রাতের আকাশের নগ্নতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি কিন্তু পারি না মনের আকাশ দেখতে।
আজ সকাল থেকে মেঘ মেঘ। আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। তাই একটু বেশি সময় গড়াগড়ি করলাম। নাস্তা শেষ করতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।
এই বসন্তে সিলেটে আজ ২য় বারের মত এত বৃষ্টি হল। দৌড়ে গিয়ে ছাদে উঠলাম। দেখি সমস্ত ছাদ সাদা বরফে ঢাকা। এক ইঞ্চি বা তার চেয়ে ছোট ছোট টুকরা। বলা যায় বরফের কার্পেট।
কিন্তু খুব আশ্চর্য হলাম, বরফ টুকরা গুলো স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত গলে গিয়ে পানি হচ্ছে।
আমি হীরার দানার মত চকচকে সাদা বরফের টুকরা মুখে পুরলাম। মনে হল ছোট বেলায় ফিরে গেছি। তখন আমরা ভাই বোনেরা একসাথে হই হল্লা করে বৃষ্টির মধ্যে নেমে যেতাম। বরফ কুড়াতাম।
দুহাতে বরফ টুকরা জমিয়ে রাখতে রাখতেই কিছু কিছু জোড়া লেগে যেত। মাথার উপর টুকটাক করে বরফ পড়ত। খুব মজা হত। পা দিয়ে কাদা পানি ছিটাতাম। তারপর মা এসে কান ধরে নিয়ে যেত।
হঠাৎ ধুপ ধাপ শব্দ শুনলাম। বুঝলাম হানিফ আসছে। ১০-১২ বছর বয়স হবে। স্বাস্থ্য বেশ ভাল। আমাদের বাসায় থাকে।
দুটুকরো বরফ হাতে নিয়ে মুখে দেবে এ সময় সে আমাকে দেখে ফেলল। অপ্রস্তুতের মত সালাম দিল। ওর আর বরফ খাওয়া হল না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেচারা নিচে নেমে গেল।
বরফ পড়ল প্রায় ১০ মিনিটের মত।
তারপর বরফ পড়া থেমে গেল। দমকা হাওয়া আর বৃষ্টি তখনও থামেনি। আমি সিঁড়ি বেয়ে চার তলা পর্যন্ত উঠলাম। বাবা দোতলা পর্যন্ত বাড়িটা কমপ্লিট করেলেও সিড়িটা শেষ করেছেন চারতলা পর্যন্ত। চারতলার উপর পানির টাঙ্কি।
সেখানে চিলা কোঠার মত একটা ব্যবস্থা আছে। ওখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়া দেখলাম। এ দৃশ্য অনেকবার দেখেছি। যতবার দেখি ততবারই ভাল লাগে।
আমাদের বাসাটা চা বাগানের পাশে ছোট একটা টিলার উপর।
সবুজের ছোয়া একটু বেশি। রেলিং এ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কেন যেন শূন্যতা পেয়ে বসল। মনে হল যদি এসময় কেউ পাশে থাকত! দূর কোন দেশে হারিয়ে যেতাম। মনের মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টি পড়া দেখতাম। অনুনয় করে বলতাম, লক্ষীটি একটা গান শোনাও না ! প্লিজ ।
ও বলত, না গাইতে পারব না। উমম ডঙ কত !!!!
গাও..না জানু। লক্ষী আমার........একটু খানি......
আমি হয়ত আবারও ওকে বলতাম, ছোট বাচ্চাদের মত আল্লাদ করে বলতাম। কিছু পরে, দেখা গেল ও হয়ত গুনগুন করছে। ঠিক গান নয়, এর চেয়েও বেশি কিছু।
বৃষ্টি আর গান এক সাথে মিশে যাবে.....
কি জানি কোন সময় বাস্তব থেকে যেন কল্পনায় চলে গেলাম। চোখের সামনে দেখতে পেলাম, ওকে আমি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছি। ওর ঘারের কাছে আমার মুখ। চুলগুলো উড়ে উড়ে আমার মুখে পড়ছে। আমি মন ভরে ওর চুলের গন্ধ শুকছি।
ওর গলায় আল্ত একটা চুমু খেতেই ও বলল, ধেত্ আর গাইতে পারব না। চলো বৃষ্টিতে ভিজব।
তারপর দুজনেই ভিজে একাকার। কাক ভেজা যাকে বলে। ওর জুবজুবা ভেজা শরীরটা জড়িয়ে ধরলাম।
ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছে। কাঁপা শরীরটাকে আমি তীব্র ভাবে অনুভব করলাম।
মনে হল সময়টা যেন থেমে গেছে। এর মাঝে দেখলাম, এক ফোটা বৃষ্টি কপাল থেকে গড়িয়ে ঠিক ওর চোখের পাপড়ির উপর আটকে আছে। আলো পড়ে জ্বল জ্বল করছে।
নিচে কাল চোখ, তার উপর হিরের দানা। আমি চেয়ে আছি তো চেয়েই আছি।
..............
....................
...........................
বাতাস আরও জোড়ে শুরু হল। আমার পুরো পাঞ্জাবী ভিজে শেষ। তারপর আর কি! বৃষ্টি আর কল্পনা দুটোকে বিদায় দিয়ে নিচে নেমে এলাম।
এই হল আমার ওকে জড়িয়ে ধরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।