টুকিটাকি ভাবনাগুলো
জার্মান সম্প্রচার মাধ্যম ডয়েশে ভেলের ২০১০ ব্লগ প্রতিযোগিতা বাংলাভাষী ব্লগারদের জন্যে এক উল্লেখযোগ্য মাইলস্টোন দুটি কারণে - প্রথমত এই প্রথম বাংলা ব্লগ একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত প্রতিযোগীতায় অন্তর্ভুক্ত হল এবং দ্বিতীয়ত: এর আগে বাংলা ব্লগ নিয়ে বিরাট পরিসরে কোন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় নি।
মোট ১১টি ব্লগ মনোনয়ন পেয়েছে যাদের অনেকগুলোই সামহোয়ারইনের নিয়মিত ব্লগারদের লেখা এবং তাদের আপনারা হয়ত চেনেন। আগামী ১৪ই এপ্রিল ভোটদান শেষ হচ্ছে। কাজেই আপনার প্রিয় ব্লগারটিকে ভোট দিতে ভুলবেন না ।
আজ আপনার সামনে উপস্থাপন করব আলী মাহমেদ শুভর সাক্ষাৎকার , যিনি পাঠকদের ভোটে এগিয়ে আছেন।
প্রচন্ড অভিমানী এই লেখক - যার প্রথম বছর সামহোয়ারইনে লেখালেখির উপর একটি বইও বেড়িয়েছে - অভিমান করে সামহোয়ারইন থেকে তার পোস্টগুলো মুছে দিয়েছেন । তবে তার নিজের ব্লগসাইটে তার লেখাগুলো পাবেন।
এই ইমেইল সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছিল গ্লোবাল ভয়েসেসের জন্যে এবং সেখানে সংক্ষেপিত একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। সামহোয়ারইনের পাঠকদের জন্যে এখানে সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হল:
প্রশ্ন: আপনি কি আপনার ব্লগকে পরিচয় করিয়ে দেবেন আর আপনি কি ধরনের বিষয়ে লেখেন তা জানাবেন?
উত্তরটা আমার জন্য বড়ো কঠিন। প্রশ্নটা অনেকটা 'আপনি কি ভাবেন' এই ধরনের।
ভাবনা কি আর আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, নাকি সব মনে করে বসে থাকা যায়? এক্ষণ মাথায় এলো মাথায় বড়ো খুশকি হয়েছে মাথাটা কামিয়ে ফেলব? এই ভাবনার রেশ পুরোটা শেষ না হতেই এটা নিয়ে ভাবা ভাবি শুরু হয়ে গেল, আচ্ছা, মঙ্গলে পানি পাওয়া গেলে আমার কী!
আমি যেটা করার চেষ্টা করি, আমার বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো একত্রিত করে লেখার প্রচেষ্টা, সবিরাম। আর এখানে লেখা মানেই তো ব্লগিং।
অবশ্য আমার লেখাগুলো আদৌ প্রচলিত ব্লগিং-এর পর্যায়ে পড়ে কিনা আমি জানি না। এবং প্রচলিত কোন ধারা আমি মেনে চলি না। যেমন আজ মশা নিয়ে লিখলাম- মশার প্রতি মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা, তো কাল মা হাতি - যে হাতিটা আগে মা পরে হাতি, একটু পরই বুশকে নিয়ে - তিনি কেমন করে রক্তের সঙ্গে তেল মিশিয়ে নতুন একটা জ্বালানী আবিষ্কার করার চেষ্টা করছিলেন।
পরশু হয়ত কোন একটা ধর্ম নিয়ে, এর পরের দিন হয়ত বা বিজ্ঞান বিষয়ক কোন একটা লেখা। এই জন্যই শুরুতে বলেছিলাম, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা আমার জন্য মুশকিল। বিনীত ভঙ্গিতে বলি, কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কে? এটা যেমন আমি জানি না তেমনি আপনার ব্লগে কি লেখেন এর উত্তরেও সবিনয়ে বলি, আমি জানি না।
প্রশ্ন: আপনি তো মূলত একজন লেখক। কবে ব্লগিং শুরু করলেন এবং কেন?
