এ-মন একবারই ছুঁয়ে যেতে পারে কেউ...
টি এম আহমেদ কায়সার নব্বইয়ের কবি। শুধু কবি অভিধায় তাঁকে বেঁধে রাখা যায় না; কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,নিবন্ধ, অনুবাদ, গান লিখে তাঁর সময়কে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। একসময় ফিল্মের নেশায়ও ঝেঁকে বসেছিল। যার ফলশ্রুতিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন চোখ ফিল্ম সোসাইটি। তিনি মূলত লিটলম্যাগে লিখতেন, প্যারাডাইম নামে একটি ছোটকাগজ (যৌথ)সম্পাদনা করতেন। সে সময় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় উল্লেখযোগ্য ছোটকাগজ- একবিংশ, নিসর্গ, লিরিক, জীবনানন্দ, সুনৃত বিকাশ, ভিন্নায়ণ, গ্রন্থি, অর্কেষ্টা, ফিনিক, ঘাস, খোয়াব, ঋতি হৃদিসহ অনেক ছোটকাগজে। রাসায়নিক প্রকৌশলের ছাত্র টি এম আহমেদ কায়সার নানাবিধ একাডেমিক চাপের কারণে দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে ক্রিয়াশীল সাহিত্য রচনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
______________________________________________
ঘুম
ভাবছি, এই ভাঙা চোয়াল আর কুজো কাধ নিয়ে
আর ঘর থেকে বাইরে বেরোব না
টেলিফোনের তার কেটে দেবো
বরফ মাড়ানো জুতোগুলো কালো বিন-ব্যাগে ভরে
রাস্তায় স্ক্র্যাপভ্যানে রেখে আসবো
আমার চিবুকে যে বাজপাখির ছায়া দেখে এক উদ্ভ্রান্ত কিশোরী
সহসা আতকে উঠেছিলো
ভাবছি, বরং সেই ছায়ার সাথে তলোয়ার হাতে
নেমে পড়বো এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে
আর আমার রক্তের অন্ধকার থেকে ঝাক ঝাক বুনো-শালিখ উড়ে যেতে দেখে
মনে পড়ে
কলাশাস্ত্রে এক অভিজ্ঞ রমনী আমাকে শিখিয়েছিলনে পাখি ধরার দুর্দান্ত কৌশল
তার কথা ভেবে ভেবে কি আমি গোপনে কিছু কাশফুল বিসর্জন দেবো এখোন?
ভাবছি আর বাইরে বেরুবো না
বাতিগুলি নিভিয়ে দেবো অলক্ষ্যে
আর দূর বরফ পাহাড় থেকে বিটোভেন যে ভূজঙ্গ তীরগুলো ছুড়ে দেন নিঃশব্দে
হৃতপিন্ডে সেই তীরগুলোর দগদগে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে
আমি বরং ঘুমোতে যাবো; নিভৃতে ঘুমিয়ে যাবো গভীর রাত্তিরে
হিংসা
কে যেন হিংসাভরে বন্দরের আলোগুলো নিভিয়ে দিয়েছে
সমুদ্রে শিকার রেখে একা একা ফিরে যাচ্ছি, আহা! ...
তবু দেখো, ফের জাগে শিকারের মোহ;
অশ্ব-ঘঙুর শুনি কোনো এক দূরতম দ্বীপে!
রক্ত-বুদ্বুদ
আমি যেনো হোলি খেলার মাঠে
সব ভুলে
কোনোএক প্রাচীন শীতভোরে কুয়াশাভেজা নিঃসঙ্গ পাটকাঠি হাতে
কেবলি রক্ত বুদ্বুদ তুলে চলছি
কেবলি রক্ত বুদ্বুদ তুলে চলছি
আর নিস্তব্ধ নুড়ি পাথরগুলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক
আর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে আগুন, সন্ত্রাস নাকি রক্তের ফিনকি?
ফেরা
খোপায় এটেছো দেহ; অলকে বেধেছো হাত
ময়ঙ্ক আখির শর হেনেছো এ বুকে
কামের কোদন্ড ভুরু এবার কি ছোয়াবে দুচোখে?
কেনো যে ফেরাতে চাও? আমার তো রক্তে সখি
আবাল মাটির ডাক; অনন্ত গুহাব্রত, আমূল সন্ন্যাস
ঘুমন্ত নদী ও চন্দ্র, উড্ডীণ বালিহাস হাতছানি দেয় নিরবধি
জোছনায় নয় শোনো; অন্ধকারে মুখ ঢেকে রাখি
তবু বাধো লোকালয়ে; ওখানে কি পাবে সখি ডালে ডালে পাতার প্রপাত?
ওখানে কি পাবে নদী নির্জনে বয়ে গেছে ধু ধু?
ওখানে কি পাবে ছায়া কেপে উঠে কলোচ্ছল জলে?
ডেকে যায় বুনো-অশ্ব; লিলুয়া পবন ধীরে কড়া নেড়ে যায়
পালাতে গেলেই বিধে তোমার নোঙ্গর
ঝরে রক্ত পথে পথে; ওড়ে ঘুড়ি গাঢ় বেদনায়
সভ্যতা ছিড়িবো দোহে; আদিম অরণ্যমূলে ফিরে যেতে চাই
পাথরে পাথর ঠুকে পরিশুদ্ধ হতে চাই পুনঃ
তোমার বিনম্র ওষ্ঠে পাপিষ্ঠ রক্তের ধুলো মুছে নিতে চাই
ক্রমশ পারদ-স্তর ঢেকেছে এ শরীরের দ্যুতি
...প্রেমে ও বৈরাগ্যে খুজি গৌতমের প্রত্ন-প্রতীতী
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।