_________________সেলাই গাছের কারখানা _______________________________________
উদ্বাস্তু উন্মুল যৌবনের দুই পিঠাপিঠী সঙ্গী তরুণ দার্শনিক আহমদ মিনহাজ ও কবি মোস্তাক আহমাদ দীনের কথা খুব মনে পড়ছে... মিনহাজ দীর্ঘদিন পরে আবার লিখতে শুরু করেছে...দীন বরাবরের মতই লিখে যাচ্ছে। সুনৃত হয়ত এতদিনে বেরিয়ে গেছে...মিনহাজের ৪০ পৃষ্ঠার চিঠির উত্তরে মাত্র দুটি লাইন লিখারও সময় করতে পারিনি... অনেক কথা ভেতরে কিলবিল করছে... কী যে অসহ্য বেদনা!... কায়সার, ফুরিয়ে গেছো?...
২৯শে জানুয়ারি Facebook তাঁর ছোট্ট চিরকুট কায়সার, ফুরিয়ে গেছো?... দেখে আমি বলেছিলাম— না; আপনি ফুরাবেন না। হয়ত কিছুটা সময় নিচ্ছেন; জানি মিনহাজ ভাইয়ের মতো আপনিও ফিরবেন আপন মহিমায়। টি এম আহমেদ কায়সার নব্বইয়ের কবি। শুধু কবি অভিধায় তাঁকে বেঁধে রাখা যায় না; কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,নিবন্ধ, অনুবাদ, গান লিখে তাঁর সময়কে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন।
একসময় ফিল্মের নেশায়ও ঝেঁকে বসেছিল। যার ফলশ্রুতিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন চোখ ফিল্ম সোসাইটি। তিনি মূলত লিটলম্যাগে লিখতেন, প্যারাডাইম নামে একটি ছোটকাগজ (যৌথ)সম্পাদনা করতেন। সে সময় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় উল্লেখযোগ্য ছোটকাগজ- একবিংশ, নিসর্গ, লিরিক, জীবনানন্দ, সুনৃত বিকাশ, ভিন্নায়ণ, গ্রন্থি, অর্কেষ্টা, ফিনিক, ঘাস, খোয়াব, ঋতি হৃদিসহ অনেক ছোটকাগজে। রাসায়নিক প্রকৌশলের ছাত্র টি এম আহমেদ কায়সার নানাবিধ একাডেমিক চাপের কারণে দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে ক্রিয়াশীল সাহিত্য রচনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
পাঠ হউক কবি টি এম আহমেদ কায়সার-এর ৫টি কবিতা
_______________________________________
আগুন
এই সব হত্যা ও রক্তপাত দৃশ্যের আড়ালে
কেউ নিশ্চয়ই গোপনে আমার জন্যে লুকিয়ে রাখে
ঘুমবাহী নদী আর ভীষণ লোধ্ররেণু;
চোখের গভীরে পুষে রাখে কিছু পরালৌকিক সমুদ্র সারস
আর আমার বুকের দিকে নিভৃতে উড়িয়ে দেয়; ডুবে গেলে পঞ্চমীর রক্তঝরা চাঁদ
এই সব তীব্র তীর, লক্ষ্যভেদী খঞ্জর আর আমার ঝাঁঝরা হৃতপিন্ডের বিপরীতে
কেউ নিশ্চয়ই আমার জন্যে অগোচরে জমিয়ে রাখে
কিছু দুধভাত; আতিশয় কুয়াশা কিছু... আর গাঢ় জলের সৌরভ...
কেউ নিশ্চয়ই আমার জন্যে নাভীমূলে ঢেকে রাখে লেলিহান আগুন...
