আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৫ই আগষ্ট বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ও বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি



১৪ই আগষ্ট রাত ঢাকা বিগ্রেডের নাইট প্যারেড। এই অযুহাতে বিপ্লবের শেষ পর্যায়ের সব প্রস্তুতি শেষ করে ১৫ই আগষ্ট সুবেহ্‌ সাদেকে আল্লাহ্‌তা’য়ালার নাম করেই বিপ্লব শুরু করা হল। পূর্ব নির্ধারিত টার্গেটগুলোর উপর অভিযান চালানো হল। অতি সহজেই স্ট্র্যাটেজিক পজিশনগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হল। শেখ মুজিব, শেখ মনি ও সেরনিয়াবাতের বাড়ি থেকে বাধা এল।

প্রথম গোলাগুলি শুরু করা হল বাড়িগুলো থেকেই। গুলিতে তিনজন বিপ্লবী শহীদ হলেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কমান্ডাররা নির্দেশ দিতে বাধ্য হলেন পাল্টা আক্রমণ চালানোর। সংঘর্ষে নিহত হলেন শেখ মুজিব ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য। শেখ মনি ও সেরনিয়াবাতের বাড়িতে অবস্থানরত অস্ত্রধারীদের কয়েকজন মারা গেলেন।

অল্প সময়ের মধ্যে সব টার্গেটগুলোই নিউট্রেলাইজ করা সম্ভব হল। রেডিও বাংলাদেশের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো হল, শেখ মুজিবের সরকারের পতনের কথা। একই সাথে ঘোষণা করা হল, খন্দোকার মোশতাক আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। মার্শাল’ল জারি করা হল দেশের বৃহত্তর স্বার্থে। জনগণের কাছে আবেদন জানানো হল- বিপ্লবের সমর্থনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা রক্ষার কাজে সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য।

স্বৈরাচারী মুজিব সরকারের পতন ঘটেছে জানতে পেরে সমগ্র জাতি সেদিন স্বতঃস্ফুর্তভাবে বিপ্লবকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। আনন্দের আতিশয্যে ঢাকার রাস্তায় লোকের ঢল নেমেছিল। জনগণ সারাদেশ জুড়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিল স্বৈরশাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি পেয়ে। মসজিদে মসজিদে লোকজন সেদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের জন্য বিশেষ দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেছিলেন। মিষ্টি বিতরণের ধুম পড়ে গিয়েছিল মহল্লায় মহল্লায়।

শেখ মুজিব ও তার দোসরদের জন্য সেদিন বাংলাদেশের জনগণ ‘ইন্নালিল্লাহে ----- রাজেউন’ পড়তেও ভুলে গিয়েছিলেন। সবারই এক কথা, ‘দেশ জালিমের হাত থেকে বেঁচে গেছে। ’ আমরা জানতাম বাকশালী শাসনে জনগণ অতিষ্ঠ। কিন্তু আওয়ামী-বাকশালী গোষ্ঠি যে এতটা ধিকৃত হয়ে উঠেছিল জনগণের কাছে সেটা উপলব্দি করতে পেরেছিলাম বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পর জনগণের অভূতপূর্ব ও স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থনের বহিঃপ্রকাশে। বাংলাদেশের মানুষ জাতির ক্রান্তিলগ্নে অতীতে সবসময় সঠিক রায় দিয়ে এসেছেন সেটাই তারা আরেকবার প্রমাণ করলেন ১৫ই আগষ্টের বিপ্লবকে সমর্থন জানিয়ে।

সমগ্র জাতির প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অভিভূত করেছিল। জনগণের দেশপ্রেম দেখে জাতির প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নিচু করেছিলাম আমি। নিজেকে ধন্য মনে করেছিলাম জাতি ও দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছিলাম ভেবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বৃহৎ স্বার্থে বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়ার সার্থকতা সেদিনই পেয়ে গিয়েছিলাম জনগণের দোয়া ও আন্তরিক অভিনন্দনে। জনগণের উপর বিশ্বাস ও প্রত্যয় বেড়ে গিয়েছিল।

