সুখি হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় বিবেক হীন হওয়া।
ছোট বেলায় পড়েছিলাম পঞ্চ নদের দেশ – পাঞ্জাব। কিন্তু পাঞ্জাব এসে তো এ যাবত নদীর কোন দেখা পেলাম না। নদী থেকে থাকলেও তা এ রাজ্যের কৃষিকাজে কতটুকু অবদান রাখে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। সে তুলনায় বাংলাদেশের কৃষক অনেক বেশি ভাগ্যবান।
সারা বাংলাদেশ জুড়ে নদী – নালা, খাল-বিল যেভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তা বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই। এ কারণে কৃষি জমি সেচ নিয়ে বাংলার কৃষককে অতটা ভাবিত হতে হয়না। কিন্তু এর উল্টা চিত্র ভারতে। আমার আট দিনের ভারত সফরে এক হুগলী নদী ছাড়া আর কোন নদী চোখে পড়েনি। ভারত কি আর সাধে ফারাক্কা কিংবা তিস্তা বাঁধ দিয়ে জোর পূর্বক পানি আটকে রাখে? তার নিজেরই হয়না।
তাই গায়ের জোরে বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করা। পৃথিবীতে এখন চলছে পেশীশক্তির মহড়া। যার ক্ষমতা যত বেশি সে তত চেষ্টা করে যতদূর সম্ভব দুর্বলতর প্রতিবেশি দেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করে রাখতে। যেমনটি ভারত করছে বাংলাদেশের সাথে, চীন ভারতের সাথে, এক কোরিয়া আরেক কোরিয়ার সাথে……. এ রকম অনেক উদাহরণ আমরা চোখের সামনে অহরহ দেখছি।
কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে জেগে ঝটপট তৈরি হয়ে গেলাম আরেকটা দূরপাল্লার সড়ক পথ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের নিমিত্তে।
কিন্তু সবাই হোটেলে থেকে নীচে নেমে দেখি আমাদের মহামান্য ড্রাইভার সবে মাত্র চোখ ডলতে ডলতে গাড়ির ভেতর থেকে বের হচ্ছেন। ব্যাটা গাড়ির ভেতরেই রাত্রি যাপন করেছিল। আমাদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখেও তার মধ্যে কোন বিকার নেই। সে আপন মনে আমাদের কিছু না বলে প্রাতঃ কর্ম সারতে হোটেলের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেল। বাংলাদেশ হলে এসব ক্ষেত্রে মেজাজ ধরে রাখা ভীষণ দায় হত।
ওকে গতকালই আমাদের যাত্রার সময় শুনিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার সমস্যা হলে সে আগেই বলতে পারত। আমরা তাহলে খানিকটা বেশি ঘুমিয়ে আরও পরে বের হতাম। ভাগ্যিস হিন্দি জানা ছিল না, নইলে ব্যাটাকে আচ্ছামত ধোলাই দিয়ে দিতাম। আমার সফরসঙ্গীরা আবার ভারতে এসে যেন ধৈর্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
ত্যাঁদড় ড্রাইভারকে কেউ কিচ্ছু বলছেনা; এতেই ব্যাটা আরও বেশি আস্কারা পেয়ে বসেছে। একজন বলল, থাক কিছু বলার দরকার নেই। তাহলে ও রাস্তায় ওভার স্পীডে গাড়ি চালিয়ে একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
সকাল সাতটায় আমাদের যাত্রা শুরু হল আজমিরের উদ্দেশ্যে। রাস্তার দু ধারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চললাম।
