন্ধার চোখ পড়ল ভিক্ষুকটির উপর। এখন ও ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে আছে।

সে ভাবছে ছেলেটাকে সে ডাকবে নাকি ডাকবে না?ডেকে ২টা টাকা দিয়ে কী বলা উচিত হবে এরকম আচরণ যেন কারো সাথে আর না করে?শুনবে বা মনে রাখবে কী ছেলেটা?সেইমুহূর্তে ছেলেটা হাতে ১টা পাথর তুলে আবার দেখাল। "আল্লা..." বলে গলা বাড়াল জানালার কাছে নন্দীতা। সেটা দেখেই ছেলেটার মাথায় কী যেন চাপল। সে মুহূর্তেই পাথর হাতে লেংচাতে লেংচাতে চলে এল জানালার কাছে। চিৎকার করে বলতে লাগল,"এ্যাট্টার পর এ্যাট্টা ঢুহাইতেই আছে ভিত্ রে।

আর মোরে এ্যাট্টা ট্যাহাও দেয় নায়। খালি খাইতেই আছে....খাইতেই আছে আর মোরে দিতে পারেনা। "তার চোখদুটো যেন ক্রমশই জলন্ত হয়ে উঠছে। ততকখনে ভীড় জমে গেছে। কল্লোল নেমে এল ওর দিকে ট্রেন থেকে।

ওকে দেখে যেন ছেলেটা আর ও খেপে গেল। দ্রুত নেমে চলে গেল ছাড়ার জন্য অপেকখমান ওদের ট্রেনের নিচে। এবার সবাই সমস্বরে চেচিয়ে উঠল। জনতার ভীরে ভীড়াক্কার। "আইজ তর লাইগ্যা মরুম,ট্যাহা দ্যাছ নাই।

মরুমই আইজ"ছেলেটা অনবরত বিড়বিড় করেই যাচ্ছে। সুগন্ধা ভয়ে ঘামছে। সবার ভয়ে মুখ শুকনা। নন্দিতা মাথা নিচু করে আছে। কল্লোল ছেলেটিকে বেড়িয়ে আসতে বলছে।

সে আসবে না জানাল। এবার সবাই চেচিয়ে বের হতে বলতে লাগল। ট্রেনের লোকজন জানালা দিয়ে মুখ বার করে দেখছে। সবাই যেন মজা দেখছে এমন ভাব। শেষ ভেপু বাজিয়ে দিল ট্রেনটি।

আর ১৫ সেকেন্ড পরই ট্রেনটা চলতে শুরু করবে। কল্লোল স্থির দৃস্টিতে ১বার দেখল ছেলেটিকে। । তারপর কিছু নাবলে উঠে এল ট্রেনে। ট্রেনটি চলতে শুরু করল।

সুগন্ধা এক ঝটকায় উঠে দাড়িয়ে জানালা দিয়ে তাকাতেই হাস্যজ্জল ভিক্ষুক ছেলেটিকে ১পা উচু করা অবস্থায় বকের মত দাড়াতে দেখল। ট্রেনের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে ছেলেটি তখন ১ পায়ে ই দৌড়াচ্ছে আর সুগন্ধাকে বলছে...."আফা আমি মরতাম না,আমি মরতাম না...." সুগন্ধা তার দিগে ১ প্যাকেট পপকর্ন ছুড়ে দিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।