আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ
দেশের আর্থিক খাতের বড় বড় জালিয়াতিতে জড়িয়ে এখন ফতুর হওয়ার পথে রাষ্ট্রীয় খাতের শুধু নয়, দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকথসোনালী ব্যাংক। আর্থিক কেলেঙ্কারি আর লুটপাটে কিছু ব্যক্তির পকেট ভারী হলেও চরম দুরবস্থায় পড়েছে ব্যাংকটি। নিয়ম মেনে চলার মতো অর্থও নেই এখন ব্যাংকটির। নিজেরাই লিখিত ভাষ্য দিয়ে বলছে, ব্যাংকটি এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য রাইট শেয়ারের বিপরীতে সরকারের কাছে তিন হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা চেয়ে আবেদন করেছে ব্যাংকটি।
সোনালী ব্যাংকের দাবি মেনে সরকার এ পরিমাণ অর্থ দিলেও ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি থাকবে ২২৯ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মত, শুধু এভাবে টাকা দিয়ে সোনালী ব্যাংককে বাঁচানো যাবে না। আগে দরকার দুর্নীতি-জালিয়াতির সুরাহা আর খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ।
এই অর্থের পরিমাণ সোনালী ব্যাংকের শুধু রূপসী বাংলা হোটেল শাখা (সাবেক শেরাটন) থেকে হলমার্কসহ আরো পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ আকারে লুট হওয়া অর্থের চেয়ে ২০০ কোটি টাকা কম। এ ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশের মাধ্যমে রূপসী বাংলা শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে।
আরো অনেক আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে সোনালী ব্যাংকের।
বিশেষজ্ঞরা সোনালী ব্যাংকের বিদ্যমান নাজুক অবস্থার জন্য ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের জাল-জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়াকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এভাবে সোনালী ব্যাংককে আর কত টাকা দেবে সরকার বারবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মূলধন সহায়তা
বাবদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। এর বেশির ভাগই লুটপাট হচ্ছে। আবারও নতুন করে তিন হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা দিলে তাও লুটপাট হওয়ার আশঙ্কাই থেকে যায়।
তবে মালিক হিসেবে সরকার ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে এর ব্যবস্থাপনায় আগে পরিবর্তন আনতে হবে। আর হলমার্কসহ বিভিন্ন খেলাপির কাছে পাওনা অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে শুধু টাকা দিয়ে সোনালী ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি করা যাবে না।
সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকের আর্থিক দুরবস্থা কাটাতে সরকারের কাছে রাইট শেয়ারের বিপরীতে টাকা চেয়ে গত ১৯ মে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন মাত্র এক হাজার ১২৫ কোটি টাকা আর মূলধন ঘাটতির পরিমাণ তিন হাজার ৬০৪ কোটি টাকা।
ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিবদ্ধ মূলধন সংরক্ষণ অনুপাত যেখানে শতকরা ১০ টাকা রাখার কথা, সেখানে সোনালী ব্যাংক রাখছে মাত্র ৯ পয়সা হারে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রদীপ কুমার দত্ত স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সরকারের কাছে রাইট শেয়ারের বিপরীতে আরো তিন হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা (১ঃ৩ অনুপাতে) মূলধন সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ মূলধন পাওয়া গেলে মোট পরিশোধিত মূলধন হবে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। সরকারের অনুকূলে ইস্যু করা প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যমানের শেয়ারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৫ কোটি। এর পরও মূলধন ঘাটতি থাকবে ২২৯ কোটি টাকা, যা ২০১৩ সালের মুনাফা দ্বারা পূরণ করা সম্ভব হবে।
ফলে ২০১৩ সালে কোনো মূলধন ঘাটতি থাকবে না এবং মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত ১০.৬৯ শতাংশে উন্নীত হবে। ’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে দেওয়া হিসাবে সোনালী ব্যাংক বলেছে, সরকার তিন হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা মূলধন সরবরাহ করলে ব্যাংকের রিজার্ভ হবে ৬৫৮ কোটি টাকা, রিটেইনড আর্নিংস হবে দুই হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা এবং ক্যাপিটাল রিজার্ভ ও সাধারণ নিরাপত্তা সঞ্চিতিসহ (জেনারেল প্রভিশন) অন্যান্য মূলধনের পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণ করা বিপুল পরিমাণ ঋণের অর্থ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থায় পড়েছে সোনালী ব্যাংক। গত মার্চ পর্যন্ত এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এটি সোনালী ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩৫ শতাংশ।
বিপুল অঙ্কের এই খেলাপি ঋণের বিপরীতে যে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা দরকার, সেখানেও চার হাজার ২২৯ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।
সামরিক বাহিনীর পেনশন খাতে সরকারের কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৭৬০ কোটি টাকা। ওই অর্থ চেয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন ব্যাংকটির এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে অত্র ব্যাংক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বর্তমানের এই ক্রান্তিকালে ব্যাংকের বকেয়া প্রাপ্তি সংকট কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