পাঞ্জাব – হারিয়ানার রাস্তায় অনেক বে- ওয়ারিশ গরু ঘুরে বেড়াতে দেখলাম। এরা যাযাবরের মত ঘুরে বেড়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। কেউ এদের কোন ক্ষতি করে না। এক সময় বুড়ো হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তারা।
এ দেশে গরুর মাংসের কোন কদর নেই।
অনেক রাজ্যে তো গরু জবাই করা সম্পূর্ণ নিসিদ্ধ। মনে মনে ভাবলাম – ভারতীয়রা গরু খায়না বলেই আমরা ভোজন রসিক বাঙালী গরুর মাংস চোখে দেখতে পারছি। অন্যথায় হয়ত বছরে একবার কুরবানির ঈদে গরুর মাংস খেয়েই মুখ মুছে রাখতে হত পরের ঈদের জন্য। সৃষ্টিকর্তা তার অপার মহিমায় পৃথিবীতে সুন্দর ইকো - সিস্টেম চালু করে রেখেছেন। নইলে কত যে নৈরাজ্য আর হাহাকার পড়ে যেত এই ধরাধামে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
পাঞ্জাব আর হারিয়ানা রাজ্যের মধ্যে ভৌগোলিক কিংবা জীবনযাত্রার মানের তেমন কোন তফাৎ চোখে পড়েনি। অবশ্য এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হলে যেতে হবে আরও ভেতরের লোকালয়ে। কিন্তু সে সময় কিংবা সুযোগ কোনটাই আমাদের হাতে নেই। তবে রাজস্থানে প্রবেশ করার সময় স্পষ্টতই বুঝতে পারা গেল কোথায় আসলাম। দূরে মরীচিকার হাতছানি, আর রাস্তার দু পাশে দিগন্ত রেখা অব্দি দেখা গেল ধু ধু মরুভূমি।
গাছ – গাছালি বলতে মাঝে মাঝে কিছু বাবলা গাছের ঝোপ দেখতে পেলাম। মাঝে দেখা যায় উটের গাড়িতে চড়ে কিংবা পীঠে সওয়ার হয়ে আপন গন্তব্যে চলছে কিছু রাজস্থানি। তবে যে রকম উটের কাফেলা এখানে আশা করেছিলাম সে রকম কিছু দেখতে না পেয়ে কিছুটা হতাশ হতে হল। গাড়ির অতিরিক্ত স্পীডের কারনে উটের ছবি ও ঠিক মত তুলতে পারলাম না।
যে সড়ক ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি তা একেবারে জনমানব শুন্য।
অনেক দূর অতিক্রম করার পর হঠাৎ দুই একজন মানব সন্তানের দেখা মিলে। এদের পোশাক আসাক একটু বৈচিত্র্যময়। মরুভূমির তপ্ত দহন থেকে শরীর বাঁচাতে মেয়েরা পা থেকে মুখ অব্দি ঢেকে রাখে।
এক ধরনের ঘাঘরা জাতীয় জামা আর লম্বা ওড়না মেয়েদের প্রধান পোশাক। ছেলেরাও মুখ ঢেকে রাখার জন্য ওড়না কিংবা পাগড়ী ব্যবহার করে।
ছেলেদের কেউ কেউ জিন্স পরলেও শেরওয়ানী, পাঞ্জাবী, কুর্তার চল এখানে বেশি। আমরা আস্তে আস্তে রাজস্থান পেরিয়ে যতোই আজমিরের সন্নিকটে যাচ্ছি আশে পাশে দৃশ্যমান হচ্ছে বড় বড় পাথুরে পাহাড়। এসব পাহাড় থেকে পাথর কেটে এনে তা ইমারত নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে টাইলসের বিকল্প হিসাবে। রাস্তার দুই ধারে এরকম অনেক পাথর কাটার কারখানার দেখা পেলাম।
অনেক সুন্দর ভাবে ফালি ফালি করে কেটে পাথরের টাইলস সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো রয়েছে অনেক দোকানে।
হাতে সময় থাকলে একটু ঢু মারা যেত এ সব দোকানে। পাথরের অনেক সুন্দর সুন্দর শো পীচ ও দেখলাম। কিন্তু এ গুলি নিরেট পাথরে তৈরি বিধায় বেজায় ভারি। আমরা আজমির শহরে পৌঁছার আগেই অস্তায়মান টকটকে লাল সূর্যটা দূরে পাথুরে পাহাড়ের কোলে হারিয়ে গেল। (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।