আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাই পেট অ্যানিম্যাল- কল্প গল্প



প্রতিবারেই ভেবে রাখি এটাই শেষ; এর পর থেকে আর আমি এই কাজে নেই। সামান্য কটা টাকার জন্য এই ঝুট ঝামেলার ভেতরে আর যাবো না। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেটা আর মনেই থাকে না। ত্রিশ বছরের অভ্যেস মতো ঠিকই আবারও বসে পড়ি; পরীক্ষার এক গাদা খাতা নিয়ে। কী আর করা?! সারাজীবন তো এই, ছাত্র-ছাত্রী আর পড়ালেখা নিয়েই কাটিয়ে দিলাম।

বাকি দিনগুলিতে নতুন ভাবে, আর কী ই বা করতে পারবো। ছেলেমেয়ে দুটি বিয়ে থা করে নিজেদের মতো ভালোই আছে। তাদের মা টাও তো হুট করে চলে গেলো; তাও বছর দশেক হয়ে গেছে। আর দুবছর পরে আমাকেও বিদায় নিতে হবে, স্কুলের এই চাকরী থেকে। অনেক তো হলো।

বাকি দিন গুলি নিজের মতো করে, একটু জমি জিরেত দেখাশোনা নিয়ে কাটাতে চাই। তা যা বলছিলাম, এবছরটাও তাই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম এস এস সির খাতা দেখা নিয়ে। আমার বিষয় ইংরেজী। একসময় ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম বলে, এই বিষয়টা পড়াতে ও খাতা দেখাতে বেশ তৃপ্তি পাই। তবে এটা ঠিক, দ্বিতীয় পত্রের খাতায় সৃজনশীলতা খুঁজে পাওয়া যায় কেবল রচনামূলক লেখাতেই।

প্রতিবারই চমৎকার কিছু মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশাপাশি খুব হাস্যকর কিছু লেখাও আবিষ্কার হয়। গ্রামের দিকটায় ইংরেজী শেখার যে কি বেহাল অবস্থা সেটা বুঝতে মোটেও বেগ পেতে হয়না। হাজারো ভুল বানানে ভরা লেখাগুলির খুব কম অংশই পাঠযোগ্য থাকে। হাস্যকর সব লেখা পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে যে মেজাজ খারাপ হয়না, তা নয়; কিন্তু একঘেয়েমির মাঝে কিছুটা বৈচিত্র পাওয়া যায় বৈকি। এই লেখাটাও প্রথমে সেরকমটাই মনে হয়েছিল।

অপটু হাতের আঁকা বাঁকা লেখা। কিন্তু কিছুদুর পড়ে বুঝতে পারছিলাম কোথাও একটা খটকা আছে। একটাও ভুল বানান নেই! দ্রুত পড়ে যেতে লাগলাম। লেখাটা শেষ করে কতোক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম। কে লিখছে এমন লেখা?! রচনার বিষয়বস্তু ছিল পেট অ্যানিম্যাল, মানে পোষা প্রাণী।

কিন্তু এই প্রাণী নিয়ে নিঃসন্দেহে আর কেউ কখনো রচনা লিখেনি, সম্ভবত লিখবেও না! রচনাটা বাংলায় অনুবাদ করলে অনেকটা এমনটাই দাড়ায়- মাই পেট অ্যানিম্যাল আমার পোষা প্রাণিটার বুদ্ধিমত্তা খুব একটা উঁচু স্তরের নয়। তবে তার পরিবেশে, এর চাইতে বেশী বুদ্ধিমত্তা আর কোন প্রাণির ভেতর দেখতে পাওয়া যায় না। শারীরিক ও মানসিক কিছু অনুভুতির কারণে তার প্রজাতিটি অনান্য সব পশুর উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পেরেছে। মুলত এইজন্যই আমি তাকে পোষ্য নিয়েছি। আমার পোষা প্রাণিটি তার জগতে 'মানুষ' নামে পরিচিত।

তবে প্রচলিত নিয়মানুযায়ি সবাই তাকে 'জীবনলাল' নামে চিনে। ..........তার আছে খুব প্রাথমিক ও নীচু স্তরের আবেগ অনুভূতি; যা, খুব সহজেই শারীরিক পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে তার পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মূখাপেক্ষী বলে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই সহজ। তার প্রজাতির অনান্য সদস্যের সাথে তার যোগাযোগ ক্ষমতা খুবই অল্প সংখ্যক মাধ্যমের ভেতর সীমিত। আমি তাই কোন জটিলতা ছাড়াই তার গতিবিধি ও যুথবদ্ধ আচরণের উপর নজর রাখতে পারি।

.........প্রজননের ক্ষেত্রে প্রাণিটি স্বাবলম্বি নয়। বিপরীত শারীরিক গঠনের স্বজাতির সাথে আদিম প্রক্রিয়াতেই কেবল তারা বংশ বৃদ্ধিতে সক্ষম। কিন্তু নিরাপত্তা জনিত কারণে আমার পোষ্যটিকে এই সুবিধা দেয়া সম্ভব হয়নি। ..............এখানকার নিয়মানুযায়ী পোষ্যটি সবসময় আমার সর্বোচ্চ যত্ন নেয়ার চেস্টা করে। তাই আমিও আমার পোষা প্রাণিটির অনুভূতির প্রতি সবসময় সমান আচরণের চেষ্টা করি..........।

