নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
আমাদের মস্তিস্ক প্রায় শূন্য মেমোরী নিয়েই ধরাধামে যাত্রা শুরু করে। চোখ, কান, নাক ও ত্বক দ্ধারা প্রাপ্ত আশেপাশের নানান তথ্য মগজ বিশ্লেষন করে নানাবিধ ধ্যান ধারনা, জ্ঞান গম্যির জন্ম দেয়। জিহ্বা ও হাত সময় সময় তা প্রকাশ করে। বেশীরভাগ মানুষেরই এহেন প্রকাশনী ঘরোয়া আলাপচারিতায় সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ তা বই, পোস্টার, বক্তৃতা, ব্লগ, গান, কবিতা, সুর, চিত্র ইত্যাদি নানা মাধ্যমে প্রচার করেন।
এর মধ্যে কেউ কেউ যুগান্তকারী ধ্যান ধারনা বা লেখনীর জন্ম দিয়ে কালজয়ী দার্শনিক, বক্তা, লিখক, কবি, শিল্পী বনে যান। তবে এসবের কোয়ালিটি নির্ভর করে উৎসের উপর, উনি নিজে যা দেখেছেন কতখানি সঠিক দেখেছেন তার উপর। আর খানিকটা তাকে যারা দেখিয়েছে তার উপর।
জন্মের পর তেমন অঘটন না ঘটলে মা ই মানুষের প্রথম ও প্রধান শিক্ষক ও আশ্রয়স্থল। শিশুর কাছে মা ই পৃথিবী, মা ই আলো, মা ই বাতাস।
ধীরে ধীরে মায়ের কোলের গন্ডি ছাড়িয়ে বাবা, দাদা, চাচা, ফুফুদের কথা তার কানে যায়। আর কিছু দিন পর বন্ধু, শিক্ষক, কাজিনরাই হয় তার ভরসা স্থল। ইতোমধ্যে বিদ্যমান সমাজ, রাস্ট্রের ছায়া বা প্রচ্ছায়াও পড়া শুরু হয়। মোটামুটি তারুন্যে পেরুতে না পেরুতে দৈনিক পত্র-পত্রিকা, টিভি, সিনেমা, ম্যাগাজিন, ইন্টারনেট, রাজনৈতিক গাল গল্প, গান বাদ্য, কার্টুন, চিত্রকলা, দেয়ালিকা ইত্যাদি রংবেরংয়ের প্রকাশনীই হয়ে যায় মানুষের 'জ্ঞান-গম্যি'র আতুঁড়ঘর। এ আঁতুড়ঘর যদি নিস্কলংক ও খাঁটি হয় তাহলে এর ভোক্তা পাঠক-দর্শকরা ও হবেন শুদ্ধ ধারনার বাহক।
আর এর বাত্যয় হলে, হবে উল্টা।
ছাপাখানা, অন্যান্য কলকব্জা ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে মানুষের চোখ, কান, নাক ও ত্বকের নিজস্ব কার্যকারিতা প্রায় বিকল হওয়ার পথে। এ চার অংগের বিনাশই শুধু নয়, আরো গভীরে মগজটাও নস্ট হওয়ার পথে। সকাল বেলায় পত্রিকার পাতা মেলে ধরে আমরা গিলতে থাকি নানান 'খবর। ' নামীদামী এসব কাগজের লিখাকে ঐশী জ্ঞান করে জাবর কাটতে কাটতে অফিসের পথে, আর ভাবতে থাকি কবে হবে দেশের উন্নতি! তারপর অফিসে সাইন ইন করেই ঢুকে পড়ি তথ্যের মহাসমু্দ্র ইন্টারনেটে।
গিলতে থাকি সব। এত সুন্দর ওয়েবসাইট কি আর মিছা লিখছে! ঘাড় মটকাতে মটকাতে বাসায় ফিরে টিপতে থাকি রিমোট। এন্তার সেমিনার, সভা, সমিতি, বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতির 'রিপোটিং। ' এর পর এক পশলা টক শো। জ্ঞানীগুনিদের আড্ডার লাইভ শো বলে কথা।
তাও গিলতে থাকি গোগ্রাসে। এত এত ভাল কথা! ক্যামনে মিস করি। যাহোক দিনের শেষে খেরোখাতা মিলালে দেখা যাবে আমার চোখ আর আমার দখলে নাই তা চ্যানেল আইয়ের দখলে, আমার কান আর আমার দখলে নাই তা প্রথম আলোর বাদ্যই শুধু শুনতে পায়, আমার নাক শুকতে পায় কেবলই বিশেষ কোন প্রজাতির শুটকীর গন্ধ! আর এসবের কুফল হিসেবে নস্ট হয়ে যায় আমার মগজ। তার কিছু দিন বাদে আমি বিড় বিড় করতে থাকি ঐসব কথা যা প্রাগুক্তরা তেলাওয়াত করছে! খোদাপ্রদত্ত মতান্তরে প্রকৃতিজাত বিরাট মানবীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রাপ্ত তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষন করে নিজের মত মত দেয়া, নিজের মত পথ চলা, নিজের মত কথা বলা আমরা ভুলে গিয়েছি। এমনকি সাহসেও কুলোয় না।
ধিক! ধিক এ উন্নতি!!! আমার চোখ বন্ধ করে চোরকে মহারাজ বলছি, সাধুকে ধিক্কার দিচ্ছি চুরির দায়ে। আমার অনুযোগ করেই ফেলি ইরান কেন পারমানবিক বোমা বানাচ্ছে অথচ প্রশ্ন করছিনা আমেরিকা কোন আক্কেলে নিজের স্টকে হাজার খানেক বা তারও বেশী বোমা রেখে আরেকজনের বোমা বানানো নিয়ে কথা তোলে!
আমরা শংকিত মানবজাতির এহেন অধো:পতনে!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।