আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৫ শে ফেব্রুয়ারী, ২০১০। আমরা কি প্রস্তুত?


বিডিআর বিদ্রোহের এক বছর পূর্তি হল। ষড়যন্ত্র, বিদ্রোহ, অসন্তোস, পূনর্গঠন, বিচার – এসব নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে কেন কোন কথা হচ্ছে না, আমি বুঝতে অপারগ। আজকে যদি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (নতুন নামে বিডিআর) এ আরেকটি বিদ্রোহ হয়, অথবা পুলিশ, আনসার এমনকি সশস্ত্র বাহিনীতে আরেকটি বিদ্রোহ হয়, আমরা কি সেটা ঠেকাতে প্রস্তুত? এমন কোন ইমার্জেন্সী পরিকল্পনা কি আছে যাতে এরকম পরিস্থিতি সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের নোটিশে মোকাবিলা করা যাবে। এদেশের ইতিহাস আমাকে বলছে, এরকম কোন সিস্টেম নেই।

১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট এর রক্তাক্ত অভিযান শুরুর সময়, অর্থাৎ শেখ মুজীবের মৃত্যুর কমপক্ষে ৩ ঘন্টা আগে অস্বাভাবিক সামরিক তৎপরতার বিষয়টা গোচরে আসে তৎকালীন সামরিক গোয়েন্দাবাহিনীর কাছে। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। শেখ মুজীবের বাসায় হামলা শুরুর প্রায় ১ ঘন্টা পর মারা যান তিনি, সংশ্লিস্ট কাউকে খবর দিতে বাকী রাখেননি তিনি। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতায় কেটে যায় অমূল্য সময়। কাপুরুষের মত সেনাবাহিনী প্রধান তাকে পরামর্শ দেয় বাড়ি ছেড়ে পালাবার!! সেই ব্যার্থতার কোন শাস্তি হয় নাই, এমনকি ব্যার্থতার কারন অনুসন্ধান ও প্রতিকারও করা হয়নি পরবর্তি ৩৪ বছরে।

নয়ত আমরা হয়ত পিলখানা ট্রাজেডি দেখতাম না। এখনো বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর এমন কোন শাখা কি আছে যারা আধা ঘন্টার নোটিশে খোদ রাজধানী শহরে ঝটিকা অভিযান চালাতে পারবে ভারী অস্ত্র সহকারে? এমন কোন পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষন কি তাদের আছে? আমার জানা মতে নেই। পিলখানা বিদ্রোহের শুরু হয় সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে। সাথে সাথেই মোবাইলের মাধ্যমে খবর পৌছে যায় সর্বোচ্চ মহলে। আর খুনাখুনী শুরু হয় ১০ টা ৩০ মিনিটে।

অমূল্য এই ১ টি ঘন্টা আমরা কি করে নষ্ট করলাম। ১০/১২ কিমি দূরের ক্যান্টনমেন্ট থেকে একটি ঝটিকা অভিযান চালানো কি খুবই অসম্ভব ছিল? হ্যাঁ, অসম্ভব ছিল। আইনত সেনাবাহিনী বা যেকোন আর্মড ফোর্সের কিন্তু গুলি চালানোর অনুমতি থাকে না। সে অনুমতি দেবার অধিকার শুধু সরকারের। রাজনৈতিক সরকার এধরনের কোন পরিস্থিতির জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলনা বলেই হয়ত ধীরে চলার নীতি গ্রহন করে।

একদিকে যখন সরকার পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে রক্ত ঝরছে এদেশের বীর সন্তানদের। এ ব্যার্থতা ক্ষমার অযোগ্য। আরো ক্ষমার অযোগ্য হচ্ছে, আমার এখনো প্রস্তুত নই ভবিষ্যতে এর পূনরাবৃত্তি ঠেকাতে। আমার মনে হয় সেনাবাহিনীর বিশেষ একটা ব্যাটেলিয়ন গড়ে তোলা উচিত বিশেষ মুহূর্তের জন্য। স্থল বাহিনীর পাশাপাশি এর সাথে বিমান ও নৌ বাহিনীকেও একত্রিত করতে হবে জয়েন্ট অপারেশন্স এর জন্য।

বর্তমান রিসোর্স ব্যাবহার করেই করা সম্ভব এ বাহিনী। বর্তমান কমিউনিকেশন্স নেটোয়ার্কের মাধ্যমে এদেরকে এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন ৩০ মিনিটের মধ্যে অভিযানে বেরিয়ে পড়তে পারে। একটা কোম্পানীকে পালাক্রমে ২৪ ঘন্টা এলার্ট রাখা যেতে পারে। হেলিকপ্টার ও অন্যান্য আকাশ পরিবহনের সাহায্যে এদেরকে দ্রুত উপদ্রুত এলাকায় পৌছানো সম্ভব। সামরিক টাইম স্কেলে ১ ঘন্টায় অনেক কাজ করা সম্ভব, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি প্রস্তুত এরকম কোন সিদ্ধান্ত নিতে? আমি জানি প্রস্তুত নয়।

কিন্তু প্রস্তুত হওয়া দরকার। বিদ্রোহীদের বন্দুক যেকোন সময় কিন্তু আপনাদের দিকেও তাক করা হতে পারে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।