বুঝে নিয়েছিলাম বাংলাদেশের ৮কোটি মুসলমানকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না কোন অপশক্তিই। সব চক্রান্তের ব্যুহভেদ করে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজের স্থান করে নেবে একদিন বাংলাদেশের সচেতন সংগ্রামী জনতা। জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থনের জোয়ারে সম্পূর্ণভাবে অকেজো হয়ে পড়ল রুশ-ভারত চক্র। গণবিচ্ছিন্ন দেশ বিরোধী বিশ্বাসঘাতকরা সেদিন প্রাণের ভয়ে লেজ গুটিয়ে আত্মরক্ষার জন্য গর্তে গিয়ে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু সেখানেও রেহাই পায়নি তারা।

জনগণ জাতীয় বেঈমানদের খুঁজে বের করে ধরিয়ে দিতে থাকে আইন-শৃঙ্খলা পালনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে। এ অবস্থায় বাকশালী চক্রের যে সমস্ত নেতারা জান বাঁচাবার চেষ্টায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন তাদের অনেকেই জনগণের কাছ থেকে কোন সাহায্য-সহযোগিতা না পেয়ে উপায়হীন হয়ে স্বেচ্ছায় সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করেছিলেন। জনাব তোফায়েল আহমেদ এবং জনাব আব্দুর রাজ্জাক তাদের মধ্যে অন্যতম। জনাব কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল থেকে একটি টেলিগ্রাম করে তাতে জানায়, সে রাষ্ট্রপতির কাছে আত্মসমর্পন করতে চায়। এ টেলিগ্রামের কোন জবাব না পেয়ে প্রাণের ভয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং পরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারের হাতে ক্রিয়াণক হয়ে দেশ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়।

ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর সহযোগিতায় তার দ্বারা পরিচালিত এক সশস্ত্র হামলার মোকাবেলা করতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক তরুণ অফিসার ও চারজন সৈনিক শহীদ হয়েছিলেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জিয়া সরকার দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তার বিচার করে। বিচারে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দীর্ঘ মেয়াদী সাজা প্রদান করে। তখন থেকেই রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করে ভারতে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে হালে বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজনীতিতে আবার পুনর্বাসিত হয়েছে সেই কাদের সিদ্দিকী। কাদের সহযোগিতায় রাষ্ট্রদ্রোহী কাদের সিদ্দিকী আবার বাংলাদেশের মাটিতে প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ পেল এই রহস্যের উদঘাটনও ঘটবে একদিন এই বাংলাদেশের মাটিতেই।

ফিরে যাওয়া যাক ১৫ই আগষ্টে। অপারেশন শেষ। রেডিওতে সরকার পতন ও শেখ মুজিবের নিহত হবার খবর ঘোষিত হয়েছে। আমি কিছু জরুরী কাজে ব্যস্ত ছিলাম; হঠাৎ ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার এসে জানাল রক্ষীবাহিনীর তিনটি ট্রাক ও একটি জিপ টিএসসি-র দিক থেকে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। বুঝতে পারলাম এরা রক্ষীবাহিনীর টহলদার ইউনিট।

শেখ মুজিবের বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন উপলক্ষ্যে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে শেখ মুজিবের মৃত্যু সংবাদ যদি শুনে থাকে তবে তাদের প্রতিক্রিয়া বিরূপ হওয়া স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে সংঘর্ষ অনিবার্য। আর যদি না শুনে থাকে তবে তাদের খবরটা জানিয়ে তাদের সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করতে হবে। কয়েক মুহুর্ত চিন্তা করে শাহরিয়ারকে বললাম, “আমি ওদের মনোভাব ও প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য যাচ্ছি।

ওদের সমর্থন না পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার জন্য তুমি তৈরি থেকো। ” জিপ চালিয়ে একাই বেরিয়ে এলাম গেট দিয়ে। পিজি হাসপাতাল এর সামনে পৌঁছতেই দেখলাম কনভয়টি পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে এসে থেমেছে। আমি জিপ থেকে নেমে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম জিপে বসে আছে রক্ষীবাহিনীর একজন লিডার। লিডার আমাকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে স্যালুট করে দাড়াল।

