আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই বৈশাখে



(আমার দুঃখ জোয়ারের জলস্রোতে/নিয়ে যাবে মোরে সব লাঞ্ছনা হতে। ) মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে,বুকের ভেতর প্রচন্ড কষ্ট হয়। চারপাশ নিঃশব্দ। পৃথিবীটা বড় মায়াময় লাগে। চাঁদের কি আলো।

আহা। ইশ্বরের উচিত মানুষের মরার সময়টা এমন চাঁদের আলো'র রাতে নিদিষ্ট করা। জীবনানন্দের কবিতার শব্দ গুলো একটার পর একটা ছবি তৈরি করে ধর ছিল আমার চোখের পাতায়। ''চোখের পাতার মতো নেমে- চুপি কোথায় চিলের ডানা থামে সোনালি সোনালি দল শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে। কুঁড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে।

হয়তো এসেছে চাঁদ মাঝ রাতে একরাশ পাতার পেছনে। সরু-সরু কালো কালো ডালপালা মুখে নিয়ে তার, শিরীষের অথবা জামের, ঝাউয়ের-আমের কুঁড়ি বছরের পরে তখন তোমারে নাই মনে! জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুঁড়ি-কুঁড়ি বছরের পার। (খুব কষ্ট হয়। চোখ ভিজে যায় বার বার। ) আমি বোকা মানুষ।

আমার ফট ফট করে কথা বলা উচিত না। আমি বলিও না। মুখ বুজে থাকি। মাঝে মাঝে মেজাজ খুব খারাপ হয় তখন বলি। সমস্যা হলো আমার সারাক্ষন'ই মেজাজ খারাপ থাকে।

তখন ইচ্ছা করে আসে-পাশে যারা থাকে তাদের সবার মেজাজ খারাপ করে দেই। আমার মেজাজে কারো কিছু যায় আসে না। এখন দুপুর দু'টা। বৈশাখ মাস। দারুন গরম।

আজ রবি বার। গতকাল রাতে কি হয়েছে তাই বলি, নীলা আপা'র বন্টি দারুন বুদ্ধিমতি মেয়ে কিন্তু বোকা। ভালো মেয়ে গুলো একটু বোকা বোকা হয়'ই। যাই'ই হোক এখন বন্টি'র কথা বলি। রাতে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে গেল,নীলা আপা'র বন্টি আমাকে বললো-খেয়ে নাও,বন্টি আমাকে তার মায়াময় হাতে অনেক ভালোবাসা নিয়ে ভাত বেড়ে দিচ্ছে।

বন্টি'র দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। টুন টুন করে বাজছে। কি ভালো লাগে! ভাত খাওয়ার পর মনে পড়লো আজ সিগারেট আনতে ভুলে গেছি। বাইরে ঘুঁড়ি ঘুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। বৈশাখ মাসের বৃষ্টি।

আমি সিগারেট আনতে বাইরে যাই। কোনো কোনো রাতে ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না। ইচ্ছা করে শুধু হাঁটতেই থাকি। হাঁটতেই থাকি। তখন হঠাৎ করে মনে পড়ে নীলা আপা'র বন্টি দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তখন বাসার দিকে হাঁটা শুরু করি। দরজার কাছে এসে দেখি বন্টি দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে এক আকাশ ভয়। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ভিজে যাওনি তো?আমি বলি,আমি ভিজেছি,সিগারেট ভিজেনি।

বন্টি হাসে। বড় ভালো লাগে এই বোকা মেয়েটির হাসি। Among the windings of the Violins And the ariettes of cracked cornets Inside my brain a dull tom-tom begins Absurdly hammering a prelude of it's own Capricious monotone That is at least one definite false note. একটি অন্তত প্রেমিকা না থাকলে নিজের জীবনটাকে ভীষন অপমানিতের জীবন মনে হয়। আমার ধারনা,ইদানিং যা ভাবি,মানুষের ভিড়ের মধ্যে কেউ কেউ তা বুঝতে পারে। কিছু মানুষ এই ক্ষমতা অর্জন করেছে।

যারা এই ক্ষমতা অর্জন করেছে তাদের নিশ্চয়'ই আন্তজার্তিক নেটওয়ার্ক আছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় রাস্তার দুই পাশের সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। বাটা'র দোকানের ঐ পাড়ে চৌরঙ্গী'র সামনে এক রিকশাওলা তার নতুন রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা মাথার চুল। রিকশাওলা ইশারায় আমাকে জিজ্ঞেস করলো,আমি ওর রিকশায় যাব কিনা?নতুন রিকশা দেখলেই আমার ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা করে।

হঠাৎ মনে হলো রিকশাটা যেন একটা আধুনিক লিমুজিন গাড়ি। রিকশা চালকটা আমার ড্রাইবার। আমি হাতের ইশারায় রিকশা দাঁড়াতে বললাম। তারপর দোকানে সিগারেট কিনতে গেলাম। রিকশাওলা আমার পেছনে এসে হর্ন বাজাচ্ছে।

আমি রিকশায় উঠে বসলাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই রিকশাওলা'র পূর্ব পুরুষ জমিদার ছিল। সেদিন প্রথম মিতু কে কি রঙ্গের শাড়ি পরা দেখে ছিলাম,মনে মনে তাই কল্পনা করছি। মিতু'র হাতে কি কাঁচের চুড়ি ছিল?এই ভাবেই কল্পনা শক্তি'র ব্যায়াম করা যায়। কোনো কোনো দিন বেশ মিলে ও যায়।

তখন কি আনন্দ হয়। সেদিন আমার আত্নবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত খুশিতে জেগে থাকি। যখনই আমার হিমি'র কথা খুব মনে পড়ে,হাঁটতে হাঁটতে একা একা দূরে কোথাও চলে যাই। যেন বাতাসের সাথে অদৃশ্য ভাবে মিশে আছে আমার হিমি।

আমার কিছুই ভালো লাগে না। আমার কিছুই হতে ইচ্ছা করে না। এমন কি মানুষ ও না। ক্লান্ত মনে একটা সিগারেট ধরাই। হিমি'র প্রসঙ্গটা কি আরো টেনে নিয়ে যাবো?হিমি'র প্রতি একটা আর্কষন বোধ করি ঠিকই।

কিন্তু ব্যাপার টা যেহেতু....এর পরই আসবে চাকরি বা ব্যাবসা,বিয়ে,টাকা,হাসপাতাল,শাড়ি গহনা,প্রভিডেন্ট ফান্ড,বেড়াতে যাওয়া,অনুষ্ঠান....একের পর এক। কোনো বৈচিএ নেই। আপষ আর আপষ। এত আপষ করে একটা মানুষ জীবনে কি পায়?দুর্লভ কয়েকটা মুহুর্ত। কয়েকটি মুর্হুতের জন্য নিজের পুরো জীবনটাকে উৎসর্গ করার কোনো মানে হয় না।

ফোনটা বাজছে। আমি জানি কে ফোন করেছে। ফোনের আওয়াজের মধ্যে কি যেন একটা আছে। আমার বুকের মধ্যে শির শির করছে। প্রিয় মানুষরা ফোন করলে সব সময় ফোন ধরতে হয় না।

একশো বার ফোন করলে একবার ধরতে হয়। আর ফোনটা ধরেও খুব বিরক্ত ভাব দেখাতে হয়। এটাই নিয়ম। ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। যে ফোন করেছে এখন আমি তাকে একটা এসএমএস করবো।

এসএমএস টা হবে এই রকম- "আমি বিলাসিতার শিকল ভেঙ্গে আবার আসব-/তোমার অহনে,অপেক্ষায় থেকো দিনের শেষে। "

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।