আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি তো মিটিমিটি হাসি

তারকাদের বর্ণময় জীবনে থাকে বিচিত্র ঘটনা—কোনোটি বিশাল, কোনোটি সামান্য। এর মধ্যে এমন অনেক কিছু আছে, যা কাউকে কখনো বলা হয়নি। আজ অপি করিম শোনাচ্ছেন না-বলা সে রকম একটি ঘটনা

আমি সাংঘাতিকভাবে পরিবারের সঙ্গে যুক্ত একজন মানুষ। তাই আমার এমন কোনো কথা নেই, যা পরিবারের অজানা। কিন্তু তারার জগতের বাইরে সবারই তো ব্যক্তিজীবন থাকে, আমারও আছে।

তো, ব্যক্তিজীবনের সেসব কথাই আজ হয়তো পাঠকদের জানানো যায়। কোনটা রেখে কোনটা বলি! যেমন, এ মুহূর্তে মনে পড়ছে, প্রথমবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় আমি লাড্ডু পেয়েছিলাম—সুযোগ পাইনি। এ জন্য খুব মন খারাপ হলো। ভর্তি হয়ে গেলাম নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ বিষয়ে। সেই উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় থেকেই স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ব।

তাই সুযোগ না পেয়ে ভীষণভাবে মুষড়ে পড়েছিলাম। তবে আমার আম্মা বলেছিলেন, ‘এটাই হয়তো তোমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। ’ এরপর দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় চান্স পেলাম, ভর্তি হলাম বুয়েটে। —আমার এ তথ্যটি বোধ করি অনেকেই জানেন না। এখন মনে হয়, মানুষ মন থেকে চেষ্টা করলে সবই অর্জন করতে পারে।


এবার বলব জার্মানির আনহাল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার বিষয়ে আমার স্নাতকোত্তর পর্ব সমাপ্ত করার কাহিনি। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে এখানে ভর্তি হই আমি। তবে মজার ব্যাপার হলো, অপি করিম নয়, কাগজ-কলমে এখানে ভর্তি হয়েছিল সৈয়দা তুহিন আরা করিম! এটাই আমার ভালো নাম। ডাকনাম অপি। তবে ওরা আমাকে পুরো নাম ধরে ডাকত না, ডাকত নামের প্রথম অংশ ধরে।

আরও মজার বিষয় হলো, এখানে সবাই আমাকে চিনত ‘সাইদা’ নামে! আমার নামের প্রথম অংশ ‘সৈয়দা। ’ কিন্তু এটি উচ্চারণ করতে কষ্ট হতো ওদের। তাই আমি সৈয়দা তুহিন আরা করিম ওরফে অপি করিম জার্মানিতে এসে হয়ে গেলাম শুধুই ‘সাইদা’! চার সেমিস্টারের মধ্যে প্রথম দুই সেমিস্টারে আমার ফল খুব ভালো ছিল। তবে বিপদ ঘটল চতুর্থ সেমিস্টারে গিয়ে। এই সেমিস্টারে আমাদের ছিল থিসিস।

কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ আমার থিসিসের প্রধান তত্ত্বাবধায়কের মা মারা গেলেন। আমি তো পড়লাম অথই সাগরে। গাইড বদল করতে হলো—আরও কত যন্ত্রণা! আসলে আমার স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২-তে।
কিন্তু তত্ত্বাবধায়কের মা মারা যাওয়ায় বাধল বিপত্তি—বিলম্বিত হলো লেখাপড়া। এদিকে তত দিনে জার্মানিতে আমার ভিসার মেয়াদ গেছে ফুরিয়ে।

ওরা তো আর আমাকে ভিসা দেবে না—এখন কী করি! শেষমেশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পরামর্শে একজন শিক্ষকের সহকারী হিসেবে চাকরি নিতে হলো। সেই সূত্রে ভিসা মিলল অস্থায়ীভাবে। চাকরি করে থিসিসের জটিল কাজকর্ম—কী যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল! আমার তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। খুবই অন্যমনস্ক আর বিষণ্নতায় কাটত দিন। অন্যমনস্কভাবে চলাফেরা করতে গিয়ে এ সময় তো পা-ই ভেঙে ফেললাম।

অবশেষে শেষ হলো থিসিস। আনহাল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এই থিসিসটি আবারও উপস্থাপিত হয়েছিল ফ্রাঙ্কফুর্টে। জার্মানির অধ্যাপক আখিম মুলারের নেতৃত্বে একটি দল সারা জার্মানি থেকে বাছাই করে বছরে চার-পাঁচটি থিসিস উপস্থাপন করে ফ্রাঙ্কফুর্টে—এটি অনেক সম্মানের বিষয়। তবে আমার সময়ে মাত্র তিনটি থিসিস উপস্থাপিত হয়েছিল। সে হিসেবে আমার থিসিসটি ফ্রাঙ্কফুর্টে উপস্থাপিত হওয়ার কারণে আমার খুশি আর ধরে না! কিন্তু তখনো জানি না, খুশির আরও বাকি।

থিসিসের জন্য এখানে আমি ‘আউটস্ট্যান্ডিং পারফরম্যান্স’ সম্মাননা পেলাম। বলা হলো, ‘অ্যাকসিলেন্ট পারফরম্যান্স অব বাংলাদেশ। ’—দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারলাম আমি। পরে আখিম মুলার আমাকে বললেন, ‘সাইদা, তোমার থিসিসের উপস্থাপনা দেখে মনে হলো, পারফরম্যান্স দেখছি। ’ তাঁর কথা শুনে আমি তো মিটিমিটি হাসি...।

কেননা, জার্মানিতে আমার শিক্ষক ও সহপাঠীদের কেউ তো জানত না, আমি একজন অভিনয়শিল্পী। কিন্তু আখিম মুলারের কথার পর মনে হলো, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’—এ প্রবাদটি বোধ হয় মিথ্যে নয়!
 অনুলিখন: আলতাফ শাহনেওয়াজ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।