আমি নিজেকে লেখক বলে স্বীকার করি না।
বলি লেখার রাজমিস্ত্রি। একজন রাজমিস্ত্রি যেমন একের পর এক শব্দের ইট বসিয়ে একটা কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তেমনি আমিও একের পর এক শব্দের ইট বসিয়ে একটা কাঠামো গড়ার চেষ্টা করি। কোন পাঠক যখন আমার সেই নিষ্প্রাণ বাড়ি নামের কাঠামোটা ছুঁয়ে দেন তখন সেটা হয়ে উঠে ঝলমলে একটা প্রাসাদ।
আমি লেখালেখির নামে ব্লগিং শুরু করি ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কোন এক দৈনিকে ‘সামহোয়্যার ইন ব্লগ ডট নেট’ এই সাইটটার খোঁজ পাই।
ওখানেই শুরু। সে এক সোনালী সময়- এখনও পুরনো বন্ধুদের মিস করি! ওই সাইটটার প্রতি ব্লগিং নিয়ে আমার বই শুভ'র ব্লগিং-এর ভূমিকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি, আজও করি। যদিও এদের অনেক মতের সঙ্গে আমার মিল নাই। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
এঁরা এক অভাবনীয় কাণ্ড করে ফেলেছিলেন।
এঁরাই প্রথমে এই দেশে বাংলায় লেখালেখি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এই দেশের পক্ষ থেকে আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আমরা যারা দেশে থাকি তাদের চেয়ে এটা অতি জরুরী ছিল প্রবাসীদের জন্য। খানিকটা অক্সিজেন, প্রবাসীরা এখানে তাদের দমবন্ধ শ্বাস ফেলার সুযোগ পেতেন- একমুঠো দেশের সোঁদা মাটির গন্ধ! এর ফল যে কী অকল্পনীয় তার পুরোটা আঁচ করা মুশকিল।
কেন ব্লগিং শুরু করলাম এটা অল্প কথায় বলি, আমি তো আগেও লেখালেখি করতাম।
ওখানে ব্লগিং শুরু করার পূর্বেই বিভিন্ন পত্রিকায় লিখেছি, তখন পর্যন্ত আমার বেশ ক-টা বইও প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু ওখানে এসে লেখার শক্তি দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ফারাকটা টিভি নাটক এবং মঞ্চনাটকের যে তফাত, এমন! একেবারে লাইভ, জীবন্ত!
একটা লেখা দিয়ে আপনি পার পাবেন না, পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ভাললাগা-মন্দলাগা জেনে যাবেন, ভুল লিখলে জালে আটকা পড়বেন। প্রাসঙ্গিক বিধায় প্রসঙ্গটা এখানে উল্লেখ করি, 'কনক পুরুষ' নামের আমার একটা উপন্যাস কাজী আনোয়ার হোসেন বের করেছিলেন ৯৫ সালে। লেখাটা যে পাঠকের ভাল লেগেছিল এটা আমি জানতে পারি ২০০৬ সালে ওয়েব সাইটে লেখালেখির কল্যাণে।
ভাবা যায়?
অনেকেই এখানে লেখার শক্তিটা বুঝে উঠতে পারতেন না বা বুঝতে চাইতেন না, আমি খানিকটা আঁচ করতে পারতাম।
প্রশ্ন: ২০০৭ সালে ব্লগিং এর উপর আপনার প্রথম বই শুভর ব্লগিং বের হয়। এটি বাংলা ভাষায় ব্লগিং এর উপর প্রথম বই। এটির পেছনে কোন প্রনোদনা কাজ করছিল?
