আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৫ম মৃত্যু বার্ষিকীতে আব্দুস সামাদ আজাদকে স্মরণ: মাটি থেকে মহীরূহ

দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...

বাংলাদেশে তথা উপ মহাদেশের রাজনীতির মহীরূহ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তৎকালীন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহুকমার (বর্তমানে জেলা) জগন্নাথপুর উপজেলার অজপাড়াগা বুরাখালিতে ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি জন্মগ্রহণ করেন। রাজনীতির ময়দানে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত এই ভূমিপুত্র টানা ৭দশক রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনের কাতার থেকে। বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও কৃষক শ্রেণীকে রাজনীতিমুখি করতে এই মহান নেতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের হয়ে প্রথম এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ২০০১ সন সংসদ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে তিনি টানা নির্বাচিত হয়েছেন।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীকার অর্জনের লড়াই ও গণতন্ত্র লড়াইয়ের তিনি ছিলেন অগ্র সৈনিক। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি প্রথম পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে নীরিহ বাঙ্গালির উপর পাক বাহিনীর বর্বরতার কথা বিশ্ববাসীকে অবগত করে স্বাধীন বাংলাদেশের পে বহির্বিশ্বে জনমত তৈরী করেন। পচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হবার পর খোন্দকার মোশতাক সরকারে যোগদান না করায় তাকে জেলে যেতে হয়। জাতীয় চার নেতা মারা যাবার সময় দৈবক্রমে তিনি বেঁচে যান। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘনিষ্ট সহচর এই নেতা স্বাধীন বাংলাদেশে জাতি গঠনে উল্লেখযোগ্য রাখেন।

বৃটিশ বিরোধি আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের তার অবদান অবিশ্বরণীয়। স্কুলে পড়াকালীন সময়েই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় নিজ এলাকার রাস্তার দাবিতে তৎকালীন এসডিওর গাড়ির সামনে শুইয়ে প্রতিবাদ জানান। সাধারণ মানুষকে আপন করে নেয়ার অসম্ভব মতা ছিল তার। তৃণমূল কর্মীদের উজ্জীবিত করার দারুণ মন্ত্র জানতেন তিনি।

তার রাজনৈতিক সরস গল্পবলা তম্ময় হয়ে শোনতেন নেতাকর্মীরা। ১৯৪০ সনে মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ও পরে অভিভক্ত আসাম মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ইতিহাস বিভাগে পড়াকালীন সময়ে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তার জ্বালাময়ী বক্তব্যেই ১৯৫২ সনের একুশে ফেব্র“য়ারি ছাত্র সমাজ উদ্ধুদ্ধ হয়ে ১৪৪ধারা ভঙ্গ করে মাতৃভাষার দাবিতে মিছিল করে। ভাষা আন্দোলনের জন্য তিনি একাধিকবার জেল খাটেন।

১৯৫৪ সনে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ছিলেন। আব্দুস সামাদ আজাদ তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়ে মহীরূহে পরিণত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতি তথা এই উপমহাদেশের অনেকেই তার রাজনৈতিক দুদর্শিতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখেন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল এই নির্লোভ, নির্মোহ, রাজনীতির বটবৃ, সংগ্রামী পুরুষ মৃত্যুবরণ করেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।