আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

?-দুজনে-নিকুন্জে দখিনা বায়, করিছে হায় হায়। লতাপাতা ঘিরে ঘিরে, ডাকিছে ফিরে ফিরে~?



সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই মুহুর্তে ঝুমু বললো, -চলো এবার ফিরি। দীপ্ত হেসে বলললো, -কোথায় ফিরবে? আমাদের কি বাড়ী-ঘর আছে আর? আমরা তো এখন জন্মস্বাধীন,শঙ্কাবিহীন, চিত্তমুক্ত শতদল। হাহা করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো সে। ঝুমু বললো, বাড়ীঘর না থাকুক এখনও তো শরীরটা আছে। ওটার কাছেই ফিরে যাই চলো।

-তথাস্তু রাজকন্যা। তবে হাতটা বাড়াও। ঝুমু নির্ভাবনায় হাতটা ধরলো ওর আর তারপর উড়ে চললো আকাশপথে, ব্যস্ততম নগরীর সকল কোলাহল, ট্রাফিক জ্যাম, হিংসা বিদ্বেষ ও ভালোবাসা ছাড়িয়ে, সকলকিছুর উর্ধে, সকল সীমানা ভেদ করে ঐ দূর নিলীমায় ভেসে চললো তারা। সন্ধ্যার আবছায়া আলোয় তখন রাজপথে নিয়ন বাতিগুলা জ্বলে উঠেছে। কেউ খেয়াল করলোনা, দুটো আবছায়া ছায়ামূর্তী মিশে চলেছে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে।

গোধূলীর হিমহিম হাওয়ায় ঝুমুর মন ভরে যাচ্ছিলো। পৃথিবীটাকে হঠাৎ ওর অসম্ভব মায়াময় মনোরম মনে হতে শুরু করলো। অথচ দুদিন আগেও তারা ভয়াবহ কষ্টের দিনগুলো পার করেছে। ফিরে এলো ওরা দুজন আবারও সুউচ্চ ষোলো তলা হাসপাতালটার ছাদেই। গতকাল এখানেই ওদের প্রথম দেখা হয়েছিলো।

তারপর সারারাত ওরা এই ছাঁদে বসেই গল্প করে কাটিয়েছে। দীপ্ত বলেছিলো, তার বেকার জীবনের দুর্বিসহ দিনগুলোর কথা। গল্পগুলো অকপটে, নির্দ্বিধায়, কখনও কখনও রসিকতায় বলে যাচ্ছিলো সে। ভাবাই যায় এত প্রাণচন্চল ছেলেটার বুকে এত কষ্ট লুকিয়ে ছিলো। দীপ্ত বলেছিলো তার দরিদ্র পরিবারের অক্ষমতা, লান্ছনা গন্জনা আর অপমানের ইতিহাস।

যার ফলশ্রুতিতে তিনদিন আগে বড়লোক বন্ধুর বাবার অফিসে ইন্টারভিউ দেবার পর চুপিচুপি উঠে গিয়েছিলো আকাশের কাছাকাছি। তারপর লাফিয়ে পড়েছিলো সাততলা ভবনটার নীচে। পক্ষান্তরে ঝুমুর ব্যাপারটা ভিন্ন। স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান সে। তবে গতকালই বি্শ্বাসঘাতক প্রেমিকের বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে পারেনি।

মায়ের রিলাক্সেশন ট্যাবলেট মুখে পুরেছিলো পাতার পর পাতা। ওরা দুজনই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু পৃথিবী ওদের বিদায় দিলোনা। দুজনেই কমায় চলে গেলো, এই পৃথিবীরই এক হাসপাতালের দু দুটো বেডে, আশংকাজনক অবস্থায় পড়ে রয়েছে দুদুটি দেহ। বাবা মায়ের চোখের পানি , অবিশ্রান্ত বিলাপ এসব সহ্য করতে না পেরে দুজনেই পালিয়ে এসেছিলো,হাসপাতালের খোলা ছাঁদটায়।

শরীর অচল তবে অবিনশ্বর হৃদয়টাকে টেনে এনেছিলো শরীরের বাইরে। আর তারপরের কাহিনী তো সকলের জানা। (চলবে) ১ম পর্ব Click This Link ২য় পর্ব Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।