আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এইচআইভি/এইডস্ থেকে নারীদের বাচাতে উদ্যোগ গ্রহণ করুন



এইচআইভি থেকে বাঁচতে মেয়েদের সচেতনতা প্রয়োজন আজমাল হোসেন মামুন নাদিয়া (ছদ্মনাম) প্রেমিক কর্তৃক প্রত্যাখানের পর বরিশাল জেলা থেকে ঢাকা শহরে এসেছিলো। লঞ্চ থেকে সদর ঘাটে নেমে পরিচয় হয় এক ভদ্র মহিলার সাথে। তাঁর নিকট সমসত্ম ঘটনা খুলে বলে। এতে সে তাকে তাঁর বাড়িতে কাজ দিবে বলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে যৌন কাজে বাধ্য করে।

নিরাপদ যৌন কাজ সম্বন্ধে তাঁর কোন পূর্ব ধারণা ছিলো না। ক্লাইন্টরা তাঁর সাথে বিকৃতভাবে যৌনাচার করতো। কাউকে কিছু বলতে পারতো না। একসময় সে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রামত্ম হয়। পরবর্তীতে অকালে প্রাণ হারাতে হয় তাকে।

আমাদের বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম এইচআইভি ভাইরাস সনাক্ত করা হয়। কিমত্মু আজ পর্যমত্ম অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন নয়। এইচআইভি ভাইরাস ঝুঁকিতে রয়েছে আমাদের দেশের নারীরা। তবে তাদের সংখ্যা কত তা সাধারণ মানুষের জানার বাইরে। তবে প্রায় ১ হাজার মতো এইচআইভিতে আক্রামত্ম নারী রয়েছে।

এইআইভিতে আক্রামত্ম হওয়ার ৩ টি কারণ দেখা যায়, সামাজিক কারণ, অর্থনৈতিক কারণ এবং জৈবিক কারণ। সামাজিক কারণ হিসেবে দেখা যায়, অনেক পুরম্নষ প্রবাস থেকে দেশে ফিরে এবং কনডম ছাড়া স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন করে। তখন নারীরা নিরাপদ যৌন মিলনে সঙ্গীকে রাজী করতে পারে না। অন্যদিকে অনেক নারী এক শ্রেণীর পিচাশ নরের হাতে জোরপূর্বক ধর্ষিত হয়। অর্থনৈতিক কারণ হিসেবে দেখা যায়, অধিকাংশ নারীরা স্বামীর ওপর নির্ভরশীল বলে স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী যৌন মিলনে বাধ্য থাকে।

যারা গ্রামে বসবাস করে তাদের ৭০ ভাগ নারী স্বামীর মতামতের বিরম্নদ্ধে কিছু করার থাকে না। আবার কিছু সংখ্যক নারী ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মাধ্যমে যৌনকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাদেরকে ইচ্ছেমত যৌনকাজে বাধ্য করা হয়। জৈবিক কারণের মধ্যে রয়েছে, যোনিপথের দেয়ালের ত্ব ক খুব পাতলা বলে তাদের যৌনাঙ্গের পর্দা ছিড়ে যায় ও সংক্রামিত/ঘা হয়। এছাড়াও সমত্মানপ্রসবের সময় রক্তশূণ্যতা দেখা যায়।

এতে অনেক সময় এইচআইভি আক্রামত্ম ব্যক্তির রক্ত নেয়। হাসপাতালে অপারেশনে যন্ত্রপাতি ভালোভাবে পরিষ্কার না করায় এইচআইভি ভাইরাস নারীর দেহে সহজে প্রবেশ করে। এতে করে নারীরা এইচআইভি ভাইরাসে আক্রামত্ম হয়। এইচআইভ/এইডস নিয়ে কর্মরত একটি বেসরকারি সংস্থা এসোসিয়েটস ইন ট্রেনিং এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন (অ্যাইটাম) এ কর্মরত ডা. ফওজিয়া বলেন , এইচআইভি আক্রামত্ম ব্যক্তির লক্ষণ ঘন ঘন ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসা, ৬ মাসের মধ্যে ১০ ভাগ ওজন কমে যাওয়া, ঘন ঘন ডায়রিয়া হওয়া এবং তা ওষুধ সেবনের পরও না কমা, জরায়ুর মুখে ক্যান্সার হওয়া, স্মৃতি বিলোপ হওয়া বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। গ্রামাঞ্চলের নারীরা নাজুক স্বভাবের।

