(জানি প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য প্রতিবেদন পড়বেননা। তার চারপাশে থাকা উপদেষ্টাবৃন্দ যারা সহজ বিষয়কে জটিল করতে ভালোবাসেন তারাও পড়বেননা। এই পোস্টটি স্টিকি হবেনা। কারন স্টিকি পোস্ট লিখবার ক্ষমা আমার নেই। এই পোস্টটি ব্লগের গুটিকয় ব্লগার পড়বেন।
তবু কেন লিখছি!! কারন আমার সন্তান বড় হচ্ছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আপনাদের দুজনের কর্মপ্রচেষ্টা দেশকে আজ কোথায় নিয়ে দাড় করিয়েছে তা আপনারা জানেন না। আপনাদের জানতে নেই। আপনাদের পুত্রদ্বয় রাজনীতিতে আসছে। তাদের মানসিকতা আপনাদের মত হলে দেশের ভবিষ্যত কি হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
আমার সন্তান বড় হয়ে যদি জিগ্যেস করে, "বাবাই, একদিনে একটা দেশ এমন হয়না, তোমরা কি করেছো!!" আমি অন্তত বলতে পারবো,"তোর এই অক্ষম বাবা কিছুই করতে পারেনি। তোর কথা, তোদের কথা ভেবে সরাসরি কিছু কথা লিখে গেছে। এতে কোন কাজ হবেনা জেনেও লিখেছে। কারন এই ছাড়া আর কোন কিছু করার সাহস বা ক্ষমতাই আমার ছিলোনা। ক্ষমা করিস বাবাই")
গত বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল ২০১০) বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি অবশ্য এই মন্ত্রণালয়েরও প্রধান। তিনি ক্ষমতা গ্রহনের ১৫ মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মত এই মন্ত্রণালয়ে যান।
আওয়ামীলীগের নির্বচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকারের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো বিদ্যুত ও জ্বালানী খাত। অথচ ১৫ মাসে তিনবার মন্ত্রণালয়ে গমনের বিষয়টি মনে করিয়ে দেয় প্রধানমন্ত্রীর অপার ব্যস্ততার কথা। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী বলে নানাবিধ কাজে তিনি ব্যস্ত থাকবেন।
কোন মন্ত্রীই তার নির্দেশ ছাড়া একা একা কাজ করতে পারেনা। মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তার উত্তর শুরু করেন, "প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন...." বলে। একজন মানুষ কত দিক সামলাবেন। তাই বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বিদ্যুতের বিষয়ে সময় না দিতে পারার বাস্তবতাটি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখাই সমিচীন।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ :
"সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে সরকার এবার বিদেশি বিশেষজ্ঞ কোম্পানির কাছ থেকে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
এর ফলে সর্বনিম্ন চার মাস থেকে সর্বোচ্চ নয় মাসের মধ্যে অন্তত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হবে বড় বড় "লোড সেন্টারে'র (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা—যেখানে বিদ্যুতের চাহিদা খুব বেশি) কাছে।
মন্বসংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়, আগামী বছরের সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মকালীন বাড়তি চাহিদা মোকাবিলা এই উদ্যোগের লক্ষ্য। তবে প্রচলিত দরপত্র-প্রক্রিয়ায় এত কম সময়ে এই বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হবে না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও সরকারের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে (আনসলিসিটেড) চুক্তি করতে হবে।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সায় পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। " (প্রথম আলো. ০৯এপ্রিল ২০১০)
মন্তব্য :
গত বছরের ২রা এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। তখন দেশে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় চলছিলো। অথচ তিনি বিগত সরকারের উপরে দোষ চাপিয়ে তৃপ্ত ছিলেন। আর দূরদর্শিতার অভাবের বিষয়টি উল্লেখ না করাই ভালো।
এই তৃপ্ত থাকার কারনেই এই বছরেও নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে দেশের সাধারন জনগন।
গতকালের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চার থেকে নয় মাসের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এই সিদ্ধান্ত নিতে চলে গেলো ১২ মাস। ১২ মাস পূর্বে এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হলে এই মৌসুমে লোডশেডিং সহনীয় থাকতো। প্রধানমন্ত্রী আর মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা সবকিছুতেই স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের যোগসাজশ খুঁজে পান।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে যুদ্ধকালীণ সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে পন্ড করার অপচেস্টার গন্ধ পান। এই বিলম্বিত সিদ্ধান্ত কাদের ষড়যন্ত্রের ফসল!!
