এই ব্লগের কোন লেখা আমার অনুমতি ব্যতীত কোথাও ব্যবহার না করার অনুরোধ করছি
তার একবছর আগেও ছিলাম নিতান্তই সাদামাটা অপরিচিত এক আটই ফাল্গুন/পৃথিবী দূরে থাক, তখনও নিজেই নিজেকে চিনিনি ভালো করে; একমাত্র/পরিচিতি ছিল প্রাচীন নগরীর শোভা বর্ধনকারী থোকা থোকা পলাশ শিমুল/আর রাশি রাশি কৃষ্ণচূড়ার অসহ্য আগুনে। মায়ের কোলের মতোই আলসেমী/মাখা ছিল আমার একবছর আগের ভোর-উষ্ণ, আরামদায়ক। দুপুরের শ্রান্ত/ রোদে ইতস্তত ঘূর্ণায়মান ছিল দু'চারটে রিকশার অলস চাকা-এর বাইরে/সম্পূর্ণ অচেনাই ছিলাম, কিংবদন্তী আটই ফাল্গুনের মাত্র এক বছর আগে। /কী আশ্চর্য! একটি বছরের ব্যবধানে বদলে গেল সব, আমার অজান্তেই/শ্লোগানে মিছিলে প্রকম্পিত হলো প্রাচীন রাজপথ। নৃশংস ধাতব বুলেটে/বিচূর্ণ মগজ থেঁতলানো চোখ ঝরে পড়া অশ্রুবিন্দু কতো/টলমলে রক্তফোঁটা হঠাৎই অমর করে তুলল আমায়; যদিও বুলেট/গেঁথেছিলো ওদেরই অস্থি-মাংশে।
আমি নিছকই নীরব দর্শক ছিলাম,/দেখছিলাম আমার কৃষ্ণচূড়ার চেয়েও লাল রক্তের তাজা স্রোত, খুব ধীরে/খুব ধীরে বুঝে উঠছিলাম সেই দামাল রক্তস্রোতের ইতিকথা। /এরপর, অর্ধ শতাব্দী ধরে গড়ে উঠলো কতো সৌধ ফলক স্মৃতিস্তম্ভ/শোকগাঁথা অর্থহীন; কেবল গুটিকতক ডাক নাম বাদে ওরা চলে/গেল বিস্মৃতির মলিন আঁধারে, বাঙলার চেতনাও বিলুপ্ত হলো বিস্মরণে,/শোকেরা পরিণত হলো তীব্র উল্লাসে, প্রভাতফেরি হয়ে উঠল/উৎসব মুখর শোভাযাত্রা। কেবল সেদিন ভীরু কুকরের মতো লুকিয়ে থাকা/আমিই নির্লজ্জ্বভাবে হয়ে উঠলাম বাঙলার সকল উৎসবের/কেন্দ্রবিন্দু, পরম পূজনীয় আটই ফাল্গুন। /হায়! কখনও কি বাঙলা ক্ষমা করবে এই অসাধু নির্লজ্জ্বতাকে?
প্রেক্ষাপটঃ
[একবার একুশে ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ মনে হলো, অমর একুশে কেন? এই দিনটি কি বিশেষ কিছু করেছিল, না তার করার কোন ক্ষমতা ছিল? ভাষা শহীদদের রক্ত মুছে গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গন থেকে অনেকদিন হল, আমরা তাঁদের যোগ্য মর্যাদা দেইনি, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মাতৃভাষাকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করে গেলেও দু'একজন ছাড়া সব ভাষা শহীদদের নামও সবাই জানে না, তাঁদের আমরা অমর করতে পারিনি, অথচ অমর হয়ে গেল একুশে ফেব্রুয়ারি? আর যাঁদের অমর হওয়ার কথা, তাঁরা আজ বিস্মৃতির অতলে। বাঙ্গালী জাতি হিসেবে অকৃতজ্ঞ, কিন্তু একটি দিন তো তা নয়, যদি একুশে ফেব্রুয়ারির নিজের অনুভূতির কথা জানতে চাই ভাষা আন্দোলনের অই কয়েকটি দিনের, তাহলে কী উত্তর দিবে একুশ আমাদের? এই চিন্তা থেকেই লেখা হয় এই কবিতাটি, যদিও আমি ভাষা আন্দোলন এর সূচনাটুকু দেখিনি।
ভাষার জন্য আন্দোলন কিন্তু আজও চলছে, এত রক্তে অর্জিত বাংলা ভাষাকে আমরা বিকৃত হতে দিতে পারব না, শহীদদের নাম ভুলে গেলে হয়তো তাঁরা আমাদের সস্নেহ দৃষ্টিতে ক্ষমা করে দিতে পারেন, কিন্তু তাঁদের সমস্ত স্পন্দন স্তব্ধ করে পাওয়া বাংলাকে বিকৃত করলে তাঁরা আমাদের নিশ্চয়ই ক্ষমা করবেন না। ভাষার জন্য আন্দোলন চলবে যতদিন না বিকৃত বাংলার ব্যবহার নিষিদ্ধ না হয়। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।