উপকথা
ধুলো উড়ছে
বাতাসে ঘন ধোঁয়ার সর; তুমুল শঙ্খধ্বনি
বাদুড়েরা ডাকছে দূর বনে
আর কতিপয় স্নায়ু-বিধ্বস্ত মানুষ আমরা। হাত পা বরফাবৃত; চোখ অনুদ্ভাসিত এবং জিহবা কুন্ডলী পাকানো। (যা প্রসারিত হয় মাঝে মধ্যে সুললিত কোনো মন্ত্রোচ্চারণের জন্যে। )...আর প্রভু! অগ্রাহয়নে শিলাবৃষ্টি আমাদের ফসল গুঁড়িয়ে দেয়। আশ্বিনে ভূমিকম্প আমাদের পরষ্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে।
চৈত্রে পাতা ঝরার শব্দ আমাদের নাভিমূল কাঁপিয়ে যায়। এবং তবুও আমরা ন্যুব্জ পীঠ; ফসল কাটতে যাই দূর মাঠে। বৃন্দ নৃত্য করি। গান গাই; রুগ্ন ভগ্ন খোসা মাড়িয়ে সংগ্রহ করি অনুর্বর শস্যবীজ।
নিবৃক্ষ মাঠ!
ঠান্ডা জীর্ন এবং স্বচ্ছ নয়
ত্বক রন্ধ্রে জল পঁচা শৈবালের ঘ্রাণ
আহা! এই ভয়ঙ্কর গোধূলি বুঝি এবার ঝাপিয়ে পড়বে আমাদের অবিন্যস্ত কাধে? আর অবসন্ন চোখে নেমে আসবে অন্তহীন ঘুম? আমরা কান পেতে শুনবো শুধুই কারো ডুকরে শব্দ? একে অপরকে ডাকাডাকি করবোঃ এই যে শুনতে পাচ্ছো?...প্রভু! ঊর্ধ্বগামী জলোচ্ছাস আমাদের স্রোতের তোড়ে ভাসিয়ে নেয় প্রতিবছর।
আর আমরা তো তবু জলদেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদন করেছি গৃহ পালিত জন্তুর মাংস। ...ক্লান্ত হাতে হার্পুন ছুড়ি সমুদ্রের উষর শাদা জলে...
ধূলো উড়ছে
বইছে প্রভঞ্জনঃ জীমুতঃমন্দ্র মহাব্যোমে আর কতিপয়
বায়ূপালিত মানুষ আমরা ঢাকা পড়ছি
ধূ ধূ কুয়াশায়; বরফের হিম আস্তরণে...
কবি মোহাম্মদ সাদিককে লেখা একটি চিরকূট
কেউ যেন ক্ষত-বক্ষ; কেউ যেন হাটে একা দূর বনে, দিগন্তরেখায়...
কেউ যেন ফিরায়ে আপনমুখ অন্ধকারে অনর্গল অশ্রুপাত করে
কেউ যেন শরবিদ্ধ; ক্রুর এই নিস্তব্ধ ধূলার আবহে
অথচ...
কোথাও ঘুমের দেশে উজ্জিয়নীপুরে কিছু
আশ্চর্য ঘৃত-পুষ্প স্তরে স্তরে নিরলে ফুটিছে
ফেরা
জলমগ্ন নিধুয়া পাথারে। নিঃশব্দ অনলে পুড়ি নিশিদিন; প্রদোষে প্রত্যুষে। কে তুমি উজানে যাহো; কে গো সখি ঢেউ তুলো পরানের গহীন পবনে।
ধু-ধু পন্থ! ভাওল্যা ভাইস্যা যায় যমুনার জলে।
আমারে একেলা থুইয়া কোথায় যাবে গো বন্ধু; এই বেলা বুকে জ্বলে তুষের আগুন। উজানে ভাসালে পানশি চক্ষে ঝরে শাউনিয়া ঢল।
আসমানে সিঁদুর রঙ! চিলমারি বন্দরে সখি নেমে এলো সাঁঝ। তোমার আঁচল ধরে এইবার ফিরিবার সাধ...
বোধি
শোনো, তোমাদের জ়ন্যে তুলে রখছি প্রস্ফুটিত শঙ্খধনি
ঘুমঘুম নিলীমা অনাদি আর
মিহিমন্দ্র জলস্বর
ঝর্ণাজলে ধ্যানমগ্নযুথি
শোনো, দূর আল্পসের পাদদেশে
লুটিয়ে পড়ে যে শস্যবাহী রংধনু
...গাঢ় অমারজনীতে
জ্বলে উঠে যে মৌণ জোনাক প্রবাহ
তোমাদের জন্যে তুলে রাখছি, আলগোছে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।