শিক্ষার দিক থেকেও শহুরে নারীদের তুলনায় পিছিয়ে। এইচআইভি সম্বন্ধে অজ্ঞ। বাল্য বিবাহের শিকার হয়। যৌন মিলনের ক্ষেত্রে স্বামীর মতামতকে গুরম্নত্ব দেয়। গ্রামে এখনও কিছু নারী ও পুরম্নষের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে।

কনডম ছাড়া যৌনমিলন করলে উভয়ে নাকি বেশি তৃপ্তি পায় বলে কনডম ছাড়া যৌনমিলনে বেশি আগ্রহী। নারীরা যদি কনডম ব্যবহার করার জন্য স্বামীকে নির্দেশ দেয় তাহলে স্বামী স্ত্রীর সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে এ আশাংকায় নারীরা স্বামীকে সচেতন করে না। গ্রামের অধিকাংশ কৃষক ও নিরক্ষর দিনমজুরদের জন্য একমাত্র বিনোদন হচ্ছে যৌন মিলন। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে রাতে স্ত্রীর সাথে একত্রে ঘুমানোকে স্বর্গের মতো মনে করে। তারা বাজারে কম যায় বলে কনডম ব্যতীত যৌনমিলনে লিপ্ত হয়।

অনেক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উধ্বতন কর্তৃপক্ষ নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদন্নতির লোভ দেখিয়ে কনডম ছাড়ায় যৌন কাজ করে। মাদকদ্রব্য ও ওষধ সেবনে অজ্ঞান করে অনিরাপদ যৌনকাজ করে। সেখানে নারীরা অসহায় থাকে। লোক লজ্জ্বার ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারে না। একসময় নারীরা এইচআইভিতে আক্রামত্ম হয়ে অকালে প্রাণ হারায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, এইচআইভি ভাইরাস ঝুঁকিতে রয়েছে, সূঁচ বা সিরিঞ্জের মাধ্যমে নেশাগ্রহণকারী, যৌনকর্মী, বহুগামী পুরম্নষ ও নারী, সমকামী নারী ও পুরম্নষ, যৌনরোগে আক্রামত্ম ব্যক্তি, যৌনকর্মীদের সাথে নিয়মবহির্ভূত অবাধ মেলামেশা ও পথশিশু। তবে নারীরা বেশি ঝুঁকিতে। আমাদের দেশে নারীরা এইচআইভি/এইডসের ভয়াবহতা সম্বন্ধে সচেতন নয়। অথচ প্রতিটি জেলা হাসপাতালে বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা করা যায়। এছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে বিভাগীয় শহরে রয়েছে।

রাজধানী ঢাকা শহরে যে সব স্থান বা প্রতিষ্ঠানে এইচআইভি বিনামূল্যে পরীক্ষা করা হয় তা হলো, ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথ (আইপিএইচ), মহাখালী, রোগতত্ত, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষনা ইন্সটিটিউট, মহাখালী, জাগরণী, ভাইরোলজী ও ল্যাবরেটরী ডিভিশন, আইসিডিডিআবি, মহাখালী, আর্মড ফোর্সেস প্যাথলজী ল্যাবরেটরী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, রেড ক্রিসেন্ট রক্তদান কেন্দ্র, ৭/৫, আরঙ্গজেব রোড, মোহাম্মদপুর, ভাইরোলজী বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, এবং ক্যাপ বাংলাদেশ, ৬৩/ডি, রোড-১৫, বনানী। আসুন আমরা এইচআইভি/এইডস থেকে বাঁচতে পরীক্ষা করি। লজ্জার কারণে হয়ত: অকালে জীবন হারাতে হতে পারে আমাদের। বিষয়টির প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। লেখক- আজমাল হোসেন মামুন উন্নয়নকর্মী, ব্লগার ও সাংবাদিক দক্ষিণণখান, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।