অরণ্য
আমি এই গল্পটা ইন্টারনেটে পেয়েছি। ভাবলাম অনুবাদ করে সবার সাথে শেয়ার করি।
আমরা সবাই এই চাইনিজ গল্পটা থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
অনেক অনেক দিন আগে, চীন দেশে লিলি নামে এক মেয়ে বিয়ে করে বাস করতে লাগল তার স্বামী এবং শ্বাশুড়ীর সাথে।
খুব অল্পসময়েই লিলি দেখল যে তার শ্বাশুড়ীর সাথে বাস করাটা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।
শ্বাশুড়ীর অনেক ব্যাপারেই লিলির সাথে মতানৈক্য দেখা গেল এবং লিলিকে উনি অনেক ব্যাপারেই উপহাস করতেন।
পরিস্থিতি সবচাইতে খারাপ করল যে দিকটা সেটা হল, চাইনিজ পরম্পরা অনুয়ায়ী লিলিকে তার শ্বাশুড়ীকে সবসময়েই মাথা নুইয়ে সন্মান জানাতে হত এবং শ্বাশুড়ীর সমস্ত আদেশ মেনে নিতে হত।
অনেক দিন এবং সপ্তাহ পার হয়ে গেল কিন্তু তাদের বিবাদ না কমে দিন দিন বাড়তেই থাকল।
এ সমস্ত ঘটনা ক্রমেই লিলির স্বামীকে হতাশাগ্রস্থ করে তুলল।
লিলি কোনভাবেই তার শ্বাশুড়ীর এই খারাপ আচরন বরদাস্ত করতে পারছিলনা, এবং সে সিদ্ধান্ত নিল যে কিছু একটা করতেই হবে।
একদিন লিলি তার বাবার এক বন্ধু মি: হং এর কাছে গেল যিনি ঔষধ বিক্রি করতেন। লিলি তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল এবং তার কাছে কিছু বিষ চাইল যা দিয়ে তার শ্বাশুড়ীকে মেরে ফেলে এ সমস্ত সমস্যার সমাধান করা যায়।
মি: হং কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন," লিলি, আমি তোমাকে সাহায্য করব তোমার সমস্যার সমাধান করবার জন্য, কিন্তু আমি তোমাকে যা যা বলব তাই তোমাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। "
লিলি তার কথায় রাজী হল।
মি: হং পেছনের রুমে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এলেন একটা ঔষধের প্যাকেট নিয়ে।
তিনি লিলিকে বললেন," তোমার শ্বাশুড়ীকে মেরে ফেলবার জন্য এমন কোন বিষ দেয়া উচিৎ হবেনা যা তাৎক্ষনিক ভাবে তাকে মেরে ফেলবে। এতে লোকের সন্দেহ তোমার উপর পরবে।
তাই আমি তোমাকে এমন একটা ঔষধ দিচ্ছি যা তোমার শ্বাশুড়ীর শরীরে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া করবে। প্রতিদিন তার খাবারের সাথে এটা অল্প করে মিশিয়ে দিবে। এটার কার্যকারীতা শুরু হতে কয়েকমাস লেগে যেতে পারে, আর তাই তুমি তোমার শ্বাশুড়ীর সাথে এ কদিন ভাল ব্যবহার করতে থাক যাতে লোকের সন্দেহ কোনক্রমেই তোমার উপর না পরে।
কখনই তার সাথে তর্ক করবেনা, তার প্রতিটি ইচ্ছা পুরণ করবে এবং তার সাথে রানীর মতো আচরণ করবে। "
লিলি খুবই খুশী হল।
সে মি: হংকে ধন্যবাদ দিয়ে তারাতারি বাসায় ফিরে এল তার শ্বাশুরীকে হত্যা করবার কাজ শুরু করবার জন্য।
সপ্তাহ পার হয়ে মাস পার হয়ে গেল, লিলি তার ঔষধটা শ্বাশুড়ীকে নিয়ম করে খাওয়াতে লাগল।
সে সবার সন্দেহের উর্দ্ধে থাকবার জন্য মি: হং এর উপদেশও অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে লাগল।
সে তার বাজে রাগকে প্রশমিত করল, তার শ্বাশুড়ীর সমস্ত আদেশ মাথা পেতে পালন করত এবং তার সাথে আচরণ করত তার নিজের মায়ের মতই।
ছয়মাস পর পুরো ঘরের দৃশ্যপট পাল্টে গেল।
লিলি তার রাগকে এতটাই দমন করা শিখে গেল যে, সে আর তেমন করে উত্তেজিতই হতে পারত না।
তার সাথে তার শ্বাশুড়ীর এই ছয়মাসে কোন তর্কই বাধল না, আর এখন লিলি তার শ্বাশুড়ীর সাথে অনেক বেশী ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠল।
লিলির প্রতি তার শ্বাশুড়ীর আচরণেরও পরিবর্তন হল, এবং তিনি লিলিকে তার মেয়ের মতই ভালবাসতে শুরু করলেন।
তিনি তার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদেরকে বলতে লাগলেন যে, পৃথিবীতে যত বৌমা আছে তার মধ্যে লিলি হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট।
লিলি এবং তার শ্বাশুড়ী, মেয়ে এবং মা এর মতই বাস করতে লাগল।
সবকিছু দেখে লিলির স্বামীও খুব খুশি হয়ে উঠল।
একদিন লিলি আবারও মি: হং এর কাছে সাহায্যের জন্য আসল। সে মি: হংকে বলল, " প্রিয় মি: হং, আপনার বাকি ঔষধ আপনি ফিরিয়ে নিন এবং যতটুকু ক্ষতি আমার শ্বাশুড়ীর হয়েছে তা কাটাবার কোন ঔষধ দিন।
তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং এখন তাকে আমি আমার মায়ের মতই ভালবাসি। "
মি: হং হেসে সামান্য মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, " লিলি, ভয় পাবার কোন কারন নেই, আমি তোমাকে কোন বিষ দেইনি। যেটা দিয়েছিলাম সেটা ছিল একপ্রকার ভিটামিন। যা তোমার শ্বাশুড়ীর স্বাস্থ্য ভাল হতে সাহায্য করেছে।
একমাত্র বিষ ছিল তোমার মনে এবং তার প্রতি তোমার আচরণে, যেটা তুমি পুরোপুরি ধুয়ে ফেলেছ তাকে ভালবেসে।
"
আপনি কি এটা উপলব্ধি করতে পারছেন যে, আপনি যেমন ব্যবহার অন্যের সাথে করবেন সেই ব্যবহার অন্যেও আপনার সাথে করবে।
একজন জ্ঞানীলোক বলেছেন, " যে যাকে যতটা ভালবাসা দেবে, প্রতিদানে ততটা ভালবাসাই পাবে। "
আমরা সবাই যেন এই গল্পটা অন্যকে জানাতে পারি এবং এ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারি।
সুত্র: সংগৃহীত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।