যা এখনও জানিনা তা বলতে চাই না
সম্প্রতি জানুয়ারী’২০১০ এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের শেষে যৌথ ইশতেহার প্রকাশের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের বিভিন্ন অংশ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। চুক্তির ফলাফল, লাভ-ক্ষতি, ভয়াবহতা নিয়ে অনেকেই বিশ্লেষন করেছেন।
কিন্তু পুরো চুক্তির সামগ্রিক বিশ্লেষন অর্থাৎ এই চুক্তির রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের জায়গা থেকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ এখনও পর্যন্ত কেউ হাজির করেন নি। যারা এই চুক্তিটিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্লেষণ করে লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করছেন এটা যেমন ডানপন্থী বিচ্যুতি ঠিক তেমনি হাসিনা-মনমোহন চুক্তিকে শুধু মাত্র নিরাপত্তা-সামরিক চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করাটাও বামপন্থী বিচ্যুতি। চুক্তির সামরিক ও অর্থনৈতিক দিকগুলোর গুরুত্ব অবশ্যই আছে।
কিন্তু শুধু এই দুটি দিক দিয়ে বিচার করে দেখলে চুক্তির সামগ্রিক তাৎপর্য বুঝা যায় না। এই চুক্তিকে বিচার করতে হবে এর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে। তাহলেই কেবল চুক্তির ফলে বাংলাদেশসহ দক্ষিন এশিয়ায় মুক্তিকামী জনগণের উপর যে সামগ্রিক আগ্রাসনের রূপরেখা তৈরি হয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়বে।
যে চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারকগুলো সাক্ষরিত হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। প্রকাশিত যৌথ ইশতেহারের মাধ্যমে অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে জানা গেলেও পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এতে নাই।
এই চুক্তি নিয়ে কিছু বলার ক্ষেত্রে শুধু চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে বিশ্লেষণ করলে সামগ্রিক বিষয়টা বোধগম্য হবে না। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে-পিছের অনেক ঘটনা পর্যালোচনায় নিয়েই চুক্তিটি বিশ্লেষণ করা উচিত।
৯/১১ এর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বের জনগণের উপর চাপিয়ে দেয় তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধ’। যাতে জড়িয়ে পড়ে আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, উপমহাদেশের ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের উপর ভর করে আফগানিস্তানে আল-কায়েদা ধ্বংসের সূচনা করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ।
ধীরে ধীরে তা পাকিস্তানেও সংক্রমিত হচ্ছে। বিগত কয়েকদিনে পাকিস্তানেও মার্কিন সেনাদের সাথে পাকিস্তানিরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। আফগানিস্তানে আল-কায়েদা দমনে ভারতও নিজ স্বার্থে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন করে।
২০০৫ সালে যুদ্ধবাজ মার্কিন বুশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস দক্ষিন এশিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কিত নীতি ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে ভারতীয় হস্তক্ষেপে তাদের সম্মতির কথা বলেন। সেই সাথে বাংলাদেশকে পরবর্তী আফগানিস্তান বলেও আখ্যায়িত করেন।
যার ফলে দক্ষিন এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সহযোগি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারত নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ লাভ করে। যার ফলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন নিয়ে ভারত শ্রীলংকায় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছে, মালদ্বীপে সৈন্য নামিয়েছে, নেপালের রাজতন্ত্রকে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে সহযোগিতা করেছে এবং স¤প্রতি সেখানে মাওবাদীদের নির্বাচিত সরকারকে চক্রান্তমূলকভাবে অপসারণ করেছে; ভুটানের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে; আফগানিস্তানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের