কখনো ভাবিনি আগে।
View this link
আদর্শ শিক্ষক- আদর্শ ছাত্র
রওনক জাহান শিপ্রা
পুরনো দিনের কতগুলো আদর্শ বাক্য উদ্ধৃত করি, যা এখন একেবারেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, গুটিকয় ক্ষেত্র ব্যতীত। যাদের মুখ হতে নিঃসৃত বাক্য, তারা এখন জীবিত থাকলে নির্ঘাত আত্মহত্যা করতেন, চরম লজ্জা ও ঘৃণায়। কবি তালিম হোসেনের কবিতার চরণ, 'আমরা জাতির শক্তি-সৈন্য, মুক্ত বুদ্ধি বীর/আমাদের তরে শূন্য আসন/জাতির কা-ারির। ' সুনির্মল বসু বলে গেছেন, 'চল এগিয়ে ছাত্রদল/জলুক তোমাদের শিরায় শিরায়/রক্ত তরল/লাল-অনল।
' আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের দৃপ্ত উচ্চারণ_ 'মোদের চক্ষে জ্বলে বানের মশাল/কণ্ঠে মোদের কুণ্ঠাবিহীন নিত্যকালের ডাক। ' এসবই ছাত্রদের উদ্দেশ করে লিখা। এবার আসি, শিক্ষক মহোদয়ের সম্বন্ধে কে কী বলেছেন, সে বিষয়ে_ কবি গোলাম মোস্তফা_ 'সকলের মোরা নয়ন ফুটাই/আলো জ্বালি সব প্রাণে/নব নব পথে চলিতে শেখাই/জীবনের সন্ধানে। ' মনীষী রুশো_ 'ছাত্রদের সামনে শিক্ষকদের একটা মিথ্যা কথা, তার শিক্ষার সমস্ত মূল্য বিসর্জিত। ' আল্লামা ইকবাল_ 'শিক্ষক হচ্ছেন একজন মিস্ত্রি, যিনি গঠন করেন মানবাত্মা।
' হেনরী এডামস_ 'শিক্ষকের প্রভাব, অনন্তকালে গিয়েও শেষ হয় না। ' আরও অনেক উদাহরণ এরকম দেয়া যায়। কিন্তু কোনই লাভ নেই। তবে, উদ্ধৃতিগুলোর বিকৃত ব্যবহার ঠিকই হচ্ছে।
বেশ ক' বছর ধরেই জাহাঙ্গীরনগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গন এবং মাদ্রাসায় কতিপয় শিক্ষক ভীষণভাবে বীর্যবান হয়ে উঠেছেন।
তাদের যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হয়েও ছাত্রীরা সুবিচার পাচ্ছে না। পাবে কী করে, এ পুরুষশাসিত সমাজে? এছাড়া চিরকালের চিরসত্য বাণী, নারীই-নারীর শত্রু। এটাও তো আজও মিথ্যে প্রমাণিত হয়নি। হ্যাঁ, সেমিনার, বক্তৃতা, দু-এক সময় মিছিলও হচ্ছে বটে; কিন্তু গোড়ায় যে গলদ, তা রয়েই গেছে। এজন্য তথাকথিত আইন-কানুন-বিচারের তোয়াক্কা না করে বা অপেক্ষায় না থেকে, নিজে হাতে বিচার করতে হবে, আত্মসম্মান রক্ষার্থে।
অর্থাৎ আজ না হোক, কাল বা যেদিনই সুযোগ আসবে ধর্ষককে ধরে একেবারে হিজড়ে বানিয়ে দিতে হবে। আর যদি সম্ভব হয়তো, ঘটনা ঘটবার লগ্নেই, গধরহ চড়রহঃ কেটে দিতে হবে। সোজা বিচার। ভয় কিসের? আইনের? যে দেশ, যে আইন, নারীর ইজ্জতকে রক্ষা করতে পারছে না, যে দেশে স্বয়ং রক্ষকই মাঝে মধ্যে ভক্ষক হয়ে দাঁড়ায়, সে দেশের আইনকে থোড়াই কেয়ার করে নিজের সম্মান, নিজে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে এবং ধর্ষককেও শাস্তি দিতে হবে নিজেরই। কেউ সাহায্য না করুক, সাড়া না দিক, হতাশ হলে চলবে না।
বেগম রোকেয়া সেই কালে চরম প্রতিকূলতার মাঝেও হাজার লোকের আপত্তির মুখেও মাত্র ৫টি ছাত্রী নিয়ে স্কুল খুলেছিলেন। নারীর সামগ্রিক অবস্থার চিত্রটি এখনও পুরোপুরি বদলায়নি, অনেকটা ওই যুগের মতোই রয়ে গেছে, শুধু আমাদের সাহসের অভাব ও অনৈক্যের জন্য।
