কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
(১ম সেকেন্ড-১৫তম সেকেন্ড) একটা ছেলে ঘুম থেকে উঠল। পাশে দেখা যাবে একটা ডিজিটাল ঘড়ি। এলার্ম বাজতেছে। কালো ঘড়িতে লাল ফন্টে সময় দেখাচ্ছে।
ঘড়িতে ৮ টা বাজে।
ছেলেটা চটজলদি রেডি হয়ে নিল। ব্রাশ করতে বাথরুমে ঢুকল। বের হতে হতে পাউরুটি টোস্ট হল। বাথরুমের ভেতর থেকে ড্রেস পাল্টিয়েই বের হয়েছে।
মুখে কোনভাবে ঢুকিয়ে হাতে পানির বোতল নিয়ে ভোঁ দৌঁড়। বাসার সামনে যেয়ে দৌঁরেড় মাঝেই নিজের কপালটা চাপড়ে আবার বাসায় ফেরত আসল,এবার ফেলে যাওয়া কলেজের ব্যাগটা নিয়ে আবার দৌঁড়। বাসার সামনের রাস্তাতেই বাসটা দাঁড়িয়ে আছে। ও উঠল আর ছেঁড়ে দিল। কোন সিট খালি নেই, শুধু পেছনের একটা বাদে।
ও চারিদিকে তাকিয়ে ওখানে ধপাস করে বসল। নিচের দিকে তাকিয়ে ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থায় বসে রইল।
ছেলেটা ক্লাস করতেছে। ফিলোসফি ক্লাস। স্যার কী যেন বোঝাচ্ছেন।
পেছনের বোর্ডে মার্কার দিয়ে কিছু লেখালেখি আছে। টাইম এন্ড টাইড ওয়েইট ফর নান। টু বি এ পারফেকশনিস্ট অনলি ইউজ দ্যা টাইম পারফেক্টলি। ওনলি ওয়ান মিনিট ডিলেয় ক্যান চেঞ্জ ইউর লাইফ।
(১৬তম সেকেন্ড -২১ সেকেন্ড ) সেই আগের দৃশ্যগুলোরই কিছু স্টিল পিকচার পর পর বেশ কয়েকবার দেখানো হবে।
বুঝানো হবে, একই জিনিস একই রুটিন ঘটছে ত ঘটছেই। তবে, স্যারের পেছনের বোর্ডের লেখা পরিবর্তন হবে। একবার কিছু সমীকরণ, একবার বলবিদ্যা। মানে বুঝা যাবে, সময়ের ফ্লো টা এগিয়ে চলছে।
(২২তম সেকেন্ড থেকে – ৪৫তম সেকেন্ড) ছেলেটা ঘুম থেকে বিরক্ত চোখে উঠল।
পাশে সেই ঘড়িটাই। সেখানে ৮ টা ১ বাজে। ছেলেটা চিৎকার করবে, ধ্যাৎ।
ছেলেটা তাড়াহুড়া করে ব্রাশ করে, খেয়ে দেয়ে দিবে দৌড়। কিন্তু বাসার সামনের রাস্তায় সে যেতে যেতে তার সামনে দিয়ে বাস চলে যাবে।
কারণ সে ১ টা মিনিট লেইট।
ছেলেটা সাথে সাথে গ্যারেজে দৌড় দিয়ে সাইকেল বের করবে। প্রাণপণে বাসের সাথে পাল্লা দেয়ার জন্য জোরে জোরে আর শর্টকাট দিয়ে কলেজের পথে যেতে থাকবে।
যেহেতু সে শর্টকাট দিয়ে যাচ্ছে আর এই রাস্তা দিয়ে সব সময় যায় না, তাই চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে যাচ্ছে। উপরের একটা ব্যালকনীতে হঠাৎ একটা মেয়ে তার চোখে পড়ল।
মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। ছেলেটা ঘ্যাস করে সাইকেল থামাল আর হাঁ করে উপরের দিকে তাকিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল।
এমন সময় একটা গাড়ি দেখা যাবে। যেটা খুব দ্রুত বেগে এই রাস্তা দিয়েই আসছে।
(৪৬তম ও ৪৭তম সেকেন্ড)স্ক্রিন অন্ধকার।
কোন একটা সংঘর্ষের আওয়াজ শোনা যাবে।
