কি করি আমি, কি কি কি কি করি করি....
৫ মার্চ, সোমবার রাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভার একটি
সিদ্ধান্ত ; অতঃপর খু.বি’র ছাত্র-ছাত্রীরা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী কে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রথম আলোর এক ফটো সাংবাদিক ৫ই মার্চ সোমবার খুবি প্রথম আলো বন্ধুসভার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের কাছে তার শাস্তির দাবি জানায়। এর পর সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত ১১টা পর্যন্ত শিক্ষকেরা কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে ফটো সাংবাদিক নেওয়াজকে ডি এসএর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসিয়ে রাখে। তারপর ছাত্র-ছাত্রীরা এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে দাঙ্গা পুলিশ এনে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ধাওয়া করা হয়, নিক্ষেপ করা হয় রাবার বুলেট এবং টিয়ার শেল। অতঃপর সিন্ডিকেটের এক জরুরী সভায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়।
ঘটনার যেভাবে শুরু
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খানজাহান আলী হলের পিছনে ভিসিডি, ফ্লেস্কিলোড, খাবার সহ অনেক গুলো দোকান রয়েছে।
এই দোকানগুলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এই দোকান গুলোর মধ্যে একটি দোকানে কাজ করে খানজাহান আলী হলের ডাইনিং এর কর্মচারী কবির। ফ্লেক্সিলোড তথা ভিসিডির ওই দোকানের মালিক যুবলীগকর্মী তথা প্রথম আলো ফটো সাংবাদিক নেওয়াজ মাঝে মধ্যে হিসাব নেওয়ার জন্য দোকানে আসে। এভাবেই চলছিল এতদিন। কিন্তু গত ২৫শে মার্চ একটু ব্যতিক্রম ছিল।
২৫ শে মার্চ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৫ম বর্ষের ছাত্র নাহিয়ান ওই দোকানে কিছু টাকা ফ্লেক্সি করতে দেয়। কিন্তু নম্বর বুঝতে সমস্যা হওয়ায় কবির নাহিয়ানের মোবাইলে টাকা না পাঠিয়ে অন্য নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেয়। যথাসময়ে টাকা না পেয়ে নাহিয়ান কবিরকে ফোন দেয় কিন্তু ফোন রিসিভ করে দোকান মালিক নেওয়াজ। নাহিয়ান অনুরোধ করে যে যদি সম্ভব হয় তাহলে যে নম্বরে টাকা গিয়েছে তাকে যেন নেয়াজ বলে টাকাটা পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু নেয়াজ এ কথা রাজী হয় না এবং নাহিয়ানের সংগে তপ্ত বাক্য বিনিময় করে।
এর পর নাহিয়ান দোকানে গেলে নেওয়াজ ও নাহিয়ান বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে নেয়াজ মুসলমানের বাচ্চা বলে নাহিয়ান কে গালি দেয় এবং নাহিয়ানকে দেখে নেবে বলে হুংকার দেয়। ইতিমধ্য সেখানে আসে গনিত ডিসিপ্লিনের সোহেল এবং ফিসারিজ ডিসিপ্লিনের রায়হান। তারা বিষয়টায় মধস্থতা করার চেষ্টা করে। কিন্তু নেয়াজ এতে আরো ক্ষিপ্ত হয় এবং যুবলীগের বন্ধুদের ফোন দিতে থাকে।
এই সময় রাত প্রায় ১২টা। পাশেই বধ্যভুমিতে স্বাধীনতা দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা যুবলীগের কর্মীরা তিনটি মোটর সাইকেল নিয়ে ঘটনা স্থলে আসে এবং একজন যুবলীগ কর্মী নাহিয়ানকে মারতে উদ্যত হয়। ততক্ষনে নাহিয়ান চা খেতে বসে। কিন্তু এ পর্যায়ে নেওয়াজ তার বন্ধুর মত বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং নাহিয়ান কে দেখিয়ে বলে “ এই সেই ছেলে” । তখন ওই বন্ধু প্রথমে নাহিয়ানকে ঘুসি মারে।