দালাল শাসকশ্রেনীর ক্ষমতা ভাগাভাগি ও বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থার সংকট থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পরিকল্পনায় সৃষ্টি হয় ১/১১। এদেশের শাসকশ্রেণীর দালালী চরিত্র থাকলেও যেহেতু ভোটের জন্য তাদের জনগণের কাছে যেতে হয় তাই তারা পুরোপুরি সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারে না। তাছাড়া নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়া এবং সর্বক্ষেত্রে কমিশন ও ভাগ বাটোয়ারার জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে পুরোপুরি সফল হচ্ছিল না।
ফলে তার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো আরো নতজানু একটি শাসক শ্রেণী। যারা পুরোপুরি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে। ‘সুশাসন’, ‘গণতন্ত্র’, ‘দুর্নীতিমুক্ত’ বাংলাদেশের আওয়াজতুলে জনগণকে বোকা বানিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশের ‘দেশপ্রেমিক’ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বাংলাদেশের দালাল শাসকশ্রেণীকে আরো নতজানু করার কাজ শুরু করে। আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে স¤প্রসারণবাদী ভারত প্রথমে নিজেকে এর সাথে জড়ায়নি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তারা এটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সম্ভব হয়।
তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান ও ১/১১ এর প্রধান রূপকার মঈন উদ্দিনের ভারত সফর এবং উপহার অশ্ব লাভ তার প্রমাণ।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং স¤প্রসারণবাদী ভারতের সাথে আপোষরফার মাধ্যমে ভোটের পোশাকে ক্ষমতায় আসে মহাজোট। ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে তাদের দাসখতই ছিল মার্কিন ও ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় বাস্তবায়ন করা। অবৈধ ফখরুদ্দিন সরকারের মডেল পিএসসি বাস্তবায়ন, সমুদ্রের গ্যাস ব্লক ইজারা দেওয়া, হাসিনা-মনমোহন চুক্তি তারই ধারাবাহিক অগ্রগতি।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আঞ্চলিক সহযোগি হিসেবে স¤প্রসারণবাদী ভারত দক্ষিন এশিয়ায় নিজেদের রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বজায় রাখতে চায়।
সেই সাথে ভারত তার দেশের জনগণের উপর দমন পীড়ন অব্যাহত রাখতে ‘আভ্যন্তরিন নিরাপত্তা’র স্বার্থে বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী জাতি ও জনগোষ্ঠীকে দমন করতে চায়। এই পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে স্বাক্ষরিত হয়েছে হাসিনা-মনমোহন চুক্তি।
হাসিনা-মনমোহন চুক্তির সামরিক তাৎপর্য বিশাল ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনা বাহিনী পূর্ব বাঙলার নিরস্ত্র জনগণের উপর সামরিক হামলা চালালে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতের পশ্চিম বাংলা-আসাম-মেঘালয়-ত্রিপুরা-মণিপুরে আশ্রয় লাভ করে। ভারতের গণতান্ত্রিক শক্তি ও ভারতের বিভিন্ন জাতি সমূহের স্বাধীনতকামী জনগণ সেদিন পূর্ব বাঙলার জনগণের পাশে নিঃস্বার্থ সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
কিন্তু ভারতের বৃহৎ পুঁজির প্রতিনিধি ভারত সরকারের সমর্থন ছিল ভবিষ্যত বাংলাদেশের উপর তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। ভারতীয় শাসক শ্রেণীর বাংলাদেশের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এই সমর্থনকে কেন্দ্র রেখে বাংলাদেশের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ ভারতকে এক মহান গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে ভারতের প্রতি শাসকশ্রেণীর আনুগত্য প্রকাশকে বৈধ করার চেষ্টায় রত আছেন।
