http://shorob.com/author/bohemian/
উপভোগ্য সায়েন্স ফিকশান গল্পের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো গল্পগুলো শুধু গল্প হয়ে ওঠে না ,ভবিষ্যত নিয়ে লেখকের ভাবনা, স্বপ্ন, ভয় এর টুকরো টুকরো ছবি হয়ে ওঠে, যান্ত্রিকতা মানবিকতার সংঘর্ষ নিয়ে গাল্পিকের ভাবনার স্পষ্ট স্বাক্ষর হয়ে ওঠে , বিজ্ঞান এর প্রয়োগসীমা ,ব্যবহার সীমা নিয়ে লেখকের দার্শনিক অবস্থানের সাক্ষী হয়ে ওঠে ।
১৬ গল্পের গ্রহচারী মুহম্মদ জায়েদুল আলম এর প্রথম সায়েন্স ফিকশান গল্প সংকলন ।
প্রথম বই হিসেবে জাফর ইকবাল এর প্রভাব বিষয়টি ভুলে গিয়ে আমি বইটির সুন্দর মলাট ওল্টাতে চাই (মলাটটিতেও জাফর ইকবাল এর গন্ধ পাওয়া যায়!) ।
প্রতিটি গল্পের নিজস্ব একটি ছবি আছে (প্রচ্ছদ বলা যায় কি?),গল্পগুলোর সাথে ছবিগুলোর সাযুয্য ছিল সামগ্রিক ভাবে অলংকলণ ভালো লেগেছে ।
এবারে গল্প বিষয়ে ঢোকা যাক ।
চুলচেরা বিশ্লেষণের পথে না হেঁটে এক কথায় বলে দেওয়া যায় গল্প গুলো উপভোগ্য । কিছু গল্প চমক জাগানিয়া,কিছু গল্প ভীতি জাগানিয়া। বিজ্ঞানের ছাত্র বিজ্ঞান অবমাননা করেন নি, সায়েন্স ফিকশানই লিখেছেন, ফ্যান্টাসী নয় । বিজ্ঞান তাই বইটিতে যেমন স্পষ্ট,লেখকের বিজ্ঞানের প্রয়োগ ভাবনা গুলোও দৃশ্যমান ।
( ঠ্যাং এর উপর পা দিয়ে বসে থাকব , রোবোট এসে ঘরের কাজ শেষ করে
পা টিপে দিবে এই চিন্তা ভালো ।
মাথা মোটা রোবোট কেউ ই চাইবো না,
আবার সরু মাথার সূক্ষ্ম বুদ্ধির রোবোট এর হাতে বন্দী হতেও নিশ্চয় ই চাইবো না? তাই বিজ্ঞান এর প্রয়োগ সীমা, ব্যবহার নিয়ে চিন্তার গভীর প্রয়োজন । এই কারণে গল্পের পাশা পাশি আমি মেসেজ এর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখি ! কে জানে হয়ত কয়েকশ বছর পর রোবোট এর হাতে বন্দি কোন মানুষ হয়ত পড়বে আর ভাববে কিছু মানুষ ছিল যারা এই করুণ অবস্থার কথা ভেবেছিল, তা নিয়ে লিখেছিলোও! )
এক এক করে বলা যাক
গ্রহচারী গল্প দিয়ে শুরু বইটি খুব সাদামাটা একটি গল্প , একটু নির্মোহ ভাবে বললে বলব দুর্বল গল্প ।
সময় পরিভ্রমণের অসাধারণ আগ্রোহদ্দীপক বিষয়কে কেন্দ্র করে লেখা দূত একটি চমৎকার প্লটের গল্প ।
ঈশ্বর গল্প টি চমৎকার মানুষের দায়বদ্ধতার প্রতি শ্লেষাত্মক প্রশ্ন রেখে যায়।
বইয়ের সেরা গল্প সম্ভবত কিউপিড , চমক জাগানিয়া প্লটের গল্পটি সমকালের , এখনকার ।
অনেকটাই বিভৎস এবং পুরোপুরি অমানবিক নামের আমি NC 446:552 গল্পটি যন্ত্রে মানবিকতার কথা বলে যায় , চমৎকার একটি গল্প ।
ডিজিটালে টাল মাটাল সময়ের অধিভাসীদের জন্য ডিজিটাইজড গল্প স্বর্গ । গল্পটি বিজ্ঞান এর আধুনিকায়নের করুণ পরিণতির কথা বলে যায় , গল্পের নামকরণ ও নাড়া দেয়ার মত , বিজ্ঞান আমাদের যে স্বর্গ উপহার দিচ্ছে তা কি শেষ পর্যন্ত নরক হয়ে যাবে ? ধিক আধুনিক বলে কি আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলব না?
