সীমানা খুঁটি স্থাপনে ভুল ও অনিয়মের কারণে ঢাকা ও এর চারপাশের চার নদীর প্রায় হাজার একর অংশ বেহাত হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সূত্রগুলোর দাবি, কাঠাপ্রতি গড় মূল্য ১০ লাখ টাকা ধরলে বেহাত হওয়া জমির দাম বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে, সীমানা নির্ধারণে ব্রিটিশ আমলের জরিপ এড়িয়ে সাম্প্রতিক জরিপকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাবে এবং উৎকোচের বিনিময়েও ভুলভাবে খুঁটি বসানো হয়। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এবং ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তর বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীতে জরিপ করে।
হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ২৫ জুন সিএস (ক্যাডেস্টাইল সার্ভে) পদ্ধতি অনুসারে নদীর পাড় দখলমুক্ত করার এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে (বর্ষাকাল) নদীর ঢাল নির্ধারণের নির্দেশ দেন। আদালত পরের বছর ২১ মার্চ সদরঘাট টার্মিনালসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিবেচনায় রেখে জনস্বার্থে সিএস এবং আরএস (রিভাইজ সার্ভে) অনুসারে স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেন। হাইকোর্ট নদীর ঢালের ১৫০ ফুট দূরে সীমানা খুঁটি বসানোর নির্দেশ দেন। নদীতে সীমানা খুঁটি স্থাপনে সরকার ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এ পর্যন্ত চার নদীর ৬৩ কিলোমিটার অংশে ১৩ হাজার ৮৬৯টি সীমানা খুঁটি পোঁতা হয়েছে; যা হয়েছে শুকনো মৌসুমে।
মুন্সিগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীতেও সীমানা খুঁটি পোঁতার কথা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান মো. শামছুদ্দোহা খন্দকার ভুলভাবে সীমানা খুঁটি বসানোর বিষয়ে একমত পোষণ করে বলেন, নদীর এক হাজার একর জমি নয়, ভালোভাবে খতিয়ে দেখলে আরও বেশি জায়গা বেহাত হওয়ার হিসাব পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর একেবারে দোষ নেই তা বলা যাবে না। কিন্তু জরিপকাজসহ বিভিন্ন কাজে ভুল করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। সব সংস্থা সমন্বিত উদ্যোগ নিলে বেহাত হওয়া জায়গা এখনো উদ্ধার করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তর বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীতে জরিপ করে। এই জরিপের ভিত্তিতে গণপূর্ত অধিদপ্তর ২০১০ সালের নভেম্বরে শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদে সীমানা খুঁটি স্থাপন শুরু করে। তুরাগে খুঁটি স্থাপনে ভুল ও অনিয়ম হলে পরিবেশবাদী সংগঠন এর প্রতিবাদ জানায়। গণমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ অবস্থায় তুরাগের গাজীপুর অংশে খুঁটি স্থাপন স্থগিত করা হয়।
সম্প্রতি তুরাগের অন্যান্য অংশে খুঁটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু আবারও একই ধরনের ভুল ও অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নদী দখলমুক্ত করতে, নতুন দখল ঠেকাতে এবং যথাস্থানে সীমানা খুঁটি বসানোর জন্য প্রয়োজনে মামলা করা হবে। এ নিয়ে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।