বর্তমানে এমন উত্তেজক শিক্ষাই কিছু কিছু শিক্ষক তাদের গোত্রের শিক্ষার্থীর দিয়ে যাচ্ছেন যা' সত্যই, মানবাত্মা তৈরি করছে এবং অনন্তকালে গিয়েও শেষ হবে না। মাত্র পালিত হলো ৮ মার্চ, ঘটা করে নারী দিবসের শতবর্ষ। ঠিক এর ২ দিন আগে অর্থাৎ ৬ মার্চ রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪তম ব্যাচের কুলঙ্গার ছাত্র তন্ময় তার কয়েক জন সাথীসহ একই বিভাগ ও ব্যাচের এক ছাত্রীকে হলে পেঁৗছে দেয়ার নাম করে পথে ধর্ষণ করে।
মেয়েটির অবস্থা বেগতিক দেখে, তন্ময় তার বান্ধবীকে ফোন করে ডেকে এনে দু'জনে মিলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এম্বুলেন্সে সাভার এনাম মেডিকেলে ভর্তি করে। সহপাঠীকেও কিন্তু বিশ্বাস করা যাচ্ছে না এখন। ৪ ঘণ্টা লাগে মেয়েটিকে অপারেশন করতে এবং তার গোপনাঙ্গে ৪ সেন্টিমিটার পরিমাণ সেলাই দেয়া হয়। রক্ত দেয়া হয় ৩ ব্যাগ। ডাক্তারের মন্তব্য শুনে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক অত্যন্ত ব্যথাতুর চিত্তে জানান, 'ভবিষ্যতে মেয়েটির মা হওয়ার সম্ভাবনা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
অসম্ভব যন্ত্রণা সইতেও পারছে না। সারা জীবন এ দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে মেয়েটিকে ধুঁকে ধুঁকে বাঁচতে হবে। এর চেয়ে ওকে গুলি করে মেরে ফেললেও ভাল হতো। ' মেয়েটির আপন কেউ না থাকায় সৎ ভাইরাও তাকে রাখতে চাইছে না নিজেদের আশ্রয়ে। এ ঘটনার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন মিছিল বা সোচ্চার আওয়াজ ওঠেনি।
আওয়াজ ওঠেনি কোন নারী সংগঠন থেকে। ওঠেনি সম্ভবত এই কারণে যে এর সঙ্গে কোন দাতা দেশের 'ফান্ড' যুক্ত নয়। প্রতিবাদ করলে কোন ফা- পাওয়া যাবে না। আওয়াজ ওঠেনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন মহিলা শিক্ষিকার কাছ থেকে, ছাত্রীদের কাছ থেকে। অন্য কোন শিক্ষাঙ্গন থেকে তো নয়ই, কোন নারী নেত্রীর কণ্ঠ হতেও।
সংসদে যে মহিলা সদস্যরা বসছেন তাদেরও নারী সমাজের পক্ষে কোন ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে না। তাদের আচরণ, কথাবার্তা থেকে দেখা লক্ষ্য করা যাচ্ছে দলীয় ভূমিকা নিয়ে এবং দলীয় বক্তব্য রাখতেই তারা ব্যস্ত। এ পর্যন্ত কোন সরকারের সময়ই কোন মহিলা নেত্রী, গ. চ, মন্ত্রী, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, মুখে আইনের কথা বললেও, বাস্তবে দৃষ্টান্তমূলক কোন শাস্তি দিতে পারে নি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশ ও পা-া লেলিয়ে দেয়া হয়েছে, রাস্তায় নারীকে বর্বরোচিতভাবে অত্যাচারের জন্য। কই ওদের তো আজও বিচার হলো না? সরকারের পর সরকার পাল্টায়, পাল্টায় না নারীর ভাগ্য।
যে বা যারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষিত মেয়েটিকে রক্ত দিয়েছে, তারাও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। কেন? কি সমস্যা তোমাদের? ভয়? তবে রক্ত দিলে কেন? সিরিঞ্জ দিয়ে এখুনি ওই রক্ত বের করে ফেলা হোক। এ রক্ত অপমানের রক্ত, সহমর্মিতার নয়। এমনিতেও ধর্ষিত মেয়েটি তিলে তিলে কষ্ট পাচ্ছে, না হয় রক্ত না থাকলে মরে যাবে। ওর তো যাওয়ারও কোন স্থান নেই।
