সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের হত্যা মামলায় খুনীদের টেলিফোন কল রেকর্ড, ঘটনাস্থলে খুনীদের পায়ের ছাপ ও হত্যার অন্যান্য আলামত সমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি !
জরুরী
মাননীয়
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।
বিষয়ঃ- সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের হত্যা মামলা সুষ্ঠ তদন্তের জন্য সিআইডি অথবা ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলে অন্তভর্ূক্তিপূর্বক দ্রুত বিচার আদালতে বিচারের আবেদন।
মহাদয়,
যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক আপনার জ্ঞাতার্থে গভীর শোক ও ক্রোধের সাথে জানাচ্ছি যে, আমার প্রান প্রিয় স্বামীকে কতিপয় বর্বর, পাষন্ড, নরপিশাচরা গত ২১ শে মার্চ সিলেট শহরে তাঁর বাসভবনের সামনেই প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করেছে। এ ব্যাপারে পরের দিন আমার ভাই আল-আজিম সরকার বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু হতাশার বিষয় হলেও বাস্তব সত্য যে, আমি আমার প্রয়াত স্বামীর মানিকগঞ্জের পৈত্রিক বাসভবন থেকে পত্রিকা পড়ে, সিলেটের কোতোয়ালি থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, স্থানীয় পুুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা প্রকৃত খুনিদের বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে।
অথচ এই নির্মম হত্যাকান্ডের পরপরই পূণ্যভূমি খ্যাত সিলেটের সর্বস্তরের জনগণ যেভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন তাতে আমরা ন্যায় বিচার পাব বলেই আশা করেছিলাম। এই ঘৃণ্য হত্যাকান্ডের পর মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, সিলেটের মেয়র আলহাজ্ব বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ ও সিলেটের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এছাড়া ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাহমিদা খাতুনের নেতৃত্বাধীন বিসিএস (সাধারন শিক্ষা) সমিতি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছিলেন খুনিদের শাস্তির দাবিতে।
ঢাকা-২০ (ধামরাই) এর সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহম্মেদ, মানিকগঞ্জের স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক স্বপন, সাটুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ফটো, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জুয়েল আমাকে ও আমার পরিবারকে ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
অথচ স্থানীয় পুলিশ এই নির্মম হত্যাকান্ডের পর থেকেই মূল খুনীচক্রদের আড়াল করতে ছাত্রদলের ক্যাডার কালা জামাল ও তার অপর দুই সহযোগী উম্মন এবং দুলালকে গ্রেফতার করেন।
কালা জামালকে এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালত থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডেও নেয়া হয়। রিমান্ড চলাকালীন সময়ে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হারুন মজুমদার ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের নাটক সাজায়। তারা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে দাবী করেন যে, উক্ত কালা জামাল, উম্মন এবং দুলাল সরাসরি কিলিং মিশনে জড়িত। এই ব্যাপারে পুলিশ শতভাগ নিশ্চিত বলেও দাবি করা হয় যা পরে সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং মূল খুনীদের আড়াল করার অপচেষ্টা বলে প্রতীয়মান হয়।
ঘটনার এ পর্যায়ে গত ২৮শে মার্চ পুলিশেরই এ্যালিট ফোর্স র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান - ৯ এর মেজর মোহাম্মদ তৌফিক এলাহীর নেতৃত্বে র্যাবের একটি বিশেষ দল সিলেট শহরের আজমীরী আবাসিক হোটেল থেকে হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত মূল নেপথ্য নায়িকা সাজিনা আক্তার মুনি্ন, সাফিয়া খাতুন লিপি, রাসেল আহমদ, আলীমুল হক এবং হোটেল ম্যানেজার লোকমান মিয়াকে গ্রেফতার করেন।
তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডের পর আমার স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া নকিয়া মোবাইল ফোনসেট, মূল খুনী কাউসারের ব্যবহৃত ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। র্যাব অফিসে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত বলে সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছিল যা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।
পরে তাদেরকে সিলেট কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং উধর্্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই হারুন মজুমদারকে অব্যাহতি দিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীর কাছে তদন্তভার ন্যাস্ত করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দুই অভিযুক্ত খুনী মুনি্ন ও লিপি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে স্পষ্টতই উল্লেখ করে যে, তারা মূল খুনী কাওসার, আলিমুল এবং রাসেল মিলে এই নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। অথচ মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে গ্রেফতারকৃত আলীমুল ও রাসেলকে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আদায় করেননি।
তাকে আমি এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি দাবী করেন যে, গ্রেফতারকৃত আলীমুল ও রাসেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করলে মামলার ভীষণ ক্ষতি হবে। তাকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আরও দাবী করেন যে, মামলার তদন্তকালীন অবস্থায় সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকেও মামলার বিষয়ে জানানো যাবে না।
মূল খুনী কাউসারকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনও গ্রেফতার করতে পারেননি। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাকু ও লাঠি এখনও উদ্ধার করা হয়নি। খুনীদের টেলিফোন কল রেকর্ড, ঘটনাস্থলে খুনীদের পায়ের ছাপ ও হত্যার অন্যান্য আলামত সমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।
তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমি গভীরভাবে আশঙ্কা করছি যে, স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকতর্া রহস্যজনক কারণে খুনীচক্রকে বাঁচাতে অব্যাহতভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
তাই আমার প্রাণপ্রিয় স্বামীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য মামলার সম্পূর্ণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে হত্যাকান্ডের তদন্তভার অবিলম্বে সিআইডি অথবা ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তরের বিনীত আবেদন করছি।
তাছাড়া আমার স্বামীর এই নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাটি যেহেতু সারাদেশে ঘৃণা ও প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে তাই সংগতকারনেই মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলে অন্তভর্ূক্তিপূর্বক দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষে সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে প্রেরণের জন্য আবেদন করছি।
বিনীত
(আফরোজা আক্তার)
গ্রাম-বাছট, উপজেলা- সাটুরিয়া, জেলা-মানিকগঞ্জ।
মোবাইল ঃ- ০১৭২০-০২৪৯৬২, ০১৭১৩১৭১৩৮৫, ০১৮২৩২২২৫১৫।
সংযুক্তি ঃ-
১। এ সংক্রান্ত জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টসমূহ।
সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রেরণ করা হলো ঃ-
১. মাননীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
২. মাননীয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
৩. মাননীয় মহা-পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ।
৪. মাননীয় অতিরিক্ত মহা-পরিদর্শক, অপরাধ বিভাগ বাংলাদেশ পুলিশ।
৫. মাননীয় মহা-পরিচালক, র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ান।
৬. মাননীয় অতিরিক্ত মহাপুলিশ-পরিদর্শক, সিআইডি।
৭. মাননীয় ডিআইজি, সিলেট রেঞ্জ।
৮. মাননীয় পুলিশ কমিশনার, সিলেট।
৯. মাননীয় ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর), সিলেট মেট্্েরাপলিটন পুলিশ।
১০. মাননীয় উপ-পুলিশ কমিশনার, গোয়েন্দা বিভাগ, সিলেট মেট্্েরাপলিটন পুলিশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।