আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জোর করে নির্বাচন করতে পারবেন না - বদরুদ্দীন উমর

ধন্যবাদ । প্রখ্যাত লেখক, বাম রাজনীতিক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি মনে করেন তিনি গায়ের জোরে নির্বাচন করবেন, সে নির্বাচন তিনি করতে পারবেন না। যদি করেনও তা হবে '৯৬ সালের বিএনপি আমলের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের চেয়ে খারাপ। জোর করে সে নির্বাচনে জিতে এলেও তিনি সে সরকার চালাতে পারবেন, মনে করার কোনো কারণ নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে সংলাপ বা বিরোধী দলের নির্দলীয় সরকারের দাবি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বদরুদ্দীন উমর এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার পারিষদের কথাবার্তা শুনে এবং অবস্থা দেখে যা মনে হয়, বর্তমান কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে তিনি অটল থাকবেন। কারণ তিনি হয়তো জানেন, এ সরকারের সময় যে চুরি, দুর্নীতি, কমিশনখোরী ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সরকার পরিবর্তন হলে এ জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। তা তারা চান না। তাই মনে করছেন, বিএনপি জিতলে সমূহ বিপদ হবে। তাই বিএনপিকে ঠেকানোর যে চেষ্টা তারা করছেন, তা হলো- নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গের মতো।

কিন্তু তারা ভুলে গেছেন, বিএনপির বিকল্প হিসেবে যে ক্ষমতায় আসবে, সে তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে না। মনে রাখতে হবে, বিকল্প সরকার মানে ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনের মতো সরকারও হতে পারে। এ ধরনের সরকার ক্ষমতায় এসে ক্ষমতার স্বার্থেই ২০০৭ সালের মতো তাদের পাকড়াও করবেন। কারণ এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে তারা তাদের অপকর্মকে ছেড়ে দেবেন। এ সরকারের সময় দেশের যে বিপুল সম্পদ চুরি, দুর্নীতি, কমিশনখোরীর মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে; বিকল্প সরকারকে তার কিছুটা হলেও উদ্ধার করে জনগণের সামনে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।

তা ছাড়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরই দেশে বিডিআর বিদ্রোহের নামে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, তা সবাই ভুলে গেছে মনে করাও ঠিক হবে না। পোড় খাওয়া এই রাজনীতিবিদ সংলাপের বিষয়ে বলেন, সামগ্রিকভাবে এ পরিস্থিতি সামনে রেখেই আওয়ামী লীগকে সংলাপের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। যদিও এর নূন্যতম কোনো সম্ভাবনা আছে কি না সন্দেহ। কারণ, বাংলাদেশে এখন সব ক্ষেত্রে চক্রান্ত চলছে। এখানে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত যেমন চলছে তেমনিভাবে দেশের অভ্যন্তরে নানা মহলের বিশেষত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ এবং জোটগত চক্রান্তও বিদ্যমান আছে।

সমগ্র রাজনীতি এ চক্রান্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। সে জন্য পরিস্থিতির কোনো সুষ্ঠু বিশ্লেষণও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ও সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না দেশ কোন পরিণতির দিকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি যে কোনো দেশের জনগণের জন্য তো নয়ই, এমনকি শাসক শ্রেণীর জন্যও সুখকর নয়। বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রধানমন্ত্রী নিজের নানা ধরনের কর্মের কারণে চারদিকে যেভাবে শত্রু সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের দ্বারাই আবার ঘেরাও হয়ে আছেন।

ফলে এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসাও তার পক্ষে সম্ভব নয়। বর্ষীয়ান এই বাম রাজনীতিক বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন নির্বাচিত লোকদের দ্বারা গঠিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। মোসাহেবরাও বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। প্রশ্ন হলো, তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করতে চান, তাহলে তো পরবর্তী নির্বাচনে তিনি (শেখ হাসিনা) অংশ নিতে পারবেন না। কারণ নির্বাচনকালীন সরকার, সরকারের অফিস অব প্রফিট নিতে পারেন না।

সে ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীও হতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ কি বিষয়গুলো মাথায় রেখে কথা বলছে? তা ছাড়া এসব বিষয়ে বিএনপিই বা এখনো কথা বলছে না কেন, বোঝা যাচ্ছে না। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে শাসক শ্রেণীর সংকটের কারণেই নব্বই সালে একধরনের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা হয়েছিল। কারণ এরশাদকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে না, এমন রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতেই সে ব্যবস্থা হয়েছিল। কোনো সভ্য দেশে হলে হয়তো প্রধান দলগুলো আলাপ-আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি ঠিক করে নিত।

