............................................
আমি এমনি ভূত-পেত্নীর ভয় পাইনা। কিন্তু গরমকালটা আমার ভীষণ খারাপ কাটে। এই সময়ে একটু বাতাস বা ওলট পালট শব্দ হলেই পিলে চমকে যায়। আমার একটা বদ অভ্যাস আছে সেটা হলো বারবার আয়নায় চেহারা দেখা। সুন্দর হলে নাহয় মনকে বুঝ দিতাম আমি সুন্দর তাই আয়না দেখি।
কিন্তু তা তো না এমন কেন করবো। আমি দিনে ১৯-২০ বার আয়না দেখে থাকি। গরমকালে রাতের বেলায় নিজের চেহারা দেখেই ভয় পাই। মশা-পোকা-মাকড়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ট লাগে মাঝে মাঝে। আমাকে অবশ্য মশা তেমন কামড়ায় না।
মোটা মানুষকে মশা বেশি কামড়ায় বলে আমার ধারণা।
সেদিন টিভিতে দেখলাম ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্ক, আইস-ক্রিম, চিপস, চকলেট এ ধরনের আরও কি কি খেলে নাকি মানুষ হতাশ হয়ে যায়। অথচ সেদিন আমি ১/৪ লিটার আইস-ক্রিম খেয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে হাসছি
ছোটবেলায় আমি ভালোই লম্বা ছিলাম। আমার কাছাকাছি বয়সের দুই কাজিন জনি আপু আর বাবু ভাইয়া আমার হাইট নিয়ে সর্বদা জেলাস করতো। ওরা আমার চেয়ে ছোট বয়সে।
বাবু মাঝে মাঝে একেবারেই খেতে চাইতো না তখন তাকে বলা হতো, দেখেছিস চানা কেমন লম্বা! ওরকম লম্বা হতে হলে বেশি বেশি খেতে হবে! বাবু মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করে বলতো, আমি দেখেছি চানা আপু কিচ্ছু খায় না। ও এমনিতেই লম্বা হচ্ছে। কিন্তু তাকে ভূগোল বুঝিয়ে খাওয়ানো হতো। আর বেকুব মোটকু বাবু আমার মতো লম্বা হওয়ার আশায় বেশি বেশি খেয়ে ফেলত।
একবার জনি খুলনায় বেড়াতে এসে জ্বরে পড়লো।
ঐবার আমারও ঠিক ঐসময়ে জ্বর এসেছিল। জনি কিছুতেই ওষুধ খাবে না। সে কি কান্নাকাটি তার! আর সারাদিন খুক খুক করে কাশি। চাচীকে রাতে ঘুমাতে দিতো না। কাশির একটা সিরাপ ছিল যেটা খেতে আমার ভীষণ ভালো লাগতো।
একদিন আমি খাচ্ছিলাম সিরাপটা তখন কবু ভাই জনিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো, চানা এইটা খেলে তো লম্বা হয়, তাই না? আমি তখন কবু ভাইয়ের চাল ধরতে না পেরে বললাম, তাই? উনি বললেন, হ্যাঁ আমি অমুক দিনের পেপারে পড়েছি।
জনি লুকিয়ে লুকিয়ে সেবার আধা বোতল ওষুধ খেয়ে বিশাল ঘুম দিয়ে ফেলেছিল।
কিন্তু সেই আমার পরে যে কি হয়ে গেল আল্লাহ্ মাবুদ্ই জানেন। ১৩ বছরের পর আর লম্বাই হলাম না। ৫ ফুট সাড়ে তিনে থেমে রইলাম আমি।
আর ওরা দুইজন কী সুন্দরসে লম্বা হয়ে গেল! যদিও আহামরি লম্বা তারা হয়নি। বাবু হয়ে গেল ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি আর জনি ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। এখন ওরা আমাকে দেখলে হাসাহাসি করে