(৪৮তম - ৫১তম সেকেন্ড )স্ক্রিনে আবার যখন আলো আসবে, দেখা যাবে ছেলেটা মাটিতে শুয়ে আছে। মেয়েটা দৌড়ে নিচে নামছে।
(৫২তম ও ৫৩ তম সেকেন্ড) দুই সেকেন্ডের ফ্লাশব্যাকে দেখানো হবে, ছেলেটা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিল। মেয়েটার চোখে হঠাৎ করে ভয়ের ছাপ দেখে ও লাফ দিয়ে সরে যায়।
আর সেই মুহূর্তে গাড়িটা সামনে দিয়ে হুঁশ করে বেড়িয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ পেছনের দিকে লাফ দেয়ায় ছেলেটা নিচে পরে যায়।
(৫৪তম - ৫৯তম সেকেন্ড) এতক্ষণে যখন মেয়েটা দৌড়ে নিচে নেমে এসেছে, দেখা গেল ছেলেটার কিছু হয় নি। সে হাত পা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মেয়েটা তার সামনে এসে স্থির দাঁড়িয়ে গেল।
ছেলেটা একটা বোকা হাসি দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল।
শুটিং এর পরে অবশেষে পুরো মুভিটাকে ১৫% ফাস্টার করে দেয়া হবে। এতে পরিচালক,প্রযোজক,কাহিনীকার ও চিত্রনাট্য পরিকল্পনাকারী, অভিনেতাদের নাম, কৃতজ্ঞতা দেখানোর সময় পাওয়া গেল। এতে যদি আরও দুটো সেকেন্ড বেশি লাগে, না হয় লাগল !! এক পেজেই ত সব দেখানো যাবে মনে হচ্ছে।
- - - - - - - - - -
আরেকটা আছে মাথায়।
প্লাটফর্ম অবশ্যই বিদেশী।
(১ম – ১৭তম সেকেন্ড)এখানে শুরুতে একটা ছেলেকে এমন ভাবে ফোকাস করা হবে যে সেই হিরো। মানে হিরোইক ভাব সাব থাকবে আর কি! অফিসে কাজ করছিল এমন সময় তার সেলফোনে একটা কল আসল। সেলফোন থেকে শোনা গেল, “আপনার ও নেগেটিভ ব্লাড ইজ মাস্ট এন্ড আর্জেন্ট। দুজন গুরুতর রোগী নিয়ে আমাদের একটা হেলিকপ্টার বিশ কিলো সামনের একটা রুট দিয়ে যাবে।
আপনি ঠিক সতের মিনিটে ওখানে পৌঁছাতে পারলে আপনাকে নিয়ে যেতে পারব। কপ্টারে রোগী আছে তাই লেট করা যাবে না। ”
(১৭তম - ১৯তম সেকেন্ড) কোন একটা মানসিক হাসপাতালের পোশাক পড়া একটা মেয়ে ছাদের কিনারায় বিপজ্জনক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এক হাতে সেলফোন, কানে দিয়ে আছে। পিছনে কিছু নার্স, একটু দূরে।
(২০তম ও ২১তম সেকেন্ড) একটা ফ্রক পড়া বাচ্চা মেয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ। পাশে দুজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে।
(২২তম ও ২৩তম সেকেন্ড) একটা খালি গলি। একটা ছেলে সাইকেলে হাতে ধরে পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
দৃষ্টি উপরের ব্যালকনির দিকে একটা মেয়ের প্রতি(প্রথম মুভি থেকে)। হঠাৎ হিরোর গাড়ি হুঁশ করে ছেলেটার সামনে দিয়ে বেড়িয়ে যাবে।
(২৪তম – ২৬তম সেকেন্ড) হাসপাতালের ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা আরও এক পা আগালো। পিছনের একটা নার্স প্রায় আর্তচিৎকার করে উঠল। মেয়েটার হাতে সেলফোন।
বলতেছে, “আমি গান শোনাবো। তুমি আসবে না?”