(স্মৃতি থেকে লিখতে হলো দেখে লেখাটার কিছু কিছু অংশ বাদ পড়ে গেছে। ) খাতাটা আবার পুরোটুকু উল্টে পাল্টে দেখলাম বার কয়েক। এমন কোন বিশেষত্ত নেই। সাধারণ মাঝারী মেধার উত্তর। দুলাল দাস নামে এক ছাত্রের খাতা, ময়মনসিংহের এক অখ্যাত উপজেলা স্কুলের।

যদিও এর আগেও হাস্যকর ও দুষ্টামিভরা কিছু রচনা মাঝে মাঝেই পেয়েছি, কিন্তু এটাকে কেন যেন সেরকম ভাবে উড়িয়ে দিতে পারছিলাম না। খাতাটা তখনকার মতো সরিয়ে রাখলেও মনের ভেতর থেকে খুঁতখুঁতে একটা অনুভুতি কিছুতেই দূর করতে পারছিলাম না পরের কদিন। পরে আরো কয়েকবার খাতাটা ঘাটাঘাটি করলাম। নাহ, আমাকে এই প্রশ্নের উত্তর জানতেই হবে! এমনভাবে আজব একটা রচনা লেখা অনুপ্রেরণা (কিংবা দুঃসাহস) ছেলেটা কোথায় পেলো?! বেলাবেলিই ময়মনসিংহ পৌঁছে গেলাম। পুঁটিরচালা উপজেলা স্কুল খুঁজে পেতেও খুব একটা ঝামেলা হলো না।

সরাসরি চলে গেলাম প্রধান শিক্ষকের রুমে। কথা বিশেষ না বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম দুলাল দাস নামের ছাত্রটির কথা। রচনার কথাটা অবশ্য কিছু বললাম না। "আচ্ছা, ব্যাপারটা কি বলেন তো?! " হেডমাস্টার সাহেবের কন্ঠে বিস্মিত হবার সূর। "তিন/চারদিন আগে বোর্ডের বাংলা পরীক্ষক এসে দুলালের খোঁজ করলেন; তার পরদিন আসলেন গণিতের শিক্ষক।

ঘটনা কী হয়েছে? সে কি খুব ভালো কোন রেজাল্ট করে ফেলেছে?! উনারা তো কিছুই বললেন না ভালোমন্দ। " মনে হলো তিনি বেশ মনক্ষুন্ন হয়েছেন। কিন্তু আমার মাথায় তখন অন্য চিন্তা! তার মানে দুলাল তার অন্য সব উত্তর পত্রেও কিছু না কিছু অস্বাভাবিকতা রেখে গেছে। "দুলালকে কি একটু খবর দিয়ে ডেকে আনা যাবে?" প্রসঙ্গ ঘুরানোর চেষ্টা করলাম। "আরে সে থাকলে তো!" হেডমাস্টার সাহেবকে যথেস্ট বিরক্ত মনে হলো।

" পরীক্ষার পরপরই তার বাবা জীবনলাল ডোম মারা গেলো এক রাতের জ্বরে। এরপর মুখাগ্নির সময় তাকে শেষবারের মতো এই এলাকায় দেখা গেছে। সংসারে তো আপন বলে তার আর কেউ ছিলনা। তাই কেউ তার খবরও জানেনা। " বুঝলাম, তার কাছ থেকে আর বেশী কিছু জানবার নেই।

ফেরার পথে দুলালের কয়েকজন সহপাঠির সাথে দেখা হয়ে গেলো। তারাই বাকি খবরটুকু দিল। দুলাল আসলে অকৃতদার জীবনলাল ডোমের পালিত ছেলে। তাকে নাকি ডাস্টবিনে খুঁজে পেয়েছিল সে। তবে ছেলের জন্য তার মমতার কোন ঘাটতি ছিল না! মুহুর্তে আবার আমার মনে পড়ে গেলো রচনার শিরোনামের কথা! 'মাই পেট অ্যানিম্যাল!' বাড়ি ফিরেও মনের ভেতরকার অস্বস্তিটা কিছুতেই দূর হচ্ছিল না।

কোথাও কিছু একটা দৃষ্টির আড়ালে থেকে গেছে যেন। পরীক্ষার খাতাটা বোর্ডে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম আগেই। কিন্তু কী ভেবে যেন একটা ফটো কপি করিয়ে রেখেছিলাম। সেটা বের করে চোখের সামনে ধরতেই থমকে গেলাম! একটা শব্দও পরিচিত নয়! এমন কি আমার এ দীর্ঘ জীবনে এ ধরনের কোন অক্ষর বা ভাষা আমি দেখিনি! অথচ দিব্যি দিয়ে বলতে পারি, এটা ইংরেজীতেই লেখা ছিল। ফটোকপিটা কিভাবে এমন সব দূর্বোধ্য চিন্হে পরিনত হয়ে গেলো, তার কোন ব্যাখ্যাই দাড় করাতে পারছি না।

যাদের মনে কিছুটা অবিশ্বাস জন্মেছে এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে; চাইলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ফটোকপিটা আমার কাছে এখনো আছে। আমার ঠিকানা?! সেটাও দিয়ে দিলাম নীচে! איר וועט קיינמאָל געפֿינען מיר

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।