আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

•|••|• রংধনু আভায় ভালবাসবো তোমায় •|••|•

-পাপ্পু টস করিস না কেন, হারার ভয়ে টস করতেছিস না তাই না ? এবারও হারবি মনে রাখিস !! [ পাপ্পু ...ক্লাস এইটে পড়া হালকা নাদুস-নুদুস টাইপের একটা ছেলে। সারাদিন শুধু খেলা আর খেলা। তাই বলে তার রেজাল্ট কিন্তু খারাপ না ! আর এই কারণেই বাসায় বকাও কম খায়। বাসার পাশেই মোহাম্মাদপুর কবর স্থান মাঠ কিন্তু মাঠ বাদ দিয়ে রাস্তায় এলাকার কিছু বড় ভাই, বন্ধুদের সাথে খেলা আর আড্ডা মারা ওর অন্যতম প্রধান কাজ । ] -আবীর ভাই এইটা একটা কুফা কয়েন, টস করলেই খালি হারি ।

ভাই আপনিও আছেন ,এতবার টসে জিতে ব্যাটিং করা লাগে, একবার ফিল্ডিং করলে কি হয় ? খালি ব্যাটিং আর ব্যাটিং ! একটা ম্যাচও আপনার জ্বালায় শান্তিমত জিততে পারি না । [ আবীর... খুব রিসেন্টলি অনার্স কমপ্লিট করল। বিয়ের জন্য বাসায় পাত্রী দেখা শুরু হইছে কিন্তু এখন পর্যন্ত তার একটাও মেয়ে ভাল লাগে নাই। প্রায় পাড়ার ছেলেপুলেদের সাথে রাস্তায় ক্রিকেট–ফুটবল খেলে । ] -টসে জিতেলেই কি আর হারলেই কি ? ভালমত খেল তাইলেই তো জিততে পারবি , আর তোদের টিমে তিনটা বোলার।

অভ্র’র এর কথা তো বাদ দিলাম , ও হাতে বেথা না পাইলে তো আরও একটা বোলার বাড়ত । রিয়াদ ,শফিক তো ভাল ব্যাটিং পারে । ঠিক ভাবে খেল, ইনশাহ্‌ আল্লাহ জিতে যাবি । [ অভ্র...অনার্স প্রায় শেষ... ট্রিপল –ই’র স্টুডেন্ট ,এআইউবি (AIUB) তে পড়ে। পাপ্পুর সাথে খুব ভাল খাতির ।

খাতির দেখলে মনে হবে আপন দুই ভাই। ] -হুম আবীর ভাই বলছে আপনারে !! কনুইয়ের বেথায় মরতেছি । আর আপনি বলেন বোলিং !! আপনাদের তো একগাদা ভালো প্লেয়ার । সবাই ভালো ব্যাটিং আর ফিল্ডিং পারে , পুরাই ইন্ডিয়া ! যাইহোক ব্যাটিং-এ নামেন আপনারা । ঐ শফিক যা বলিং কর, আমি কিপিং করতেছি ।

খেলা শুরু হতেই পাপ্পু শফিকের দিকে একটা শয়তানী হাসি দিয়ে- শফিক তুই আজকেও ফার্স্ট বলে ছয় খাবি !! ‘ হ , তোরে কইছে পাপ্পু , সব দিন কি সব হয় ! ’ শুরুতেই শফিক একটা বাউন্সি বল করল আর যেই আবীর মারার জন্য ব্যাট চালাল অমনি ব্যাটের কানায় লেগে সোজা পিছনের বাসার ৩ তলার বারান্দায় ... ‘ কিরে পাপ্পু কইছিলি না ফার্স্ট বলেই ছয় !! কি ছয় হইছে ?? যা এখন বল নিয়ে আয় ’। - ছয়-ই তো ! উল্টা দিকে ছয় হইছে । যে বল করব সে বল আনবো , যা বেটা বল নিয়া আয় ! ওদের ঝগড়া দেখে আবীর কিছুটা এগিয়ে এসে বলল, ‘ কিরে তোরা কি ঝগড়া করবি নাকি বল আনবি ?? যারা ফিল্ডিং তারাই তো বল আনে, যা পাপ্পু বলটা নিয়া আয়। আরে বল তো তোদের বাসার তিন তলার ফ্লাটে গেছে ! ’ -আবীর ভাই শফিকরে যাইতে কন না !? ঐ তিন তলায় গত মাসে নতুন ভাড়াটিয়া আসছে । কিছু হইলে তো সব ঝাড়ি খামু আমি ।

‘ আরে চিন্তা করিস না , লক্ষ্মী ভাই যা...’ (আদরের সহিত...) -ধুর মিয়া !! আমি কি মাইয়া যে আমারে লক্ষ্মী ডাকেন ? ঐ পাশ থেকে শফিক বলে উঠল , ‘ এহ ওরে আদর কইরা লক্ষ্মী ডাকলেও দোষ, শালা তাইলে কি তোরে লক্ষণ ডাকবো ?? ’ -শফিককা বেশি কথা কইলে হারামি ঠুয়া খাবি কইলাম !! , নিজেরা একেকজন বল মাইরা এই চিপায় সেই চিপায়, ছাদে, বারান্দায় ফেলবা আর আনতে খালি আমারে পাঠাইবা । এখন কি আবার তিন তলায় উঠতে মন চায় !! তিন তলায় এসে বেল দিতেই ,‘ এই পিচ্চি কি চাই ?? ’ -জি !! আপনাদের বারান্দায় আমাদের খেলার বল পরছে আর আমাকে আপনার কোন দিক থেকে পিচ্চি মনে হয় ? ’ ‘ বারান্দায় বল পরছে ?! আচ্ছা দিতেছি ’ , এই বলে মেয়েটা ভিতরে গেল...কিছুক্ষন পর... “ ও আফা গো আফনের কফি খাওনের মগ বল লাগি ফাডি গেছে গো... !! ” কান্না–কাটির শব্দ শুনে পাপ্পু মনে মনে বলতে লাগল ,ইয়া আল্লাহ মরছে কে ? আবার দেখি কান্দে!! সিঁড়ি দিয়ে নিচে এসেই পাপ্পু চিল্লায় চিল্লায় বলতে লাগল- আবীর ভাই কাম তো একটা হইছে !! আবীর অবাক হয়ে পাপ্পুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘ কিরে কি হইছে আর বল কই ?? ’ -বারান্দায় মনে হয় কফির মগ ছিল আর বল লাইগা সেইটা ভাঙছে । ঐ বাসার কাজের মেয়ে যেই চিল্লানী শুরু করছে । চিল্লানী শুনে আমি ভয়ের চোটে দিছি দৌড় । আবীর অভ্রকে বলল ,‘ অভ্র পাপ্পুর সাথে যা তো, গিয়ে দেখ কি হইছে ?? ঝামেলা হইলে ডাক দিস ।