(২৭তম ও ২৮তম সেকেন্ড)দেখা যাবে হিরো বিশাল জামে পড়ে গেছে। ও গাড়ি রেখেই রাস্তায় দৌঁড়ানো শুরু করল।
(২৯তম সেকেন্ড - ৩৫তম সেকেন্ড) হিরো দৌঁড়াচ্ছে। একটা ছোট্ট গ্যাস স্টেশনের সামনে একটা মটর বাইক দেখতে পেল।
ও উপরের দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিল। আর কিছু না ভেবে মটর বাইকে উঠে পড়ে। পিছনে একটা লোক চিৎকার দেয়। মটর বাইকের মালিক সে। হিরো রিপ্লাই দেয়, “আই’ল গিভ ইট ব্যাক উইদ মানি।
”
(৩৬তম –৪০তম সেকেন্ড) হিরো অবশেষে পৌঁছাল। দৃশ্যটা হবে এরকম যে, হিরো একটা মাঠের মাঝে পৌঁছেছে। মটর বাইকটা থেকে নামল। এরপর একটা কাটসিন (ইউটিউব থেকে নেয়া), সেখানে দেখানো হবে একটা হেলিকপ্টার মাটি থেকে আকাশে উঠল। উড়ে গেল।
মানে, হিরো ওই হেলিকপ্টারে উঠতে পেরেছে। মটরবাইক টা মাঠে পড়ে রইল।
(৪১তম – ৫৬তম সেকেন্ড) সেই হাসপাতালের ছাদে থাকা মেয়েটা সেলফোনে কথা বলছে। ও পাশতথেকেও একটা ছেলের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে।
>আই ওয়েইটেড অন মাই লাইফ।
ইউ নেভার কেইম।
-প্লিজ বিশ্বাস কর, আমি রাস্তাতেই আছি। ৫টা মিনিট সময় দাও। আমার মটর বাইকটা চুরি গেছে। আমি ট্যাক্সি খুঁজছি, পাচ্ছি না।
>আমি জানি তুমি অনেক দূরে। তুমি মিথ্যেবাদী।
-আজকে সত্যি বলছি। প্লিজ আই নিড অনলি ৫ মিনিটস। মটর বাইকটা থাকলে আমি এতক্ষণে পৌঁছে যেতাম।
আমি দৌঁড়াচ্ছি, ট্যাক্সি খুঁজছি।
>সরি।
(৫৭তম ও ৫৮তম সেকেন্ড) ২০তম ও ২১তম সেকেন্ডে যেই ফ্রক পড়া বাচ্চা মেয়েটাকে দেখানো হয়েছিল, এবার, আবার ওকে ফোকাস করা হবে। একটা বেডে শুয়ে রক্ত নিচ্ছে। পাশের বেডে হিরো, যে এত কষ্ট করল এটুকুর জন্য।
হিরো উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। বাচ্চা মেয়েটা অজ্ঞান, হিরোর মুখে হালকা হাসি।
(৫৯তম – ৬০তম সেকেন্ড) মানসিক হাসপাতালের সামনের রাস্তাটায় হাসপাতালের পোশাক পড়া সেই মেয়েটা শুয়ে আছে। চারপাশে রক্ত। শি হ্যাজ কমিটেড সুইসাইড।
ছাদের উপরেই রেলিং ঘেঁষে সেলফোনটা রয়ে গেছে। উপর থেকে দেখানো হচ্ছে নিচের রাস্তাটা।
শুটিং এর পরে অবশেষে পুরো মুভিটাকে ৫% ফাস্টার করে দেয়া হবে। এতে পরিচালক,প্রযোজক,কাহিনীকার ও চিত্রনাট্য, পরিকল্পনাকারী, অভিনেতাদের নাম, কৃতজ্ঞতা দেখানোর সময় পাওয়া গেল। এতে যদি আরও দুটো সেকেন্ড বেশি লাগে, না হয় লাগল !! এক পেজেই ত সব দেখানো যাবে মনে হচ্ছে।
[পুরো ব্যাপারটা হল, মানে বুঝা যেন যায়, যে সিনেমার হিরো তার হিরোইক কাজ দিয়ে একটা মেয়েকে বাঁচাতে যেয়ে যেসব স্টান্ট করে; সেটা ফলো করার কিছু নাই। এতে আরেক জায়গায় আরেকজন ভিলেইন হয়ে গেলো। ]
** Click This Link এইখান থেকে অণুপ্রাণিত।
সারাদিন ভেবে এই দুটা বের করলাম।
© আকাশ_পাগলা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।