সাথে সাথে মোটর সাইকেল আরোহী অন্যান্য বন্ধুদের নিয়ে নেয়াজ নাহিয়ান ও তার তিন বন্ধুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু নাহিয়ানের বন্ধুরা তথা অন্য দোকানের লোকজন তাদের থামিয়ে দেয়। সবাই যখন ঘটনা মেটাতে ব্যস্ত তখন নেয়াজ তার বন্ধুদের নিয়ে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায়। আমি আগেই উল্লেখ করেছি ওই দিন ছিল ২৫ শে মার্চ রাত সে জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই ফুল দিতে গিয়েছিল। এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য, ডি এস এ, ডিন, প্রভোস্ট সহ প্রায় ২০ জন শিক্ষক ঘটনা স্থলে আসে।
তারা ছাত্র-ছাত্রীদের আশ্বাস দেয় যে নেয়াজের উপযুক্ত বিচার করা হবে। সে যেখানেই থাক তাকে এরেস্ট করা করা হবে। এক পর্যায়ে শিক্ষক-ছাত্ররা খুব আবেগী হয়ে পড়ে। ডি এস এ সহ অপেক্ষাকৃত তরুন শিক্ষকেরা যারপরনাই ছাত্রদের উপর খুব রাগ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে কিভাবে বাইরের একজন লোক ছাত্রদের মেরে যায় এই বিষয়টা নিয়ে খুব মন খারাপ করতে থাকে। শিক্ষকেরা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলে কেন তোমরা নেয়াজকে মেরে তার ঠ্যাং ভেঙে দিলে না।
যাই হোক এভাবে ১ ঘন্টা অতিবাহিত হয় এবং ছাত্ররা নেয়াজের দোকান ভাঙতে উদ্দত হলে শিক্ষকেরা সেটা থামিয়ে দেয়। কিন্তু ঘটনা স্থল থেকে পুলিশ ও শিক্ষকেরা চলে গেলে ছাত্ররা নেয়াজের দোকান ভাংচুর করে এবং জিনিস পত্র বের করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
৫ এপ্রিল, ২০১০, শিক্ষকদের উল্টো চেহারা এবং অতঃপর অসহায় ছাত্র-ছাত্রীরা
গত ৫ই এপ্রিল ছিল বিশ্ব এইডস দিবস। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধু সভা এই উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ঠ অভিনেতা তথা বিজ্ঞাপন নির্মাতা আফজাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
যাই হোক, উক্ত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে আসে প্রথম আলো ফটো সাংবাদিক তথা যুবলীগ কর্মী নেয়াজ। খোঁজ নিতে গেলে বন্ধুসভার সাহিত্য সম্পাদক নিরুপম দেবনাথ বলেন তারা সবাই নেয়াজ কে নিমন্ত্রনের বিপক্ষে ছিলেন, কিন্তু বন্ধুসভার উপদেষ্টা তথা প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনীধী উম্মে উমামা পুতুল কারো কথার তোয়াক্কা না করে নেয়াজ কে দাওয়াত পত্র দেন। সবকিছু জেনে এবং তাকে আনা হলে একটা অঘটন ঘটবে এটা বুঝেও কেন নেয়াজকে দাওয়াত দেয়া হল জানতে চাইলে পুতুল বলেন ‘ প্রথম আলো অফিস থেকে তাকে পাঠালে আমি কি করব”। কিন্তু নেয়াজ কোথায় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন “ আমার আসলে ভুল হয়ে গেছে, কয়েকজন বন্ধুকে আমি বলছি যে নেয়াজ এসছে কিন্তু তারা প্রচন্ড ক্ষেপে গেছে তাই ওকে ডিএসের ল্যাবে বসায় রাখছি’’ । তখন প্রায় সন্ধা সাতটা বাজে পুতুলের মাধ্যমে খবর পাওয়া বন্ধুরা দলবেধে এসে ২য় একাডেমিক বিল্ডিং এ প্রবেশ করতে গেলে ডি এস এ ড. মনিরুল ইসলাম বাধা দেয়।