’ ফ্লাটের কাছে আসতেই পাপ্পু ফিসফিসিয়ে বলে উঠল-অভ্র ভাইয়া বাসার গেট তো খোলা !! আমি শিওর এইটা কোন মাস্টার প্ল্যানিং । তুমি যাও, আমি সিঁড়ির কাছেই আছি । অভ্র গেটের কাছে যেতেই দেখে বলটা ফ্লোরে রাখা আর গেটটা আধো খোলা অবস্থায় চাপানো । অভ্র গেটের কাছে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল ,‘ হ্যালো !! কেউ কি আছেন ?? হ্যালো !! ’ সিঁড়ির কোণায় দাঁড়িয়ে পাপ্পু ফিসফিসিয়ে আবার বলে উঠল- আরে অভ্র ভাইয়া দেখ না কোন সারা শব্দ নাই, যাও চুপিচুপি হামাগুড়ি দিয়ে বলটা নিয়া আসো । অভ্র যেই না হামাগুড়ি দিয়ে বলটা আনতে গেটের ভিতরে ঢুকল ঠিক তখনি আধো চাপানো গেটের পাশ থেকে একটা নূপুর পড়া পা বেড়িয়ে এসে ... -এই চোর !! অভ্র মাথা তুলতেই কিছুটা অবাক হয়ে দেখে ১৯-২০ একটা বছরের একটা পরিচিত মেয়ের মুখ আর মেয়েটা চোর বলে ওর দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে যেন আসলেই ও একটা ছিঁচকে চোর ।

কেউ ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে অভ্র সেটা নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না আবার অবিশ্বাসও করতে পারছে না । বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মায়াজাল থেকে নিজেকে কোন মতে সামলে নিয়ে নরম গলায় বলল, ‘ আমি চোর না !!! বল...!! আমাদের খেলার বল নিতে এসেছি । ’ অভ্রর গলার নরম ভাব দেখে মেয়েটা ঝারি দিয়েই- হ্যাঁ , জানি তো বল ! তা বল বাসায় আসে কিভাবে ,আর চুপি চুপি হামাগুড়ি দিয়ে চোরের মত এইভাবে কেউ বল নেয় ?? অভ্র মেয়েটার ঝারি খেয়ে রীতিমত আমতো আমতো করে বলতে লাগল, ‘ আমরা আসলে রাস্তায় খেলছিলাম হঠাৎ ব্যাটের কানায় লেগে আপনাদের বারান্দায় চলে আসছে । হুট করে কাজের মেয়েটা এসেই, ‘ আপা এই ছেম্রাটা একটু আগে আসে নাই , এইটা আরেকটা !! ’ -এই মায়া যা দড়ি নিয়ে আয় !! ‘ আরে...দঁড়ি আনবেন কেন, আমি কি চোর নাকি ? আবার বলতেছে এইটা ... দেখুন আমি এইটা না আমি মানুষ । ’ আপা এই যে দড়ি !! -মায়া এইটারে ভালো করে বাঁধ , যেন ছুটতে না পারে ।

অভ্র দড়ি হাতে কাজের মেয়েকে ওর দিকে আসতে দেখে, ‘ ঐ পাপ্পু আবীর ভাইরে ডাক দে....!!’ অভ্রর মুখে পাপ্পুর নাম শুনে কাজের মেয়েটা বলে উঠল , ‘ আপা ঐ পাপ্পু নামের ছেম্রাটাই প্রথমে আসছিল । ’ -আবার পাপ্পুরে ডাকে !! মায়া ওরে ভালো করে বাঁধ ,আগে কফির মগ ফেরত দেবে তারপর কথা... ‘ আরে আমাকে বাঁধতেছেন কেন ?? আহ্‌ লাগছে তো, আমার এই হাতে বেথা ! ’ পাপ্পু হাঁপাতে হাঁপাতে নিচে এসে বলতে লাগল, আবীর ভাই অবস্থা আরও খুব খারাপ। উপরে এক সুনামি আপু আর তার কাজের মেয়ে মিলে অভ্র ভাইরে দড়ি দিয়া বাঁধতেছে । অভ্রকে বাঁধার কথা শুনে সবাই ঐ ফ্লাটের গেটের সামনে হাজির । গেটের কাছে একগাদা ছেলে দেখে কাজের মেয়েটা জিজ্ঞাসা করল, কি ব্যাপার আপনারা কারা ? সবাই একসাথে বলে উঠল- জি ,বল ।

বলের কথা শুনেই কাজের মেয়েটা জোরে জোরে বলতে লাগল ,আপা সব বান্দর পোলাগুলা বল নিতে আইছে !! তখন আবীর কাজের মেয়েটাকে একটা ঝাড়ি দিয়ে , এই মেয়ে বান্দর মানে কি ?? আর অভ্র কে এইভাবে বেঁধে রাখছ কেন , ছাড়ো... ?? ঝাড়ি খেয়ে কাজের মেয়েটা চিল্লাতে লাগল আর চিল্লচিল্লি শুনে ভিতর থেকে মেয়েটা তড়িৎ বেগে এসেই , ‘ হ্যালো ! হ্যালো ! কি চাই ? ’ -জি বল । আর ওকে প্লীজ ছেড়ে দেন, কত ভালো ছেলে আর আপনারা কিনা বেঁধে রাখছেন ?? ’ রুমের ভিতর থেকে অভ্র বলে উঠল , ‘ আবীর ভাই আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচান । ’ মেয়েটা অভ্রর দিকে তাকিয়ে, ‘ এই চুপ ! ’ পরক্ষনেই আবীরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে , ‘ কফির মগ ভাঙছেন সেটা ফেরত দিয়ে যাবেন তারপর ওকে ছাড়ব আর বল দিয়ে দিব । ’ আবীর অবস্থা খারাপ দেখে মুখে একটা হাসি নিয়ে-এখন তো পকেটে টাকা নাই, পরে দিলে হবে না ?? ‘ দেখেন বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না !! আর ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিলে কাজ হবে না । পকেটে টাকা থাকে না এটা কেমন কথা !? টাকা না থাকলে কানে ধরেন ! ’ নীলার কথা শুনে আবীরও বেকুবের মত কানে ধরল ।