হাসিনা-মনমোহন চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বেঁধে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন জাতির মুক্তি সংগ্রাম দমনে ভারতীয় রাষ্ট্রের তৎপরতার সাথে। ভারত সরকার কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের স্বাধীনতাকামী ও চরম নিপীড়িতদের সংগঠিতকারী মাওবাদীদের সংগঠন ও তার নেতৃত্বকে ‘সন্ত্রাসী’ ও তাদের আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ভারত সরকারের সাথে এখন কন্ঠ মিলিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এক্ষেত্রে উল্লেখ করা দরকার যে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারও একই কায়দায় বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণকে ‘দু®কৃতিকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
ভারত তার নিজস্ব স্বার্থে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার ও ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে আসছিলো। হাসিনা-মনমোহন চুক্তির মাধ্যমে ভারতকে এই ট্রানজিট সুবিধা এবং দুই বন্দর ব্যবহারের পুরোপুরি সুযোগ দেয়া হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে ভারত বিভিন্ন ধরনের পণ্য তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিয়ে যাবে। কিন্তু সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা চুক্তিতে নাই।
এতে বুঝতে অসুবিধা হয় না কি জন্য ভারত ট্রানজিট চাচ্ছিলো। ট্রানজিটের প্রয়োজনীয়তার প্রধান কারনই হলো ভারত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সামরিক সরঞ্জাম সহজে উত্তর-পূর্ব ভারতে নিয়ে যেতে চায়। যা তারা সেখানকার স্বাধীনতাকামী জনগণের আন্দোলন-সংগ্রাম দমনের জন্য ব্যবহার করবে। আর এর ফলশ্র“তিতে ভারত সরকারের সহায়তাকারী হিসেবে বাংলাদেশও উত্তর-পূর্ব ভারতের স্বাধীনতাকামীদের শত্র“ হিসেবে টার্গেটে পরিণত হবে। উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, অরুণাচল প্রভৃতি রাজ্যের স্বাধীনতাকামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়ে ভারত সরকার দীর্ঘদিন থেকে সেখানে সামরিক দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছে।
এই সামরিক তৎপরতায় বাংলাদেশ জড়িত করতেই হাসিনা-মনমোহন চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে তা অস্পষ্ট নয়। এর ফলে বাংলাদেশ ভারতীয় রাষ্ট্রের ‘নিজস্ব সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের’ সাথে জড়িত হলো।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোন বন্দী বিনিময় চুক্তি না থাকাতেও হাসিনার ভারত সফরের প্রাক্কালে আসাম রাজ্যের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম, উলফার কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করে গোপনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। যা ভারত সরকারের প্রতি হাসিনার ‘উপহার’ ছিল। হাসিনা-মনমোহন চুক্তিতে ‘সন্ত্রাসী বিনিময়’ চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ফলে এখন চুক্তি অনুসারেই বাংলাদেশ এই সুবিধা দিতে পারবে ভারতকে।
হাসিনা-মনমোহন চুক্তি আক্ষরিক অর্থেই একটি দাসখত লিখে দেওয়ার চুক্তি। যে বিএসএফ বিগত ১০ বছরে ৮ শতাধিক বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে যৌথ ব্যবস্থাপনার নামে বাংলাদেশের সীমান্তের দায়িত্ব ভারত সরকারের মাধ্যমে তাদের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে।
হাসিনা-মনমোহন চুক্তির ৪৭ ও ৪৮ অনুচ্ছেদে শেখ হাসিনা নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের পক্ষে খোলাখুলি সমর্থন জানিয়ে এই লক্ষ্য অর্জনে ভারতকে সহযোগিতার অঙ্গীকার করে এসেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির প্রতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের এমন বশ্যতার নজির ইতিহাসে খুব কমই দেখা যায়।
বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিগুলো নজিদেরে পুঁজরি র্স্বাথে অনুন্নত যে কােন দশেরে সঙ্গে সর্ম্পকরে মাধ্যমে নজিদেরে জন্য ফায়দা ওঠানাে। ভারত, চীন ইত্যাদি দশে এ কাজ করে আঞ্চলকিভাব। ে ভারতের বৃহৎ পুঁজি শুধু ভারতেই নয় সারা দুনিয়া জুড়ে বিনিয়োগকৃত। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশের নতজানু শাসকশ্রেণীর কৃপায় দেশের আভ্যন্তরিন শিল্প ধ্বংসের মধ্য দিয়ে ভারতীয় পণ্যের বাজার হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির ফারাক আকাশ-পাতাল।