তখন ছাত্ররা নেয়াজের শাস্তি দাবি করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলে কিন্তু মনিরুল ইসলাম ছাত্রদের বকা ঝকা করেন এবং সবাই কে চলে যেতে বলেন। ছাত্ররা সেখান থেকে সরে এসে বিল্ডিংএর সামনে দাড়িয়ে সকলকে ফোন দিতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রায় একশ জন ছাত্র সেখানে উপস্থিত হলে মনিরুল ইসলাম স্যার সহ আরো অনেক স্যার সবাইকে চলে যেতে বলেন এবং তারা নেয়াজের বিচার করবেন বলে জানান। কিন্তু এর পর ছাত্ররা শুধু নেয়াজকে দশবার কান ধরে উঠবস করতে বলে এবং তারপর পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলে। শিক্ষকেরা এতে রাজি না হলে ছাত্ররা ভিতরে ঢুকতে চেষ্টা করে।
কিন্তু শিক্ষকরা কোনোমতেই ছাত্রদের ভিতরে ঢুকতে দেয় না। এক পর্যায়ে প্রায় ৪০০-৫০০ ছাত্র উপস্থিত হলে শিক্ষক ও ছাত্রদের আরেক দফা আলোচনা হয় কিন্তু কোনো ফল আসে না। প্রায় ১১.৩০ টা পর্যন্ত ছাত্ররা সেখানে দাড়িয়ে থাকে এবং এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। এসময় তারা নিচ তলার কিছু জানালার কাঁচ ভাংচুর করে। এ সময় শিক্ষকরে আসছি বলে চলে যায় এবং দাঙ্গা পুলিশ সংগে নিয়ে আসে এবং ছাত্রদেরকে ছত্র ভঙ্গ করতে নির্দেশ দেয়।
এ সময় ডি এস এ পুলিশদের বলেন প্রয়োজনে গুলি করো। এর পর দাঙ্গা পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাস ছাড়ে।
এর পর নিরস্ত্র ছাত্ররা দৌড়ে খাজা হলের দিকে যেতে থাকে এবং হলের নেম প্লেট সহ হল প্রভোস্টের রুম ভাংচুর করে। এর পর হল গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। পুলিশ গেট থেকে ছাত্রদের উপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র টিয়ার শেলে গুরুতর আহত হয় । প্রচুর রক্ত ক্ষরনে হলের বারান্দা ভেসে যায়। এ পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত ছাত্রদের হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত বাড়তে থাকে আর টিয়ার শেলের শব্দ বাড়তে থাকে। রুম বন্ধ করেও শেষ রক্ষা হয়নি ছাত্রদের।
২টার দিকে পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হলেও তিনটায় আবার পুলিশ হল গেটে জড়ো হয়। এরপর হল বন্ধের ঘোষনা আসে। বলা হয় সকাল ৬টার মধ্যে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে।
সকাল হওয়ার আগে সবাই ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। শুন্য হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন।
যে বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় ছাত্র রাজনীতি মুক্ত, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো কোনো মারামারি হয়নি সেখানে শুধু রাজনীতির স্বার্থে সব ছাত্রদের মার খেতে হল। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখতে গেলে বলতে হয়, একজন লোক সে যেই হোক সে ভার্সিটির এক ছেলেকে মেরেছে, তাকে যদি পুলিশে দেয়া হত, তাহলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হতো? তা এই রিপোর্টারেরও জানা নেই।
বিঃদ্র- তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ঘটনা স্থল থেকে সরাসরি ছাত্র-ছাত্রী এবং স্যারেদের সাথে কথা বলে । রিপোর্টারের মাথা বাচানোর স্বার্থে আরো অনেক খবর সেন্সর করা হল। পাঠক হতাশ হলে মাপ করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।