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ:
"সরকারি সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সব কাজ করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আইনকানুন পরিবর্তন করা দরকার হলে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকার করে দেবে। "(প্রথম আলো. ০৯এপ্রিল ২০১০)
মন্তব্য:
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সব কাজ করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু প্রগাঢ় প্রজ্ঞার অধিকারী নন রসিকও বটে। তার রসিকতাবোধ অত্যন্ত গভীর। তাই ১৫ মাসে তিনবার মন্ত্রণালয়ে গেলেও জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার কথা বলে তিনি রসিকতা করতে পারেন।
বিলম্ব সিদ্ধান্ত গ্রহনের পরেও যখন জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার কথা বলা হয় তখন তা রসিকতার বেশী কিছু নয়। এই জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার কথা তিনি গত বছরের এপ্রিল মাসের ২ তারিখেও বলেছিলেন।
তারপর মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার আর মনিটরিং করার সময়টুকুও পান নাই। আহারে ব্যস্ততা।
ভয়াবহ লোডশেডিং থাকবে। বিদ্যুৎ সমস্যা থাকবে। সেচকাজ ব্যহত হবে।
কল-কারখানায় উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হবে। প্রতিদিন হাজার হাজার কর্মঘন্টা নষ্ট হবে। তাই বলে আমরা রসিকতা করবো না। অবশ্যই করবো। প্রধানমন্ত্রী করেছেন, আমরাও করবো।
রসিকতা যত নির্মম হয় ততই ভালো। অন্তত সরকারের আচরন থেকে আমরা সেই শিক্ষাই পাচ্ছি।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ:
"বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর অধীন এই মন্ত্রণালয়ে প্রথম গিয়েছিলেন গত বছরের ১৫ জানুয়ারি। এরপর যান ২ এপ্রিল। গতকাল ওই মন্ত্রণালয়ে তৃতীয়বারের মতো যান তিনি।
কিছু নির্দেশনা: সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া সহজ ও স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করতে কী পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়, সে ব্যাপারে চিন্তা করা হবে। এর মধ্যে কাজ করতে গিয়ে কোথাও সমস্যা হলে তাঁকে জানাতে হবে। এ ছাড়া তিনি উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন, যে কমিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুততর করার জন্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করবে।
গত বছরের ২ এপ্রিলের সভায়ও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।
কিন্তু গত এক বছরে এ ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। "(প্রথম আলো. ০৯এপ্রিল ২০১০)
মন্তব্য:
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী অগ্রাধিকারের পাঁচটি বিষয়ের তৃতীয়টি হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত। বিদ্যুত খাতের জন্য গত বছরের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো আবার আলোচনা করা হয়েছে। কারন এক বছর সময়কালের মধ্যে শুধু আলোচনাই হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নাই।
গত বছর চলে গেছে শুধু বিগত সরকারকে দোষারোপ করে। এই বছরটাও কাটবে একই ভাবে। আগামী এপ্রিলে মন্ত্রী আবার মন্ত্রণালয়ে যাবেন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হবে। আমার মত কেউ এমন একটি লিখা লিখবেন।
এ এক অদ্ভূত চক্র।
আমাদের অর্থাৎ আমজনতার নরক যন্ত্রণা ভোগ কার ছাড়া, দৌড় সালাউদ্দিনের মত দুই একজনকে দৌড়ের অনুশীলন করানো ছাড়া করবার কিছুই নেই। আমাদের কষ্টের, নরক যন্ত্রণা ভোগ করবার, প্রতিদিন দেশের হাজার হাজার কর্মঘন্টা নষ্ট হওয়ার, সেচকাজ ব্যহত হওয়ার বিষয়টি অনুধাবনের পরেও যারা সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেন এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকে দীর্ঘসূত্রিতায় আবদ্ধ করেন এবং বিবেকের কাছে বিন্দ্রমতাত্র লজ্জিত হননা তাদের জন্য, তাদের প্রতি আমাদের লজ্জা হয়। আসুন বিদ্যুৎ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধেশ্যে আমাদের লজ্জার "ছি:" শব্দটি উচ্চারন করি। বলি "ছি: প্রধানমন্ত্রী"।
এই লজ্জিত ছি:'র ভাগ পাক এই মন্ত্রণালয়ের হাফমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিস্ট সকলে।
পুনশ্চ:
আকাশের দিকে থুথু ফেললে তা নিজের গায়েই পড়ে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর আমরা আকাশের দিকে থুথু ফেলি। আর পরবর্তী পাঁচ বছর সেই থুথু বিভিন্নরুপে আমাদের গায়ে ফিরে আসে। নির্বিকারভাবে তা হজম করতে হয় ।
কারন দায়তো আমাদেরই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।