আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭২-৭৫ আর ১৫ই আগষ্ট

আমার পরিচিত অনেকেই বলে আমার সাথে নাকি মানুষের চেয়ে জানোয়ারের মিল বেশী। তাই দয়া করে কেউ আমার কাছ থেকে মানুষের ব্যাবহার আশা করবেননা। আওয়ামী শিবির থেকে সব সময়একটা জিনিষ দাবী করা হয় যে ৭২-৭৫ পর্যন্ত আলীগ এর যে বদনাম এর বেশীর ভাগটাই হলো প্রোপাগান্ডা, এর কোন ভিত্তি নাই। এর পুরোটাই ইতিহাসের মিথ্যাচার। আর বেশী কথা না বাড়াইতে পারলে তখন অজুহাত দেখায় যে একটি দেশ স্বাধীন দেশ হওয়ার পরে তার অনেক ধরনের সমস্যা থাকতেই পারে সেই জন্য বঙ্গবন্ধু'রে দোষ দেওয়াটা ঠিক না।

কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু তাহলে আমার কথা হলো আপনারা যে বলেন সবই প্রোপাগান্ডা তাহলে আবার আপনাদের এই যুক্তি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে কেন যে একটা সদ্য স্বাধীন দেশে অনেক সমস্যাই থাকতে পারে কারন তখন চারিদিকের সংকট ছিলো ( যদিও এখানে উল্ল্যেখ্য যে ১৫'ই আগষ্টে বাকশাল সরকারের পতনের পরের সরকার কিন্তু জন গনের আস্থা অনেকটাই ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলো)। কিন্তুআসল ব্যাপার হলো, বঙ্গবন্ধু তার সংগঠন নিয়ে এতই চিন্তিত ছিলো যে তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি একজন দলীয় প্রধান হিসেবেই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন। তিনি দলের উর্ধে উঠতে পারেননি। অনেকেই মনে করেন এইটার পিছনের কারন হলো তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং সেই সংগ্রামে তার দলই তাকে অনেক সিচুয়েশন থেকে উদ্ধার করেছে।

তাই উনি ব্যাক্তিগত ভাবে দলের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। উনি দেশের জনগনের চেয়েও সংগঠনের উপরেই বেশী আস্থা রাখতেন। মনে করতেন এই সংগঠনই উনাকে বিপদ-আপদে বাচাঁবে। আর তাই এই সংগঠন কে বাচাঁতে উনি নিজে না চাইলেও অনেক কিছু করতে বাধ্য থাকতেন। এজন্য সংগঠনের নেতারা নিজেরদের ব্যাক্তিগত স্বার্থের কারনে দলকেই জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।

সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া একটি দেশে তারা নিজেদের ক্ষমতা দেখে নিজদের স্থির রাখতে পারেননি। কারন তারা জানতেন যে বঙ্গবন্ধু'র কাছে যেয়ে চাইলেই সব পাওয়া যায়। কোনো গরীব মানুষ যেমন তার কাছে মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা চাইলে পেয়ে যেত তেমনি দলীয় লোকের সুপারিশ দিয়ে কোন খুনিও রেহাই পেয়ে যেতে পারত। ঠিক যেন গ্রামের শালিশ ব্যাবস্থা। উনি মনে করতেন খালি মানুষের কথা রাখলেই যেন সব ঠিক থাকবে।

কিন্তু উনি সাড়ে সাত কোটি মানুষের পালস মিস করে যাচ্ছিলেন অনবর‌ত। রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও উনি আচরন করে গেলেন দলীয় প্রধানের মতই। এই কারনেই দেখবেন এখনো আলীগ তার সংগঠনের লোকদেরকেই সবচেয়ে প্রায়োরিটি দিয়ে থাকে। সেটা একজন জয়নাল হাজারী'ই হোক কিংবা রানা প্লাজার রানারা'ই হোক। তাদের বিশ্বাস আলীগ'কে ক্ষমতায় আনবে এরাই, অন্য কেউ নয়।