এইটা দেখে কাজের মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল , ‘ দেখতে পারতেছেন না আপা লোকটা কি লম্বা ?? বেকুব তো হইবই । বেকুব না হইলে কেউ কানে ধরে !! ’ ‘ মায়া চুপ !! যা বলটা নিয়ে আয় আর ঐ গাধাকে ছাড় । আমি রুমে গেলাম, রাস্তায় নেক্সট টাইম ক্রিকেট খেললে আর বল লেগে কিছু ভাঙলে সবগুলারে খুন করব । ’ ভাইজান এই যে বাধন খুইলা দিলাম, ‘ যান ভাগেন !! ’ -এত টাইট করে কেউ বাঁধে নাকি ?? কি ডাকাত মেয়েরে বাবা !! .................................................................................. বাসার নিচে এসে আবীর অভ্রকে বলল, কিরে ঐ মেয়েটা কি তোরে মাইর-টাইর দিছে নাকি ?? -মারবে কেন ? আমারে দড়ি দিয়া চোরের মত বাঁধছে । শেষমেশ আপনাদের জন্য আমার এই অবস্থা ।

অভ্র মন খারাপ করিস না । দেখ যা হয় ভালোর জন্যই তো হয় । তবে যাই বলিস মেয়েটা কিন্তু দেখতে ভালো কিউট । -হুম্ম কিউট না ছাই !! বাংলা সিনেমার দজ্জাল মহিলা ভিলেন রিনা খানের মত । খালি ফোঁসফোঁস করে ।

মুচকি হাসি দিয়ে আবীর বলল, তা অভ্র মেয়েটার নাম জানিস নাকি ?? -আমি জানবো ক্যামনে ? দেখা যেত নাম জিজ্ঞাসা করতেই আমাকে ফাঁসি দিয়া ফ্যানের সাথে ঝুলাই রাখছে ! তুই যে কি বলিস না অভ্র ! মেয়েটা মনে হয় মোটেও এমন না ! -এহ্‌ কি দরদ !! শুনেন নাই সে কি বলছে ?? বলছে ,আবার বল গেলে খুন করবে। আমি আর ক্রিকেট খেলার মধ্যে নাই । অভ্রর কথায় আবীর হেসে বলল , ‘ ধুর পাগল ! শোন এখন থেকে আমরা সবাই রাস্তায় ফুটবল খেলব । ক্রিকেট খেলতে নিষেধ করছে ফুটবল খেলতে তো আর না করে নাই ! ’ আবীরের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগল । পাপ্পু আবীর আর অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ ভাই তাইলে আজকে সবাই বাসায় চলে যাই ।

কালকে থেকে মিশন ফুটবল । কি বলেন...?? ’ ................................................................................. ‘ পেনাল্টি ! পেনাল্টি !! ঐ শফিক তোর হাতে বল লাগছে । আবীর ভাই পেনাল্টি হইছে !’ আবীর অবাক হয়ে পাপ্পুর দিকে তাকিয়ে- কিরে তুই মিথ্যা বলস ক্যান ?? ’ ‘ আরে আবীর ভাই আপনি শফিকরে জিগান ? ওর হাতে বল লাগছে । ঐ শফিক তোর হাতে বল লাগছে না ?? ’ শফিক আবীরের মুখের দিকে তাকিয়ে , ‘হ্যাঁ , ভাই হাতে বল লাগছে কিন্তু ক্যামনে যে লাগল!! ’ পাপ্পু পেনাল্টিতে গোল দেবার সাথে সাথেই অভ্র, পাপ্পু ,নিহাল আর ওদের টিমের সবাই একসাথেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিল । আর ঠিক তখনি তিনতলার বারান্দায় মেয়েটা বই হাতে এসেই- “এই ফাজিল পোলাপাইনদের জ্বালায় শান্তিমত বিকাল বেলা একটু পড়াও যায় না ।

কোথা থেকে যে এরা আসে ? এই সব চুপ !!! ” পাপ্পু আর রিয়াদ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আরও জোরে চিল্লাচিল্লি করতে লাগল । আরও বেশি চিল্লাচিল্লি শুনে মেয়েটা রুমের ভিতর থেকে পানি ভর্তি একটা জগ এনে সব পানি নিচে ছুঁড়ে মারল । আর সেই পানি গিয়ে পড়ল বারান্দার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা আবীরেরর মাথায় । পাপ্পু এইবার খেপে গিয়ে- এই যে মিস সুনামি ! আচ্ছা আপনার সমস্যা কি ? কানে তুলা দিয়ে পড়তে পারেন না ? আবার পানি ছুইরা মারেন ??’ মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আমি সুনামি !? ধইরা একটা থাপ্পড় মারব । পিচ্চির মুখে আবার বড় বড় কথা ! ’ পাপ্পু এবার আবীরের দিকে তাকিয়ে বলল- দেখছেন ভাই উনার কত বড় সাহস !! বলে চড় মারবে ।

মিস সুনামি জানেন এটা কাদের বাসা ? আমাদের, আব্বাকে বললে কিন্তু খবর আছে আপনার !! কাজের মেয়েটা পাশে এসে বলল,’ আপা এই পিচ্চি বাড়ি ওয়ালার ছেলে ! আর কথা বাড়ায়েন না , পরে আম্মা শুনলে বকা দিবে আপনাকে । চলেন... ’ পাপ্পু আবীরকে বলল- ভাই দেখছেন আপনার কিউট মাইয়া কত বড় বজ্জাত ?? আপনারে তো ভিজাইছেই আবার আমারে বলে থাপ্পড় মারবে !! তার জ্বালায় শান্তিমত ১০ মিনিটও খেলতে পারলাম না । পাপ্পু এবার অভ্রর দিকে তাকিয়ে- আর উনি তো দড়ির ভয়ে কোন কথাই কয় নাই ?? যাইহোক ফুটবল খেলা বাদ । আমরা কালকে থেকে বোমপাট খেলবো । বল মাইরা সুনামির নাক ফাটাইয়া দিমু ।

