I like to hear complain from my readers about my lacks.............................................আমি এক পরী যার ডানাও নেই, আকর্ষনও নেই
টিভিতে চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে হঠাৎ তার চোখ একটা নিউসে আটকে গেল। নতুন কিছু না, পত্রিকায় সে প্রায়ই পড়ে। গন-ধর্ষনের শিকার সুধা নামের এক যুবতী। টাইটেলটা পড়ল, কিন্তু নামটা সে দেখল না, পরপর মুখ ফিরিয়ে আবার লক্ষ্য করল টাইটেল নিউসটা, মেয়েটির নাম সুধা! আপন চোখকে শত্রু মনে হল মৌনের! এই ভর বিকেলে সে স্বপ্ন দেখছে?
এ শহরে কয়টি সুধা হতে পারে? মৌন নিজের উত্তালতা স্তিমিত করতে নিজেকে প্রবোধ শোনালো। আর সে তার সুধা, একটু হাসলো, সুধা তার কখন ছিল, কোনদিনও না।
তবুও সুধাকে নিজের ভাবতে ভালো লাগলো, কিন্তু মেয়েটি তার সুধা না হলে তার কেনো এত চিন্তা। আরো মানুষ আছে, কিন্তু,
মনের উপরে মস্তিস্কও হেরে যায়,
প্রেমের সামনে অভিমান হেরে যায়;
শত্রুর সাথেও তখন সন্ধি বনে যায়!
কেমন অদ্ভুত একটা আচরন নিজের মধ্যে মাথাচড়া দিল, ভাবলো মৌন। নাহ, যে সুধাই হোক, মেয়েটার এখন সাপোর্ট দরকার, আর পুর্বে এসব দেখে অন্য নিউসে মুখ ফেরাতে পারলেও আজকে আটকে গেল সে, আজ তাকে এ প্রকান্ড কষ্ট দিল, কেননা সে সুধার সাথে এমন হবে ভাবতে পারছে না, আর ধর্ষিত মেয়েটির নাম সুধার নামে নাম। সুধার ভালবাসা তাকে ভেঙ্গে এমন গড়ে দিবে সে জানত না। হয়ত এই সুধার প্রতাখ্যানই তার ভেতরে মনুষত্ব্য-বোধের সুচনা করেছে! অনেক হাতাশায় আজকে তার একটা নতুন উপলব্ধি হল, সে যাবে।
টিভিতে দেয়া হসপিটালে সে মেয়েটির পরিবারের পাশে দাড়াবে। অনেকদিন পর সে আজ প্রার্থনা করল, ঈশ্বর, এ যেন মোর সুধা না হয়!
ঘটনাস্থলে মানুষের ধ্বস নেমেছে, ভাবলো মৌন সেখানে পৌছে। প্রচুর মানুষ দাড়িয়ে এখন এই চৌ-রাস্তার মোড়ে, অথচ এ সময়টিতে অন্যান্য দিনে মানুষ কয়েক মিনিটের বেশি গাড়িতে বা বাসে বসে অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে যায়। রাস্তায় মনযোগ করল মৌন, কিছু রক্তের দাগ লক্ষ্য করল। মারামারি হয়ে গেছে নাকি, প্রশ্ন করল সে নিজেকে।
এত মানুষ ভীড় করলে মেয়েটিকে হসপিটালে নিবে কিভাবে? মৌন বিরক্তি নিয়ে চারপাশে মানুষের কান্ড দেখতে লাগলো। পরক্ষনেই মনে পড়ল, মেয়েটিকে নিউসে বলছিল নিয়ে যাবার চেষ্টা হচ্ছে হসপিটালে। চলে গেছে নাকি কে জানে। চারপাশে মানুষের মাথা ভাসছে, কবিগুরু থাকলে এমন দিনে কি বলতেন? আশ্চর্য হল মৌন নিজের ভাবনা দেখে, সে কবিগুরুকে মনে করছে? যেই লোকটার লেখা তার কাছে লেমো মনে হয়। চিন্তা বদলে হসপিটালের নাম মনে করতে চাইল, নিউসে লিখেছিল।
