আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৯ শে এপ্রিল, ১৯৯১ এবং তার পরের স্মৃতি।

^^^^^^^^^

মনে আছে সেদিন আমি মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম, মসজিদে কারেন্ট ছিলনা। আসার সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল আর ঠান্ডা বাতাস। প্রতিদিনের মত একটু অ-আ পড়ে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তখনো কারেন্ট ছিলনা আর টিভিতে সেদিন খবরও কেউ দেখেনি। আমাদের বাড়িতে কেউই জানত না সেদিন ১০ নাম্বার সতর্ক সংকেত। রাত তখন কয়টি আমার মনে নেই আম্মু-দাদু-চাচাদের চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙলে দেখি দরজা জানালা সব বন্ধ, মিটমিটে হারিকেনের আলোতে সবাই এক ঘরে বসে দোয়া দরুত পড়ছেন আর বাইরে থেকে প্রচন্ড জোরে বাতাস বওয়ার শব্দ।

অবাক হয়ে দাদুকে জিজ্ঞেস করি, কি হচ্ছে? দাদু বলেন, "তুয়ান অর, আল্লারে ডাক"। তখনো আমি 'তুয়ান' কি জিনিস বুঝতে পারিনি। এভাবে আরও প্রায় দু'ঘন্টা কেটে যাওয়ার পরে দেখি সবাই একযোগে চিৎকার করে আল্লাহকে ডাকছেন আর আমার আংকেল আজান দিচ্ছেন। কি হচ্ছে জানতে চাইলে আমার দাদু আমাকে ছাদে ফ্যানের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, আমি তখন শুধু ফ্যানটার প্রচন্ড দুলুনিটাই দেখেছিলাম, পরে জানতে পারি ওটা ছিল ভুমিকম্প। সেদিন তুফানের সাথে ভূমিকম্প অনেক মানুষের জন্য মৃত্যুদূত হয়ে এসেছিল।

অনেক লোক সেদিনের ভূমিকম্পে কাঁচাবাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলেন। সকাল হতে হতে তুফানের বেগ কমে আসলে পাড়ার অনেক লোক দেখি নিজেদের ঘরের চালের টিন, গাছের আম কুড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর আমাদের বাড়ির সীমানা জুড়ে গাছের বড় বড় ডাল ভেঙ্গে পড়ে একাকার, কাছারী ঘরের আস্ত টিনের চালটা একপাশে পড়ে আছে। রান্না ঘর পুরোটাই বিধ্বস্থ। আমার এখনো মনে পড়ে একগাছ ভর্তি লাল লাল লিচু আর পুরো গাছটা উপড়ে উল্টো হয়ে পড়ে আছে।

সেদিন প্রাণ ভরে লিচু খেয়েছিলাম, কেউ মানা করেননি। কারণ আমার জন্য খাবার অন্ততঃ ছিল, অন্যরা রাতে স্টোভ জালিয়ে রান্না করে খেয়েছিলেন, কারণ রান্নার উপকরণ সব ছিল রান্না ঘরে আর সবই জল-পাতায় নষ্ট। স্কুল অনেকদিন বন্ধ ছিল, যেদিন স্কুলে যাই দেখি পুরো অচেনা একটা জায়গা। সীমানা প্রাচীর পুরোটাই মাটিতে, স্কুল দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কোন চাল নেই, পুরোচালটাই ঘেলার মাঠে। কিছুদিন ক্লাস হয়েছিল গাছের ছায়াতে, সে কি মজার দিন ছিল... এক ক্লাসে স্যার প্রশ্ন করছেন তো উত্তর দিচ্ছে অন্য ক্লাসে..... আমি এতক্ষণ ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্নিঝড়ের সময়ের আর তার পরের ঘটনা বলেছি, সব মনে নেই... ছয় বছরের একটা ছেলের আর কতটুকুইবা মনে থাকে।

তবে এর ভয়াবহতা মনে হয় পুরো জীবন মনে থাকবে.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।