আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৫ মার্চ : ইয়াহিয়া গেলেন করাচির পথে, সিকদার নারায়ণগঞ্জে, দাঁড়িয়ে রইল নির্মমতার কাছে হারা ভালোবাসার মুখ থুবড়ে পড়া রাত



রাজধানীর অভিসার সিনেমা হল। তখন রাত সাড়ে ১১ কিংবা ১২ বা তার কিছু বেশি। হলে সিনেমা দেখা শেষ করে বের হয়েছে একদল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র। এদের একজন সিকদার। সে থাকে নারায়ণগঞ্জে।

সিনেমা শেষে সবাই একসাথে বের হয়। কে কোথায় যাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সিনেমা হলের নিচে দাঁড়িয়ে। বেশির ভাগই যেহেতু ভার্সিটির হলে থাকে, সবাই সিকদারকে ধরে চল হলে চল। সকালে বাসায় যাস। সিকদারও বেশ ভাবণায় পড়ে যায়।

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া যাবে, মজা করা যাবে। হলেই থেকে যাই, সকালে বাসায় চলে যাওয়া যাবেনে। হঠাৎ কোত্থেকে উড়ে আসে একটা বাস। নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ বলে চেচায় হেলপার...। সিকদার সঙ্গে সঙ্গে তার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে।

হাত ইশারায় বাস থামায়। তড়িগড়ি করে বন্ধুদের সঙ্গে হাত মেলায়। চলে যাই, কাল দেখা হবে। বন্ধুদের রেখে একটা লোকাল বাসে করে উড়ে চলে যায়। সিকদার নামের এই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের যেহেতু কোনো অলৌকিক ক্ষমতা নেই তাই তার জানবার কথা নয়, ঠিক এই সময়েই একজন প্রেসিডেন্টও তার মতো করেই উড়ে চলে গেছে ঢাকা থেকে।

সিকদার নামের এই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের যেহেতু কোনো অলৌকিক ক্ষমতা নেই তাই তার এটাও জানবার কথা নয়, সে নারায়ণগঞ্জের পথে একটি যানে উঠেছে একটা ইচ্ছে নিয়ে এই মানুষগুলোকে আবার দেখতে চান, অথচ করাচির পথে একটি যানে উঠে যাওয়া প্রেসিডেন্ট তখন ইচ্ছে নিয়ে চলে গেছেন এই মানুষগুলোকে আর দেখতে চাননা। শেষ হিসেবে সিকদার নামের ওই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ভালোবাসা জড়ানো ইচ্ছের জয় হয়নি। সে ইচ্ছে হেরে গিয়েছিল ইয়াহিয়া নামের ওই প্রেসিডেন্টের নির্মম, পৈশাচিক ইচ্ছার কাছে। পরদিন সিকদার গিয়ে পেয়েছিলেন মাত্র একজনকে। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চ লাইটে ইয়াহিয়ার ইচ্ছায় আর পাক হানাদারদের বর্বরতায় হারিয়েছিলেন বাকী চার পাঁচ বন্ধুকে।

সে যে মানুষগুলোর সাথে, যে বন্ধুদের সাথে হাত মিলিয়ে এসেছিলেন আবার হাত মেলাবেন বলে সে হাত আর ধরবার সুযোগ হয়নি তার। পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হতাযজ্ঞের সূচনায় হারিয়ে যায় তারা। এটা একটা ছোট্ট ঘটনা। এরপর এমনি লাখো কোটি ঘটনা ঘটে যায় পরবর্তী ন'মাস। কারো মা, কারো বাবা, কারো ভাই, বোন, বন্ধু।

যাদের ত্যাগে এই স্বাধীনতা এই স্বাধীনতা দিবস...এমনকি এই স্বাধীনতা বিরোধীদের তারও প্রায় চল্লিশ বছর বেঁচে থাকা, এবং এখনো বুক ফুলিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামকে ঘৃন্য মন্তব্যে অসন্মান করার চেষ্টা। আজ ২৫ মার্চ। কাল ২৬, আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই স্বাধীনতা দিবসে আমার আসলে কোনো চাওয়া নেই। আমি শুধু দেখতে চাই, স্বাধীনতা বিরোধীরা আরও কত বুক ফুলিয়ে চলতে পারে আর স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির দাবীদার দলটি তাদের নির্বাচনের অন্যতম প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কত দিন সময় নেয়।

কারণ, বুঝবার কেউ নেই কীভাবে আমরা একটি একটি এগিয়ে যাওয়া দিনের সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে পড়ছি আমাদের বিবেক, সাহস আর আমাদের চেতনার জায়গা থেকে। নোট: সিকদার, সিকদার স্যার, আমাদের ফিজিক্সের টিচার ছিলেন। তার মুখেই শুনেছিলাম ওই ঘটনা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।