সিটি হসপিটাল, মনে পড়ল তার। পাশের একজন প্রায় ধাক্কা দিয়ে চলে গেল তার পাশ থেকে। অন্যসময় হলে সে কিছু বলত, আজ সে চুপ করে রইল।
বিভোর দৌড়ে ঢুকতে চাইলো, কিন্তু সিটি হসপিটালের সামনে যতটা সাধারন মানুষ, তার চেয়ে বেশি সাংবাদিক, তারচেয়ে বেশি ক্যামেরার ঝলক প্রতিটি পলকে। বিকেল শেষ হয়ে আসছে, সুর্য অস্তমিত হচ্ছে, আবার মনে হল তার সকাল হচ্ছে হয়ত, কে জানে।
বিভোরের মনটা এখন বিশাল ক্যালকুলেশন করতে ব্যস্ত, যা সেই দেড় ঘন্টা আগে শুরু হয়েছিল। হ্যা, বিভোর নিজেও সংবাদ দেখেই ছুটে এসেছে হসপিটালের দিকে; বাসায় ছিল সে আজ বিকেলে, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠেছিল, বলা বাহুল্য আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল সুধার সাথে তার বিয়ে এবং পরবর্তি জীবন, বন্ধুদের কাছথেকে বাসরের এক্সপেরিয়েন্স জড়ো করা, ইত্যাদি। কিছুক্ষন পরে মায়ের ডাক শুনে মায়ের শোবার ঘরে গেলে তার মা তাকে নিউসটা দেখতে বলে। টিভির নিউস দেখে সে একমুহুর্তে অবশ হয়ে গিয়েছিল, ভাবছিল নাহ এ হতে পারে না, এ তার সুধা হতে পারে না। কিছুসেকেন্ড মস্তিস্কে ভাবতে লাগলো সুধা এখন কোথায়।
পরক্ষনেই মনে পড়ল মিতুর টেক্সটার কথা। পৌনে-একঘন্টা আগে মিতু টেক্সট করে বলেছিল সে আজকে প্রথমবারের জন্য পাবলিক বাসে চড়ছে, খুব মজা লাগছে নাকি তার, যদিও এসি নেই। তখন বিভোর বকতে গিয়েও পারেনি। আজকে সুধার মিতুকে নিয়ে মার্কেটে গিয়েছিল, সাথে ছিল সোহানা আর শুভ্রা। ওদের ব্রাইডমেইড হবার উপলক্ষ্যে ওরা ওদের ট্রিট নিতে গিয়েছিল সুধার সাথে।
মিতু বিভোরের ছোট বোন। সোহানা এবং শুভ্রা ওর কাজিন, বয়সে শুভ্রা সবার ছোট, তারপর মিতু ও সোহানা সবচেয়ে বড় তিনজনে। ওরা তিনজন অনেক বেশি খুশি ছিল বিভোরের বিয়ে নিয়ে, কেননা ওরা জীবনে প্রথম ব্রাইডমেইড হতে যাচ্ছে। ওদের দাবি দেখে বিভোর মানা করেছিল প্রথমে, কেননা ব্রাইডমেইড কনে নিজে চয়েস করে। কিন্তু ওদের জিদে শেষে নিজেই একথা তুলে, সুধা নির্দিধায় মেনে নিয়েছিল।
সে ভাবলো ওদের সা্থে কেউ এমন করেনিতো? চিন্তা হল বিভোরের। তারপর মনে মনে সে নিজেকে ধিক্কার দিল এমন ভাবার জন্য, একমুহুর্তো চুপ থেকে ফোন করতে লাগলো, একে একে ওদের সবার ফোনে চেষ্টা করল। ভোরের মা বিভোরের আচরন দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেসা করতে লাগলেন মিতুর অবস্থান কোথায়। বিভোর মাকে শান্ত হতে বলে ফোন করতে লাগলো। ওদের চারজনের ফোন বন্ধ! এক্সিডেন্ট হয়নি তো? বিভোর পাগোলের মত বের হয়ে গেল, বন্ধুদের কিছু না বলেই! বিভোর মাকেও কোন প্রশ্ন করার সুযোগ দিল না, শুধু মাকে শান্ত হয়ে আল্লাহের কাছে প্রার্থনা করতে বললো।
মেয়েটি যেন তার সুধা না হয়, ভাবলো বিভোর।