- তোমরা এখানে কি করছ? প্রশ্ন করলাম। - আমরা টহল দিচ্ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। গোলাগুলির শব্দ শুনে এদিকে এসেছি। জবাব দিল লিডার। বুঝলাম ওরা বিপ্লব ও মুজিবের মৃত্যুর খবরটা এখনও শোনেনি।

লিডার জিজ্ঞাসা করল, - ব্যাপার কি স্যার? বললাম, - শেখ মুজিবের সরকারের পতন ঘটিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শেখ মুজিব মারা গেছেন বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানে। এ পরিস্থিতিতে তোমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তোমরা এই পরিবর্তনের পক্ষে না বিপক্ষে। অল্পক্ষণ চিন্তা করে লিডার বলল, - আমরা পরিবর্তনের সপক্ষে।

আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ট্রুপসদের গাড়ি থেকে নামিয়ে তাদের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে তাদের মতামত জানতে চাইলে সবাই একবাক্যে পরিবর্তনকে সমর্থন জানাল। এরপর সবাইকে সাথে নিয়ে ‘নারায়ে তাকবির। আল্লাহু আকবর’, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’, ‘সিপাই সিপাই ভাই ভাই’ প্রভৃতি শ্লোগান দিতে দিতে রেডিওতে ফিরে এলাম। রক্ষীবাহিনীর সদস্যদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া থেকে বুঝেছিলাম, ওদের সর্ম্পকে আমাদের মূল্যায়ন ছিল নির্ভুল।

অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই কর্র্নেল (অবঃ) তাহের, কর্নেল (অবঃ) আকবর হোসেন, মেজর (অবঃ) শাহজাহান ওমর, মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিন, মেজর (অবঃ) রহমতউল্লাহ, ক্যাপ্টেন (অবঃ) মাজেদ এবং এক্স পিএমএ ক্যাডেট মোস্তাক ও সরাফত এসে হাজির হল রেডিও বাংলাদেশে। ঘোষণা শুনেই এসেছে তারা বিপ্লবের প্রতি তাদের সমর্থন ও অভিনন্দন জানাতে। খবর এল পরিকল্পনা অনুযায়ী মেজর আমিন আহমদ চৌধুরী ইতিমধ্যেই সাভারে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পকে নিরস্ত্র করে তাদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। লেঃ কর্নেল রশিদ চলে গেছে জনাব খন্দোকার মোশতাক আহমদকে নিয়ে আসার জন্য আর আমি গেলাম মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও বাহিনী প্রধানদের নিয়ে আসতে। ঘটনাগুলো ঘটছিল অতি তরিৎ গতিতে।

ঢাকা সেনানিবাস তখন সম্পুর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে। খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে সারা ক্যান্টনমেন্টে। অতি প্রত্যুষে বিপ্লবের খবর পেয়ে জেনারেল শফিউল্লাহ ব্রিগেড কমান্ডার শাফায়াত জামিলকে ফোনে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিপ্লবকে প্রতিহত করার জন্য। কিন্তু ব্রিগেড কমান্ডার শাফায়াত জামিলের পক্ষে তখন কিছুই করা সম্ভব ছিল না। তিনি ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন বটে কিন্তু তার অধিনস্থ রেজিমেন্ট ও ব্যাটালিয়নগুলো সবই তখন সেনা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে, বৈপ্লবিক অভুত্থানের স্বপক্ষে।

শাফায়াত জামিলের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে জেনারেল শফিউল্লাহ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ (চীফ অফ জেনারেল ষ্টাফ) কে অনুরোধ জানান কিছু করার জন্য। ব্রিগেডিয়ার খালেদ জবাবে তাকে জানান, “Bangabandhu is dead. The army has revolted and whole army has celebrated.” এ পরিস্থিতিতে কারো কিছু করার নেই বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আমি জেনারেল শফিউল্লাহ, জেনারেল জিয়াউর রহমান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল খন্দোকার, নৌবাহিনী প্রধান এমএইচ খানকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলাম রেডিও বাংলাদেশে। রশিদ ফিরে এল জনাব খন্দোকার মোশতাক আহমেদকে নিয়ে। আমিন ফিরে এল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রক্ষীবাহিনী প্রধান কর্নেল আবুল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে।

