আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লুল গল্পঃ রিক্সা ভ্রমন !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! সকালবেলা ক্লাস ছিল । গেট দিয়ে একটু বের হয়েছি এমন সময় উপর তলার আন্টি ডাক দিলেন । আমি উপরে তাকিয়ে দেখি আন্টি বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । -জি আন্টি বলেন ! -তুমি কি কলেজে যাচ্ছ বাবা ? -জি আন্টি । -বাবা একটা উপকার করবে ? -জি আন্টি বলেন ।

-আজকে নিশির বাবা বাসায় নেই আর আমার শরীরটাও ভাল যাচ্ছে না । তুমি কি নিশিকে একটু স্কুলে নামিয়ে দিতে পারবে । নিশি ? এই সকাল বেলা করে ? আমার মনের ভিতর একটা সুক্ষ আনন্দ বয়ে গেল । আজ তাহলে নিশির সাথে রিক্সায় চড়া হয়েই যাবে ! ভালতো ! আমি রিক্সা নিয়ে নিশির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । কিছুক্ষন পরেই নিশি নিচে নেমে এল ।

পরনে স্কুল ড্রেস আর হাতে পানির ফ্লাক্স । আমার কেন জানি নিশিকে দেখে হাসি চলে এল । যেন পিচ্চি একটা বাচ্চা ! কিন্তু এই পিচ্চি মেয়ের সে কি ভাব ! আমি নিজে কত বার নিজে রিক্সায় নিয়ে ঘুরতে চেয়েছি কিন্তু নিশি আমাকে একদমই পাত্তা দেয় নি । এই তো মাস খানেক আগের কথা । আমি রিক্সায় করে আসছিলাম ।

দেখি নিশি ওর স্কুলের সামনে দাড়িয়ে আছে । গেটের কাছে । বোধহয় ওর মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে । আমি এই ব্যাপারটা এখনও ঠিক বুঝি না । এতো বড় মেয়েকে কেউ সাথে করে স্কুলে নিয়ে যায় ? আবার সাথে করে স্কুল থেকে নিয়ে আসে ? আমার তো মনে হয় নিশির বান্ধবীরা এই ব্যাপারটা নিয়ে হাসিহাসি করে ।

আমি রিক্সা থামিয়ে নিশিকে বললাম -বাসায় যাবে না ? নিশি কেমন মুখ শুখনো করে বলল -জি যাবো । -তা এখানে দাড়িয়ে কেন আছো ? -আম্মু আসবে । -তোমার স্কুল ছুটি হয় কয়টায ? -দেড়টায় । আমি ঘড়ি দেখলাম । প্রায় দুটো বেজে গেছে ।

-আরে অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করছো তো । আসো ! আমার সাথে আসো । -জি না । আম্মু বকবে । -আরে বকবে না ।

এসো । -জি না আপনি চলে যান । আপনার সাথে রিক্সায় চড়বো না । আমি আরো কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু বললাম না । আসে পাশের কয়েকজন কৌতুহলী চোখ আমাদের উপর ছিল ।

আমি কিছু না বলে চলে এলাম । মনের ভিতর সুক্ষ একটা অপমান বোধও হচ্ছিল । যখন বাসায় আসলাম তখন দেখি নিশির আম্মু বাসা থেকে বের হচ্ছে । আমি কেবল আন্টিকে বললাম -নিশি স্কুলের সামনে দাড়িয়ে আছে । -আজকে একটু দেরী হয়ে গেছে ।

-হুম । আমি ওকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু ও আমার সাথে আসতে চাইলো না । আন্টি আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে চলে গেল তাড়াহুড়া করে । সেদিন নিশিকে নিজে ডেকেও রিক্সায় চড়াতে পারি নাই আর আজকে নিশি নিজে এসে আমার রিক্সায় চড়তেছে ! এই হল মজা ! নিশি রিক্সায় উঠে বসলো ! কেমন যেন একটু জড়সড় আর চুপ চাপ ! আমি আছি আনন্দে । মনের ভিতর একটা ফুর্তি ফুর্তি লাগছে ।

