তুমি যদি কাউকে তোমার আপন করতে চাও, তাহলে প্রথমে তুমি নিজে তার আপন হয়ে যায়। দেখবে একসময় সে নিজেও তোমার আপন হয়ে গেছে
(আগের পর্বের পর থেকে)
(আরমান ভাইয়া বললো,“এর পরের কাহিনী আমি তোকে বলতে পারবো না। ”
আমি(মোনা) বললাম“কেন ভাইয়া?”
“আমাকে আর কোন প্রশ্ন করিস না। এই নে আমার ডায়েরী। ”বলেই ভাইয়া তার ডায়েরী আমার হাতে এগিয়ে দিয়ে আমার সামনে থেকে চলে গেলো।
আমি(মোনা) ভাইয়ার ডায়েরী খুলে পড়তে শুরু করলাম। )
পরদিনের ঘটনা
আরোহী ফোন করলো আমাকে।
তার কন্ঠ শোনে আমি বুঝতে পারলাম আজ একটু টেনশন নেই তার মনে।
আরোহী বললো,“ আরমান, এখনো অনেক সময় আছে। তুমি ভেবো দেখো আরেকবার।
তুমি (এ জীবনে) আমার চেয়ে আরো (অনেক) ভালো মেয়ে পাবে। কেন না, আমার এখন আর কোনকিছু বাকী নেই; শেষ হয়ে গেছে সবকিছু। রাস্তার মেয়ে আর আমার মধ্যে এখন আর কোন পার্থক্য নেই। ”
আরোহীর কথাগুলো শোনা আমার পক্ষে অসহনীয় মনে হলো।
তাই আমি সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিয়ে বললাম,“চুপ, একদম চুপ।
আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না এ ব্যাপারে। ”
“কেন শুনবে না?” জানতে চাইলো সে।
“কারণ, তোমার জীবনে যা ঘটেছে, তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমার শেষকথা একটাই; আমি তোমাকে বিয়ে করবো । ”
“মনে রেখো, এখন অ্যাব্রোশন করলে কেউ বাচাতে পারবে না আমাকে।
”
আরোহীর কথা শোনে খুব ভয় পেয়ে গেলাম আমি।
আমি তাকে সান্তনা দিয়ে বললাম,“ শোন, এ নিয়ে কোন বাজে টেনশন করবে না। সত্যি সত্যি যদি তোমার (পেটে) কিছু হয়ে থাকে;তাহলে তুমি এক কাজ করবে, তুমি আমাদের বাড়িতে চলে যাবে। ”
“তুমি যাবে না আমার সাথে?” জানতে চাইলো আরোহী।
“না।
”
“তাহলে আমি কি করবো ওখানে (সিলেট) গিয়ে?”
“তুমি (আমাদের বাড়ির) সবাইকে বলবে যে, তুমি আমার বৌ। আর তোমার পেটে আমার সন্তান। ”
“আমি মিথ্যে বলবো!?”
“হ্যা। প্রয়োজনে বলবে। ”
“দেখ।
আমি কোন মিথ্যে বলতে পারবো না কারো সাথে। যদি সম্ভব হয় তুমিও চল আমার সাথে। তা না হলে, আমাকে ছেড়ে দাও আমার পথে। আমি-ই আমার পথ বেছে নেবো। আমার জন্য কাউকে ভাবতে হবে না”
“কি করবে তুমি?”
“রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করবো।
আর নয়তো, সব শেষ করে দেবো। ”
“ দেখো, কোন পাগলামী করবে না। ”
“পাগলামীর কি আছে? যা সত্যি, তা-ই বললাম। ”
আরোহীর ফোন কেটে দিয়ে আমি অনেকক্ষণ ভাবলাম তার কথাগুলো।
আসলেই তো সে সত্যি কথা বলেছে।
যদি সে আমাদের বাড়িতে যায়; আর আমি যদি তখন তার পাশে না থাকি;
তখন সে যদি বলে যে, সে আরমানের বৌ। তখন কে বিশ্বাস করবে তার কথা;কেউ করবে না।
কারণ, সে যে আমার বৌ; এর কোন প্রমাণ নেই তার কাছে।
কিন্তু আমি আর কি করবো তার জন্য?
তার এ বিপদে আর কোথায় রাখবো তাকে?
সে এখন গর্ভবতী; বিপদ যে কোন সময় ঘটতে পারে।
তাই তাকে এখন একা রাখতে পারবো না কোথাও।
এ মুহূর্তে কেউ একজন থাকা দরকার তার পাশে।
কোন বুদ্ধি আসছে না মাথায়।
কি করবো? বুঝতেছি না।
তার বাবা মায়ের কাছে রেখে আসবো?
না, তা সম্ভব নয়।
(কারণ, এখনো আমাদের বিয়ে হয় নি)।
(আর বিয়ে হলেও) যা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না আরোহীর সমাজে।
তাহলে কি আমি আমার বাবা-মায়ের কাছে রেখে আসবো তাকে?
না, এটাও সম্ভব নয় আমার পক্ষে।
কারণ, আমার ফ্যামিলিও মেনে নেবে না আরোহীকে। ”
কিন্তু তার এ দুর্দিনে আমাকেই থাকতে হবে তার পাশে। ”
এখন আমি যদি তাকে আশ্রয় না দেই, তাহলে সে যাবে কোথায়?
