আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরো ৭ লাখ গৃহ যৌনকর্মী চায় সৌদিআরব

লড়াই করে জিততে চাই

বছর পাঁচেক আগের কথা। আমার খুব পরিচিত এক তালাকপ্রাপ্ত মহিলা গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। নাম তার ঝুনু। গরীব বিধবা মা একটু স্বাচ্ছ্যন্দে জীবনযাপনের আশায় নিজের গচ্ছিত পুঁজি এবং ধারদেনা করে বিদেশ পাঠান মেয়েকে। রাসুলের পূণ্যভূমির মানুষকে সেবা করে অর্থ এবং সোয়াব দুটোই কামাতে চেয়েছিলো ঝুনু।

কিন্তু সৌদিআরব গিয়েই সে বুঝতে পারে তার মতো মহিলার জন্য সৌদিআরব দোযখের চেয়েও খারাপ জায়গা। গৃহকর্তা এবং তার দুই ছেলে কাজে যোগদানের দিন থেকেই ঝুনুর উপর যৌন নির্যাতন শুরু করে। বাড়ীর গিন্নি গৃহকতৃীও ঝুনুকে স্বামী-ছেলের নির্যাতন মেনে নেয়ার অনুরোধ করে। স্বল্প শিক্ষিত ঝুনু আরবী না বুঝলেও, আকারে-ইঙ্গিতে-কৌশলে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয় কি তার কাজ। ঘর মোছা, ঝাড়ু দেয়া আর বাপ-ছেলেদের যৌন খায়েশ মিটানো।

প্রথম প্রথম সেও চেয়েছিলো শত নির্যাতন করলেও সে অনেকদিন পর্যন্ত সৌদি থেকে যাবে এবং অনেক টাকা রোজগার করে তারপর দেশে ফিরে যাবে। কিন্তু ঝুনুর শারীরিক গঠন তিন সৌদি পুরুষের যৌন নির্যাতন সহ্য করার পক্ষে অনুপযোগী ছিলো। কয়েক দিনের মধ্যেই সে বুঝতে পারলো, সে এখানে থাকলে লাশ হয়ে দেশে ফিরবে এবং সেটা খুব দেরিতে নয়। গৃহকর্তা মাঝে মধ্যে কিছু ব্যাথানাশক ওষুধও খেতে দিতো ঝুনুকে। কিন্তু উপর্যপুরি নির্যাতন ঝুনুর শরীর-মন সইতে পারতো না।

মাস দু’য়েকের ভিতর চলার শক্তিও ক্ষীণ হয়ে আসে ঝুনুর। অনেক অনুরোধের পর গৃহকর্তৃীর সহায়তায় মার কাছে ফোন করে ঝুনু। মাকে বোঝায় সে, যদি মেয়েকে জীবিত দেখতে চাও তাহলে কয়েক দিনের মধ্যেই যে করে হোক দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে তাকে। নতুবা তার লাশ দেশে ফিরবে এবং সেটা হয়তো দু’এক মাসের মধ্যেই। মায়ের সে যে কি আহাজারি তখন! মেয়েকে ফেরত নিয়ে আসার জন্য দিক-বিদিক ছোটাছুটি করে সে।

শেষ সম্বল গ্রামের একটুকরা বসত-ভিটা বিক্রি করে প্লেনের ফিরতি টিকিটের অর্থ যোগাড় করে ঝুনুর মা। একটা মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায়, সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায়, সৌদী নামক দোযখ থেকে কপালগুণে জীবীত ফিরে আসে ঝুনু। ঝুনুর ঘটনা আমার নিজের জানা একটা উদাহরণ মাত্র। এরকম অসংখ্য ঘটনা, অসংখ্য নির্যাতন, উপর্যপুরি যৌন নির্যাতন চলছে সৌদির ঘরে ঘরে। বিদেশ থেকে যাওয়া নারী গৃহপরিচারিকাদের তারা গণিমতের মাল হিসাবেই বিবেচনা করে।

আইনও সেখানে ধর্ষকের পক্ষে। প্রথমতঃ বিদেশী হিসাবে সৌদীয়ানদের বিরুদ্ধে বিচারের জন্য অভিযোগ দায়ের করা খুবেই কঠিন। দ্বিতীয়তঃ বিচার বা অভিযোগ প্রমাণিত হলেও ধর্ষিতারই শাস্তি হবে বেশি। তাই একজন বিদেশী গৃহপরিচারিকাকে যৌন নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ নেই। এধরণের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই সৌদিতে নারী শ্রমিক পাঠাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

কিন্তু মুসলমানদের দেশ হিসাবে মক্কা-মদিনার পবিত্র ভূমিতে বাংলাদেশী নারীদের কাজ করতে যাওয়ার অনুমতি আছে অনেক আগে থেকেই। সৌদির শেখদের সামলাতে আবারও গৃহপরিচারিকার কোটায় ৭ লাখ গৃহ যৌনকর্মী নিতে চায় সৌদিআরব। বাংলাদেশ থেকে নতুন করে সৌদিআরবে গৃহ যৌনকর্মী সরবরাহ না করার জন্য অনুরোধ করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।