ওর কথ শুনে আবীর হাসতে লাগল আর অভ্র পাপ্পুর সামনে গিয়ে , ‘ ঐ গাধা চুপ ! নাক ফাটাইলে বিশাল গাঞ্জাম লাগবে । আমি আর কোন খেলায় নাই । আমি গেলাম ,সন্ধ্যায় ছাদে আসিস... ................................................................................. অভ্রর সবচেয়ে শখের জিনিস হল ওর ট্রেকার লাগানো টেলিস্কোপ। যেটা দিয়ে সে বৃহস্পতির চাঁদ ,শনির বলয় দেখে । তবে সবচেয়ে বেশি মজা পায় বিস্ময়কর এন্ড্রোমিডা নক্ষত্রপুঞ্জ দেখতে ।

নক্ষত্রপুঞ্জের স্পাইরালে শত শত নক্ষত্র ঝলমল করে । অভ্র এই এন্ড্রোমিডার প্রেমে পড়ে জাফর ইকবাল সারের “ টুকুনজিল ” বইটা পড়ে । এরপরই বাবাকে বলে অ্যামেরিকা থেকে টেলিস্কোপটা আনায় । খুব ভালবাসে এই যন্ত্রটাকে , যখনই মন খারাপ থাকে তখন টেলিস্কোপ না হয় বাইনোকুলার দিয়ে আকাশ দেখে। ওর আরেকটা শখের জিনিস হল রংধনু দেখা আর তার ছবি তোলা।

দারুন ছবি আঁকে ছেলেটা । অভ্রের মা ওর জন্মের সময় মারা যান, তাই বাবার অনেক আদরের ছেলে। অভ্র যখন টেলিস্কোপ দিয়ে নক্ষত্র দেখে তখন পাপ্পু এসে প্রায় বাইনোকুলার দিয়ে আসে পাশে উকি মারে । যদিও এটা অনেক খারাপ কাজ... আর এই কথাটা অভ্র পাপ্পুকে বারবার বলে তবুও পাপ্পু শোনে না ! পাপ্পু ছাদে এসেই অভ্রকে বলল- ভাইয়া কি আজকেও শুরু করছ এন্ড্রোমিডা দেখা ? এক জিনিস এত দেখে কি হবে ? আমার মত বাইনোকুলার দিয়ে আশেপাশে দেখ কাজে দিবে । তোমাদের বিল্ডিং থেকে আশেপাশে দেখে খুব মজা ।

অভ্র ভাইয়া! অভ্র ভাইয়া !! একটা জিনিস ! আবার কি ?? -আরে আমাদের ছাঁদে সুনামি আপু !! আমি জানি । আর শোন ওর নাম সুনামি না ! ওর নাম নীলা । নীলা খন্দকার । -তুমি আপুকে চিনো ?? পাপ্পুর কৌতূহল ভরা চোখ দেখে অভ্র ওকে বলল, হুম চিনি । সেটা আরেকদিন শুনিস ।

পরের দিন বিকালে পাপ্পু এসেই সবাইকে বলতে লাগল- একটা সুখবর আছে । গতকাল রাতে সুনামি মানে নীলা আপু আমাদের বাসায় এসে আমাকে সরি বলছে । মেয়েটার নাম নীলা শুনে আবীর খানিকটা এগিয়ে এসে বলল, ‘ নীলা । বাহ্‌ সুন্দর নাম তো ! ’ -হুম আবীর ভাই আপুটা শুধু কিউট না মনে হয় একটু সুন্দরীও । গতকাল হালকা সেজে আসছিল আমাদের বাসায় ।

দেখতে ভালোই লাগছিল । তার কিছুক্ষন পরই সবাই মিলে রাস্তায় বোমপাট খেলা খেলতে লাগল । একেকটা ঘেমে অবস্থা খারাপ । নিহাল আর শফিককে পাপ্পু আর আবীর মিলে বল মেরে অবস্থা খারাপ করে ফেলছে । যদিও বলটার কয়েক জায়গায় মোটা সুই দিয়ে অনেক গুলো ছিদ্র করা, যাতে খুব হালকা বেথা লাগে ।

এইটা অবশ্য অভ্রর বুদ্ধি ! পাপ্পুদের গেটের সামনে থেকে আবীর অভ্রর দিকে বলটা ছুঁড়ে মারল আর অভ্র সেটা ক্যাচ ধরে যেইনা রিটার্ন ছুঁড়ে মারবে ঠিক তখনি গেট দিয়ে বের হচ্ছিল নীলা । নীলাকে দেখে পাপ্পু ‘নীলা আপা ’ বলতে না বলতেই বলটা গিয়ে পরল ঠিক নীলার পার্সের উপর “ আউউ... !! এই ...এভাবে কেউ বল মারে ?? ” হঠাৎ করে নীলার পার্সে বল লাগছে এইটা দেখে সবাই দে দৌড় । অভ্র উল্টা দিকে ঘুরে যেই হাঁটা শুরু করল তখনি, ‘ এই দাঁড়ান ! আপনার সমস্যা কি ? সেদিন বাসায় দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখছিলাম বলে আপনি আমার গায়ে বল মারবেন ? আমার মুখে বল লাগলে এখন কি হত !! আচ্ছা আপনাদের ইনটেনশনটা কি ? একটা কাজ করেন রাস্তা থেকে ইট নিয়ে সবাই মিলে আমার মাথা ফাটিয়ে দেন । ’ -সরি সরি !! আমি দেখি নি ! আসলে বলটা রিটার্ন থ্রো করতে গিয়েই আপনার পার্সে লাগছে । ‘ তাহলে আপনারা মাঠ বাদ দিয়ে রাস্তায় খেলেন কেন ? বাচ্চাদের মত রাস্তায় খেলেন !! আল্লাহ জানে আমার মোবাইলটাই ভাঙছে কিনা !! ’ নীলা কথাটা শেষ করেই যেই পার্সে হাত দিল ওর চোখ তো আকাশে ।

‘ ইস্‌ আমার মিরর !! এখন আমি মিরর পাবো কই ?? আপনাকে না আমার খুন করতে ইচ্ছা করতেছে .. ’ ( অভ্রর দিকে দুই হাত দিয়ে গলা টিপে ধরার চেষ্টা ) -আরে আরে... !! আমি কি ইচ্ছা করে করছি নাকি ? খেলতে গিয়ে লেগে গেছে , অভ্রর এমন উত্তর শুনে নীল বলতে লাগল , ‘ হ্যাঁ । খেলতে গেলেই শুধু আমার কফির মগ ভাঙ্গে , মিরর ভাঙ্গে !! ’ ভাঙ্গা মিররটা অভ্রর হাতে দিয়ে নীলা বলল , ‘ এখন থেকে এটা দিয়ে আপনি আপনার বদ সুরতটা দেইখেন ! ’ অভ্রর সাথে নীলার ঝগড়া দেখে আবীর মাঝখান দিয়ে রোমিও স্টাইলে এসেই , নীলা আমি এক্সট্রিমলি সরি । অভ্র আসলে ইচ্ছা করে মারে নাই । আমাকে মারতে গিয়েই তোমার গায়ে বলটা লাগছে । নীলা আবীরের পোলাইড কথা শুনে একটু নরম হয়ে বলল , ‘ হুম্ম বুঝলাম ।