হ্যাঁ, শুভ'র ব্লগিংকে বলা যেতে ব্লগিং-এর উপর বাংলা ভাষায় প্রথম বই। এটা বের করার পেছনে ঠিক সুনির্দিষ্ট কোন কারণ ছিল না।
এক বছর আমি সামহোয়্যারে চুটিয়ে লেখালেখি করেছিলাম। ওখানে বেশ কিছু আমার পছন্দের লেখা ছিল, তাছাড়া অনেকের সঙ্গে অজস্র মন্তব্য চালাচালি হয়েছিল। ইচ্ছা ছিল মন্তব্যসহ পোস্টগুলো নিয়ে আসা কিন্তু তাহলে বইটা গিয়ে দাঁড়াত প্রায় হাজার পৃষ্ঠার, এই বিপুল আকারের বই বের করতে প্রকাশক আগ্রহ বোধ করতেন না। আরও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে কেবল পোস্টগুলো নিয়েই বই বের হল।
প্রশ্ন: আপনি কমিউনিটি প্লাটফর্মের ব্লগিং দিয়ে শুরু করেছিলেন- এখন স্বতন্ত্র সাইটে লিখছেন।
এর সুবিধা- অসুবিধা সম্পর্কে আমাদের জানাবেন।
কমিউনিটি ব্লগিং-এর বিপুল শক্তি হচ্ছে এর পাঠক। সামহোয়্যারে বা অন্যত্র লেখার সময় এমনও দাঁড়িয়েছে আমার কিছু পোস্টে হাজারেরও উপর হিট ছাড়িয়ে গেছে, যেটা আমার নিজের সাইটে অকল্পনীয়। কিন্তু কেবল হিটটাই বড়ো কথা না, বড়ো কথা না প্লাসাইলাম, মাইনাইসিলাম, পড়লাম। অনেকের মন্তব্য পড়ে বোঝা যেত আদৌ তিনি লেখাটা পড়েননি!
মোটা দাগের একটা উদাহরণ দেই, কমিউনিটি প্লাটফর্ম টাইপের আরেকটা প্ল্যাটফর্মের প্রসঙ্গ এখানে টেনে আনি, ফেসবুকে আপনি স্ট্যাটাসে লিখলেন, 'জানেন, আমার না এখন চুল কাটাবার পয়সা নাই'।
অনেকগুলো মন্তব্য পাবেন, 'লাইক ইট'। তার মানে একটা মানুষের বেদনা আমাদের স্পর্শ করতে পারছে না, আমরা একটা ছকে আটকা পড়ছি। এর কোন মানে হয় না, অর্থহীন!
কমিউনিটি ব্লগিং-এ যে সমস্যা আমাকে ভারী বিব্রত করত, তা হচ্ছে দলাদলি। বুশ স্টাইল, হয় তুমি আমার দলে নইলে খেলা থেকে বাদ। এতে আমার প্রবল আপত্তি ছিল, এখনো আছে।
আসলে এটা হচ্ছে আমাদের দেশের কালচার। এখানে জন্মের পরই আলাদা করে ফেলা হয় একটা প্রাণ পশুর, না মানুষের বাচ্চার? এরপর ছেলে, না মেয়ে? কোন ধর্মের? বাড়ি কোন এলাকায়? পরিশেষে কোন দল করে? কালে কালে এটা আমাদের শেখানো হয়েছে!
আমার ভাবতেও গা গুলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও নাকি দলবাজি করতে হয়, লাল দল, নীল দল, গোলাপী দল, সাদা দলের নামে! শিক্ষক হচ্ছেন পিতাসম, কেন তাঁকে এটা করতে হবে- ছাত্ররা শিখবে কি? এই দেশে আমরা একটা দলছুট মানুষের কথা কেন ভাবতে পারি না?
কমিউনিটি প্ল্যাটফর্মে যিনি লেখালেখি করেন তিনি কিন্তু থাকেন পুরোপুরি অরক্ষিত- আঘাতটা আসতে পারে যে কোন দিক থেকে এটা জেনেশুনেই একজন এখানে লেখালেখি করেন; কিন্তু একটা কথা মনে রাখলে আমাদের সবার জন্যই মঙ্গল, যুদ্ধেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, একজন বেশ্যারও কিছু অধিকার থাকে। কমিউনিটি প্লাটফর্মে আমাদের সহনশীলতারও বড়ো অভাব, আমরা একে অন্যকে সহ্য করতে পারি না।
আইনস্টাইনের মতবাদের বিরুদ্ধে যখন একশত বিজ্ঞানী বিবৃতি দিলেন তখন আইনস্টাইন ছোট্ট করে বললেন, 'এতো মানুষের কি প্রয়োজন, একজন আমাকে ভুলটা ধরিয়ে দিক না, তাহলেই তো হয়'!
