মন আর মানসিকতায় মহাপুরুষ হতে পারিনি। তবে মহাপুরুষদের অনূকরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত
কনতো দেহি আইজকা দ্যাশে
সবচে শরীল তাজা কার?
-যেই শালারা রাজাকার।
পাইলটে লেবাস কোন ব্যাটারা
আইজ সমাজে পায় কদর?
-যে শালারা আল-বদর।
গদির পাশে বইছে ক্যাডা?
(পান খাওয়া মুখ যা লালরে!)
-একাত্তুরের দালাল রে!
(রাজাকারের ছড়া, লুৎফুর রহমান রিটন)
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে মাত্র উনচল্লিশ বছর আগে লাখো জনতার রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছিলাম তার সুফল কি আমরা পেয়েছি?কেউ কি তার সঠিক উত্তর দিতে পারবেন?
আজ যখন একজন আহত মুক্তিযোদ্ধা রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে ভিক্ষা করে তখন তার পাশ দিয়ে হনহন করে গাড়ি হাকিয়ে যিনি চলে যান তিনি একজন রাজাকার। তিনি হয়তো দয়া পরবশ হয়ে মাঝে মাঝে দু এক টাকা ভিক্ষেও তুলে দেন সেই আহত মুক্তিযোদ্ধার ভাঙ্গা থালায়।
একজন রাজাকারের ভিক্ষেতে বেঁচে থাকবে একজন মুক্তিযোদ্ধা। রাজাকারের গাড়ির কালো ধোয়ায় ভুগবে জটিল রোগে। এরই নামই বোধ হয় স্বাধীনতা? রাজাকারের ছুটে যাওয়া গাড়ির ছিটকে যাওয়া কাদায় আর কত শরীর নোংরা হবে মুক্তিযোদ্ধার?
স্বাধীনতার বদলে যাওয়া সংজ্ঞা:
যখন ছোট ছিলাম তখন স্বাধীনতা বলতে বুঝতাম ইচ্ছেমতো কোন কিছু করা। একটু বড় হয়ে বুঝলাম স্বাধীনতা বলতে বুঝায় অন্যের অধিকার খর্ব না করে নিজের পূর্ণ অধিকার ভোগ করা। কিন্তু আজ এ পর্যায়ে এসে স্বাধীনতার সে সংজ্ঞাটার বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি তা এ রকম-"স্বাধীনতা মানে একই সংসদে রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধার সহাবস্থান।
একই অনুষ্ঠানে রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধার জ্বালাময়ী ভাষণ। একই কাতারে দাড়িয়ে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধার পুস্পদান । স্বাধীনতা দিবস কিংবা জাতীয় কোন দিবসের কোন অনুষ্ঠানে রাজাকার কতৃক পতাকা উত্তোলন! রাজার -মুক্তিযোদ্ধার আত্মীয়তার বন্ধন! পাঠক, বলতে পারেন, আর কতরুপে বদলাবে স্বাধীনতার সংজ্ঞা?
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের ফলে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অভুদ্যয়। কিন্তু আমরা কি সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মুক্তি পেয়েছি? আজো মানুষ অনাহারে মারা যায়, উত্তরবঙ্গে আজো মানুষ মঙ্গায় ভোগে,(মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন তিনি মঙ্গা শব্দের অর্থ জানেন না। ) উপযুক্ত বাসস্থানের অভাবে ঢাকা শহরের মত বড় বড় শহরের আনাচে কানাচে গড়ে উঠে বিশাল বিশাল বস্তি।
বাসের ভিতর আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মানুষ, জনসভায় গ্রেনেড- বোমা হামলায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অগনিত। জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বারবার। বিচারের সম্মুখে দাড় না করিয়ে ক্রসফায়ারে লাশ ফেলে দেয়া হয় জাতীয় সন্ত্রাসীদের। কখনো কখনো নিরীহদেরকেও বানানো হয় দেশ সেরা সন্ত্রাসী। লাশ ফেলে দেয়া ক্রসফায়ারে।
বখাটেদের প্রতিবাদ করলে লাশ হতে হয় মেয়ের বাবা-মাকে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বেঁচে যায় স্নত্রাসীরা। রাস্তায় বের হলে বাসায় সুস্থ্যভাবে ফিরে আসার কোন গ্যারান্টি নেই। সত্য বলতে গেলেই টুটি চেপে ধরা হয়। এ আমরা কোন বাংলাদেশে বাস করছি? আমরা কি এ বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? পাঠক একবার বুকে হাত দিয়ে বলুনতো আমরা কি এ বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
যুদ্ধাপরাধীরা আজ:
বিজয় পরবর্তী তথাকথিত ছোট ছোট রাজাকারদের হয়তোবা বিচারের মুখোমুখি করা গিয়েছিল কিংবা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নিজস্ব বিচারেই পরপারে পাঠিয়েদিয়েছিল।
কিন্তু ধেড়ে বা রাজাকার প্রধানদের তো টিকিটিও স্পর্শ করা যায়নি। বিচারের সম্মুখীন না করে বরং আমরা ওদেরকে গভীর আবেগে, গভীর ভালবাসায় বুকে টেনে নিয়েছি, আত্মীয়তার বন্ধন শক্ত করেছি ওদের সাথে। একই টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছি আজ মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকার। কখনো কখনো রাজাকারের দলকে ভালবেসে বসিয়ে দিয়েছি ক্ষমতার মসনদে। ওদের গাড়িতে নিজ হাতে উড়িয়ে দিয়েছি ত্রিশ লাখ প্রানের বিনিময়ে অর্জিত সবুজের ভিতর লাল বৃত্তাকার পতাকাটি।
ওদের হিংস্র নখের আঁচড়ে, হিংস্র থাবায় ক্ষতবিক্ষত করতে দিংয়ছি বাংলাদেশের বুক। খন্ড বিখন্ড করতে দিয়েছি আমাদের জাতীয় পতাকা। এ থেকে কি আমাদের পরিত্রান নেই?