’
সোনালী ব্যাংকের বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা বহাল রেখে নতুন করে অর্থ দিয়েও কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের শতভাগ শেয়ারের মালিকানা সরকারের। তাই নতুন করে সরকারকে রাইট শেয়ার দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়টি মুখ্য নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, সরকারের কাছ থেকে ব্যাংকটি আবারও তিন হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা নেবে। এই অর্থ নিলেও বর্তমান ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকটির খুব একটা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই।
ব্যাংকটি যেভাবে চলছে, একইভাবে চলতে থাকলে সরকারের কোনো লাভ হবে না। শুধু টাকাগুলোই যাবে। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোকে সরকার বহু টাকা দিয়েছে। এবারও সোনালী ব্যাংককে এই অর্থ দেওয়া হলে তা আগের মতোই লুটপাট হয়ে যাবে। আর এভাবে টাকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যাংকটির আগের নানা জালিয়াতি চাপা পড়ে যাবে।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘সরকার সোনালী ব্যাংককে বাঁচাতে আর কত টাকা দেবে এর চেয়ে খেলাপিদের কাছ থেকে ব্যাংক পাওনা আদায় করে নিজেরাই চলার চেষ্টা করুক। সোনালী ব্যাংককে রাইট শেয়ার ইস্যুর নামে বা অন্য কোনো নামে অর্থ দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখছি না। ’
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওসমান ইমাম বলেন, মূলত হলমার্ক কেলেঙ্কারির কারণেই সোনালী ব্যাংকের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন ব্যাংকটির যে অবস্থা তাতে সরকারের কাছ থেকে নগদ টাকা পাওয়া ছাড়া এর বাঁচার আর কোনো উপায় নেই। কারণ, একটা ব্যাংক ধসে পড়লে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যতটা না ক্ষতি হবে, তার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতি হবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের।
তবে মূলধন সরবরাহ করার আগে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আনা দরকার। একই সঙ্গে হলমার্কসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে ব্যাংকের যে অর্থ লোপাট হয়েছে, তা সমন্বয় করে আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
সোনালী ব্যাংকের এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার চেষ্টা আমি করছি। বর্তমানে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতিসহ মূলধন ঘাটতি রয়েছে। এসব ঘাটতি দূর করে ব্যালান্স শিট মজবুত করার জন্যই রাইট শেয়ারের অনুকূলে সরকারের কাছে তিন হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
যেহেতু সরকার এ ব্যাংকের শতভাগ শেয়ারের মালিক, তাই রাইট শেয়ার ইস্যুর বিষয়টি ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে ওই পরিমাণ অর্থ পেলে ব্যাংকটি একটা শক্ত ভিত্তি পাবে। ’
প্রদীপ কুমার বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের আবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে কয়েকটি বৈঠক করেছে। আশা করি, সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাব। ’
তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরে সোনালী ব্যাংককে মূলধন সরবরাহ করা না-ও হতে পারে।
তবে নতুন অর্থবছরে ব্যাংকটিকে রক্ষায় কিছু একটা উদ্যোগ নেওয়া হবে। কালের কণ্ঠ
স্থানীয় সময় : ০২৫৫ ঘণ্টা , ২৩ মে ২০১৩
Click This Link
*****************
২০১০ সালে দেশে ফোন করে প্রায়ই মানুষের কাছে শুনতান সোনালী, জনতা, অগ্রণী এই তিনটি ব্যাংকে মানুষ চাহিদা মাফিক লোন পাচ্ছে না। শুধু নতুন নয় পুরানো যারা সেই এরশাদের আমল থেকে জেনুইন ব্যাবসায়ী তারাও সমস্যায় পড়ছে। আগে যেখানে ১০ লক্ষ টাকা চাইলে ১০ লাখই পেত সেটা ২০১০এ ৩ কিংবা ৪ লক্ষ মিলছে। এর কারণ জানতে চাইলে ব্যাংকের ম্যানেজার বলে আপনাকে সব দিলে অন্যদের ঋণ দিতে পারব না।
তখন কি আর জানত আওয়ামী সরকারের মনোনীত সুভাস সিংহ রায়, জেরিন গং ঘুষ, র্দূনীতির মাধ্যমে অযোগ্যদের বেপরোয়া ভাবে ঋণ দিয়েছে? নানা অজুহাত দেখিয়ে সরকারও দেশের বিভিন্ন আভ্যন্তরীন উৎস হতে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার উপর ঋণ নিত। অর্থনীতিবিদরা প্রায়ই প্রশ্ন তুলতেন সরকার ঋণ নিচ্ছে নিক কিন্তু এত টাকা কোথায় কিভাবে ব্যায় হচ্ছে! এই বিষয়ে হাসিনাতো দূর অর্থমন্ত্রী মুহিতও কোন উত্তর দিত না। এরপর যখন হলমার্কের র্দূনীতি ধরা পড়ল তখন মুহিত বলল "৪ হাজার কোটি টাকা তেমন কিছু না"। হলমার্কের তানভীরকে গ্রেফতার করা হলেও তাকে সোনালী ব্যাংকের পরিষদ কিভাবে কিসের ভিত্তিতে এত বড় অতিরিক্ত টাকা ঋণ দিল তার জন্য কাউকে গ্রেফতার করা হল না। বরং দুদক বলল পরিচালনা পরিষদের কোন দোষ নাই।
মনে হয় তানভীর সোনালী ব্যাংক ডাকাতি করে এত টাকা ঋণ নিছে। পরে শোনা যায় হাসিনার এক উপদেষ্টাও জড়িত। সোনালী ব্যাংক সহ সাবেক পূর্ণ রাষ্ট্রীয় এই ব্যাংক গুলি ফতুর বা দেউলিয়া হবে এটা বিএনপি আমলেতো দূর এরশাদ আমলেও কল্পনা করা যায়নি। ১৯৭২-৭৫তে বুঝা গিয়েছিল যে আওয়ামী-বাকশালীরা কেমন র্দূনীতিবাজ ও লুটপাটে অভ্যস্ত। তাই এখন জনগণের আমানত নিয়ে অসৎ ব্যাক্তিবর্গ নিজেদের পকেট ভারী করে বাহাদুরি করছে।
মুহিত যখন বলছে যে এটা কোন ব্যাপার না এই কারণে বলা চলে সোনালী ব্যাংককে ফতুরের উপক্রম করা আওয়ামী-বাকশালীদের বিরাট সাফল্য। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।