দয়া করে আর রাস্তায় খেলবেন না । ’ নীলা চলে যেতেই অভ্র আবীরকে বলল-ভাই হঠাৎ সব দোষ আপনি আপনার ঘাড়ে নিলেন কেন ? আর এত নরম গলায় কথা বললেন যে ?? কি যে বলিস না !! আরে দেখতেছিলাম তোরে ঝারতেছে... তাই আর কি !! কেন এর আগেও তো নরম গলায় বলছি ঐ যে যখন তোরে বাঁধছিল। -না মনে তো হয় সেটা না । এর আগেও তো নীলা আমাদের ঝাড়ছে তখন তো কথা বলেন নাই । সেদিন আপনার মাথায় পানি ফেলল তখন মুখ দিয়ে একটা শব্দও করেন নাই।

’ আরে ধুর বাদ দে । চল চা খেয়ে আসি... আজকে রাতের আকাশটা খুব পরিষ্কার । এন্ড্রোমিডা দেখার জন্য পারফেক্ট , কিন্তু টেলিস্কোপ নিয়ে যে এন্ড্রোমিডার প্রেমে মত্ত হবে সে এখন বাইনোকুলার হাতে পাপ্পুদের ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে । পাপ্পুদের ছাঁদে নীলা হেডফোন লাগিয়ে হাঁটছে । হালকা বাতাসে তার খোলা চুল উড়ছে ।

প্রতিদিনের মত সেই সময় পাপ্পু অভ্রদের ছাঁদে উঠল,ছাঁদে অভ্রের রুমে গিয়ে দেখে রুম খালি । রুম থেকে বের হয়ে অন্য পাশে উকি দিতেই পেল অভ্রকে। পাপ্পু তো পুরাই অবাক ! বাইনোকুলার নিয়ে অভ্র ওদের বাসার দিকে তাকিয়ে । পাপ্পু ধীরে ধীরে অভ্রর পিছনে গিয়ে- ভাইয়া আমাদের ছাঁদে কি দেখ ?? -নীলাকে । ‘ সুনামিকে দেখার কি হল ?? ’ -পাপ্পু , তুই তো জানিস না ! আমি নীলাকে প্রায় তিন- চার বছর ধরে চিনি ।

মানে ওকে প্রথম বার দেখেছিলাম আমার চাচাতো বোনের বিয়েতে। পরে চাচাতো বোনের কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম নীলা চাচার বন্ধু খন্দকার আঙ্কেলের মেয়ে । বিয়ের পর আপু বিদেশে চলে যায় ভাইয়ার সাথে । তারপরও অনেক কষ্ট করে বের করেছিলাম নীলার ঠিকানা । ও তখন ধানমণ্ডি কামরুননেসার এস.এস.সি-র স্টুডেন্ট ছিল।

অনেকদিন ওর স্কুলের সামনে গিয়েছি ,লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছি ওকে। ভুল করেও একবারের জন্যও সামনে যাই নি। পরের বছরের প্রথম দিকে আমার পরীক্ষার জন্য কিছুদিন ওর স্কুলের সামনে যাওয়া বন্ধ করেছিলাম । পরীক্ষার পরে যখন গেলাম দেখি সব শেষ । ওর বাবা সরকারী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন ।

চাকুরী করতেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে । চাচার কাছ থেকে শুনেছিলাম নীলার এক্সম এর পর ঐ বছরই তাকে ঢাকা থেকে বরিশালে ট্রান্সফার করা হয় । আর কোন খোঁজ নিতে পারিনি ... আর দেখ সেই মেয়ে কিনা এতদিন পর আমার এলাকায় !!! এভাবে দেখা হবে কোন দিনও ভাবি নি । ‘ তার মানে তুমি আপুকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতা ?? আগে কেন বলনি ? এইবার বুঝতে পারছি, তুমি নীলা আপুকে দেখেই চিনতে পারছিলা । এ জন্যই তুমি আবীর ভাইকে আপুর নাম না বলে এড়িয়ে গেছিলা ।

এই চান্স তারাতারি আপুকে প্রপোজ করে ফেল । ’ -ধুর গাধা ! বললেই কি হল নাকি ! ও আমাকে সহ্যই করতে পারে না আর এখন যদি বলি আমি তাকে পছন্দ করি তাহলে তো আমাকে খুন করবে । যে রাগী মেয়ে !! ‘ তাইলে বইসা বইসা তারা গুণ । যখন অন্য কেউ এন্ট্রি মারবে তখন দেবদাস হইয়া সুখ টানবা আর এন্ড্রোমিডা দেখবা । ’ -তাইলে করবটা কি ? ‘ এক কাজ কর আপুর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও ।

’ -হুম্ম তুই যেমন গাধা তোর বুদ্ধিও তেমনি গাধা । আব্বাকে এখন বিয়ের কথা বললে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে। ‘ ধুর ! আমার মাথায়ও কোন বুদ্ধি আসতেছে না ! নিজে বুদ্ধি বের কর। এই যে আম্মা আমাকে আবার ফোন দিতেছে , আমি এখন যাই । পরের দিন সন্ধ্যা হবার আগেই অভ্র পাপ্পুকে ফোন দিল ছাঁদে আসার জন্য ।

পাপ্পু আসতেই অভ্র একটা নীল রঙের খাম দিয়ে বলল- এই খামটা তুই নীলাদের গেটের সামনে রেখে আসবি । ও এখন ছাঁদে, নিচে নামলেই দেখতে পারবে । খুলে দেখবি না কিন্তু... !?? ‘ নীল খামের চিঠি ! ফোন,এস.এম.এস-র যুগে এখন চিঠি কেউ দেয় ? নটে ব্যাড রোম্যান্টিক আইডিয়া । ’ নীলা ছাদ থেকে নামতেই দেখে চুইঙ্গাম দিয়ে ওদের গেটের সাথে একটা নীল খাম লাগানো । খামটা খুলতেই সুন্দর একটা স্মেল এর সাথে ভিতরে হালকা বেগুনী রঙের একটা চিঠি পেল... “ প্রিয় নীলা , তোমার সাথে আমার এতদিন পর আবার দেখা হবে ভাবতেই পারিনি ।