সাবেক একজন মন্ত্রী যখন তথাকথিত রাজাকারদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিণলন-"একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখন্ডতা চেয়েতো কোন ভুল করেনি। " তখন কেমন লেগেছিল সেই আহত মুক্তিযোদ্ধাদের কিংবা কবরে কতটুকু শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা? আমি জানিনা। জানতেও চাইনা।
কারন যে জানা কেবল মনে দুঃখই বাড়াবে তা না জানাই ভাল নয় কি? তবে আশার সংবাদ বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এ বিচার কতটুকু সুষ্ঠু কিংবা নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বড় বড় রাজাকারদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর বড় বড় নেতা কর্মী। আত্মীয়কে বাঁচাতে হয়তো কেউ কেউ তৎপর হয়ে উঠবেন। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার উদ্যোগ নেয়ার পর থেকেই জামাত শিবির চক্র দেশব্যপী সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
১৫ কোটি মানুষ আজ জামাতের হুমকির মুখে। যে কোন সময় তারা মরন কামড় বসিয়ে দিতে পারে এ জাতির বুকে; যেমনটা তারা করেছিল ৭১ এ।
আমরা কি পারব প্রমাণ করতে:
জার্মানী, ফ্রান্স এর মতো দেশগুলোতে আজো খুজে খুজে ধরা হয়ে থাকে হিটলারের দোসরদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হচ্ছে এখনো। বসনিয়া হার্জেগোভিনায় যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে।
কিন্তু বিচার হচ্ছে না কেবল ১৯৭১ সালে এদেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাহাজানি, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি যুদ্ধাপরাধের। যাও একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটা কতটুকু আলোর মুখ দেখবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। ১৯৭৫ সালে গুটিকতক মানুষকে হত্যার বিচার করতে যে দেশের লেগেছে প্রায় পয়ত্রিশ বছর সেখানে লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটপাটের বিচার করতে কতদিন লাগতে পারে ভাবতে পারেন? তাছাড়া, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ রাজাকারের দল বসেছিল ক্ষমতায়। আমরাই বসিয়েছিলাম। এসব রাজাকারের দল ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে কি অপরাধের রেকর্ডগুলো আস্ত রেখেছে বলে আপনার মনে হয়? আবার যুদ্ধের চল্লিশ বছর পর অনেক সাক্ষী কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী আজ বেচে নেই।
এক্ষেত্রে কি আমার পুরোপুরিভাবে পারব এসব ঐতিহাসিক অপরাধীর অপরাধ প্রমান করতে? তবে আশার কথা, একজন অপরাধীর বিরুদ্ধে তার করা হাজারো অপরাধের মধ্যে একটি অপরাধ প্রমান করতে পারলেই কিন্তু বড় ধরনের শাস্তি দেয়া সম্ভব। তাই জাতির সামনে আমার অনুরোধ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় দারপ্রান্তে। রক্তের ঋণ পরিশোধের সময় এসেছে। আর বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদবে না। আসুন, যার কাছে যে প্রমান আছে তা নিয়েই যোগাযোগ করি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংশ্লিষ্ঠ কমিশনের সাথে।
প্রমান করি অপরাধীদের অপরাধ।
এখন যৌবন যার
যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়:
কবি হাসান হাফিজ তার কবিতায় লিখেছিলেন "এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ট সময়" । পৌঢ়ত্বে নাকি মানুষের মন মানসিকতায় লোহার মত মরিচা ধরে। তারা সব কিছুকে যৌবনের মত রঙ্গিন দেখতে পান না। সেই পৌঢ়রা যখন কান্ত সেইসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাইতে চাইতে; তখন আশার সঞ্চার হয়েছে বিচারের ক্ষেত্রে।
আসুননা, এখন আমরা যারা কঠিন যৌবনের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছি তারা একই কাতারে দাড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যে যেখান থেকে পারি অপরাধের দলিল ও সাক্ষী সংগ্রহ করি । বিচারকে করি তুরান্বিত। পাশাপাশি বিপ্লব ঘটাই সন্ত্রাস, দূর্ণীতি ও রাজাকারপূর্ণ দেশের চেহারা আমুল পরিবর্তন করতে। পৌঢ়রা পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার আগে দেখে যাক তাদের যৌবন বৃথা যায়নি। বৃথা যায়নি তাদের রক্ত, বৃথা যায়নি তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা।
দেখে যাক, আমরা তাদের ত্যাগের প্রতিদান দিতে জানি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।