কমিউনিটি ব্লগিং-এ কেউ কোথাও কেউ ভুল করলে তার ভুল ধরিয়ে দিলেই চলে, ব্যাক্তিগত আক্রমণ করার প্রয়োজন পড়ে না। আমরা কেন ভুলে যাই কলমের উত্তর আমরা দেব কলম দিয়ে, জিহ্বা দিয়ে না; কারও বাপান্ত করে, মাকে টেনে এনে না! কেন আমরা ভুলে যাই ভলতেয়ারের সেই কথা, ‘আমি তোমার সাথে একমত না কিন্তু তোমার মত প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু লড়ব’।
আর এটাই বা কেমন অনাচার? ওখানে লিখে জনে জনে ব্যাখ্যা দাও, কেন আপনি এমনটা লিখলেন, কেন অমনটা লিখলেন না? লিখে কেন উত্তর দেয়ার জন্য ২৪ ঘন্টা অনলাইনে বসে থাকলেন না, আপনি কি সিআইএর এজেন্ট, নাকি মোসাদ?
আমি এটা বলতে চাচ্ছি না যে, কোন পাঠক ব্যাখ্যা চাইতে পারবেন না। ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের আছে পাঠকদের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, একেকজন পাঠক মানে একেকটা চলমান বুদ্ধির ক্ষুর- এরা হয়ত লিখতে আলস্য বোধ করেন, বা গুছিয়ে তাঁদের লেখা হয়ে উঠে না।
অনলাইনে লেখার সময় আমি ভয়ে কাঠ হয়ে থাকি, এই রে কোথাও ভুল লিখে বসলাম না তো আবার- প্রচুর পড়তে হয়, হাতের নাগালে তথ্য-উপাত্ত রাখতে হয়। এখানকার পাঠক কিন্তু আমার উপন্যাসের টিনএজ পাঠক না, দুর্ধর্ষ সব মানুষ, যারা প্রবাসে গেছেন উচ্চশিক্ষার জন্য।
এঁদের রয়েছে চিন্তা করার বিপুল ক্ষমতা!
অন্যদের কথা জানি না কিন্তু এই সব আমার উপর চাপ পড়ত। তারচেয়ে আমার নিজের সাইটে যখন লিখি, লিখে বড়ো আরাম পাই। বাড়তি চাপ নাই। যে অল্প পাঠক সাইটটা ভিজিট করেন তারা মুলত: পড়ার জন্যই আসেন। তাঁদের সঙ্গে আমি আমার ভাবনা শেয়ার করতে পারি, 'বাঁশে ভিউ মিরর ' লাগাবার আইডিয়া।
আমার অদেখা স্বপ্ন , আমার স্বপ্নগুলো ছড়িয়ে দিতে পারি, আমার ভুলগুলো শোধরাতে পারি। আমার লুকানো যন্ত্রণা প্রশমিত হওয়ার একটা সুযোগ হয়, আটকে থাকা শ্বাস ছাড়তে পারি। কারণ আমি যখন লিখতে বসি, এই গ্রহের কোন জাগতিক সমস্যা আমাকে কাবু করতে পারে না, আমি ভুলে যাই আগামীকাল ভোরটা আমি দেখতে পাব কি না...।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে ব্লগিং এর গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আপনার ধারণা জানাবেন।
আমি প্রচন্ড মুগ্ধ! এক কথায় দুর্ধর্ষ, এখানে ব্লগিং-এর নামে যেসব লেখালেখি হয়, অনেকের লেখা পড়ে, তাঁদের ভাবনার প্রসারতা দেখে আমি থ হয়ে যাই।
পারলে এদের হাত সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে দিতাম। আমাদের দেশের যেসব বিখ্যাত লেখকগণ রয়েছেন এঁরা কল্পনাও করতে পারবেন না, এখানে এমন অনেকে লেখালেখি করেন তাদের লেখার-ভাবনার কী গভীরতা!