মেয়ে হিসাবে নিশির সুনাম সারা এলাকা জুড়েই। অনেকে ওর সাথে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু নিশি কাউকেই ঠিক পাত্তা দেয় নি । আর ওর সাথে একই বাসায় বাড়িতে থাকার কারনে এমনিতেই পাড়ার অন্য ছেলে গুলোর ঈর্ষার পাত্র ছিলাম আর আজকে ওর সাথে রিক্সাতে চড়তে পেড়ে তো তাদের ঈর্ষার আগুনে আর একটু পরিশোধিত কেরোসিন ঢেলে দিলাম ! আমি কেবল একটু অপেক্ষা করছি কেউ একজন দেখুন ! একজন দেখলেই সারা পাড়া জেনে যাবে ! আমি এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম, কিন্তু কোথাও কেউ নাই । নাহ ! পোলাপাইন কামের সময় থাকে না । মোড়ের মাথায় এসে কাউকে আশা করেছিলাম কিন্তু এখানেও নাই ! অবশ্য এতো সকালে কেউ ঘুম থেকেই উঠে নাই মনে হয় ! নাহ হল ! কাজ হল না ! -কি ব্যাপার এতো বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন কেন ? কাকে খুজছেন ? -যে কাউকে ? -মানে ? -মানে হল একজন কে খুজতে যে আমাদের কে একসাথে দেখুন ! নিশি আমার দিকে কেমন অবিশ্বাসের চোখে তাকালো ! তারপর বলল -আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না ! আপনি কেন চাচ্ছেন কেউ আমাদের দেখুক ? আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম -আরে তোমার সাথে রিক্সায় উঠলাম এটা কেউ দেখবে না ? নিশি আমার থেকেও অবাক হওয়ার ভাব করে বলল -কেন শুনি ? -আরে সুন্দরী মেয়ের সাথে রিক্সায় উঠলাম যদি সেটা যদি কাউকে দেখাতেই না পারলাম তাহলে কি লাভ বল ! নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল -আচ্ছা ! আমার সাথে রিক্সায় উঠলেন সেটাতে কোন অনুভুতি নাই কেউ দেখলো না এইটাই আপনার কাছে বড় ব্যাপার ? এই বলে নিশি অন্যদিকে তাকালো ! আমি কেবল অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম নিশি মুখ ভার করে ফেলেছে ! -আরে ! তা হবে কেন ? তোমার সাথে রিক্সায় ওঠা সত্যি ...... আমি কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলাম ।

আমার মনে কেবল একটা প্রশ্নই দোলা দিল কি ব্যাপার নিশি এই ভাবে রাগ করলো কেন ? কেন রাগ করলো ? -এই ! শুনো ! কোন খোজ নাই ! আমি যে ওর পাশে বসে আছি বা আমি যে ওকে কিছু বলতেছি কোন খোজ নাই ! এই মেয়ে গুলাকে বোঝতে পারে কার সাধ্য ? সেদিন এই মেয়েই আমার সাথে রিক্সায় উঠতে চায় নাই আর আজকে যখন রিক্সায় উঠেছে আমি আনন্দিত কিনা এই নিয়ে রাগ করে বসে আছে । আশ্চর্য !! কি করবো ? আর খুব বেশি সময় নেই নিশির স্কুল আসতে ! মেয়েটা যদি মুখ গোমড়া করেই নেমে যায় তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়ে যাবে ! জীবনের প্রথমে নিশির সাথে রিক্সায় উঠলাম আর শেষ হল একটা মুখ গোমড়া দিয়ে ! আমি সাহস কর নিশির হাত ধরে এদিকে টান দিলাম ! একটা ঝাড়ি খাওয়ার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু দেখলাম নিশি কিছু বলল না ! নিশি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল -কি বলবেন বলেন ? -তোমার হাতে কোন পাওয়ার ষ্টেশন আছে ? বা নেগেটিভ চার্জ ? -মানে কি ? -না তোমার হাত ধরেই আমার সারা শরীরে কেমন একটা কারেন্ট প্রবাহিত হল ! আমি মানে আমার রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ কিনা ! নেগেটিভ পজেটিভে সংঘর্ষ !! -ফাজলামো করেন ? -না সত্যি ! দেখ ! আর একবার হাত ধরতে দেও ঠিক আবার শক খাবো ! এই দেখো ! এই বলে আমি আবার ওর হাত ধরলাম ! এবং একটা শক খাওয়ার মত অভিনয় করলাম ! নিশি আবার ওর হাত ছাড়িয়ে নিল ! -আরে দেখো না ! -হয়েছে ! আপনার আর ঢং করতে হবে না ! নিশির মুখে হাসি ফুটলো ! যাক হাসিতো ফুটলো ! -আপনি খুব ফাজিল ! -আর তুমি খুব সুন্দর ! -হয়েছে ! লজ্জা শরম কিচ্ছু নাই ! -আচ্ছা ! দাড়াও যাবার সময় তোমার খবরই আছে ! -ইস ! আপনার সাথে গেলে তো ! -মানে কি ? একা একা কিভাবে যাবা ? তোমার মায়ের না শরীর খারাপ ! এই জন্যই তো আমাকে দেহরক্ষী করে পাঠালো ! -পাহারাদার !! -পাহারাদার ? আরো কিছু বলার ছিল কিন্তু দেখলাম নিশির স্কুল চলে এসেছে ! নিশি নেমে গেল ! যাওয়ার সময় কেবল বলল -আমার স্কুল দের টায় ছুটি হয় ! -আমি জানি ! কলেজে দুইটার দিকে এটা ক্লাস ছিল । ক্লাসটা না করেই এলাম ! কলেজ লাইফে একটা দুইটা ক্লাস না করলে কোন ব্যাপার না ! রিক্সা নিয়ে এসে দেখি নিশি দাড়িয়ে আছে । রিক্সা থামাতেই ও রক্সায় উঠে বসলো ! কোন কথা ছাড়াই ! আমি আসে পাশে একটু লক্ষ করে দেখলাম বেশ কিছু কৌতুহলী চোখ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে ! -চলুন ! রিক্সাওয়ালা মামাকে চালাতে বললাম -ওরা কি তোমার বান্ধবী ? -হুম ! -তোমার বান্ধরীরা আমাদের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিল কেন ? -আপনাকে দেখছিল ! -আমাকে ? কেন ? নিশি একটু হেসে বলল -এমনি ! -আচ্ছা তুমি ওদের কি বলেছ ? -কি বলবো ? -না মানে একটা ছেলের সাথে একই রিক্সায় আসলে আবার যাচ্ছ ! তাদের মনে তো একটা কৌতুহল আসতেই পারে ! তাদের কে কি বলেছ ? -শুনুন কি বলেছি বা কি বলবো সেটা আমার ব্যাপার ! আপনি আপনার টা চিন্তা করেন । আপনার ঐ পাড়ার লোকদের ফোন দেন ।