হয়তো এই চিঠিটা পাবার পর ভাববে আমি কে আর কেনই বা তোমায় চিঠি লিখলাম ? পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করা। নিজেকে নিজে চেনাই তো কঠিন, আবার সংজ্ঞায়িত করা !!?? তারপরও নিজের সম্পর্কে বলতে গেলে... আমি অতীতকে নিয়ে নস্টালজিক হতে ভালোবাসি, আর ভালোবাসি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেও। আমি অনেক অগোছালো আর পাগল স্বভাবের । যখন যা মন চায় তাই করি। যখন প্রচণ্ড মন খারাপ থাকে তখন মহাকাশের রানী এন্ড্রোমিডার প্রেমে পড়তে ভালো লাগে ।

ভালোবাসি আলো-আঁধারের খেলা তাই প্রিয় সাদাকালো । খোলা মাঠের মাঝে কিংবা কোন এক নদীর ধারে বসে রাতের আকাশের সাদা রঙের বিন্দুগুলো দেখতে ভালো লাগে। ওরা যে আমারই মত,আঁধারে জেগে ওঠে আর আলোতে হারায় । ওরা আমার গল্প শোনে, আমার ভালোলাগা-ভালোবাসা আর একাকিত্তের গল্প। ভাল লাগে নীল আকাশ আর সাদা মেঘ, মানে শরৎ।

আমি বৃষ্টিকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসি। আকাশে সাদা মেঘ ভেসে যাওয়া খুব ভালো লাগে, তবে ঐ মেঘগুলো যখন কালো হয়ে আকাশ ছেয়ে যায় তখন আর নিজেকে ঘরে ধরে রাখতে পারি না। ছুটে যাই,আমাকে বৃষ্টির ছোঁয়া যে পেতেই হবে। ইচ্ছে করে কারো সাথে খালি পায়ে বৃষ্টিতে ভিজতে আর তাকে প্রিয় কাঠ গোলাপ দিতে। ভালোবাসি বৃষ্টি শেষে মেঘযুক্ত রোদেলা আকাশের রংধনু দেখতে ।

কি মনে হয় আমি একটু স্বপ্নবিলাসী ? হ্যাঁ ,আমি এক সপ্নবিলাসী রাজপুত্র। যার স্বপ্নরা কোনদিন বিলাসীতা করার সুযোগ পাবে না। ইতি, তোমার নীল আকাশের সাদা মেঘ । ” নীলা চিঠিটা পড়ে পুরাই অবাক ! ‘ কে এই নীল আকাশের সাদা মেঘ ? আমার নাম জানে কিভাবে আর তার সাথে আমার আবার দেখা-ই বা হল কখন ? কিরে মায়া ! বাসায় কেউ কি আসছিল ? ’ -না আপা , কেউ আসে নাই । ক্যান কি হইছে ? ‘ না কিছু হয় নাই ।

তুই গেট লাগিয়ে দিয়ে আয়...’ তিন-চার দিন পর অভ্র পাপ্পুকে আরেকটা হালকা বেগুনী রঙের খাম দিয়ে বলল -এটাও আজকে দিয়ে আসবি... ‘ এটার মধ্যে কি রঙের চিঠি ? এর আগেরটা তো বেগুনী রঙের ছিল । ’ -পাপ্পু তোকে না খুলতে নিষেধ করছিলাম, তাও তুই দেখছিস কেন ? ‘ আরে আমি তো চিঠি পড়ি নাই , জাস্ট দেখছি ভিতরে কি । এই খামের মধ্যে কি নীল রঙের চিঠি ? ’ -হ্যাঁ, বুঝলি কিভাবে ? ‘ আমি তোমার ছোট ভাই না , বুঝি বুঝি !! রংধনু তোমার অনেক প্রিয় ,তাই তুমি নীলা আপাকে .. .................................................................................. হঠাৎ করে নীলাদের বাসায় কলিং বেল বেজে উঠল । কাজের মেয়েটা গেট খুলতেই দেখে অপর পাশের দেয়ালে একটা হালকা বেগুনী রঙের খাম লাগানো। খামটা নিয়ে এসেই দিল নীলার হাতে।

নীলা খামটা খুলতেই পেল একটা নীল রঙের চিঠি... “ নীলা , মনে হয় নীল রং তোমার ভীষন প্রিয় তাই সবকিছু নীলে মিলিয়ে দিও । কোন এক অজানা হাওয়া নিয়েছে এ মন দুহাতে তুলে স্বপ্নরা তাই আজ ভাসছে দুলে দুলে মনের পথগুলো যে তোমারই সনে, সেথায় যাচ্ছি আমি আপন পথ ভূলে ভূলে... ইতি, তোমার নীল আকাশের সাদা মেঘ । ” ‘ মায়া ব্যাপার কি এর আগেও একটা বেগুনী রঙের চিঠি পাইছি ,আজ আবার নীল রঙের ! কাহিনি বুঝতেছি না ! তোরে এই চিঠি কে দিছে ? ’ -আপা কেউ ছিল না । বেল শুনে গেট খুললাম ,দেখি দেয়ালে একটা খাম লাগান । তখন কাউকেই দেখি নাই ! .................................................................................. পরের দিন রাস্তায় অভ্র পাপ্পুকে দেখে বলল- কিরে কি খবর ? চিঠিগুলো কি ঠিকমত দিতেছিস ? ‘ আরে ভাইয়া বইল না ।

বাসায় আব্বার কাছে নীলা আপার বাবা বিচার দিছে । বলছে কারা যেন তার মেয়েকে বিভিন্ন কালারের চিঠি পাঠায় । আব্বা তাই দাড়োয়ানকে বকা দিছে, ঐটাত কাজ বাদ দিয়া খালি ঘুমায় । ’ -তোরে কেউ কিছু বলে নাই তো আবার ? ‘ আরে নাহ্‌ ! ঘরের চোর চুরি করলে কেউ ধরতে পারে ? ও ভালোকথা কালকে না নীল জোছনা ? আমি কিন্তু তোমার সাথে দেখব। দারুন মজা হবে ।