বিব্রতকর উদাহরণ, একজন অতি জনপ্রিয় লেখক, নাম বলে নির্লজ্জ মানুষটাকে লজ্জা দেই না। চালবাজ এই মানুষটার মিডিয়া-লেখা সংক্রান্ত প্রায় সব জগতে তার পদচারণা, পত্রিকায় চাকরির সুবাদে হাতের সবগুলো আঙ্গুল ঘিয়ে ডুবিয়ে রেখেছেন।
কিন্তু ওয়েব সাইটে চিত্রটা ভিন্ন। তাঁর একটা ওয়েব সাইট আছে।
সেখানে তাঁর নিজের সম্বন্ধে হা বিতং করে লম্বা লম্বা কাহিনী লেখা। একবার পত্রিকায় এই সাইটটা নিয়ে কী উচ্ছাস! কেবল উল্লাস দেখলাম না এলেক্সার, এলেক্সা এই সাইটটাকে কাউন্ট করতেও নারাজ! আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি ওই মানুষটা যদি কোন কমিউনিটি প্ল্যাটফর্মে আসেন দুর্ধর্ষ সব ব্লগার নামের লেখকের হাতে নাকাল হবেন, টিকিটিরও দেখা মিলবে না।
প্রশ্ন: যে দেশে ৪০% লোক অশিক্ষিত সে দেশের জন্যে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাক স্বাধীনতাকে আপনি কিভাবে দেখেন এবং ব্লগিং কি কোন ভুমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
এই প্রশ্নের উত্তর চট করে দেয়াটা মুশকিল। যদি বলা হয় হ্যাঁ তাহলে অতিশয়োক্তি হবে। যেখানে শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ অশিক্ষিত, এখানে খুব অল্প মানুষই নেট ব্যবহার করেন।
তাছাড়া যারা দেশ চালান তাঁরাই বা কতটুকু শিক্ষিত? নেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করা দূরের কথা, ক-জন বা কম্পিউটার চালাতে জানেন এটা একটা গবেষণার বিষয়! আমাদের তো আর একজন মাহাথির মোহাম্মদ নাই যিনি অফিসে ঢুকেই প্রয়োজনীয় মেইলগুলো পড়বেন, উত্তর দেবেন, দরকারী তথ্য-উপাত্ত নেট থেকে নিমিষেই বের করে ফেলবেন।
যেমন ধরা যাক, আমি একটা লেখা দিয়েছিলাম, 'কেন আমি এই পাপের বোঝা টানব '? বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় ঋণ আনুমানিক ১০ হাজার টাকা। আমি কেন এই আবর্জনার ভার নিয়ে মারা যাব? টাকাটা দিয়ে ঋণমুক্ত হতে চাই। পদ্ধতিটা সিম্পল, কোন একটা ব্যাংকে এই টাকাটা জমা করলে আমাকে ‘জাতীয় ঋণমুক্ত ব্যক্তি’ এই মর্মে একটা সনদ প্রদান করা হবে। লোকজনকেও এটার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।
আমার ধারণা, অনেকেই হয়ত আগ্রহী হবেন।
এখন কথা হচ্ছে আমাদের দেশ যারা চালাচ্ছেন তাঁদের এইসব পড়ার সময়, যোগ্যতা কই? এমতাবস্থায় ব্লগিং করে চট করে কিছু করে ফেলা যাবে এটা বলা মুশকিল। তবে ভূমিকা রাখা যেতে পারে পরোক্ষভাবে।
অন্য একটা উদাহরণ, যেমন ধরুন, অশিক্ষিতের কথা বলা হচ্ছে। কে যে শিক্ষিত কে অশিক্ষিত এটা প্রায়ই আমি গুলিয়ে ফেলি।
কয়েক লক্ষ সার্কুলেশনের জাতীয় দৈনিকগুলো আমাদের ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে, রাইট? ‘কালের কণ্ঠ’ নামের এমন একটা দৈনিক যখন ‘প্রথম আলো’র মালিকের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার ঘটা করে প্রথম পাতায় ছাপিয়ে দেয় তখন আমি কাকে শিক্ষিত বলব, কাকে অশিক্ষিত? কিন্তু এখানেই আসছে ব্লগিং-এর শক্তির কথা। এই পত্রিকার বিরুদ্ধে কিছুই করা যাবে না কিন্তু এদের এই সন্ত্রাসের কথা (Click This Link) ব্লগিং-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে ও মানুষের অশিক্ষা ও দরিদ্রতার সুযোগে জনগণকে দাবিয়ে রাখতে পারবে শিক্ষিত ও ক্ষমতাশালীরা?
না বলতে পারলে সুখী হতাম। বাস্তবতা হচ্ছে শিক্ষিত তাও আবার ক্ষমতাশালী, এদের রোখার শক্তি কই!
প্রশ্ন: আপনার কেমন লাগছে এমন একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মনোনীত হতে পেরে?