কিন্তু আমাদের দেশের প্রধান দুই দলের শত্রুতামূলক অবস্থানের কারণে সেদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এনে নির্বাচন করতে হয়েছে। দুই প্রধান দলের মধ্যে মীমাংসার অযোগ্য যে সম্পর্ক তখন থেকে তৈরী হলো, আজ তার কি অবসান হয়ে গেছে? এ ছাড়া এ জাতি কি ভুলে গেছে যে ১৯৯৬ সালে এ আওয়ামী লীগই তৎকালীন বিএনপি সরকারকে অনির্বাচিত লোকদের দিয়ে গঠিত একটি সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে আইন পাস করাতে বাধ্য করেছিল। ফলে একটি অনির্বাচিত সরকারকে সাংবিধানিক ভিত্তি দিতে হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে দেশের কোনো উন্নতি হয়েছে বলে জনগণ মনে করে না। তাই সে রকম সরকার ছাড়া নির্বাচন হওয়ার কোনো উপায় নেই।

এখানে বলে রাখা দরকার, অনির্বাচিত লোকদের দিয়ে সরকার গঠন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ জজ সাহেবদের সরকার ও নির্বাচন ব্যবস্থায় টেনে এনেছিল। এতে আইনি ব্যবস্থার অবনতি ঘটতে ঘটতে আজ ধ্বংসের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। আদালতে দুর্নীতি জায়গা করে নিয়েছে। ফলে তাদের দিয়েও আর তেমন সরকার করা যাবে না। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কোনো স্বাধীনতা নেই।

আদালত কুক্ষিগত। প্রশাসনকে দলীয়করণ এবং নির্বাচন কমিশনকে কুক্ষিগত করা হয়েছে। তাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। এ জন্যই দিন দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। মনে রাখতে হবে, নির্বাচন কমিশনের সদস্য বৃদ্ধি করা মানে কমিশনের স্বাধীনতা বাড়ানো নয়, বরং নির্বাচনকালীন যে মন্ত্রিসভা বা সরকার হবে তাকে কাজ করতে হবে নির্বাচন কমিশনের পরামর্শে।

এমনকি সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহারে পূর্ণ অধিকার নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। এসব নিয়ে আলোচনা করলেই এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একটি রাস্তা হয়তো পাওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে সমাধান না হলে ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনের সরকারের সম্ভাবনাই তীব্র হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, দেশের যে কোনো নাগরিক ফর্মুলা দেওয়ার অধিকার রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন সুবিধাবাদীরা নানা ফর্মুলা দিচ্ছে।

প্রশ্ন হলো, ফর্মুলা দেখে তিনি রেগে যাচ্ছেন কেন? ফর্মুলা অগ্রহণযোগ্য হলে কী কারণে অগ্রহণযোগ্য, তা বলতে হবে। এখানে রাগ করার কী আছে? বদরুদ্দীন উমর বলেন, একটি কথা বলে রাখি- নির্বাচনের পর আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চিন্তা করা যেতে পারে তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা সে রকম নেই। কে ক্ষমতায় আসবে তা পরের কথা, এটা এখন বলা না গেলেও সরকারের বিদায়ের ব্যাপারে জনগণ প্রস্তুত। এ বিষয়ে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও সভা-সমাবেশের অনুমোদন লাগত না।

এখন সভা ও মাইকের অনুমোদন লাগে। এরপর আবার তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে এক মাসের কথা কিন্তু তারপর কী করবেন? সে বিষয়ে কিছু বলছেন না। চুরি-দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচারসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে দাঁড়ানোর জনগণের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিএনপির সময় মুক্তাঙ্গনে সভা-সমাবেশ করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেখানে চিরস্থায়ী ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এতে শুধু বিএনপি নয়, যারা জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, যারা পেশাজীবী তাদের কথা বলার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মেইন সুইচ অফ করে দেওয়া হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, '৭৪-৭৫-এর জায়গায়ই দেশকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন প্রশ্ন, যে সরকার বিরোধীদের কথা বলার জন্য প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়াতে দেয় না, রাস্তায় দাঁড়াতে দেয় না; তাদের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব? তাদের অধীনে সরকার গঠিত হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কোনো আহম্মকও কি তা বিশ্বাস করতে পারে? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।