ফরম্যাট , শক্তিশালী মেসেজের দুর্বল হাতে আঁকা ছবি বলে মনে হয়েছে ।
অন্যের আয়নায় নিজেকে দেখতে কেমন লাগে? ওয়ার অব দ্যা ওয়ার্ল্ডস প্যাটার্নের কাহিনীর বিপরীত চিত্রায়ন অপসভ্যতা । সুন্দর গল্প ।
প্রজেক্ট অতিমানব যা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিল তা পারে নি , আরো বিস্তৃত আয়তন আশা করে এই গল্প , আরো সময় দাবি করে । গল্পটি ভবিষ্যতে লেখক নতুন করে যত্ন নিয়ে লিখুন এই দাবি জানিয়ে রাখলাম ।
স্বার্থপর গল্পটি কপোট্রনিক সুখ দুঃখের স্পিন অফ বলে মনে হল , গল্পটি অন্য এক পয়েণ্ট অব ভিউ থেকে লেখা বলে ভালো লেগেছে ।
স্মৃতির জাদুঘর থ্রিল মেশানো ভালো একটি গল্প , আহাম্মক আরেকটি মেসেজ বাহী চমক জাগানিয়া গল্প ।
প্রশ্ন নববিংশ শতাব্দীর গল্প, সেই সময়ের প্রেক্ষাপটের বিচারে
প্রশ্নের যথার্থতার সাথে মাথা নাড়লেও উত্তর হয়ত আমাদের হাতে থাকবে না!
ভুল সময় , টাইম ট্রাভেলিং নিয়ে লেখা ।
গল্পের চমক হিসেবে ছিলো হিটলার , রাজনৈতিক বক্তব্য ছিলো ,আরো ছিল অলটারনেট রিয়েলিটির চমক । অলটারনেট রিয়েলিটি আমার খুব প্রিয় বিষয় তাই দুর্বল বর্ণনার গল্পটিও আমার ভালোলাগার তালিকায় থাকছে ।
বংশধর একটি গভীর মেসেজের অগভীর প্লটের চমৎকার গল্প । প্রশ্ন রেখে যায় ভবিষ্যতে আমরা সন্তান নেব কিভাবে?
জিনেটিক ভালোবাসা আরেকটি চমৎকার গল্প , যন্ত্র আর মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর গল্প ।
৮০ টাকা মূল্যের বইটি আপনার সায়েন্স ফিকশান সংগ্রহ শালাকে সমৃদ্ধ করবে জোর গলায় বলতে পারি ।
বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর একনিষ্ঠ পাঠক হিসেবে এই লেখকের সামনের বই
গুলোর জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করব , এবং লেখার উন্নতি কামনা করছি।
ঠ্যাং নোট:
অনেক কথাই বলেছি, রাখি নি তেমন কিছুই তবু যে রিভিউ টি লিখতে পারলাম! অ্যালগোরিদম-ই ভালবাসা, অ্যালগোরিদমেই ভালবাসা !
অন্যান্য রিভিউ
বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ঘটনা । সায়েন্স ফিকশান প্রেমীদের অবশ্য পাঠ্য!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।