সুতরাং ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এদেরকে যতোটা পারা যায় উগলে দাও। যাই হোক বঙ্গবন্ধু যখন বুঝতে পারলেন যে উনার চিন্তাভাবনা দিয়ে সবার মন ভরানো যাবে না তখন আনলেন সেই বিখ্যাত বাকশাল। যেইটা এমন এক কর্ম এখন আওয়ামী শিবির না পারে উগলাইতে না পারেন গিলতে। ৭২-৭৫ এর কাহিনী নাহলে প্রোপাগান্ডা বইলা চালায় দিলেন কিন্তু এই কাহিনী কোন কম্বলের তলায় লুকাবেন তার দিশা উনারা খুজেঁ পান না। এইখানে উনাদের মুখোশ খুলে যায়।

উনারা তখন এই বাকশাল'কে চাপা দিতে ৭৫'এর হত্যাকান্ডের বর্ননা ফেদেঁ বসবেন। কিন্তু উনারা কখনো এইটা বলেন না যে, দেশ কে যে কানা গলির মধ্যে ঠেলে দিয়েছিলেন তা থেকে মুক্তির কি উপায় ছিলো। উনারা যে নির্লজ্জ এবং উনাদের লজ্জাস্থান ঢাকতে যে কোন বস্ত্রের প্রয়োজনও পড়ে না বাকশাল ছিল তার প্রকৃষ্ঠ উদাহরন। বলতে দ্বিধা নেই আওয়ামি প্রোপাগান্ডা মেশিনের প্রোপাগান্ডায় আমার নিজেরও একটা সময় বিশ্বাস ছিলো যে হয়তো ৭২-৭৫ থেকে পর্যন্ত আওয়ামি লীগ এমন করেনি। কিন্তু আবার মাথায় এটাও ঢুকতো না যে যেই মানুষের জন্য জনগন একসময় এত ক্রেজী ছিলো ৭৫'এ কেনো তার জন্য কেউ এগিয়ে এলো না।

হিসাব গুলা অস্পষ্ট ছিলো। কিন্তু গত টার্ম আর এই টার্মের আলীগ কে দেখার পর নিজের কনফিউশন গুলো নিজের কাছেই ক্লীয়ার হয়ে যায়। আর আগে ১৫'ই আগষ্ট কে নৃশংস মনে হলেও এখন বুঝি এইটা ছিলো একটা অনিবার্য পরিনতি বাংলার মানুষ'কে মুক্তি দেওয়ার। তবে এতে নিহত রাসেল ছিলো ঘটনার সাইড এফেক্ট। তার জন্য দুঃখ লাগবেই।

আমি যতদিন বেচেঁ থাকবো ততদিন আমার আশে-পাশের মানুষ কে শোনাতে পারব আম্লীগ দলীয় নেতা কর্মীদের কথা, তাদের সন্ত্রাসীদের কথা, তাদের সাংবাদিক নামের সাংঘাতিক দের কথা, তাদের সুশিল দের কথা। হাজার হলেও নিজের ফার্ষ্ট হ্যান্ড যেই এক্সপেরিয়েন্স হচ্ছে তা যদি শেয়ার করি তবে আমার নিজের পরিচিত মহলে সেইটা অনেক বেশী বিশ্বাসযোগ্য হবে কারন ব্যাক্তি হিসেবে আমার যেই ক্রেডিবিলিটি তা শুধু আমার কাছের মানুষরাই বুঝবে। কিন্তু এর মধ্যেই যদি এই দেশ ভারতের অংশে পরিনত হয় তবে তো এর এত কথা বলে লাভ নেই। তখন শুধু গল্প শোনাবো এক মীর জাফরের গল্প। যেই মীর জাফর নাকি নিজে মারা যাবার পরেও এমন এক গুনী মেয়ে'কে রেখে যেতে পেরেছিলো যে নাকি তার বাবার স্বপ্নের চাইতেও বেশী বাস্তবায়ন করেছিলো।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।