হসপিটালে প্রায় সাতরে ঢুকলো মৌন, খুব কাছাকাছি না যেতে পারলেও সেই মেয়েটির ওপারেশন রুমের কাছে গেল সে। হাতড়ে নিজের মোবাইল বের করে সে সুধাকে তোলা ঝাপসা ছবিটা দেখছিল। নাহ, ছবিটা এতটা ঝাপসা ছিলনা, আজকে মনে হচ্ছে, ভাবলো সে। ওর চারপাশে বেশ মানুষ, এই হসপিটালে মানুষ ওপারেশন থিয়েটারের পাশে এভাবে কিভাবে আসলো ভাবতে ইচ্ছা হল না মৌনের।
পাশের একলোককে সে প্রশ্ন করলো, আপনি কি কারো জন্য_? লোকটি উত্তর দিল, নাহ সুধাকে সাহায্য করব, ওর পরিবারকে সাহায্য করব বলে এসেছি। মৌনের মাথায় রাগ উঠলো, এভাবে আপনারা সাহায্য করেন, দেখছেন এভাবে ভীড় করে নার্স আর ডক্টরদের যাবার পথ আপনারা অবরোধ করছেন, মৌন চিৎকার করে বলল। লোকটি হতচকিত হয়েই সামলে নিয়ে প্রশ্ন করল আপনি এখানে কেন? মৌন লোকটার দিকে দৃঢ়ভাবে তাকালো, তারপর বললো আমার পরিচিত কেউ হতে পারে, বলেই মুখটা অন্যদিকে ফেরালো। লোকটি মৌনের কাছ থেকে সরে গেল, হয়ত ওর কথায় একটু লজ্জাও পেল। কিছুক্ষন পর আবার আগের স্থানে ফিরে আসলো সে, লক্ষ্য করল মৌন।
শুধু লোকটিই নয়, অন্যান্য সবাই মৌনের তখনকার চিৎকারে ওর কাছ হতে দুরে সরে চাপলো।
মৌন রাস্তা পেয়ে সামনে এগিয়ে গেল, একটা লোক মেয়েটার গায়ে কেমন রক্ত লেগেছিল, মৌনের মেজাজ খারাপ হল। এমনিতে মানুষের ভীড়ে অসস্তি লাগছে, গরম, আর কি করবে জানে না সে, তার উপরে এসব আলোচনা খুব বিশ্রি ঠেকল তার কাছে। আজকাল মানুষ যে কিসব বলে আর করে। কিন্তু মেয়েটি কে জানতে হবে, আবারো ভাবল মৌন।
বিভোর জনতার চাপে একপ্রকার বিরক্ত হত অন্যান্য সময় হলে, কিন্তু আজকে তার মন বিচ্ছিন্ন। সে যাবার পথে একজন ডক্টরের সামনে পরে, সে তার পরিচয় দিয়ে ডক্টরকে মিতু আর সুধার ছবি বের করে দেখায়, ডক্টর মিতু বা সুধা ছবি কারোর ছবিই চেনা বললো না। বিভোরের অনেক আশ্বস্ত বোধ করল। কিন্তু একটু পরই ডক্টর সুধার ওপারেশন থিয়েটারে ফিরে গেল যখন, সুধার মুখ ততক্ষনে নার্স ক্লিন করে ফেলেছে। এবং ওর মুখ দেখে ডক্টরের বিভোরের কথা মনে পড়ল।
তিনি নিজেই অন্য একজন ডক্টরকে বিভোরকে খুজে দেখতে বললেন। পরে মনে হল সে নাও পেতে পারে। তাই সে বিভোরের নাম সে এনাউন্স করতে লাগলেন। বিভোর নামে কেউকে ডাকতে লাগলো, ডক্টর প্রণয় এর কাউন্টারের কাছে আসার জন্য অনুরোধ করা হল।
ঘন্টা দেড় পরে বিভোরের বাবা-মা ও বন্ধুরা হসপিটালে পৌছাল, আরো আসলো সুধার বাবা ও ছোট বোন।
সুধার মা মুর্ছা যায়, তাই তিনি আসেননি। সুধার বাবাকে বিভোর হলওয়েতে আসার সময় ধরে রেখেছিল, মানুষটা এখন হতবিহ্বলভাবে হাটছে। চোখ থেকে তার অনবরত পানি পড়ছে। ওদের পিছু পিছু হাটছে মৌন, সেও চোখ মুছছে, তার প্রার্থনা আজ শুনেনি বিধাতা!
_____________(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।