’ -হুম্ম কালকে ৩১ শে অগাস্ট এই শতাব্দীর প্রথম ব্লু মুন । জোছনাটা দেখতে হবে ঠিক নীল রঙের মত। পরের দিন পাপ্পু এসে আবার দেখল অভ্র বাইনোকুলার হাতে ওদের ছাদের দিকে তাকিয়ে... ‘ হ্যালো ভাইয়া ! চাঁদ তো উপরে,আমাদের ছাঁদে না ! ’ -আরে গাধা চুপ । নীলাকে দেখতেছি । আজকে ও একটা সাদা ড্রেস পড়ছে, নীলাকে দারুন লাগতেছে ।

নীল জোছনায় পুরাই নীল পরী । ইসস্‌ আমি যে কি উল্টাপাল্টা করতেছি , কবে যে তাকে মনের কথা বলব ?? ‘ আরে সব হবে ! শোন একটা কথা বলি আবার মন খারাপ কইর না । আজকে না আবীর ভাইকে দেখছি বিকালে নীলা আপার সাথে কথা বলতে । ’ -কথা বলছে তো কি হইছে ? তুই চাঁদ দেখ । যাবার সময় আরেকটা খাম নিয়ে যাস... ছাঁদ থেকে নেমে গেটের কাছে আসতেই নীলা একটা আকাশী রঙের খাম পেল।

সাদা কাগজে নীল কালির চিঠিটা খুলতেই ... “ দেখতে দেখতে দিনের আলো শেষ হতেই রাত নেমে এল। আর সূর্যদেবের কন্যা চন্দ্রবতী চুপটি করে নেমে এল পৃথিবীর মেঘরাজকে আলকিত করতে । ভালোবেসে চন্দ্রবতী এভাবেই আলোয় ভাসিয়ে দিতে আসে। তার নিজের আলো নেই, বাবার আলোয় আলোকিত । তবুও সে ভালোবাসার জোছনা নিয়ে আসে।

আজ আর সূর্যদেব বাধা দেবে না , এ যে নীল জোছনার ভালবাসা । নীল জোছনা ঝড়ে পড়ছে চন্দ্রবতীর কুঞ্চিত চুলের অগ্রভাগ দিয়ে , আর মেঘরাজ খেলছে সেই নীলচে মায়ায়। চন্দ্রবতীর জোছনীল ভালবাসা আকাশ থেকে নেমে আসছে সুখের পরশ হয়ে । মেঘরাজ একটু পরপর চন্দ্রবতীর গা ঘেঁষে ঘেঁষে যাচ্ছে । আর চন্দ্রবতী লজ্জায় ধবল চাঁদরে নিজেকে লুকাচ্ছে ।

চন্দ্রবতী আজ মেঘরাজের ভালবাসায় বিমোহিত । জানো আমার অনেক হিংসে হচ্ছে মেঘরাজকে দেখে । মেঘরাজ এই অপূর্ব মিলনের জন্য আজ সারাটা দিন অপেক্ষায় ছিল । চন্দ্রবতীর জোছনীল ভালবাসায় মেঘরাজ মনে হয় এভাবেই সার্থক হয়। রাত এখন যৌবনদীপ্ত ,কিন্তু আমি নীল জোছনায় একা হাটছি ।

মেঘরাজ মেতে আছে চন্দ্রবতীর প্রেমে । আর আমি তোমার প্রেমে । নীল আকাশের পানে চেয়ে আমি ভাবছি যদি একবার পারতাম তোমাকে নীল জোছনায় ভিজাতে আর আর আমার ভালবাসার মানে বোঝাতে তাহলে মনে হয় আমিও সার্থক হতাম। নীল জোছনায় মিশে আধাঁরকে হটিয়ে বিধাতার কাছে একটাই প্রার্থনা আমার স্বপ্নেরা যেন আলোকিত হয় তোমার মত কোন এক চন্দ্রবতীর জোছনীল ভালবাসায়। আমি যে তারই প্রতিক্ষায় ইতি, তোমার নীল আকাশের সাদা মেঘ ...” নীলা চিঠিটা পড়ার পর আরও অবাক হতে লাগল ।

পাঁচ পাঁচটা চিঠির পর আবারও আরেকটা চিঠি ! মায়াকে ডেকে বলতে লাগল, ‘ দেখ কেমন গাধা !! ভালবাসতে পারে , রোম্যান্টিক চিঠি লিখতে পারে আর সামনে এসে বলতে পারে না । একবার পাইলে প্রেম কাকে বলে বুঝাই দিতাম । ’ -আপা আমার মনে হয় এগুলা ঐ আবীর ভাই নাইলে অভ্র ভাইয়ের কাজ ! ‘ আরে নাহ্‌ ! আবীর ভাই না, আজকেই তো তার সাথে আমার কথা হইছে । আর অভ্র !! সে তো আমাকে দেখলেই ভয় পায় । ’ .................................................................................. দুপুর বেলা পাপ্পুদের গলির চায়ের দোকানের ভিতরে আঁটসাঁট হয়ে সিগারেট ফুঁকছিল আবীর ।

দোকানের সামনে বড় একটা শোকেছ থাকায় ভিতরে কে আছে সেটা সহজে দেখা যায় না । তাই মাঝে মধ্যে আবীর দোকানে বসে মনে সুখে সিগারেট ফুঁকে । কোথাথেকে অভ্র পাপ্পুদের বাসার সামনে এসে পাপ্পুকে ফোন দিয়ে বলল নিচে আসতে । পাপ্পু নিচে আসতেই ওরা দুজন মিলে হাঁটতে হাঁটতে চায়ের দোকানের পাশে গিয়ে নীলার ব্যাপারে কথা বলতে লাগল- পাপ্পু নীলাদের বাসার কি অবস্থা ? আবার বিচার দিসে নাকি ? ‘ অবস্থা ভালোই ! আর বিচার আসে নাই । তবে অভ্র ভাইয়া এভাবে হাইড অ্যান্ড সিক না খেলে নীলা আপুকে বলে দেয়া উচিত , যে তুমিই তাকে চিঠি পাঠাও আর তুমি আপুকে ভালোবাসো ।

