তাকায় সবাই, কিন্তু দেখে খুব কম লোকই।
হয়ত পুরান কথা। মাসখানেক ব্লগে ঢুকিনাই, ইতিমধ্যে কয়বার চর্বিত চর্বন হয়েছে জানি না। তবু বিষয়টা অন্তত নিজের কাছেও পরিষ্কার করতে চাই।
ইতিহাস কি কখনও ৩০ মিনিটে তৈরি হয়? আর রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার আন্দোলনের ইতিহাস কি কেবলই ৩০ মিনিটের? আগে পরে কিছু নাই? ইতিহাস কি কেবলই কয়েকটা গুলি, আর মৃত্যু, আর ফলাফল? এইটা কি এসএমএস? টাইপ করলাম, সেন্ড করলাম, ফল পাইলাম।
মাঝখান থেকে কয়টা টাকা পাইল ফোন কোম্পানি?
৩.১৯ মিনিটে রাষ্ট্রভাষা ছিল উর্দু। ৩.২০ এ মানুষ এক গেট দিয়া বাইর হইল। বাইর হইতে থাকল। গুলি চলল। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বাররা শহীদ হইল।
৩.৫০ পর্যন্ত চলল। ৩.৫১ মিনিটে রাষ্ট্রভাষা হইল বাংলা। এইটা কি নাটক?
আমি জানতে চাই, কার মাথায় প্রথম আইডিয়াটা আসল 'দুনিয়া কাঁপানো ৩০স মিনিট'? ফোন কোম্পানির মার্কেটিং-এ নিত্য নতুন আইডিয়া সব সময় স্বাগতম। কিন্তু রাষ্ট্র ভাষা বাংলা ইতিহাস নিয়া এই বালখিল্য আইডিয়া?
আমরা গাঁটের পয়সা খরচ করে ফোন করি। আমরা কথা বলি, ফোন কোম্পানি সেকেন্ড গুণে পয়সা নেয়।
সেকেন্ড গোণা যাদের অভ্যাস তারা যদি ইতিহাসের দিনক্ষণ গুণতে শুরু করে তাহলে ৩০ মিনিট তাদের কাছে বিশাল। 'ইতিহাস' কথাটার মূল্য তাদের কাছে নাই। সেইটা তারা বুঝায় দিছে 'দুনিয়া কাঁপানো' এবং 'কাছে থাকা' জাতীয় শব্দ বন্ধ দিয়া। তাগো বাণিজ্য, তাগো ব্র্যান্ডিং তারা কড়ায় গণ্ডায় আদায় করছে।
কালকে তারা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধেরও এমন ৩০ বা ৫০ মিনিটের মিনিপ্যাক প্যাকেজ বের করবে।
এমনিতেও তো মুক্তিযুদ্ধের যে সময়সীমা নয়মাস বলে কথিত আছে তাও ঠিক নয়। কারণ ২৫ মার্চ মধ্যরাতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নাই। বলতে গেলে শুরু হইছে ১৯৪৭ সালেই। এমনকি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনও এর বাইরে না, যার সূত্রপাত ১৭৫৭ সালে। আবার তেমনি ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়নাই।
তার প্রমাণ ১৬ ডিসেম্বরের পরও দেশে কয়েক জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের খবর পাওয়া গেছে। সত্যি বলতে গেলে, এখনও আমরা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ করে যাচ্ছি। বহু প্রশ্নের মীমাংসা এখনও হয়নাই। এখনও বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা হয়নাই। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা এখনও চালু হয়নাই।
এখনও আমাদের তরুণ তরুণীরা (ডিজ্যুস আক্রান্ত) ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলতে পছন্দ করে। ডিজ্যুসের বিজ্ঞাপনে বাংলিশ ভাষার ব্যবহার তার প্রমাণ দেয়। আমি যদি আজকে তাদের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষা বিকৃত করার অভিযোগ তুলি, তাহলে তারা কী দিয়ে সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করবে? আমি যদি বলি 'দুনিয়া কাঁপানো ৩০ মিনিট' একটা প্রহসন? একটা বান্দর খেলা? কী জবাব দেবেন?
এবার বলি তাদের কথা যারা তাদের বান্দর খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত হলেন। কেউ জিজ্ঞেস করল না, কোথা থেকে এলো এই ৩০ মিনিটের কথা? কেউ তো জিজ্ঞেস করল না, কেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে ৩০ মিনিটের ফ্রেমে, মিনিপ্যাকে বন্দী করতে হবে? আমরা সবকিছুর মিনি সংস্করণ পছন্দ করি, সব শর্টে সারতে চাই। সেই সুযোগ নিয়ে একদল বেনিয়া বলল, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিস্তারিত জাইনা কাম নাই, ৩০ মিনিটে মামলা ডিসমিস।
এক গেট দিয়া মাল বাইর হইল, পথে মাল গুলি খাইল, আরেক গেটে মাল ডেলিভারি গেল, মোট ৩০ মিনিট, পার মিনিট মাত্র ৯৯ পয়সা। কাছে থাকুন। আর আমরা নাচলাম। বাহবা!!
আর কত সংক্ষেপ করবেন?
আমার প্রশ্ন গ্রামীণ ফোন আর প্রথম আলোর উদ্দেশ্য কী? আমার প্রশ্ন আর কতকাল আমরা সবকিছু বিনা প্রশ্নে মেনে নেব?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।