বিডিআর প্রধানকেও ডেকে আনা হল। রাষ্ট্রপতি মোশতাক আহমদ রেডিও-তে জাতির প্রতি তার ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন। প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানরা সবাই রাষ্ট্রপ্রধান খন্দোকার মোশতাক আহমদের আনুগত্য প্রকাশ করে বৈপ্লবিক অভুত্থানের স্বপক্ষে ভাষণ দিলেন রেডিওতে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে আওয়ামী-বাকশালী নেতারা অনেকেই গ্রেফতার হন। ঐ দিনই জনাব খন্দোকার মোশতাক আহমদ এক অনাড়ম্ভর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেন।

অস্থায়ী বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেন এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। একই দিন উপ-রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন জনাব মাহ্‌মুদুল্লাহ। মন্ত্রী পরিষদও গঠিত হয় সেদিনই। মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ: বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী অধ্যাপক মোঃ ইউসুফ আলী ফনিভূষণ মজুমদার মোঃ সোহরাব হোসেন আব্দুল মান্নান মনরঞ্জন ধর আব্দুল মোমেন আসাদুজ্জামান খান ডঃ এ আর মল্লিক ডঃ মোজাফফর আহমদ চৌধুরী প্রতিমন্ত্রীঃ শাহ মোয়াজ্জম হোসেন দেওয়ান ফরিদ গাজী তাহের উদ্দিন ঠাকুর অধ্যাপক নূরুল ইসলাম নূরুল ইসলাম মঞ্জুর কে এম ওবায়দুর রহমান মোসলেম উদ্দিন খান রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ক্ষিতিশচন্দ্র মন্ডল সৈয়দ আলতাফ হোসেন মোমিন উদ্দিন আহমদ খন্দোকার মোশতাক সম্পর্কে আমাদের মূল্যায়ন সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল পরবর্তিকালে। বাকশাল সরকারের ১৮জন মন্ত্রীর ১০জন এবং ৯জন প্রতিমন্ত্রীর ৮জনই মোশতাক সরকারে যোগদান করেছিলেন ১৫ই আগষ্ট বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন জানিয়ে।

পাকিস্তান অভ্যুত্থানের প্রথম দিনই খন্দোকার মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। যে সৌদি আরব মুজিব সরকারকে দীর্ঘ সাড়ে চার বছর স্বীকৃতি দেয়া থেকে বিরত ছিল সেই সৌদি আরবও অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় দিনে মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি দান করে। গণচীন শুধু মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতিই দান করেনি; পিকিং বেতার ও ভয়েস অব আমেরিকা অভুত্থানের সমর্থনে একই সাথে হুশিঁয়ার বাণী প্রচার করে, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন একটি আভ্যন্তরীন ব্যাপার। সে দেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপার বিদেশী কোন প্রকার হস্তক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গণচীন সহ্য করবে না। এ ধরণের হস্তক্ষেপে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে বিধায় গণচীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরণের হস্তক্ষেপে নিশ্চুপ থাকবে না।

আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই তারা গ্রহণ করবে। ” শুধু হুশিঁয়ারীই নয়; গণচীনের সেনাবাহিনীকে ভারতের যে কোন আগ্রাসী হামলার মোকাবেলায় সীমান্ত অবস্থান জোরদার করে তোলার হুকুম দিয়েছিল গণচীনের সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গণচীনের হুশিঁয়ারী এবং দেশের জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সরকার ১৭ই আগষ্ট বাংলাদেশে আগ্রাসী সামরিক অভিযান চালাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেও সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয়; অভ্যুত্থানের ১২দিনের মাথায় জাপান, ইরান, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আরো ৩৯টা দেশের সাথে ভারতও মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে। Source: http://www.majordalimbangla.net/95.html


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।