’ দোকানের ভিতরে বসে এতক্ষণ আবীর ওদের কথা শুনছিল । পাপ্পুর মুখে চিঠি আর নীলার কথা শুনে আবীর তো অবাক । এতক্ষণ ও ভেবেছিল অভ্র আর পাপ্পু হয়তো অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছে । এখন বুঝতে পারল অভ্র নীলাকে পছন্দ করে আর এদিকে সে নিজেও নীলার প্রেমে মেতে আচ্ছে । বেচারা যেই রাজকন্নাকে বিয়ে করার সপ্নে বিভোর আর তাকেই কিনা অভ্র প্রেম পত্র পাঠায় ! বিকাল হতেই আবীর হুট করে নীলাদের বাসায় হাজির ।

কাজের মেয়েটা গেট খুলতেই তাকে বলল -তোমার আপাকে ডেকে দেও । নীলা আসতেই আবীর তাকে বলল -নীলা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে । আমি এখানে বলব চাচ্ছি না , তুমি কি আমার সাথে একটু ছাঁদে যাবা ? নীলা ওর সাথে ছাঁদে যেতেই আবীর ওকে বলল- দেখ নীলা, আমার হাইড অ্যান্ড সিক খেলতে ভালো লাগছে না । মনে হয় তোমাকে সত্যিটা বলে দেয়া উচিত। আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি আর ঐ চিঠিগুল আমার-ই পাঠানো ।

তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে আমি তোমার বাসায় প্রপোজাল পাঠাতে চাই ? আবীরের মুখে কথাগুলো শুনে নীলা পুরাই থ... ‘ চিঠিগুলো আপনার লেখা ? আমিতো ভেবেছি ...!! ’ -নীলা তুমি কি ভেবেছ সেটা আমি জানি না ! আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি তাই ঐ চিঠিগুলো পাঠিয়েছিলাম । পরে ভেবে দেখলাম ভণিতা না করে সত্যিটা বলে দেওয়া উচিত। তুমি চাইলে আমি আজকালকের মধ্যেই বাবাকে দিয়ে তোমার বাসায় প্রপোজাল পাঠাবো । নীলা মাথা নিচু করে বলল, ‘ আমি কিছু বুঝতে পারছি না আর আমি এসবের কিছু জানি না । আমার ফ্যামিলি জানে ।

’ ঠিক তার দুই দিন পর...সন্ধ্যার কিছুটা পরে পাপ্পু অভ্র’দের ছাঁদে গিয়ে অভ্রকে বলল, ‘ ভাইয়া সব শেষ ! নীলা আপার বাসায় আবীর ভাই বিয়ের প্রপোজাল দিছে আর সেটা নীলা আপার ফ্যামিলি একসেপ্ট করছে । বাবা বলছে এই শুক্রবার এঙ্গেজমেণ্ট আর ঐদিন-ই বিয়ে । ’ -কি ? আবীর ভাই !! উনি এই কাজ কেন করল ? ‘ আমি কি জানি ??!! আমি আগেই বলছিলাম আপুকে সরাসরি বলে দেও । তাইলে এখন আর এই দিন দেখতে হইত না । ’ অভ্র দু’হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে পাপ্পুকে বলল -তুই প্লীজ এইখান থেকে যা, আমাকে একটু একা থাকতে দে...!! প্লীজ ! গত দুইদিন থেকে পাপ্পু অভ্রকে ফোন দিয়েই যাচ্ছে , অভ্রর রিসিভ করার কোন নামেই নাই ।

নীলার বিয়ের দিন দুপুরে অভ্রর বাসায় গিয়ে দেখল ভিতর থেকে রুম লক । পাপ্পু ছাদের রুমে গিয়ে দেখল রুমের দরজা খোলা আর সারা রুমে কাগজের ছড়াছড়ি। টেবিলের উপরে একটা কাগজ দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে । পাপ্পু কাগজটা খুলতেই বুঝতে পারল এটা একটা চিঠি । আর চিঠিটার শেষে লেখা “ নীল আকাশের সাদা মেঘ ”।

পাপ্পু চিঠিটা হাতে নিয়ে একটা দৌড়... .................................................................................. সুনামি আপু একটা কথা ছিল । -আমি সুনামি !! মাইর চিনিস ?? কি বলবি বল । তোমাদের বাসায় গেলাম দেখলাম বর পক্ষের লোক আসছে । শুনলাম তুমি তখনও পার্লার থেকে আসো নাই তাই তোমার জন্য নিচে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে আছি ,একটা জিনিস দিব বলে ... -কি দিবিরে ? গিফট !! নাহ্‌ , একটা চিঠি দিব । এখানে না , বাসায় গিয়ে প্লীজ চিঠিটা পড়বে ।

নীলা বাসায় এসে চিঠিটা খুলতেই... “ নীলা , আমার বেগুনী রঙের কষ্টগুলো যদি কখনো তোমার ছোঁয়ায় জারুল হত,আমি দুহাত ভরে কুঁড়িয়ে নিতাম । কি ভাবছ ? কষ্ট আবার বেগুনী হয় কিভাবে ? আসলে মানুষের সব কষ্টরা নীল হয় না । জানো আমার খুব জারুল ফুল ছুঁতে ইচ্ছে করে... তোমার খোপার জারুল ফুল । কিন্তু তুমি তো খোঁপায় ফুল পড়না । জীবন তো একটাই আর জীবনেই অনেক আশার জন্ম হয় আবার অনেক আশা কুড়িতেই ঝড়ে যায়।

আবেগী মন সারাক্ষন তোমার স্বপ্নে বিভোর থাকতে চায় । তোমায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে এই আমি কখন যে নিজেকে বেদনার নীল রং এ সাজিয়েছি বুঝিই নি। আসলে মনের আলোয় কখনো স্বপ্ন ছোঁয়া যায় না...স্বপ্ন দেখা যায় । আমার প্রিয় রং তো আকাশী শুদ্ধ করে বললে বলতে হয় আসমানি । যতদূর জানি যারা এ রং পছন্দ করে তারা খুব অনুভূতিশীল হয়।

আর তাদের কল্পনা ও অনুমানশক্তি প্রচণ্ড থাকে । এই কারনেই কি তোমায় নিয়ে আমার এত কাল্পনিক অনুভুতি । ইচ্ছে করছে পেছন ফিরে অনুভুতিগুলোকে ঝেড়ে ফেলে ভীষণ জোরে দৌড়ে যাই , কিন্তু পারছি না । আমি যেন পালাচ্ছি সত্য থেকে। অথচ সত্য বিন্দুমাত্র পাল্টাবে না, যেমন ছিল তেমনই রইবে—অচল ও রূঢ় ।

একটা গানের কথা মনে পরে গেল.. কে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।