দ্বন্দ্বটা বেশ পুরানো । ক্ষমতার দ্বন্দ্ব । মার্ক্স বলছেন দ্বন্দ্বটা শ্রেণীর । দ্বন্দ্বের এমন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি এর আগে বোধকরি আর কেউ দেননি । শুধু স্বীকৃতি নয় তত্ত্বীয় প্রমান ।
হেগেলও দ্বন্দ্বে ছিলেন তবে শ্রেণী দ্বন্দ্বে নয় । চিন্তার দ্বন্দ্বে । মার্ক্সের দ্বন্দ্বে তাও একটা আশার কথা ছিল-সমন্বয় । কিন্তু তার অনুগামীরা যা প্রতিষ্ঠা করল তা যেন এক শেষহীন দ্বন্দ্ব-যার কোন সমন্বয় নেই !
পৃথিবীর ইতিহাস মানেই দ্বন্দ্ব । কেউ বলছেন সভ্যতার দ্বন্দ্ব ।
এক জাতির উপর আরেক জাতির আধিপত্য বিস্তারের ইতিহাস । এই ইতিহাসের একটা বিরাট কাল জুড়ে অবস্থান করছে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব । এডওয়ার্ড সাইদ বলছেন এই দ্বন্দ্বের কারণেই ইউরোপ-আমেরিকায় গড়ে উঠেছে 'প্রাচ্যতত্ত্ব' নামক ডিসকোর্সের । প্রাচ্যকে পদতলে রাখার দুর্মর আকাংখা । হান্টিংটন দেখিয়েছেন কিভাবে সামনের দিনগুলোতে প্রাচ্যকে পাশ্চাত্য বশে রাখতে পারবে !
ধর্মের দ্বন্দ্বের ইতিহাসও বেশ পুরানো ।
অনেকে বলেন এই দ্বন্দ্বেই এ যাবৎকাল সবেচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে । মানবতার মুক্তির জন্য আগে ধর্ম থেকে পৃথিবীর মুক্তি প্রয়োজন । ( যেন শ্রেণীদ্বন্দ্বের হাত থেকে মুক্তির জন্য শ্রেণীবদ্ধ মানুষগুলোর গণহত্যা আগে জরুরী ! ) ক্রুসেডের কারণও ধর্ম । ১০৯৫ সাল থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে চলছে চতুর্থ পর্যায়ের ক্রুসেড । মুসলিম বনাম ইহুদী-খ্রীষ্ঠান ।
আধুনিক গণতন্ত্রের উদ্ভবের পর শুরু হয়েছে নতুন আরেকটা দ্বন্দ্ব । এর নাম রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব । পার্টির সাথে পার্টির দ্বন্দ্ব । আগের সকল দ্বন্দ্বকে ছাপিয়ে এখন এই দ্বন্দ্বটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমাদের সকল চিন্তা ও মননকে ।
বিচিত্র এই দেশে রয়েছে সকল দ্বন্দ্বেরই রসদ ।
সক্রিয়ও সবগুলো । আমরা যেন আলোহীন, শেষহীন অবিরাম দ্বন্দ্বের আষ্টেপৃষ্ঠে আটকা পড়ে গেছি !দ্বন্দ্বই যেন আমাদের নিয়তী ।
এত দ্বন্দ্বে লাভ কি হচ্ছে কোন ? মানুষের কি মুক্তি মিলছে ? দ্বন্দ্ব কোনদিন মানুষের মুক্তি দিতে পারেনি । তবু দ্বন্দ্বের পথ ধরেই আমাদের অবিরাম হেঁটে চলা ! তাই আসুন না দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে মানুষকে ভালবাসতে শিখি । পল্লী কবির ভাষায়-
"আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর
যে মোরে করিল পথের বিবাগী
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি
দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর ।
"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।