বিগত ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৮৯.৪২ মিলিয়ন ডলার আর আমদানীর পরিমান ছিল ২২৬৮.০ মিলিয়ন ডলার। ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে রপ্তানি ও আমদানী ছিল যথাক্রমে ৩৫৮.০৮ ও ৩২৭৩.৭০ মিলিয়ন ডলার। এই দুই অর্থ বছরে ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯৭৮.৫৮ ও ২৯১৫.৬২ মিলিয়ন ডলার।
এই অসম বাণিজ্যিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে হাসিনা-মনমোহন চুক্তিতে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ২৫২ টি পণ্যের মধ্যে মাত্র ৪৭টি পণ্য শুল্কমুক্ত করতে ভারত সম্মত হয়েছে। চুক্তির লাভ হিসেবে বলা হচ্ছে ভারতের ১০০ কোটি ডলার ঋন বাংলাদেশের অনেক উপকারে আসবে! যে টাকা খরচ হবে ভারতের স্বার্থে ট্রানজিট সুবিধার জন্য সড়ক ও রেলপথ উন্নয়ন খাতে।
সেই ব্যয়ভার বহন করবে এদেশের জনগণ ভারতের কাছ থেকে ঋন সুদ আসলে ফেরত দিয়ে। কি দারুন লাভ এদেশের জনগণের ১০০ কোটি ডলার ঋন পেয়ে যেখানে কয়েক হাজার কোটি টাকাই ব্যবহার করতে না পারার জন্য ব্যাংকে পড়ে আছে। প্রাপ্তির তালিকায় সবচেয়ে বেশি আছে ভারতের দেয়া আশ্বাসের ঝুড়ি। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বলা হয়েছে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে এমন কিছু ভারত করবে না, তিস্তার পানি বন্টন সমস্যার সমাধানেরও আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
এই চুক্তির ফলে ভারত থেকে বাংলাদেশ ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে।
যা ভারত থেকে আনার জন্য ১০০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন স্থাপন করতে হবে। খাজনার চেয়ে বাজনাই বড় এর চেয়ে সুন্দর উদাহরন আর কি হতে পারে?।
যৌথ ইশতেহারে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের জন্মশত বার্ষিকী ঢাকায় পালনের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ রবীন্দ্রনাথের গানকে অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালবাসেন।
তার গানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবেও মর্যাদা দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অখন্ড ভারতের সমর্থক। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই স্বাধীন বাংলাদেশ মেনে নিতেন না। তাই প্রশ্ন আসে রবীন্দ্রনাথ কেন? এর মধ্য দিয়ে কি বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গ রাজ্যে পরিণত করার অংশ হিসেবে জনগণকে মানসিকভাবে তৈরি করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না?
শেখ হাসিনার ভারত সফরে তাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরষ্কার প্রদান করা হয়েছে। ইতিপূর্বে এই পুরষ্কার পেয়েছেন নিজ নিজ দেশের স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থকে বিকিয়ে দেয়া রাশিয়ার সংশোধনবাদী নেতা মিখাইল গর্বাচেভ, আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই এবং দরিদ্র গ্রামবাসীকে সুদের জালে ফেলে গ্রামীন উন্নয়নের প্রবর্তনকারী সুদখোর মুহাম্মদ ইউনুস।
এই পুরষ্কার প্রদানের মধ্য দিয়েই ভারত সরকার স্পষ্টভাবেই বুঝিয়ে দিলো শেখ হাসিনা সম্পর্কে তাদের অবস্থান এবং তারা কি চায় তার কাছে।
সামগ্রিকভাবে এই চুক্তি বাংলাদেশের জনগণের উপর এক সামগ্রিক আগ্রাসনের নীল নকশা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর ভয়াবহ দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে নিপীড়িত হবে এদেশেরই জনগণসহ পুরো দক্ষিন এশিয়ার জনগণ। এই চুক্তির উপর দাঁড়িয়েই আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি ভারত তার দক্ষিন এশিয়ায় তার একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে আরো একধাপ এগিয়ে গেল। সেই সাথে প্রকাশ বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর দালালীর চরিত্র।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।