বিকেলে রাজাকার কমান্ডারকে খোশ মেজাজে দেখে একটু খটকা লাগলেও আসল মানে বোঝা গেলো রাতে যখন পাকিস্তানী সৈন্যরা গ্রামে ঢুকলো। প্রফেসর আবুল হাশেমের কানে এসেছে কথাটা। তিনি যে গোপনে মুক্তি বাহিনীকে সাহায্য করেন সেটা নাকি রাজাকাররা টের পেয়ে গেছে। শুনলেও প্রফেসর সেটা বিশ্বাস করেননি। কারণ কাদের কমান্ডারের আচরণ দেখে মনে হয়নি সে প্রফেসরকে সন্দেহ করে।
মিলিটারীরা ঘরে ঘরে যাচ্ছে। কান্নাকাটি আর গুলীর শব্দে গ্রামের রাত ভয়াবহ হয়ে উঠলো। দুএকটা বাড়িতে আগুনও জ্বলছে।
আকাশে এখানে ওখানে মেঘ থাকলেও পূর্ণিমার চাঁদের উজ্জ্বলতাকে হার মানাতে পারেনি। মাঝে মাঝে মেঘে ঢাকা পড়লেও দ্রুত চাঁদ বেরিয়ে পড়ছে তার জোছনার প্লাবন নিয়ে।
হাশেম সাহিত্যের প্রফেসর। একটু বেশি রকমের রোমান্টিক মানুষ। কবি কবি ভাবও আছে। আজকের এই পাগলা জোছনা এমন বিভীষিকাময় রাতেও প্রফেসরকে আকূল করেছে।
মিলিটারী আর রাজাকারদের পাশবিকতা এই কবিতাপ্রবণ মানুষকেও ক্রুদ্ধ করে ফেলেছে।
সরাসরি যুদ্ধে যাবার মওকা পাচ্ছিলেন না। কিন্তু একদিন এক আহত মুক্তিযোদ্ধাকে সাহায্য করতে গিয়ে তাদের সাথে জড়িয়ে যান। সেই মুক্তিযোদ্ধার পরামর্শে তিনি গোপনে তাদের সহায়তা শুরু করেন। আজ সকালে তার কাছে একবাক্স গ্রেনেড রেখে গেছে। কাল অরেকদলকে সেটা দিতে হবে।
মিলিটারী দেখে বুঝলেন এখন এই গ্রেনেড লুকাতে হবে। রাখার সময় মুক্তিযোদ্ধা ছেলেটা বলে গেছে সমস্যা হলে কোথায় লুকিয়ে রাখতে হবে। তাকে কোনকারণে না পেলে গ্রেনেডগুলো সেখান থেকেই ওরা নিয়ে যাবে।
দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন। বেরিয়ে পড়লেন গ্রেনেডের বাক্স নিয়ে।
কিন্তু বিপদে পড়লেন এই ঝকঝকে জোছনার জোয়ার নিয়ে। বহু দূর থেকে যে কেউ দেখতে পাবে তাকে। তার প্রিয় জোছনা যে তাকে এমন বিপদে ফেলবে কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। গ্রেনেড লুকাতেই হবে।
দ্রুত গর্ত খুঁড়ে চললেন প্রফেসর। এ সময় একটা বড়ো মেঘ চাঁদকে ঢেকে ফেলে। জোছনাপাগল প্রফেসরের মুখে হাসি ফুটলো জোছনা ঢাকা পড়ায়। অন্য সময় মেঘের ওপর রেগে ফায়ার হয়ে যেতেন তিনি। কাজ শেষ করে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেন।
কিন্তু কাজে ব্যস্ত থাকায় টের পাননি রাজাকার কমান্ডার কাদের তার খুব কাছে পৌঁছে গেছে। আবছা আঁধারে খুঁজে পাচ্ছিলো না সে প্রফেসরকে।
একসময় মেঘ সরে গেলো। প্রবল জোছনার জোয়ারে ভেসে গেলো চারপাশ। সেই আলোতে প্রফেসরকে দেখে ফেললো কাদের কমান্ডার।
সাথে আরো ৬/৭ জন রাজাকার। প্রফেসরকে হাতেনাতে ধরতে পেরে কাদের খুব খুশী খুশী গলায় বললো-
প্রফেসর সাব। আপনেরে আমি সন্দেহ করতাম। কিন্তু প্রমানের অভাবে কিছু করতে পারতেছিলাম না। এখন রেডি হয়ে যান।
বিস্মিত প্রফেসরের বুকে পিস্তলের গুলী ঢুকে গেলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই। মৃত্যুর সময় তার মুখে আঁকা হয়ে গেলো একটা ক্রোধের চিহ্ন। কিন্তু সেই ক্রোধটা কার প্রতি ? ঘাতক ? না নিষ্ঠুর জোছনা ? নাকি অসময়ে সরে পড়া অবিবেচক মেঘের প্রতি ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।