ওরা দুইটাই বেশ নাদুস নুদুস বড় সড় টাইপের। আর আমি চিকনা। চিকনা হবার জন্য আমাকে ওদের চেয়ে বয়সে ছোট দেখা যায়।
জনি সেদিন আমাকে তার এক ফ্রেন্ডের সাথে ছোটবোন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছে।
একদিন এক ছেলে আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে, আপনি কে বলছেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম, ফোন কি আমি করেছি না আপনি করেছেন? সে থতমত খেয়ে বললো, আমি... আমি তখন বললাম, কাকে ফোন করেছেন সেটা জেনে করেছেন কেন? কাকে ফোন করছেন সেটা জেনে এবার থেকে ফোন করবেন নয়ত ফোনই ধরবেন না। (বলে লাইনটা কেটে দিলাম)
এর কিছুক্ষণ পর সে কলের উপর কল দিতে থাকলো। আমি আর রিসিভ করিনি। এরপর সে একটা এসেমেস দিলো।
সে এসেমেসে বলতে চেয়েছে সে আমাকে অনেকবার কল করছে কিন্তু আমি কেন ধরছি না।
ছেলেটার বয়স ফটিকের মতো হবে। আনুমানিক ১৩/১৪ আরকি! কণ্ঠস্বরেও ম্যাচিউরিটি আসেনি। সে দুইদিন ওই নাম্বার থেকে খুব কল দিয়ে না পেয়ে অন্য আর একটা নাম্বার থেকে একদিন আমাকে কল দিলো। সেইদিন তার সাথে আরও একজন ছিল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, হ্যালো। কে বলছেন? ওপাশ থেকে উত্তর এলো, তোমার দুলাভাই! (অট্টহাসির শব্দ)
আমি নিজেও একচোট হাসলাম! কি আর করা!
এই বয়সী ছেলে মেয়ে দেখলেই ইদানীং আমার মায়া লাগে। আমার পুরানো জীবনের কথা মনে পড়ে যায়। সেইদিন আমার এক ফ্রেন্ড ফেইসবুক থেকে এক পিচ্চিকে ডিলিট করেছে প্লাস ব্লক করেছে। পিচ্চিকে আমার ঐ ফ্রেন্ড বিশেষ স্নেহ করতো।
পিচ্চি বেশ আদুরে। এবারে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আমার কাছে এসে খুব চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ভাও আপু ঐ আপুর খোঁজ জানেন কিছু! আমি তো তাকে কোথাও দেখি না।
আমি আমার ফ্রেন্ডকে বললাম। ও খুব রেগে বললো, জানিস এখন ওর পরীক্ষা চলছে অথচ সে সারাদিন নেটে পড়ে থাকে।
আমি চুপ করে থাকলাম কারণ এক সময় আমিও ঠিক এই কাজটাই করেছি। ফ্রেন্ড আরও বললো, ম্যাথ পরীক্ষার খাতায় কি লিখে এসছে জানিস? আমি বললাম, কি? ও বললো সে নাকি খাতায় স্যারকে চিঠি লিখে আসছে...স্যার পাশের জন আমাকে কিচ্ছু দেখায়নি। আপনি প্লিজ আমাকে পাশ করিয়ে দিবেন।
কি আর বলবো! আজকাল আমার বড় বোন নেটের প্রতি প্রচন্ড আসক্ত হয়ে পড়েছে। আমি রীতিমতো তাকে দেখে টাশকি।
দিনে চার পাঁচটা করে লেখা লেখে। আর এর মধ্যে থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো লেখাগুলো সে ব্লগে দেয়। আজ এই ব্লগ তো কাল সেই ব্লগ। জ্যামিতিক হারে বাড়ছে বাংলা ব্লগের সংখ্যা। এমনিতে তার সাথে কোনো কথা বলাই যায় না।
সে সারাদিন ব্লগ নিয়ে বকবক করে। আমি তাকে দেখে হতাশ এখন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।