চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষকদের বাস গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় চালক ও হেলপারসহ আহত হয়েছেন বেশ কয়েক শিক্ষক। ছাত্র হত্যার ঘটনায় তিনদিন বন্ধ থাকার পর গতকাল খুলে দেয়া ক্যাম্পাসকে অচল করে দিতে ছাত্রলীগ কর্মীরা এই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চলায়। নেতাদের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে জানা যায়।
গতকাল সকাল ৭টায় চবি শিক্ষকদের বহনকারী একটি বাস শহর থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছিল।
বাসটি নগরীর ষোলশহর এলাকায় পৌঁছলে হঠাত্ ছাত্রলীগের কিছু কর্মী বাসটি থামিয়ে শিক্ষকদের ওপর এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। শিক্ষকরা বাস থেকে নেমে গেলে ছাত্রলীগ কর্মীরা বাসে গান পাউডার ছড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় চালক গিয়াস উদ্দিন ও হেলপার বাস থেকে নামতে গেলে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের জোর করে সেখানে আটকে রাখার চেষ্টা করে। চালক ও হেলপার ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে সেখান থেকে নেমে এসে প্রাণে বেঁচে যায়। তারা প্রাণে বাঁচলেও ছাত্রলীগ কর্মীদের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়।
এদিকে শিক্ষক বাস পোড়ানো, শাটল ট্রেন ও মিনিবাস চলতে না দেয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি না থাকায় ক্যাম্পাসে কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলার আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে যেতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন চবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ কর্মীরা শহর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে বাধা দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
হত্যা ও হামলার আতঙ্কে হল থেকে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী এরই মধ্যে বাড়ি চলে যাওয়ায় ক্যাম্পাস এখন প্রায় ফাঁকা। গতকাল মাত্র একটি শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। দুপুর সাড়ে ১২টায় শাটল ট্রেনটি শহর থেকে ক্যাম্পাসে গেলেও তা ছিল সম্পূর্ণ ফাঁকা। বেলা দেড়টার দিকে শাটল ট্রেনটি শহরের উদ্দেশে যখন ফিরে আসে তখনও সেটি খালি ছিল।
ছাত্রলীগ কর্মীরা গতকাল পর্যন্ত নগরীতে ৩টি বাস পুড়িয়ে দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে দুটি শিক্ষক বাস ও একটি মিনিবাস। গত রোববার বেলা ২টার দিকে নগরীর চকবাজার এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীরা একটি শিক্ষক বাসে প্রথমে ইটপাটকেল ছুড়ে পরে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
ওই ঘটনায় ইটের আঘাতে চবির বেশ কয়েক শিক্ষক মারাত্মকভাবে আহত হন। একই দিন ছাত্রলীগের আরেকটি গ্রুপ নগরীর ষোলশহর এলাকায় একটি যাত্রীবাহী মিনিবাস আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এ দুটি ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় পৃথক পৃথক মামলা হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ওই ঘটনা শেষ না হতেই গতকাল সকালে আবারও শিক্ষক বাস পুড়িয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
উপাচার্যকে চাপের মুখে রেখে গ্রেফতারকৃত তাদের ৫ নেতাকর্মীকে ছাড়িয়ে আনতে ছাত্রলীগ একের পর এক এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ওই ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা চবি ৩ ছাত্র হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এখন তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের নাম বেরিয়ে আসতে পারে এ ভয়ে রিমান্ডে নেয়ার আগেই তাদের বের করে আনতে ছাত্রলীগ নেতারা তত্পর হয়ে উঠেছে।
ছাত্রলীগের নেতারা প্রকাশ্যে না এলেও তাদের কর্মীদের দিয়ে একের পর এক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে ক্যাম্পাস অস্থিরের চেষ্টা করছে। চবি প্রশাসন ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েক নেতা গত সোমবার গভীর রাতে হাটহাজারী থানায় ফোন করে ছাত্রী হত্যার গুজব রটিয়ে দেয়। এতে চবি ছাত্রী হলগুলোতে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। অনেক ছাত্রী এর পরদিনই হল ছেড়ে বাড়িতে চলে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।