সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিল মানে কারো শিক্ষার সুযোগ কেড়ে নেয়া
লেখাটার অন্যকোন শিরোনাম দেওয়া যেত কিনা সে বিষয়ে ভাবতে চাইলে বিকল্প অবশ্য আছে। কিন্তুক কথা হলো ঘটনা যা ঘটেছে তা একমাত্র এই শব্দবন্ধেই বিধৃত হয় মনে করবার কারণ ভাবের কারখানা কর্তৃক প্রকাশিত কবি শ্মশান ঠাকুরের প্রথম কাব্য সংকলন ‘জৈবিক চিত্রকল্প’র পরতে পরতে। এই ভাবনা আমাকে ছাড়তে চাইলেও ভাবনাকে আমি ছাড়তে পারি না কখনও, ১ম কবিতা থেকে শেষ কবিতা পর্যন্ত।
ছোট ছোট পদের(একটা আবার এক লাইনের, সেটা নিয়ে পৃথক প্যাচাল আছে) কবিতাগুলি দেখে মনে হচ্ছে আমরা, আমাদের কবিতা আর্য বীর্যের সংশ্লেষে যে উচ্চতা অর্জন করেছিল, মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের দুই শতক যে মাঝারি উচ্চতায় আমরা প্রকাশিত ছিলাম, হঠাৎ করেই আমরা ৫ হাজার বছর(অথবা তারও বেশী) পূর্বে আফ্রিকা থেকে আগত সেই অনার্য হটেনটট্ জাতীয় খর্বকায় পিতৃপুরুষের আকারে আমাদের কবি বরের কবিতা স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে। ইদাণিং একটি বিজ্ঞাপন প্রায় চোখে পড়ছে যার শেষটা এই রকম-“দাদী, সেই আমকে আমরা আদর করে ডাকি ফ্রুটো” ।
আজ, এখন শ্মশানের কবিতা পড়তে গিয়ে আমার কেবলি মনে হচ্ছে এই সব ফুটো ফ্রুটোকে না আম ডাকার মুসিবতে পড়তে হয়। মহাকাব্য হতে কবিতার এই পাতন হয় তো সইবে কিন্তু একে ভনিতার বদলে কাব্য বলতে গেলে সে এক অসম্ভব, অজৈবিক চিত্রকল্প হবে বলেই মনে হয়। জানতে ইচ্ছে করছে সাম্প্রতিক কালের মোবাইল ছবি, তিন/পাঁচ মিনিটের টেলিছবি সংক্রান্ত ভাবনা কবিতা ভাবনার সাথে খিচুড়ি পাকিয়েছে কিনা ?
কবির কবিতা ভাবনা ভাবতে আমার মনে হয়েছে-কবির বোধ করি রাতে ঘুম হয় না(যদিও কবিরা রাত জাগা পাখি হন প্রায়ই)-ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত এ কবি তার ছোট ছোট পর্বের(হাস মুর্গীর সেক্সের মতো) ঘুমে তার চেয়েও ছোট ছোট স্বপ্নে কিছু ওহি পেয়েছেন। তা কবির এই সব ওহির উৎস আকাশের ওপার না ভাবের কারখানা? কবিরা নবী কিনা সে বিতর্ক অনেক পুরোনো। কিন্তু কবিদের এই সব পৌরানিক চরিত্রে অভিনয় সংগত কিনা সেটাই প্রশ্ন।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে কবি শ্মশান ঠাকুর ওহির সাথে আপ্লুত শৃঙ্গারে মেতে উঠেছেন। তবু মন্দের ভালো যে, শার্ল বোদলেয়ার মতো তিনি ক্লেদজ কুসুম ফোটান নি কিংবা প্রফেট খ্যাত লেবানিজ কবি জিবরান কাহলিলের মতো জীবণ দর্শনও নয়। সেই সাথে বলে রাখি গা বাঁচিয়ে পাশাপাশি চলার এ প্রবণতাও রোধ্য। নয়তো গায়ে গন্ধ লাগবে কিন্তু সংশ্লিষ্টতার সূত্র হবে দূর্বল।
এক লাইনের কবিতা প্রসঙ্গে বলছিলাম।
প্রমাণ সাইজের কবিতা-‘ইসসস্ । মানুষের ডানা নেই!’ কি বলবো, বর্তমান আশাবাদি প্রজন্মের দশকে এক তরুণ কবির কি নিদারুণ হতাশাজনক উচ্চারণ। এ কবিতা পড়ে কি কবির মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়বার সৈনিক কে খুঁজে পাই ? প্রশ্ন পাঠকের কাছে, কবির কাছেও। একটা গ্রাম্য কৌতুকের শেষ পর্বটা এই রকম-মারামারির এক পর্যায়ে নিচে পড়া লোকটি তার উপরের লোকটিকে বলল যে, নিচে পড়িছি তাতে কি হলো, তুই কি আকাশ দেখিছিস ? কবিবর এই আর্য, ইরানি, তুরানি, আফগানি, শক, হুন, মঙ্গল, ইংরেজ, মগ তারিত, চাপা পড়া বাঙালীর আকাশ কি সাহিত্য নয়, কবিতা নয়। আপনি কি আমাদের আকাশ দেখাবেন না ? কবি যে পাখি, কবিতা তার ডানা, সেই ডানায় পদ, শব্দ, উপমা, উৎপ্রেক্ষা রঙ বেরঙের পালক।
কবি আকাশে উরুন। কবিতা ডানার বাতাসে দূরে যাক দুষিত হাওয়া, বর্ণিল পালক ছড়িয়ে যাক দিক-বিদিক। শেষ করবার আগে জানতে ইচ্ছে করে-শিরোনাম বিহীন ২৪টি কবিতার পর শিরোনাম কি অপরিহার্য ছিল? আলোচনা ওঠা বোধ করি সংগত –
কবিতায় শিরোনাম কি অপরিহার্য ? হাছন রাজা, লালন ফকিরের গান, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতির মতো একক শিরোনামে কোন কবির সমস্ত কাব্য ভাবনা যদি গ্রন্থিবদ্ধ হয়, তাতে তি কী ?
কবিরই কবিতা দিয়ে শেষ করি-
‘খসে পড়া কাপড় জড়ানোর দরকার নেই ;
তোমার ছায়া খেয়ে ফেলেছো তুমি!’
মাভৈঃ। কবি ও কবিতার জয় হোক। রোদ হোক আভরণ।
১০/০১/১০
ঢাকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।