আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মীর মোশাররফ হোসেন, আলাউদ্দিন আর রবীন্দ্রনাথের তালুক



ছেউরিয়া’য় লালনের আখরা থেকে বের হবার পর পরই বড় আন্টি ফোন করে আমাদের আমরা কোথায় তা জানার জন্য ঐদিন দুপুরে আবার সেকেন্দার মামার ওখানে দাওয়াত ছিল তাই তাড়া দিচ্ছিল। ফলে আমরা ঠিক করলাম কুঠিবাড়ী আজ আর যাব না। কিন্তু আমার মন কিছুতেই মানছিল না। শিলাইদা যাবার জন্য মন আনচান করছিল। আমার জোড়-জুলুমে দুলাভাইকে অনেকটা বাধ্যই পলিটেকনিক পর্যন্ত যাবার পরও আবার বাইক ঘুড়িয়ে নেয় শিলায়দহ যাবার জন্য।

হাউজিং পেরিয়ে দিয়ে বাইপাস দিয়ে আমরা যেতে লাগলাম। সেখানে টোল দিতে হয় ৫ টাকা। পথে কয়া নামক স্থানে দেখলাম মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা। প্লান করলাম ফেরার সময় দেখে যাব। বেশ খানিকটা পথ পাড়ি দিয়ে অজ পাড়া গায়ের ভিতর দিয়ে আমরা চলতে লাগলাম।

তবে জমিদার রবীন্দ্রনাথের সীমানায় পৌছার আগেই আর এক জমিদার দাতা আলাউদ্দিনের তালুক দেখতে পেলাম। তার দান করা জমিতে বিশাল ঈদগাহ, স্কুল, পাঠাগার এছাড়াও আরো বেশ কিছু সরকারী স্থাপনা। এ এলাকার পুরোটায় নাকি তার ছিল এবং বেশ দান খয়রাত করতেন আর নিজের জমা-জমিও বিলিয়েছেন সেবা মূলক কাজে। বেলা ২টার দিকে রবীন্দ্রনাথের কুটিবাড়ী এসে পৌছালাম। সামনে পিকনিক স্পট আর একটু সামনে এগুলেই রবী নিবাস।

কিন্তু কপাল খারাপ রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি তাই ভিতরে(কক্ষ) বন্ধ। ১০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয় কিন্তু ছুটির দিন থাকায় তা দিতে হলনা। আমাদের মত অনেকেই এসেছিল সেদিন বেশ ভীড় ছিল, দোকান-পাট বেশ জমজমে ছিল লোক সমাগমের কারণে। বেশ কয়েকটি পিকনিক পার্টিও এসেছিল। সবাই বাইরের দৃশ্য অবলোকন করে আর ছবি তুলেই শান্তনা নিল কি আর করার।

ঢুকে গেটের বাম পাশে একটা বাড়ী আর সামনে দিকে এগুলে বেষ্টণী দেওয়া আর একটি বাড়ী মূলত ওটাই রবীন্দ্রনাথের বাসগৃহ। ভিতরে ফুল গাছ সুন্দর করে লাগানো। আমরা প্রধান ফটকের সামনে দিয়ে ডান দিকে গেলাম বেশ বড় বড় গাছ নারিকেল, আম, সুপারী আরও কি কি যেন। নানা মানুষের আনাগোনা অনেক হকার শ্রেণীর লোক জীবিকার জন্য ব্যবসা খুলে বসে আছে। কেউ টিয়া দিয়ে ভাগ্য গণনা, কেউ নাগরদোলা আবার কেউবা চটপটি, ফুসকা, ডাব, পিয়াজী, মুড়ি মাখানো বিক্রি করছে।

এক একটা বড় ডাব ১৫/= আর ছোটগুলো ১০/= আমরা মানে আরিফ ভাই আর আমি দুটো ডাব(১২+১২=২৪/=) খেলাম। ডাব বিক্রেতাকে দেখে অসুস্থ মনে হল একটু কেমন যেন লাগলো। শরীরে বল কম। কাল ৩টা ডাব আর ৫টা ডাব বিক্রি হয়েছে এ পযর্ন্ত। লোকটা কথা শুনে মনটা খারাপই লাগলো এত কম আয়ে কিভাবে দিন যাপন করবে? সামনে নাগরদোলার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা উঠে দোলা খাচ্ছে আর ফুসকাওয়ালা ডাকছে আসেন ভাই বসেন।

