যে বেসেছে ঝর্ণা ভালো, যে বেসেছে ঝিনুক। তার হাতে আয়ু রেখায় ভীষন রকম অসুখ। ।
(উৎসর্গ পত্র: চারুকলার ভাস্কর্যবিভাগের ল্যাবের জানালায় দেখা জনৈকা ভাস্কর-কন্যাটিকে দেখে, যে কখনো জানেনা এ শব্দাবলীর কথা, কখনো জানবেনা। )
নিরাকপড়া শৈবাল ভষ্মের স্মৃতি মাখা
আগ্নেয় শিলার বোবা প্রস্থর কুঁদে
বাতায়ন দূরবর্তী কন্যা, মনুষ্য মূর্তি গড়।
চম্পক বর্না আঙুল বশ মানাতে সদা ব্যস্ত তুমি।
দু'ফোঁটা অনিমন্ত্রিত অবশ্যম্ভাবী ঘাম
দু'গালের রক্তাভা ছুঁয়ে নামছে
যেন ইরাবতীর সূর্যাস্ত মাখা স্রোত।
পাথর গুঁড়ো লাগা দীর্ঘ দু'বাহু
স্বর্নচুর্ণ মাখা কোন ইন্দ্রসভার রাজকুমারী যেন,
অবাধ্য দীর্ঘ সুরভিত কেশপাশ
অহংকারী অবহেলায় ঠেলে দিয়েছো সিঁথির দু'পাশে,
ঝলঝলে তোমার সিঁথি; যেন বা স্বর্গসিড়ি;
ধাপে ধাপে উঠে গেছে সুশোভন শুকতারা।
এক হাতে হাতুড়ি
অন্যহাতে বাটাল
ক্ষনে ক্ষনে নেমে আসে সুনিপুন ক্ষিপ্রতায়,
বাজে পাথরে ভগ্ন শব্দ
আহা! সেই সুর শুনি আমি শব্দ কাঙাল।
গভীর মনোযোগী চেতনা
ভাঙা পাথরে প্রতিটি খাঁজে খাঁজে
জ্যামিতিক আঁচড় সন্ধানে ধাবমান
তোমার ইষৎ পল্লব নিলীপিত দুটি চোখ
যেন বা হংস মিথুন;
নন্দনবন ঘিরি আবেশে নিমজ্জমান।
মাঝখানে তার এঁকে নিয়েছো
গোধূলী রাঙা টকটকে সুডৌল টিপ,
আহারে বিপন্ন ব্রহ্মান্ড!
কি কাজে লাগে সুমঙ্গল শুকতারা!
তারপর উপত্যকা বেয়ে
সুবর্ণ মাখা জ্বলজ্বলে খাড়া নাক
দু'পাটাতন ক্ষনে ক্ষনে ফুলে উঠে
ক্লান্তির উষ্ণশ্বাসে
তারিপথ ধরে ঠোঁট
বিশুদ্ধ টকটকে অভ্র কেটে বসানো
দু'খানা রামধনুকের বক্রতা;
আর সামনে ঝুঁকানো চিবুক,
কি এমন নাটকীয়তা কম হতো
যদি না তাতে এক ফোঁটা ছোট্ট তুলতুলে তিল না থাকত।
তোমার সুশোভন মুখপদ্ম
হায় কি আদুরে আবেগে
সমুন্নত ধরে রেখেছে
ঐ চোখ ঝলসানো ঘাড়,
ঝকমকে প্রফুল্ল পতাকা এক
দিগন্ত হতে দিগন্তে।
বিস্রস্ত মাতলামি তোমার ঘরের বাইরে
নির্মম দ্বিপ্রহরে একঠায় পুড়ে যাওয়া প্রকৃতিতে।
তারপর তুমি আড়াল
কালো কাঠের অসভ্য বুননে।
ওগো দিগাঙ্গনা,
একি ভয়াবহ ছেদ টেনে দিলে
ছন্দোবদ্ধ প্রকৃতি রোমন্থনে!
বাতায়ন দূরবর্তী কন্যা,
বোবা পাথর কুঁদে
বোবা মানুষ গড়,
চোখ বসাও, নাক বসাও
ঠোঁট , চিবুক, গলা,
আবক্ষ মনুষ্য মূর্তি
নির্ভুল শিক্ষায় পেশীর রেখা আঁক,
বয়সের ভাঁজ বসাও সঠিক স্থানে
প্রশিক্ষিত হাতে ভেনাস গড়,
উফ! নতজানু হও-
অনন্ত শোকগাঁথা বইবে সভ্যতার অন্তিম পর্যন্ত।
ওগো বাতায়ন দূরবর্তী ভাস্কর কন্যা,
তোমার আনগ্ন মূর্তি
জীবন্ত রক্ত মাংসের উষ্ণশ্বাসের ভেনাস হতে
এ কাঙাল কবিকে
নিঠুর প্রবঞ্চনার
দগদগে মধ্যাহ্নে বিমূঢ় আক্রোশে
কেন তিলে তিলে মরে যেতে দিলে
কেন মরে যেতে দিলে...
২২/০৮/২০০৩
(ছবিটি ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত
Pieta
by Michelangelo Buonarroti)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।