তার তো এখন কোথাও যাবার জায়গা নেই।
আমি একটা সিদ্ধান্তু নিয়ে ফেলেছি। তাকে আমি চিটাগাং নিয়ে আসবো। এবং এখানেই বিয়েটা করে ফেলবো আমরা দুজনে। যে করেই হোক আমি তাকে এবং তার অনাগত সন্তানকে বাচাবো।
পরদিনের ঘটনা
আরোহীর কথাগুলো শোনার পর থেকে আমার ঘুম যে কোথায় চলে গেছে তা আমি নিজেও জানি না।
সারাক্ষণ শুধু টেনশন হয়।
কোনকিছু মিলাতে পারি না হিসেব করেও।
আমি এখন সকাল-বিকাল ফোন করি আরোহীকে। কারণ, আমি চাই সে যেনো, কোন প্রকার বাজে টেনশন না করে।
আজ আরোহী বললো,“ আরমান, একটা কথা মনে রেখো,তুমি কিন্তু আমার মরা গাছে আরেকবার ফুল ফুটিয়েছো।
আচ্ছা, তুমিও কি আমাকে ধোকা দেবে জয়ের মতো?”
আমি বললাম,“আজ হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন আরোহী?
“না, মানে, এখন আমার খুব ভয় করে মানুষকে। (আর) তুমিও যদি আমাকে ধোকা দাও; তাহলে তো আমার মরণ ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। ”
“ শোন আরোহী, আমি এ জীবনে কারো কোন ক্ষতি করি নাই। আর তোমার ক্ষতি করবো? এটা তো আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। ”
“ধন্যবাদ তোমাকে।
খুব খুশী হলাম (তোমার কথা শোনে। )” আরোহী আরো বললো,“ আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাই?”
“ কি?” আমি জানতে চাইলাম।
“আগে বল, (তুমি) দিতে পারবে কি না (আমাকে)?
“জিনিসটা কি?”
“শানুকে (শানু আমার ভাইয়ার একসময়কার প্রেমিকা) যা দিয়েছো, সেটা এখন আমাকেও দাও?”
সে যেন হুকুম করছে আমাকে (কাজটা করার জন্য)। আমি এখনো তার কথার অর্থ বুঝতে পারলাম না।
তাই আবারো জিজ্ঞেস করলাম, “ আমি বুঝতেছি না, তুমি কি বলতে চাইছো? আর আমিই বা কি দিয়েছি শানুকে?”
সে বললো,“ বুঝলে না এখনো? তুমি একদিন রাত বারোটা বাজে তাদের (শানুদের) বাড়িতে গিয়ে যে জিনিসটা তাকে দিয়েছিলে।
”
আমি এবার বুঝতে পারলাম, সে আসলে কি চায় আমার কাছে?”
আমি বললাম,“ তার মানে চুমো!
“হ্যা” সে খুব লজ্জিত হয়ে জবাব দিলো।
“ স্যরি, আরোহী। মাফ করো আমাকে। আমি (কিস) দিতে পারবো না (তোমাকে)?
“কেন পারবে? কোন সমস্যা? বল আমাকে?”
“না, কোন সমস্যা নেই।
“তাহলে?”
“ আসলে আমার সে অধিকার নেই।
”
“ধরো, সে অধিকার সে দিয়ে দিয়েছে তোমাকে। তারপরও কি তুমি...........?”
“তারপরও তুমি মাফ করো আমাকে। আমাদের এখনো বিয়ে হয় নি। আর বিয়ের আগে আমি কি করে স্পর্শ করবো তোমাকে?”
“তার মানে বিয়ের পরও কি তুমি ছুয়ে দেখবে না আমাকে?”
“এটা তখন তুমি বলে দিতে হবে না আমাকে। সেদিন সবার সামনেই আমি চুমো দেবো তোমাকে।
”
“ঠিক আছে। আমি অপেক্ষায় থাকলাম সেদিনের। ”
পরদিনের ঘটনা
আরোহী আমাকে ফোন করলো আজ দুপুর দুটো বাজে। তার ফোন রিসিভ করতেই সে বললো,“আরমান, তুমি কি পারবে না তোমার ভালবাসা দিয়ে দুর করে দিতে আমার দুঃখগুলো?”
আমি বললাম,“ পারবো না কেন? অবশ্যই পারবো। আর না পারলেও আমাকে পারতেই হবে।
”
“আচ্ছা আরমান, তুমি কি আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছো?”
“ তুমি (আবার) কি অপরাধ করেছো? যার জন্য তুমি ক্ষমা চাইছো আমার কাছে। ক্ষমা তো তাকে চাইতে হবে তোমার কাছে, যে ক্ষতি করেছে তোমার। শোন আরোহী, নিজেকে এতটা অসহায় মনে করো না কখনো। অ্যাকসিডেন্ট সবার জীবনেই ঘটে; যেমনটা আমার জীবনেও ঘটেছিল। আর তোমার জীবনে যা ঘটেছে; সব সময় মনে করবে ওটা ছিল তোমার জীবনের একটা অ্যাকসিডেন্ট।
”
“আচ্ছা, তোমার আমার বিয়ে হলে, তুমি আমাকে অপমান করবে না তো আবার?”
“ না। ”
“সত্যি তো?”
“হ্যা, আমি তোমাকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি যে, তোমার এ বিষয় নিয়ে আমি কখনো তর্ক করবো না তোমার সাথে। ”
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।