আমার পেট আবার খুব লোড ছিল তাই দুলাভাই বলা স্বত্তেও খেলাম না। ডানেও পুকুর বড় আর বামে সান-বাধানো পুকুর। সামনে কিছু লোক ঘোড়া নিয়ে দাড়িয়ে আছে আমাদের দেখে আসেন আসেন বলে ডাকলো। আমার ঘোড়ার পিঠে ওঠার কোন ইচ্ছা ছিল না তবে আরিফ ভাইয়ার আগ্রহে আর কথাতে উঠলাম। আপনি যদি চান তবে ঘোরসওয়ারকে সংগে নিতেও পারেন আবার নাও পারেন।

ট্রেনিং দেওয়া ঘোড়া ঐ তাল গাছ পর্যন্ত যেয়ে আবার একা একাই ফিরে আসবে। প্রথমে বেশ ভয় লাগছিল ঘোরার কোমর দুলছিল। আগে শুনেছিলাম ঘোড়ার কোমর নাকি দুলেনা এখন চরে অন্য রকম। বেশ আলাদা একটা ফিলিংস। উঁচু নিচু মেঠো পথে ঘোড়া চলতে শুরু করল।

ঘোড়াটা বেশ ভদ্র ছিল আস্তে আস্তে যাচ্ছিল তবে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে একটু দ্রুত যাচ্ছিল। ভাইয়াও বেশ মজা পাচ্ছিল আমিতো উঠেছিলাম ছোট ঘোড়াতে আর ভাইয়া বেশ বড় তাগড়া ঘোড়াতে। পরিভ্রমন শেষে দশ দশ বিশ টাকা দিয়ে আমরা সামনের দিকে গেলাম পিয়াজু ভাজছিল গরম গরম পিঁয়াজী খেলাম। সব খরচায় আরিফ ভাইয়াই করেছে। একটা পয়সাও আমাকে খরচ করতে হয়নি।

হলুদ হলুদ গাঁদা ফুল ফুটে আছে কিছু ঝুটি শালিক ষবুজ ঘাসে খুটে খুটেঁ খেয়ে বেড়াচ্ছে। আছে একটা টিউবওয়েল পানি নেই। গেটের কাছে চলে এসেছি কুঠিবাড়ী দেখা এখানেই শেষ। ঠাকুর বাড়ীর সাথেই লাগানো বাম পাশে ১টা ডাক-বাংলো আছে যারা দুর থেকে আসে তারা থাকে। ফেরার সময় ভালোই আসছিলাম কিন্তু বিপত্তি ঘটল কিছু পথ আসার পর দাতা আলাউদ্দীনের তালুকের কাছাকাছি এসে বাইক জানান দিল তার তেল শেষ ।

রবীন্দ্রনাথের জনহীতকর কোন কাজের নিদর্শন পেলাম না যেমন পেলাম জমিদার আলাউদ্দিনের। আলাউদ্দিনের সীমানায় পৌছালেই তার জনসেবামূলক কাজের নিদর্শন পাওয়া যায় আর রবীন্দ্রনাথের শুধু বাড়ী। সেই বাড়ী দেখতেই আমরা সবাই যাই কিন্তু আলাউদ্দিনের বাড়ী-_-কে জানে কোথায়? বাইক খুব জোরে টেনে মোড়ে রাস্তার বাম পাশে এক টিনে ছাপড়া দেওয়া দোকান থেকে ৭৭/= লিটারে পেট্রোল নিয়ে আবার নিশ্চিন্ত মনে চলতে শুরু করলাম। এখন যাবার পালা মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা’য়। মূল সড়ক থেকে ০.৪ কি.মি ভিতরে।

যা দেখলাম তার আসল কিছুই নেই। একটা মসজিদ বেশ সুন্দর উনার নামে আর সামনে একটা স্কুল ওটাও উনার নামে। পিছে পুরানো ছোট্ট ২/৩ রুমের ঘর। এই শুধু। দেখে মন তৃপ্ত হল না।

অবশেষে চলে আসলাম কুষ্টিয়া মূল শহরে আড়ুয়াপাড়া’য় আমার নানার বাড়ী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।