আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোট গল্পঃ শিমুলের ছাত্র রাজনীতি/ পর্ব-১



দু চোখে আজ মায়ের মুখটা খুব বেশি ভেসে উঠছে। মাকে কাছে পেলে খুব ভাল লাগত। মরে গেলেও শান্তি পেতাম। কেন জানি আজ মৃত্যুর কথা মনে পড়ছে। এর আগেও মারামারি করে অনেকবার হাসপাতালে আসতে হয়েছে শিমুলকে।

কয়েকদিন পরেই সুস্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজ অন্য রকম লাগছে। মনে হচ্ছে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি,কোন অজানায়… শিমুল খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। সেই সুবাদেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চান্স পায়। গ্রাম থেকে এসে ক্লাস করাও অনেক কষ্টকর।

কোন ব্যাচেলর মেসে সিট নিলেও অনেক টাকা খরচা লাগবে। বাবা অনেক কষ্ট করে তার লেখাপড়ার খরচ চালায়। ইচ্ছে থাকলেও মেসে থেকে লেখাপড়া করা সম্ভব নয়। গরীবের এই এক সমস্যা। সাধ থাকে কিন্তু সাধ্য থাকেনা।

জীবনের চাওয়াগুলো অপূর্নই থেকে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয় বিধাতা ঐ ধনীদের জন্যে স্বপ্ন সৃষ্টি করেছে,গরীবদের স্বপ্ন দেখতে নেই। গরীবের স্বপ্ন দেখার কোন অধিকার নেই। শিমুল শুনেছে নাহিদ ভাইয়ের কাছে গেলে হোস্টেলে একটা সিট ব্যবস্থা করে দিবে। নাহিদ ভাই অনেক ক্ষমতাবান ব্যক্তি।

ছাত্র রাজনীতিতে খুবই সক্রিয়। তাও আবার বর্তমান ক্ষমতাশীল দলের। কি যেন একটা বড় পদে আছেন। তাই সবাই তাকে নাহিদ ভাই বলেই ডাকে। ভালবেসে ডাকে নাকি ভয়ে ডাকে তা জানেনা।

নাহিদ ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়ে ভাল একটা সিট পেয়ে যায় শিমুল। এত সহজে সিট পেয়ে যাবে তা সে কল্পনাও করেনি। আজ নাহিদ ভাইকে খুব ভাল লেগেছে তার। চেহারায় যেন একটা মায়াবী লক্ষন দেখা যায়। ভাল মানুষ নাহলে কি সিট দিত?শর্ত শুধু একটাই তার কথামত চলতে হবে।

শিমুল ভাবে তাতে মন্দ কি?নাহয় একটু ফরমায়েশ শোনব এইতো? কিছুদিন পরেই হঠাৎ শিমুলের ডাক আসে। নাহিদ ভাই খবর দিয়েছে,কোন বড় এক নেতা যেন আসবে। তাই মিছিলে যেতে হবে। না গেলে আবার সিট হারাতে হবে। শিমুলকে যেতেই হবে।

যে করেই হোক সিটটা বাচাতেই হবে। নয়ত লেখাপড়া করা যাবেনা। মা বাবার স্বপ্নও পূরন হবেনা। মিছিলে গিয়ে শিমুল সবার পিছনে থাকে। তার মুখে কোন শ্লোগান শোনা যায় না।

যে কেউ ভাববে সে মিছিলের কেউ নয়,শুধুমাত্র পথচারী। মিছিল শেষে ক্যাম্পাসেই মিটিং চলছে। শিমুল দাড়িয়ে শুনছে। মাঝে মাঝে একটু বিরক্তও লাগছে। ছাত্রদের কল্যানের স্বার্থে নেতারা বড় বড় ভাষন দিচ্ছে।

কিন্তু শিমুল কোন কল্যান দেখেছে বলে মনে হয়না। মনে করতে খুব চেষ্টা করছে। হঠাৎ মাইকে শিমুলের ডাক আসে। তার নাম শোনে সে চমকে উঠে। তাকে মঞে যেতে হবে।

বুক ধড়ফড় কছে। একটু ভয় ভয় লাগছে। জীবনে কোনদিন রাজনৈতিক মঞে উঠেনি সে। আজ কি হবে,কি বলবে ভাবতেই অজানা শিহরন জাগে। কাপতে কাপতে মঞে উঠে শিমুল।

নাহিদ ভাই শিমুলের হাত ধরে উচিয়ে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমাদের দলে যোগ দিয়েছে। সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে। শ্রোতার জোড়ে করতালি মারছে সবসময় নাহিদ ভাইয়ের ডাকে সাড়া দিতে হয়। মাঝে বিরোধী দলের ছাত্র সংঘের সাথে কয়েকবার সংঘর্ষও হয়েছে।

কিন্তু শিমুল কাউকে আঘাত করেনি। শুধু দলের পিছনে থেকেছে। তবু হত্যা মামলার আসামী হয়ে যায়। ক্ষমতাসীন দল বলে জামিন পেয়ে যায়। এসব খুব খারাপ লাগত শিমুলের।

সে নাহিদ ভাইকে বলেছেও যে,আমি এইসব রাজনীতি করতে চাই না। সং ঘর্ষেও জড়াতে চাইনা। কিন্তু নাহিদ ভাইয়ের একটাই কথা,তাহলে সিট ছেড়ে দে,আর তোর নামে যে হত্যা মামলা হয়েছে তা সামাল দিতে পারবি তো? কিন্তু তাকে যে লেখাপড়া করতেই হবে। কেস কিভাবে মিমাংসা করবে?মামলার কারনে জীবনটাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তার পিছু ফিরার আর সময় নেই।

সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবেই ধীরে ধীরে নাহিদ ভাইয়ের হাত ধরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।