বিদায় - পথের নয়, পথিকের...
প্রাথমিক অনুভূতিঃ
ইথারে প্রতিদিন অজস্র সুর ছিন্ন হয়....
অন্ধকারে চিরায়িত আকর্ষন ঝুলে থাকে,
আলোতে লেপটানো ঝিমুনি।
ইথারের সুর গুলো সময় ভ্রমন শিখেছে।
অতীত খুঁড়ে খুঁড়ে পঞ্চাবৃত আলিঙ্গনে জড়ায়,
ছয়টি আনকোরা ইন্দ্রিয়। ।
সময় বয়ে যাওয়ার সাথে সাথে জীবনটা ধোঁয়াটে হয়েছে।
অন্ধকার সীমাহীন।
আলো,স্বার্থপরের মতো কেন্দ্রীভূত, সীমাবদ্ধ।
এক.
হাটতে হাটতে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল একটি প্রাগৈতিহাসিক কূপের সাথে। উঁকি দিতেই নিকষ কালো অন্ধকার! এমন গাঢ় অন্ধকার যে দেখে মনে হবে এর ভিতরে অন্ধকারটুকুকে গুলিয়ে দেয়া হয়েছে। হাতটা ভিতরে এগিয়ে দিয়ে দেখলাম অন্ধকারটা ধরা যায় কিনা! জানি ধরা যাবে না, তবু এই গাঢ় অন্ধকারকে তরল তরল মনে হচ্ছে।
চারপাশে ভাল করে তাকালাম, দিনের আলো সব কিছুতে লেপটে আছে, তবু এই কূপের গভীরতায় কি নিঝুম, কি প্রশান্তির অন্ধকার! আলোগুলো এত বোকা! কূপের মাঝে ঢুকতেও পারে না।
জীবনটা আমার জন্য খুব বেশি জরুরী নয়, অনুভবও করছি না যে জীবনটা থাকা খুব বেশি জরুরী, বরং এই কূপের অন্ধকারই আমাকে বেশি টানছে। জীবনের একটা সমাপ্তি আশা করছি, কিভাবে সমাপ্তিটা হবে সেটা ভেবেই তলিয়ে যাচ্ছিলাম, কূপটা পেয়ে ভালোই হয়েছে একটা ডুব দিবো এই তরল অন্ধকারে।
হঠাৎ অতীতগুলো হাঁচড়ে পাঁচড়ে চোখের সামনে উঠে আসা শুরু করেছে, কাছে এসে ভীড় জমিয়েছে বেশ, কেউ কেউ এসে ঠোকর দিতে চাচ্ছে, একই ঠোকর বার বার পুনরাবৃত্তি!!
কোন কিছু না ভেবেই চোখ বন্ধ করে ঝাপ দিলাম কূপের তরল অন্ধকারে.....
দুই.
প্রচন্ড গতিতে নিচের দিকে পড়ছি, চোখটা বন্ধ হয়ে গেছে সেই কখন, খুলতে পারছি না.... জৈবনিক একটা ভয় শরীরে শিহরণ তুলে যাচ্ছে, বুকের বাম পাশটাতে ক্রমশ উত্তেজনার বন্যা আর ঢিপ ঢিপ ঢিপ ঢিপ, একটা ঊর্ধমুখী শিহরণ প্রবল ভাবে টের পাচ্ছি, এই একঘেয়ে প্রচন্ড গতিতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি, পতনের অপেক্ষা আর ভাল লাগছে না। কতক্ষন ধরে এই পতন? উফফ আমি বোরড হয়ে গেছি! এতক্ষন যে জৈবনিক ভয়টা কাজ করছিল সেটা উবে গেছে, সেখানে ভর করেছে পতনের আকুতি, শারীরিক উত্তেজনা তেমনই রয়েছে।
হঠাৎ করে টের পেলাম গতিটা মনে হয় একটু বেড়ে গেছে, কোন কিছু আমাকে নিচে টেনে নিচ্ছে, নিজের অজান্তে হাত ছুড়তে লাগলাম উপরের দিকে, আর এখন উপলব্ধি করলাম অন্ধকারটাকে তরল ভেবে বড্ড বোকামী হয়ে গেছে, আমার উপরে ফিরে যাওয়া উচিত।
পড়ছি পড়ছি এবং পড়ছি...