একে কি বাঁচার মতো বাঁচা বলে? ওই লম্পট ধর্ষকদের রক্ষার জন্য, একদল ধর্ষক শিক্ষক মরিয়া হয়ে উঠেছে। যাতে ভবিষ্যতে ওনারা ধর্ষণ করলে, কিছু ছাত্রছাত্রীর অন্তত ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ থাকে। প্রশ্ন আসতেই পারে, ওই শিক্ষকরা যে ধর্ষক তা কীভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল? এখানে জানা-অজানার কিছু নেই, তারা যে জড়ষব চষধু করছে, তাতে সন্দেহের কোন ধরনের অবকাশ নেই। চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা হয়, ভদ্রলোক নয়। এজন্যই কী বলা হয়, ছাত্র জীবনের মতো মধুর জীবন আর নেই? এজন্যই কী বলা হয়, শিক্ষকের মনে আগুন না থাকলে, ছাত্রদের মনে আগুন জ্বালাবে কে? এসব ক্ষেত্রে শুধু মনে নয়, দেহেও শিক্ষক-ছাত্রের অধিকাংশ পুরুষের আগুন ধরেছে, তাই তো চারদিকে এত ধর্ষণ।
পবিত্র শিক্ষাঙ্গনেও ধর্ষণ।
তবে কী স্বামী বিবেকানন্দ মিছেই বলেছেন যে, 'যে ব্যক্তির আত্মা হতে, অপর আত্মার শক্তি সঞ্চারিত হয়, তাকে গুরু বলে। যিনি যথার্থ গুরু, তিনি শিষ্যের আত্মাকে উদ্বোধিত করেন?' এখানে তো উল্টোটাই ঘটছে। ছাত্রদের ধর্ষকের শিক্ষায় শিক্ষিত করা হচ্ছে। লম্পট তন্ময় এরও একজন বন্ধবী আছে, যে সব জেনেশুনে, ছুটে এসেছে তন্ময়ের পাশে দাঁড়াতে।
অথচ, এ মেয়েটির ভূমিকা হওয়া উচিত ছিল, সে তন্ময়ের মুখে থু থু ছিটিয়ে, সবাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে, ধর্ষিতার পাশে দাঁড়ানো। কুলাঙ্গারদের বান্ধবী যারা হয়, ওরা কী তবে নারী। না, ওরা নারী নামের কলঙ্ক। ধর্ষকদের সঙ্গে সঙ্গে, ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ দেয়ার জন্য তন্ময়ের বান্ধবীরও ফাঁসি হওয়া উচিত।
ফাঁসি হওয়া উচিত, ওই কাপুরুষ ছাত্রছাত্রীদের, যারা রক্ত দিয়েছে বটে; কিন্তু পরিচয় গোপন রেখেছে ভয়ে।
যেন কাজটি ছিল অসৎ। ধিক্ ধিক্ সব শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষার্থী, নারী সংগঠন, নেত্রী নামধারী মহিলাদের। ধিক্ সমাজব্যবস্থাকে, ধিক্ সেই পরিবারকে, যারা ধর্ষিতার এই চরম দুঃসময়েও একটুকু ঠাঁই দিতে অপারগ। এ রকম ধর্ষণ অজস্র ঘটে যাচ্ছে, ক'টা পত্রিকার পাতায় আসে। কবে বিচার হবে, কবে সত্যিকারের বিচার পাব? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার জিজ্ঞাসা-প্রশ্ন, সেদিন কী করবেন যেদিন ধর্ম, গোত্র, পেশা ভেদে পুরুষ রাস্তায় নেমে এ মর্মে সেস্নাগানে মিছিল বের করবে, 'ধর্ষক, মোরা ধর্ষক/নারীদের মোরা পরমাত্মীয়, ধরণীর মোরা রক্ষক?' উড়সবংঃরপ ারড়ষবহপব ৎধঢ়ব এসব নিয়ে শুধু মুখে বললেই চলবে না, কঠোর ব্যবস্থা নিন।
শিক্ষাঙ্গ ধর্ষকমুক্ত করুন। স্ব-সম্মানে আমাদের বাঁচতে দিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।