অবশ্যই এটা অতি আনন্দের। তবে আমি পেছনের কাতারের মানুষ।
হুট করে সামনে চলে এলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি।
প্রশ্ন: বিশ্বের পাঠকদের জন্যে বাংলাদেশের ব্লগ সম্পর্কে কিছু বলুন।
এটা আমি একটু ঘুরিয়ে বলব। কোন দেশ কতটা সভ্য এটা তার স্বর্ণের মজুত বা মিসাইলের সংখ্যা দিয়ে হয় না। আমি মনে করি ওই দেশের মানুষদের ভাবনা, যার আরেক নাম ব্লগিং নামের লেখালেখি দিয়ে হয়।
অস্ট্রেলিয়ার মত যে দেশ সাড়ে ছয় লক্ষ উট গুলি করে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় (Click This Link) সেই দেশকে আর যাই হোক সভ্য বলতে আমি নারাজ। আজ এরা এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কাল ১০ লক্ষ মানুষকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না। এটা একটা চেইন- একটার পেছনে অন্য একটা আংটা লাগানো।
এখন আমরা কোন দেশের লোকজনের ভাবনা জানব কেমন করে? পত্রিকা-মিডিয়ার মাধ্যমে, উঁহু। ওখানে আমরা কেবল জানতে পারব মেদবহুল ভাবনা।
নির্মেদ ভাবনা জানার জন্য ব্লগিং নামের শক্তিশালী এই মাধ্যম ব্যতীত অন্য কোন উপায় নাই। দেশটা বাংলাদেশ নাকি কঙ্গো সেটা দেখার বিষয় না, দেখার বিষয় হচ্ছে ওখানকার মানুষদের ভাব প্রকাশ-ব্লগিং।
যেমন আমরা এই গ্রহের সাহিত্য বলতে বুঝি ইংরেজি সাহিত্য প্রকারান্তরে আমেরিকা-বৃটেনের সাহিত্য। মুভি বলতে বুঝি আমেরিকার মুভি। ব্লগিংটাও যেন সে পর্যায়ে না যায় সেজন্য আমাদের যেটা অতি সত্বর করা প্রয়োজন পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার ব্লগারদের লেখা অন্য ভাষায় অনুবাদ করার ব্যবস্থা করা।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে ব্লগিং এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমার মতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোন একটা উপায়ে ব্লগিং থেকে আর্থিক সাপোর্টের ব্যবস্থার কিছু উপায় বের করার চেষ্টা করা। অন্তত এটা নিয়ে ভাবতে দোষ কী! হয়ত এটা আমরা শুরু করব, পরবর্তী প্রজন্ম এর ফলভোগ করবে। একসময় ব্লগিং নামের দুর্ধর্ষ লেখালেখি আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
ব্লগিং-এ আমরা কি করি, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই, এভাবে কত দিন? কিন্তু এমনটা যদি হয় একজন ব্লগারের বেঁচে থাকার জন্য অফিস নামের একটা কারাগারে আটকে থেকে মেধা নষ্ট করতে হবে না, তাহলে কী চমৎকারই না হয়! তার কাজ হবে কেবল ব্লগিং করা, রাজ্যের ভাবনা পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেয়া।
এমনিতে একজন লেখকের চেয়ে একজন ব্লগারের উপর চাপ পড়ে বেশি। তাকে অনবরত লিখে যেতে হয়, মাথায় কেবল ঘুরপাক খায় অজস্র ভাবনা-আইডিয়া। অফিস নামের কারাগারে আটকে থাকা বা জীবনযুদ্ধে লড়তে থাকা একজন মানুষ এক সময় হাল ছেড়ে দেবে এতে অন্তত আমার কোন সন্দেহ নাই।
প্রশ্ন: আপনার ৬ বছরের ছেলেও ব্লগিং শুরু করেছে। আপনার কি অনুভূতি তা নিয়ে?
অনুভূতিটা অন্য রকম।
আমি আমার সন্তানকে ব্লগিং করা দেখিয়ে দিয়েছি। আর সে আমাকে দেখিয়েছে এটা, সে ৬ বছর বয়সে ব্লগিং করে আর আমি ২৭ বছর বয়সে প্রথম কম্পিউটার ছুঁয়ে দেখেছিলাম!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।