যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।
প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই ব কলমকে এই পোষ্টের জন্য । আগ্রহী আলোচকদের অনুরোধ থাকবে এই পোষ্ট পড়ে এরপর আলাপ শুরু করার জন্য।
আমি ক্যামেরনের পরিবেশন ও গোছানো সমাপ্তির জায়গাটা নিয়ে কতগুলো প্রশ্ন করতে চাই আসলে।
ব কলমের পোষ্ট দারুণ করে যেসব বিষয় এনেছে তার কয়েকটি অংশ তুলে দিচ্ছি,
" অভতার-এ ক্যামেরন শুধুমাত্র সাই ফাই বিস্ময় বা অসাধারন টেকনিক এ আবদ্ধ থাকেননি। আরেকধাপ এগিয়ে গেছেন দর্শন, বিজ্ঞান আর রাজনীতির ইন্টারপ্রিটেশন-এ।
অভতার কথা বলেছে আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদ ও প্রকৃতিবাদ নিয়ে এবং দেখিয়েছে আগ্রাসি ভোগবাদি লোভের ফলশ্রুতিতে কিভাবে আমরা সব ধ্বংশ করছি। "
আমি আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসী ভোগবাদী সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্পূর্ণ একমত। ক্যামেরন এই কাজটি দারুন করেছেন।
আর জনপ্রিয়তা ও বানিজ্যের জন্য যে প্রাযুক্তিক ও স্বাপ্নিক ইউটোপিয়া এবং নারী পুরুষের প্রেমের গল্পের দরকার ছিল সেটাও তিনি সফলতম করেই ব্যবহার করেছেন।
প্রিয় পাঠক মনে রাখবেন আমি কেবল খুঁত ধরার জন্যই খুঁত ধরছিনা। পুরো ছবিটা দেখে আমার একটা খুব গোপন অস্বস্তি হয়েছে। অস্বস্তিটা হল আভাতার গল্পের নাবিদের বারবার আমার নিজের বলে মনে হয়েছে।
মনে হয়েছে প্রযুক্তি ও আগ্রাসনে "উন্নত" একটি জাতি মানবজাতি এসে আমাদের নাবিদের প্রথমে আগ্রাসন করে এবং পরে তাদের দলেরই একজন আমাদের উদ্ধার করেন।
এই যে উদ্ধার এর গল্পটি সেটি বারবার মনে করিয়ে দেয় " হোয়াইট ম্যানস বার্ডেনের কথা"। যেটা পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসের সাথে জন্ম থেকেই জড়িত। সাদা চামড়া একটি অশিক্ষিত মুর্খ অজ্ঞানী গোষ্ঠীতে যান সবসময়ই কোন না কোন স্বার্থে। কি সে স্বার্থ? কাঁচামাল আহরণ, পুঁজির সঞ্চয় এবং সর্বোপরি আধিপত্য।
এই গল্পের ভালোমানুষ বীর নায়ক (মানুষ) অন্যায়ের প্রতিবাদী হয়ে উঠে তার জাতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।
এবং শেষ পর্যন্ত তার হাতেই উদ্ধার হয়। অর্থাৎ গেইম প্লেইং এর হিরো আর ভিলেন একই গোষ্ঠীর। হিরো আরো হিরো হয়ে ওঠেন তখনি যখন তিনি নিজেই প্রজাতি বদলে নাবি হয়ে ওঠেন। মানে অন্য সমাজে মানুষ হয়ে ছড়িয়ে পড়েন। এই ছড়িয়ে পড়া তো আরো গভীর আরো সঙক্রামক, আভাতার ২ য় তে আমরা হয়ত দেখবো এই নতুন আভাতার আর তার প্রজন্মের মধ্যকার লড়াই।
কিন্তু মূল গল্পটা শ্রদ্ধাটা প্রযুক্তি ও জ্ঞানী মানব প্রজাতির দিকেই ঝুঁকে যায় গোপনে গোপনে।
খুব খেয়াল করার মত বিষয়, নাবিদের পুরো চরিত্র আসলে আফ্রিকান কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ইউরোপীয় নির্মাণ। যেখানে নায়কের প্রেম প্রতিপক্ষও বীর কিন্তু মানুষের মত বীর নয়। আরো গোপন কথা, এই মানুষ কোন মানুষ? প্রযুক্তি ও মিলিটারি ট্রেনিং পাওয়া মানুষ। পশ্চিমা চোখের যে অবধারিত বিশ্ব দৃষ্টি সেটার একটি পশ্চিমা "মানবীয়/মানবিক" রূপের পুনরূৎপাদন পুরো ছবিতে।
সেই পুরোনো এক্সোটিক "অপর", ওরিয়েন্টাল কি আফ্রিকান।
একটা মজার গল্প যদি আমরা চোখ খুলে দেখি , তাহলে দেখবো যে এই ছবির বয়ানে আদর্শ প্রকৃতিময় বিশ্বের জন্য এই পৃথিবীতে আর কোন স্থান নেই, এজন্য প্রযুক্তির উপর ভর করে আমাদের অন্য গ্রহেই যেতে হবে। মজার বিষয় হল এই গল্পটা মোটেও নতুন নয়। সাদার সাম্রাজ্যবাদের শুরু থেকেই অনেক ভালোমানুষ সাদা চামড়া কবি হয়ে , পরিব্রাজক হয়ে, মিশনারী হয়ে, ভাষাবিজ্ঞানী হয়ে, নৃবিজ্ঞানী হয়ে অন্য সমাজে মিশেছেন, কেউ কেউ মিশে গেছেন এবং তাদের ৯৯ ভাগ নিজেদের মৌল সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনো প্রশ্ন করেন নি। আর এই প্রশ্নহীনতাই সমস্যাজনক।
অথবা অন্যভাবে বললে তারা যদি কেবল জনপ্রিয় প্রশ্নের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করেন সেটা আরো সমস্যাজনক।
আভাটারের বিশ্বজোড়া সাফল্য বলে দেয় যে আমরাও জনপ্রিয় প্রশ্নের মধ্যেই ঘোরাঘুরিতে অভ্যস্ত হতে বসেছি এবং এজন্য উপভোগ করেছি। দৃশ্যগত এবং দার্শনিক উভয় অর্থেই। এবং যেটা শেষ পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে ঢিলা করে দিয়েছে, দিচ্ছে।
আভাটার প্রসঙ্গে এই লেখাটা বরং তৃতীয়/অপর/আমাদের তরফে বরং বেশি অর্থবহ মনে হয়।
আভাটার: বর্ণ, সাম্রাজ্য ও টেকনলজির মাহাত্ম্য বর্ণনার রূপকথা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।