সকাল বেলা না আফসোস হচ্ছিল কেউ দেখলো না ! এখন দেখুক ! -সত্যিই ফোন দেবো ? -দেন ? আমারতো আর ভয় নাই ! আমি একটু হাসলাম । বললাম -না থাক ! কেউ দেখুক বা না দেখুক, কিছু যায় আসে না ! একই সাথে রিক্সায় চড়েছি এটাই বড় কথা ! হঠাৎ নিশি রিক্সা দাড়াতে বলল ! -কি হল ? -কিছু না ! -তাহলে রিক্সা দাড়াতে বললে কেন ? নিশি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল -এই জন্যই আপনার এতো দিনে কোন গার্লফ্রেন্ড হয় নাই ! -মানে কি ? -মেয়েদের কিভাবে পটাতে হয় আপনার জানা নাই ! সকাল বেলা যখন সাহস করে হাত ধরেছিলেন মনে হয়েছিল নাহ, আমি যেই রকম ভেবেছিলাম আপনি সেই রকম না ! কিন্তু এখন দেখছি সেই রকমই । -মানে কি ? -মানে বুঝেন না । এই গরমের বেলায় একটা মেয়ে আপনার সাথে রিক্সায় যাচ্ছে ! মেয়েটার গরম লাগছে না ? -আচ্ছা ! বাতাস করবো ? গরম লাগছে ? আমার কথায় নিশি বেশ বিরর্ক্ত হল ! কিছুক্ষন সরু চোখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে তারপর চোখের ইশারায় দেখিয়ে দিল । আমি ওর চোখ ইশারার দিকে তাকিয়ে দেখালাম ওখানে একটা একটা আইসক্রিমের ভ্যান ! আমি মুহুর্তের ভিতরেই বুঝে গেলাম কি করতে হবে ।

আসলেই আমি একটা গাধা ! নিশিকে তো আরো আগেই আইসক্রিম খাওয়ানোর দরকার ছিল । লাফ দিয়ে দুটো চকবার কিনে আনলাম । যখন আমাদের রিক্সাটা পাড়ার ভিতর এসে ঢুকলো দেখলাম মোড়ের কাছে আমাদের এলাকার বেশ কিছু পোলাপাইন দাড়িয়ে আছে । আমাকে আর নিশিকে এক রিক্সায় দেখে ওদের চোখ বড় বড় হয়ে গেছিল ! ওদের সামনে দিয়ে যখন আমাদের রিক্সাটা যাচ্ছিল আমার নিজের কাছে তখন মনে হচ্ছিল যে আমি এই এলাকার রাজা ! নিজের রানী কে নিয়ে রিক্সা ভ্রমনে বের হয়েছি । মুখে একটা বিজয়ীর হাসি ! আমার প্রজা গুলো আমাকে দেখে সালাম ঠুকছে ! বাসার কাছে যখন রিক্সা থেকে নামলাম নিশি আমাকে বলল -আপনার আসা তো পুরন হল ! সবাই তো দেখলো ! এখন নিশ্চই সবাইকে গিয়ে গাল গল্প দিয়ে বেরাবেন ! -না ! না ! ছিঃ ! আমাকে দেখে তোমার এমন ছেলে মনে হয় ? -না্হ ! মনে হবে কেন ! আমি জানি ! শুনুন আমি আশা করবো আপনি যা বলবেন সত্যটা বলবেন ! আমি বললাম -আচ্ছা আমি সত্যটাই বলবো ! নিশি আমার কথা শুনে একটু খুশি হল মনে হল ! বলল -আপনি একটা কথা জানতে চেয়েছিলেন না ? -কোন টা ? -ঐ যে আমার বান্ধবীদের আপনাকে নিয়ে আমি কি বলেছি ? -হুম ! -এই নিন ! এই কাগজে লেখা আছে ! নিশি আমার দিকে একটা দুমড়ানো কাগজ এগিয়ে দিয়েই ভিতরে চলে গেল ।

চলে গেল বললে ভুল হবে ! দৌড় দিল ! আমি কাগজটা খুলতেই একটা ধাক্কার মত খেলাম ! সেখানে কেবল একটা শব্দই লেখা ছিল ! "বয়ফ্রেন্ড" !!! ফেবু লিংক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।