``চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল। ' -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
'ইয়োগা, সুস্থতায় যোগচর্চা'
…
লেখকের জবানবন্দী:
চোখ ফেরালেই ইদানিং সুদেহী মানুষের অভাববোধ ভয়ানক পীড়া দিয়ে উঠে। তারচে’ও প্রকট সুস্থ দেহে সুমনা সত্ত্বার অভাব। আমরা কি দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছি ! সর্বগ্রাসী দুষণের মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণে মানুষের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখা বাস্তবিকই কঠিন আজ।
এ বড় দুঃসহ কাল। শরীরের সাথে মনের যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, তার সূত্র ধরেই নাগরিক সভ্যতায় আজ দিনকে দিন সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার সাথে পাল্লা দিয়ে একদিকে যেমন বেড়ে চলছে মানসিক অস্থিরতা, টেনশন আর অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে অতিদ্রুত ভেঙে পড়ছে সতেজ মনে সুস্থ থাকার ন্যুনতম ভারসাম্যও। এই কঠিন দুঃসময়ে নিজের দিকে একটু ফিরে তাকানোর সময়ও কি হবে না আমাদের !
শহর বন্দর গ্রাম গঞ্জ থেকে একে একে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চোখে নিবিড় আদর বুলানো সবুজ বৃক্ষ, বুক ভরে শ্বাস নেয়ার নির্মল বাতাস, বিশুদ্ধ পানীয় জলের স্বচ্ছতা, খেলার মাঠ আর আকাশের উদারতা এবং সুস্থ দেহে বেঁচে থাকার অনিবার্য শর্তগুলো। আমাদের অজান্তেই আমরা যে কতো নীরব ঘাতকের চিহ্ণিত লক্ষ্য হয়ে যাচ্ছি সে খেয়াল কি রাখছি ? সৃজনশীল হওয়া সে তো বহু দূরের কথা। অথর্ব মন আর ভাঙা শরীর নিয়ে এতো সহজ মৃত্যুর দিকে জটিল সব অসুখের ডিপো হয়ে তিলে তিলে ভোগে ভোগে যেভাবে এক দুঃসহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা, সামনে এখন দুটো পথই খোলা।
সব কিছু মেনে নিয়ে বাধ্য প্রাণীর মতো একযোগে আত্মহত্যা করা, নয়তো ঘুরে দাঁড়ানো। যিনি আত্মহত্যা করার মৌলিক অধিকারের ঝাণ্ডা উড়িয়ে মার্চপাস্ট করবেন, তাঁর সাথে তো আর কোন হিসাব চুকানোর কিছু নেই। যিনি তাঁর মানবিক সৃজনশীলতাকে অর্থবহ বাঁচিয়ে রাখার জন্যই ঘুরে দাঁড়াতে চান, আসুন আমরা সে চেষ্টাটাই করে দেখি একবার। আর সে চেষ্টা কিছুতেই যাতে বিফলে না যায়, তারই ছোট্ট প্রয়াস এই ‘ইয়োগা, সুস্থতায় যোগচর্চা’ গ্রন্থটি।
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে এটিকে কেবল একটি যোগ-ব্যায়ামের সাধারণ বই মনে করার ভ্রান্তি নিমেষেই কেটে যাবে বইটি একটু উল্টে-পাল্টে দেখলেই।
কেননা যোগ-ব্যায়ামের সাধারণ সব বিষয়ের স্বাভাবিক ও বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনের পাশাপাশি একটি মনোদৈহিক প্রায়োগিক দর্শন হিসেবে ‘ইয়োগা’র হাজার বছরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও ইতিহাস খুঁড়ে পৃথক অধ্যায়ে তুলে আনা হয়েছে আধুনিক ইয়োগার জনক ঋষি পতঞ্জলি’র অষ্টাঙ্গ যোগের সারস্বত বয়ান, যা পাঠককে ইয়োগার সুরম্য গভীরে সাবলীল প্রবেশে সহায়তা করবে । এতে খোঁজা হয়েছে কিভাবে একটি আধ্যাত্ম দর্শন তার প্রায়োগিক উপযোগিতা নিয়ে ধর্ম বর্ণ গোত্র জাতি নির্বিশেষে দেশ-কালের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের অনিবার্য সুস্থাকাক্সার এক মনোহর ব্যবহারিক জগতে। মনো-দৈহিক স্বাস্থ্যরহস্যের উৎসমূলেও দৃষ্টি সম্পাতের চেষ্টা করা হয়েছে। সুস্থতার নিমিত্তে প্রাত্যহিক অনুশীলনকে অত্যন্ত কার্যকর ও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন যোগাসনের বেশ কতকগুলো আসন-বৈচিত্র্য্ও উপস্থাপন করা হয়েছে। বইয়ে সন্নিবিষ্ট বিভিন্ন আসন, মুদ্রা, প্রাণায়াম, ধৌতি ইত্যাদি চর্চা-প্রণালীর সাথে এগুলোর উপকারিতা ও প্রয়োজনীয় সতর্কতার বিষয়গুলোও সংশ্লিষ্ট আইটেমের বর্ণনায় স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
বিরক্তিকর কিছু রোগ ও এর নিরাময়ের উপায় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। সর্বোপরি আগ্রহী চর্চাকারীদের ব্যবহারিক সুবিধার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আশা করি এ থেকে সবাই উপকৃত হবেন।
বইয়ের নাম: ইয়োগা, সুস্থতায় যোগচর্চা
বইয়ের ধরন: স্বাস্থ্য ও গবেষণা
লেখক: রণদীপম বসু
প্রকাশক: শুদ্ধস্বর, ৯১ আজিজ সুপার মার্কেট (৩য় তলা), শাহবাগ, ঢাকা।
(ফেব্রুয়ারি’২০১০)
মুদ্রিত মূল্য: ৩৭৫ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৪০
অলংকরণ:
প্রচ্ছদশিল্পী: সব্যসাচী হাজরা
বইটি প্রকাশের পেছনে দেখা অদেখা অনেকের শ্রম ও আন্তরিকতা জড়িয়ে আছে নিঃসন্দেহে।
অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে মুক্ত অন্তর্জালিক বিশ্বের তথ্য ভাণ্ডার থেকে শুরু করে ইতিপূর্বের বিভিন্ন দেশি-বিদেশি লেখকের প্রকাশনা যাচাই বাছাই এবং দীর্ঘকালীন ব্যক্তিগত ইয়োগাচর্চা ও অভিজ্ঞতার সর্বোত্তম সমন্বয়ের যথাসাধ্য চেষ্টা এই বই। তাই ইয়োগা-বিশ্বের চেনা-অচেনা সবার প্রতিই আমার সবিশেষ ঋণ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
[মুদ্রিত বইয়ের পাতা আর অন্তর্জালিক পৃষ্ঠায় তফাৎ অনেক, এবং এর উপস্থাপন ও পাফরম্যান্সও ভিন্ন। তবু বইটি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিতে আগ্রহী হলে এই ইয়োগা-সাইটটি] দেখতে পারেন।
সবার জন্য একটা সুস্থ, সুন্দর ও চমৎকার আগামীর কামনা রইলো।
ভালো থাকবেন সবাই।
…
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।