আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরো যাকনা কিছুকাল!



গঙ্গায় করা প্রথম পূণ্যাগ স্নান থেকে তাড়া করছে আমায় একটি দুশ্চিন্তা- এই ঊনচল্লিশেও কারো জীবনে আমি অপরিহার্য্য হতে পারিনি! কতো অসাধারণ হরিণ-ডাগর চোখে দেখেছি আমি সাধারণ দৃষ্টি বৃষ্টি-উত্তর পাড়ার সরু খালে নিয়মতান্ত্রিক স্রোতের মতো ছিলো সেই দৃষ্টিরা; বড়ো বেশি উদাসীনী অথচ সেই উদাসী দৃষ্টির কানাকড়িটুকু ও পেলে বদলে যেতো আমার অপায়া জীবনের যাবতীয় টানাটুনি। চড়ুইভাতি'র নেশায় একদিন রঘুনন্দন গেলাম সাথে ছিলো ভূঁইয়া বাড়ির মেঝো সর্দারের কনিষ্ট কনে সাত রাস্তার মোড়ে হঠাৎ থামিয়ে সে বললে- "এমন চমৎকার মানুষ আমি একটিও দেখিনি" আঠারো দশমিক পঁচিশ বছরের কথাখানি সেই অমনই আছে; কণাটুকুও ভুলিনি। বড় মামা যুদ্ধে গিয়ে ফেরেনি আর কখনোই বাড়ি মামা বাড়ি ছাড়লুম সেই থেকে। মামাতো বোনের আহ্লাদী ডাক শুনিনা মেলা দিন হলো। পরশু শুনলাম স্বামী তার বড়ই সুপাত্র; সে আছে রাণী-সুখে- নিঃসন্দেহে! ভেবেছিলাম; এবার বুঝি অপরিহার্য হলাম।

ঐ বার দেশে গণ-অভ্যুত্থানের ডাক মাটি ছুয়ে আমি সালাম নেবো; অমন সময় দেখলেম কার যেনো কোমল হাত বিছা করে রাখা আমার ধ্রুপদী চুলে। ভাবলুম এবার বুঝি সত্যিই হলেম অপরিহার্য্য কারো জীবনের! গাঁয়ের রাস্তার শেষ মাথায় বিস্তৃত রাবার ক্ষেত এখনও উঁচু হয়ে আছে; সূর্যোদয়ের আলোকে ভাগ বসায় সে ঠিকই আগের মতন। শুধু আমি যাইনা প্রতিদিন ঐ পথে সুর্যোদয়ে আমার ষষ্ঠ শ্রেণীর বিদ্যালয়ে যেখানের বার্ষিক মাহফিলে ভেবেছিলাম এই বুঝি অপরিহার্য হলাম; বার-চতুর্থ কারো! বন্ধু মজনুদের বাড়ির ঠিক উল্টো কোণায় ছিলো ছিমছাম একটা বাড়ি। বরাক বাঁশের ঘন ঝোঁপ ছিলো সে বাড়ির কোণায় কোণায়। আরও কিছু ছিলো হয়তো যেমন অন্তত একটি কিশোরী মেয়ে মেয়েটির লাল উড়না, কুঁচি ভাঙা শাড়ী কিম্বা কামিজ, ইত্যাদি।

এবং সেখানেও ছিলো হয়তো- অপরিহার্য্য হবার সব তীব্র উপাদান! ধান-কুটা মিলে জয়ন্তী মেয়েটা আর আসেনা অদূরের হিন্দু-পাড়া থেকে। প্রতি পার্বনে তাকে কম করে তিন বার দেখতে যেতুম সোয়া মাইল হেঁটে হেঁটে। একবার, কি যেনো কি পূজোয় ঘরে নিলো টেনে, অতি সঙ্গোপনে বললে হাতটি ধরে- "এও নেন চিড়া-মুড়ি-নাড়ু" অবাক থাকিয়ে ক্ষাণিক বলিলাম ধীরে- আবার কেনো কেউ অপরিহার্য্য করিলো আমারে? ভাবলুম- এবার হয়তো বরাবরের চেয়েও বেশি মিথ্যে করে অপরিহার্য্য করিলো আমারে! আমার বয়োঃসন্ধির শেষকালে একবার গিয়েছিনু মাছবাজারে। তখন মুঠোফোনের যুগ মাছের ফাঁকে ফাঁকে মিস করা কল বের করি সকল। কে জানতো ঐপাড়ে আছে বসে ফোন ধরে; যুবতী এক অবিকল।

এদিন-সেদিন মাঝে মাঝে প্রতিদিন কথা হতো, কবিতা হতো, হতো জীবনের গাল-গল্প অল্প-স্বল্প। কোনো কোনো দিন চিঠিও হতো কড়া হলুদ রঙের খামে; কারোটা সযতনে লেখা কারোটা বা ক্ষণিকের বিভ্রমে! এমনি করে ছিলো সে আমার সমস্ত অবসর জুড়ে সুপ্রভাত বলতেম প্রতিদিন তারে, সেও আমারে। ভুল করে চাইলেম আরো একবার হতে অপরিহার্য্য! জানতেম বিরহী হবো অনিবার্য! এবং তাই হলেম। কুলীন কোন একদিন আবারো চাইবো অপরিহার্য্য হতে! তোমার কপালের টিপ লাগাতেও সেদিন যেনো অপরিহার্য্য হই; তোমার কম্পমান ঠোঁটের মতো যে ঠোঁটে তুমি অবলীলায় যাকে-তাকে বলো "ভালোবাসি"। বিনিয়ামিন ১৯ এপ্রিল ২০১০ উৎসর্গ: জয়ন্তী'কে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।