তিন.
কতক্ষন এভাবে রয়েছি আমার ঠিক মনে নেই, অচেতন হয়ে গেছিলাম কি? সব কিছু এভাবে থেমে রয়েছে কেন? অবাক ব্যাপার! আমার তো এভাবে থেমে থাকার কথা নয় আমার এখন পগারপার হবার কথা। বুকের ঢিপ ঢিপ টা তেমনই রয়েছে, চোখটা আস্তে আস্তে খুললাম, কিছুই দেখতে পারছি না, দেখতে পারার কথাও না চারপাশে নিকষ অন্ধকার, হাতড়ানো শুরু করলাম অনেক বেশি হাতড়ালাম... আটকে গেছি এই কুপের মাঝে! উপরেও উঠতে পারছি না নিচেও নামছি না, পায়ের নিচেও শূন্যতা উপরেও শূণ্যতা অন্ধকারে ভাসমান হয়ে ভেসে আছি। হলো কিছু? উপরে তাকালে কূপ-মুখের পরিসীমা জুড়ে আকাশটাকে দেখা যায়, কয়েকটা চিৎকার দিয়েছি তেমন ভাবেই, কিন্তু কারো মাথা এসে উঁকি দেয় নি, দেবার কথাও নয় কারন কূপটি যেখানে, সেখানে মানুষজন আসার কথাও না। তবে চিৎকার দেবার পর অনেক নিচে একটি চিৎকার শুনতে পেয়েছি আরো কিছু চিৎকার এবং শেষে মনে হলো অনেক গুলো চিৎকার।
এত অন্ধকার যে কিছু দেখতেও পারছি না। শুধু ঝুলে আছি।
চার.
কূপটাকে যতটা ছোট মনে করেছিলাম আসলে এটা ততো ছোট নয়, অনেক বড়, আমি যেখানে ঝুলে আছি তার থেকে একটু এদিক সেদিক করতে পারছি, পাশের দেয়ালটা খুঁজে পাইনি। সময়টা আটকে গেছে বলে মনে হচ্ছে, আমি কখনো মাথা নিচে পা উপরে, পা নিচে মাথা উপরে করে সময় পার করছি। মাঝে মাঝে দু একটা চিৎকার নিচ থেকে শুনতে পাই, কিন্তু বুঝতে পারি না কি বলা হচ্ছে, মানুষের কি আর কাজ কাম নাই সব এসে এই কূপে পড়েছে পগারপার হতে?
পাঁচ.
এভাবেই ঝুলে আছি কয়েকদিন হলো, মাঝে একবার কেবল গতির শিকার হয়েছিলাম, ভাবলাম এবার বুঝি পগারপার হতে পারবো, কিন্তু কিছুদূর নেমে আবার ঝুলেই থাকা! আমার হৃদপিন্ডটা আর কাজ করছে না, ঢিপ ঢিপ শুনতে পাই না, অনেক চেষ্টা করেছি, শ্বাস প্রশ্বাসের কোন অনুভূতিও পাই না, পগারপার কবে যে হবো ঠিক বুঝতে পারছি না।
বোকামী করে ফেলেছি বড্ড বেশি বোকামী করে ফেলেছি.... আলো আমাকে এখন খুব বেশি টানে আমি উপরে তাকালে কূপ-মুখের পরিসীমার আকাশটুকু বিন্দুর মতো দেখতে পাই, ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছি, পগারপার হতে এত ঝামেলা কে জানত!
একটা সিদ্ধান্তে আসা গেল, "অন্ধকার কখনোই তরল নয়, বায়বীয়!"
***চতুর্মাত্রিক.কম এ পূর্ব প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।